পথ ও পথিকের হক-১
০৬ মার্চ ২০২৪, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ০৬ মার্চ ২০২৪, ১২:০৩ এএম
সমাজবদ্ধ জীবনে পথের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। আর সেই পথটি সবসময়ের জন্যেই নিরাপদ ও ঝুঁকিমুক্ত থাকবে, নির্ভয়ে নিশ্চিন্ত মনে আপন সম্মান ও সম্ভ্রম রক্ষা করে সেই পথ দিয়ে হেঁটে যাওয়া যাবেÑ এটি একজন পথিকের হক ও অধিকার। সমাজের সকল শ্রেণির মানুষকেই পথে ধরে চলতে হয়। রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর কিংবা সর্বোচ্চ বিত্তবান ব্যক্তি থেকে শুরু করে খেটে খাওয়া দিনমজুর পর্যন্ত সকলকেই জীবনের তাগিদে পথে আসতে হয়। নিরাপদ পথের অধিকার তাই সকলের। আবার এ অধিকার সংরক্ষণও সমাজের মানুষকেই করতে হবে। সুন্দরতম আচরণের পূর্ণতাবিধানকারীরূপে যে নবী প্রেরিত হয়েছিলেন, আমরা তো তাঁরই উম্মত। তাঁর বাণীতেই আমরা খুঁজে পাই পথ ও পথিকের হক।
পথের অধিকার সম্পর্কে এই হাদিসটি খুবই প্রসিদ্ধ। হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : তোমরা পথে বসা থেকে বিরত থেকো। সাহাবীগণ বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! কথাবার্তা বলার জন্যে যে আমরা পথে না বসে পারি না। রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, যদি তোমাদের পথে বসতেই হয় তাহলে পথের হক আদায় করো। তারা বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! পথের হক কী? তিনি বললেন, ‘দৃষ্টি অবনত রাখা, কাউকে কষ্ট না দেয়া, সালামের উত্তর দেয়া, সৎ কাজের আদেশ করা এবং অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করা। (সহীহ বুখারী : ৬২২৯)।
হযরত আবু হুরায়রা (রা.)-ও হাদিসটি বর্ণনা করেছেন। উপরোক্ত বিষয়গুলো ছাড়াও তাঁর বর্ণিত হাদিসটিতে আরও রয়েছে : এবং হাঁচির জবাব দেয়া এবং (মানুষকে) পথ দেখিয়ে দেয়া। (মুসনাদে আবু ইয়ালা : ৬৬০৩)। হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) বর্ণিত হাদিসে রয়েছে : এবং তোমরা নির্যাতিত ব্যক্তিকে সাহায্য করবে এবং পথ-সন্ধানীকে পথের সন্ধান দেবে। (সুনানে আবু দাউদ : ৪৮১৯)।
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বর্ণনা করেছেন : এবং তোমরা বোঝা উঠিয়ে দিয়ে সহযোগিতা করো। (মুসনাদে বাযযার : ৫২৩২)। হযরত আবু তালহা (রা.) বর্ণিত হাদিসে আছে : এবং সুন্দর কথা বলো। (সহীহ মুসলিম : ২১৬১)। উপরোক্ত হাদিসগুলোতে প্রিয় নবীজী (সা.) পথের যে অধিকারগুলো বর্ণনা করেছেন তা আমরা এভাবে উপস্থাপন করতে পারি:
দৃষ্টি অবনত রাখা : দৃষ্টিকে বলা হয় শয়তানের একটি বিষাক্ত তীর। এই দৃষ্টির মাধ্যমেই সূচনা হয় নারী-পুরুষের অবৈধ সম্পর্কের। এর ফলশ্রুতিতে ধীরে ধীরে বিনষ্ট হয় পারিবারিক ও সামাজিক শান্তি। পথে চলার অধিকার নারী-পুরুষ সকলেরই রয়েছে। পথে বের হতে হলে নারীকে কীভাবে বের হতে হবে, কেমন পোশাক পরতে হবে তা একটি স্বতন্ত্র বিষয়।
তবে কোনো সম্ভ্রান্ত নারী যখন পথ চলে তখন কোনো পুরুষ তার দিকে তাকিয়ে থাকাকে সে নিজের জন্যে সম্ভ্রমহানিকর মনে করে। পরিচিত কিংবা অপরিচিত কোনো পুরুষ যদি তাকিয়ে থাকে তাহলে অনেক নারী পর্দাবৃত থাকা সত্ত্বেও পথ চলতে অস্বস্তি বোধ করে। রাসূলুল্লাহ (সা.) এজন্যেই নির্দেশ দিয়েছেনÑ পথের ধারে বসলে দৃষ্টি অবনত রাখো। আর পবিত্র কুরআনে তো নারী-পুরুষ উভয় শ্রেণিকে ভিন্ন ভিন্নভাবে দৃষ্টি অবনত রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন : হে নবী, তুমি মুমিন পুরুষদের বলে দাও, তারা যেন তাদের দৃষ্টি অবনত রাখে...। (সূরা মুমিনুন : ৩০)। আর হে নবী, তুমি মুমিন নারীদের বলে দাও, তারা যেন তাদের দৃষ্টি অবনত রাখে...। (সূরা মুমিনুন : ৩১)।
কাউকে কষ্ট না দেয়া : এ বিষয়টি অত্যন্ত ব্যাপক। একজন মুসলমানের প্রাণ, সম্পদ, সম্ভ্রমÑ সবকিছুই সম্মানের পাত্র। অন্যায়ভাবে কারও জান-মাল ও ইজ্জত-সম্মানের ওপর হামলা করা ইসলামে নিষিদ্ধ। অন্যায়ভাবে কাউকে কোনোরূপ কষ্ট দেয়া যাবে না, চাই সেটা শারীরিক হোক বা মানসিক, ধন-সম্পদের বিষয়ে হোক বা মান-সম্মানের ওপরই হোক। এক্ষেত্রে কুরআনে কারীমের সুস্পষ্ট নির্দেশনা এসেছে।
আল্লাহ তাআলা বলেছেন : যারা মুমিন নারী-পুরুষদের পীড়া দেয়, এমন কোনো অপরাধের বিষয়ে যা তারা করেনি, তারা তাহলে অপবাদ ও সুস্পষ্ট পাপের বোঝা বহন করে নিল। (সূরা আহযাব : ৫৮)। মুসলমান ভাইদের কোনোরূপ কষ্ট না দেয়াÑ এ বিষয়টিকে তো রাসূলুল্লাহ (সা.) একজন মুসলমানের পরিচয় হিসেবেই উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন : মুসলমান তো সেই, যার যবান ও হাত থেকে অন্য মুসলমানেরা নিরাপদ থাকে। (সহীহ বুখারী : ১০)।
প্রয়োজনীয় কথা বলার জন্যে হোক কিংবা বিশ্রামের জন্যে হোক, পথের পাশে যদি কেউ বসে তাহলে অবশ্যই তাকে এমন সব কাজকর্ম থেকে বিরত থাকতে হবে, যাতে কোনো পথিক কষ্ট পেতে পারে। শুধু মুসলমান নাগরিকই নয়, নিরাপদ পথের অধিকার অমুসলিমদেরও। এমনকি অন্য কোনো প্রাণীকেও তো অনর্থক কষ্ট দেয়া যাবে না।
বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম