ঢাকা   শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪ | ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

শরীয়তের ওপর আমলই সব সমস্যার সমাধান-২

Daily Inqilab সাইয়েদ মুহাম্মদ রাবে হাসানী নদভী

২০ এপ্রিল ২০২৪, ১২:০৫ এএম | আপডেট: ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১২:০৫ এএম

আমাদেরকে জীবনের প্রকৃত পর্যালোচনা করা প্রয়োজন। আমাদের দেখতে হবে আমরা আল্লাহর নির্দেশের ওপর কতটুকু আমল করছি? আমরা তাঁর মর্জিকে আমাদের মর্জির ওপর কোথায় কোথায় প্রাধান্য দিচ্ছি? তাঁর মর্জিকে যদি নিজেদের মর্জির ওপর প্রাধান্য না দেই তাহলে তাকে আনুগত্য বলবে না। আনুগত্য সেটাকেই বলবে যখন আমরা আল্লাহ ও রাসূলের মর্জিকে সব জিনিসের ওপর প্রাধান্য দিব। ব্যয়ের বিষয় হোক, আমদানি প্রসঙ্গ হোক, কারো সঙ্গে লেনদেনের ব্যাপার হোক অথবা অন্য যেকোনো বিষয় হোক, জীবনের অসংখ্য দিক রয়েছে, আমাদেরকে প্রত্যেক দিকে এই খেয়াল রাখতে হবে যে, আমরা আল্লাহর সন্তুষ্টিকে প্রাধান্য দিব।

আমরা আল্লাহ ও রাসূলের সন্তুষ্টিকে যে পরিমাণ প্রাধান্য দিব তাঁর নুসরত, মদদ এবং করমও আমাদের ততটুকুই হাসিল হবে। আমরা যদি ইসলামের ইতিহাস পর্যালোচনা করি তাহলে দেখতে পাব যতক্ষণ পর্যন্ত মুসলমানরা তাদের উত্তম জীবনের প্রমাণ পেশ করতে পেরেছে ততক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহর রহম, করম ও নুসরত তাদের সঙ্গী হয়েছে। কুরআন মজিদে আল্লাহ তাআলা স্পষ্টভাবে ওয়াদা করেছেন, ‘তোমরা যদি ভালো কাজ কর তবে আমি তোমাদেরকে পরিতৃপ্ত করে দিব, আর যদি মন্দ কাজ কর তাহলে তোমাদেরকে পাকড়াও করা হবে এবং শাস্তি দেয়া হবে।’

মুসলমানদের অবস্থা বলে দেয়, তাদের সমস্ত বিপদাপদ, পেরেশানী, ক্ষয়ক্ষতি এবং তাদের অপদস্থতা আমরা যেখানেই তাদের নাফরমানি ও বদ আমলীর প্রতিদান। এখানে মানুষের সম্পর্ক সরাসরি তার প্রভুর সঙ্গে। সে যদি তার প্রভুর নাফরমানি না করে তবে তার হালত পাল্টে যায়। এ গোটা দুনিয়া আল্লাহ তাআলার গোলাম। এই দুনিয়া এবং সমস্ত বিশ্ব ওই সময় যুৎসই হবে যখন আমরা আল্লাহর নির্দেশনা মোতাবেক আমাদের জীবনকে যুৎসই বানাব। সুতরাং আমাদের জন্য উচিত হলো, ওলামায়ে কেরামের কাছ থেকে মাসায়েল জেনে নিজেদের জীবনকে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নির্দেশের মোতাবেক পরিচালিত করা।

আপনি ইতিহাস পড়ে দেখুন, দেখবেন উপমহাদেশের মুসলমানদের ইতিহাস উত্থান-পতনের ইতিহাস। তাদের সামনে বড় সমস্যাও এসেছে আবার অত্যন্ত প্রাচুর্যপূর্ণ অবস্থাও হয়েছে। আপনি এগুলো পর্যালোচনা করলে দেখবেন, যখন আল্লাহর মর্জি মোতাবেক জীবন অতিবাহিত হয়েছে তখন আল্লাহর রহম ও বরকতের ধারা বর্ষিত হয়েছে, সম্মান ও প্রতিপত্তি লাভ হয়েছে। পক্ষান্তরে, যখন নাফরমানি করেছে তখন সমস্যা ও প্রতিকূলতা, বিপদ ও পেরেশানীতে চারদিক ছেয়ে গেছে।

বর্তমানে উম্মতের অবস্থা হচ্ছে আল্লাহর আনুগত্য এবং তার নির্দেশ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে যে অবস্থানে থাকার কথা সে অবস্থান থেকে তারা আজ অনেক দূরে। এজন্য আমরা লক্ষ্য করছি, আমাদের জীবন আজ সমস্যাসঙ্কুল। এর ওপর যদি আমরা চিন্তা করি তাহলে জানতে পারব এক্ষেত্রে আমাদের অমনোযোগিতার বেশ দখল রয়েছে। আমাদের উচিত নিজেদের জীবন পর্যালোচনা করে তাকে শরীয়তের মোতাবেক বানানোর প্রচেষ্টা করা। কারণ এছাড়া কোনো উপায় নেই।

ইসলামী শরীয়তের যে সমস্ত আহকাম রয়েছে এ ব্যাপারে ওলামায়ে কেরামের দায়িত্ব তো হচ্ছে, সেগুলো সংরক্ষণ করা, মানুষকে তালীম দেয়া, এর প্রচার-প্রসারে ব্যক্তিগত ও সামষ্টিক উদ্যোগ গ্রহণ করা। আর মুসলিম জনসাধারণ তথা সকল মুসলমানের জিম্মাদারী হলো সেসব আহকাম জেনে এর ওপর পরিপূর্ণভাবে আমল করা এবং নিজের বাস্তব জীবনে এগুলোর বাস্তবায়ন করা।

কারণ এর বাস্তবায়নের ওপরই এ দুনিয়ায় ইজ্জত-সম্মান এবং পরকালে কামিয়াবী ও সমৃদ্ধি হাসিল হবে। আর সবচেয়ে বড় অর্জন তো হলো আখেরাতে আমরা আল্লাহর অসন্তুষ্টি এবং আযাবে নিপতিত হব না। এর পাশাপাশি এই ইহজগতও সম্মান এবং প্রশান্তির সঙ্গে কাটবে। কিন্তু তা তখনই হবে আমরা যখন এর (শরীয়াত) ওপর আমল করব। আমাদের সকলের ফরজ একটিই-নিজের জীবনটাকে পর্যালোচনা করে দেখা যে, আমরা শরীয়াতে ইসলামীর ওপর কতটুকু আমল করছি? শরীয়াতে ইসলামী বলা হয় জীবনের জন্য ইসলামী আহকামকে। অর্থাৎ আল্লাহ ও রাসূলের আহকামের নামই শরীয়াত।

সুতরাং আমাদের দেখতে হবে, আমরা শরীয়াতে ইসলামীর ওপর কতটুকু আমল করছি। গোটা জীবনটাকে যাচাই-বাছাই করে এতে যে ত্রুটি ও বিচ্যুতি নজরে আসবে তা দূর করার প্রচেষ্টা চালানো। এর ফলাফল এই হবে যে, দুনিয়াতেও আমরা সম্মান, প্রতিপত্তি ও প্রশান্তি অর্জন করব আর পরকালেও হাসিল করতে পারব পরম কাক্সিক্ষত কামিয়াবী।


বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

বড়কে মান্য করুন, বৃদ্ধকে সম্মান করুন-১
সন্তানদের কিসের উপর রেখে যাচ্ছি-২
সন্তানদের কিসের উপর রেখে যাচ্ছি-১
কে অন্ধ, কে চক্ষুষ্মান
সে-ই স্বাধীন যে সিজদা করে এক আল্লাহকে
আরও

আরও পড়ুন

মাইলফলকের টেস্ট স্মরণীয় করে রাখতে চান মিরাজ

মাইলফলকের টেস্ট স্মরণীয় করে রাখতে চান মিরাজ

আজারবাইজানে কপ-২৯ সম্মেলনে ঠাকুরগাঁওয়ের ইএসডিওর সাইড ইভেন্ট অনুষ্ঠিত

আজারবাইজানে কপ-২৯ সম্মেলনে ঠাকুরগাঁওয়ের ইএসডিওর সাইড ইভেন্ট অনুষ্ঠিত

বেতন পেয়ে অবরোধ প্রত্যাহার করল বেক্সিমকোর শ্রমিকেরা

বেতন পেয়ে অবরোধ প্রত্যাহার করল বেক্সিমকোর শ্রমিকেরা

লেবাননে ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত ৪৭

লেবাননে ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত ৪৭

ট্রাম্প প্রশাসনের জন্য মনোনীত দুই সদস্যের বিরুদ্ধে যৌন কেলেঙ্কারির অভিযোগ

ট্রাম্প প্রশাসনের জন্য মনোনীত দুই সদস্যের বিরুদ্ধে যৌন কেলেঙ্কারির অভিযোগ

ট্রাম্প ব্যবসায়ী, আমরাও একজন ব্যবসায়ী পার্টনার চাই : টাইম ম্যাগাজিনকে ড. ইউনূস

ট্রাম্প ব্যবসায়ী, আমরাও একজন ব্যবসায়ী পার্টনার চাই : টাইম ম্যাগাজিনকে ড. ইউনূস

আদানির দুর্নীতি : এবার ভারতেই বির্তকের মুখে মোদি সরকার

আদানির দুর্নীতি : এবার ভারতেই বির্তকের মুখে মোদি সরকার

প্রেসিডেন্টর সঙ্গে তিন বাহিনী প্রধানের সৌজন্য সাক্ষাৎ

প্রেসিডেন্টর সঙ্গে তিন বাহিনী প্রধানের সৌজন্য সাক্ষাৎ

নিজ্জর হত্যায় মোদীর সংশ্লিষ্টতার দাবি কানাডার সংবাদমাধ্যমের ,‘হাস্যকর’ দাবি ভারতের

নিজ্জর হত্যায় মোদীর সংশ্লিষ্টতার দাবি কানাডার সংবাদমাধ্যমের ,‘হাস্যকর’ দাবি ভারতের

পাকিস্তানে যাত্রীবাহী গাড়িতে গুলি, নিহত ৪২

পাকিস্তানে যাত্রীবাহী গাড়িতে গুলি, নিহত ৪২

এক সপ্তাহে রিজার্ভ বাড়ল ৬ কোটি ১০ লাখ ডলার

এক সপ্তাহে রিজার্ভ বাড়ল ৬ কোটি ১০ লাখ ডলার

ইউক্রেন যুদ্ধ বৈশ্বিক সংঘাতে পরিণত হচ্ছে : পুতিন

ইউক্রেন যুদ্ধ বৈশ্বিক সংঘাতে পরিণত হচ্ছে : পুতিন

মুরগি-সবজিতে কিছুটা স্বস্তি, আলু এখনো চড়া

মুরগি-সবজিতে কিছুটা স্বস্তি, আলু এখনো চড়া

নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা, যা বলল যুক্তরাষ্ট্র

নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা, যা বলল যুক্তরাষ্ট্র

মার্কিন শ্রম প্রতিনিধি দল ঢাকা আসছে আজ

মার্কিন শ্রম প্রতিনিধি দল ঢাকা আসছে আজ

পার্থে শুরুতেই চাপে ভারত

পার্থে শুরুতেই চাপে ভারত

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ১৮ সদস্যবিশিষ্ট কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ১৮ সদস্যবিশিষ্ট কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা

সেনাকুঞ্জে খালেদা জিয়ার সঙ্গে জামায়াত আমীরের কুশল বিনিময়

সেনাকুঞ্জে খালেদা জিয়ার সঙ্গে জামায়াত আমীরের কুশল বিনিময়

সিঙ্গেল সিটের দাবিতে গভীর রাতেও হলের বাইরে ছাত্রীরা

সিঙ্গেল সিটের দাবিতে গভীর রাতেও হলের বাইরে ছাত্রীরা

ইসরাইলি হামলায় গাজায় নিহতের সংখ্যা ৪৪ হাজার অতিক্রম করলো

ইসরাইলি হামলায় গাজায় নিহতের সংখ্যা ৪৪ হাজার অতিক্রম করলো