ঢাকা   শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪ | ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

বড়দের দ্বীনী শিক্ষার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা-২

Daily Inqilab মাওলানা শাহাদাত সাকিব

২২ এপ্রিল ২০২৪, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ২২ এপ্রিল ২০২৪, ১২:০৩ এএম

বৈষয়িক সুখ-সমৃদ্ধি লাভ করা জাগতিক শিক্ষা অর্জনের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য। ভালো একটা চাকরি পাওয়া, একটু সুখী জীবন লাভ করার জন্যই সাধারণত এ শিক্ষা অর্জন করা হয়। কিন্তু দ্বীনী শিক্ষা এর থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। শুধু পার্থিব জীবনই নয় পরকালীন জীবনের কল্যাণ লাভ করা এ ইলম অর্জনের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য। আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন, তাঁর হুকুম আহকাম জেনে সে অনুযায়ী জীবনযাপন, নবীজীর সুন্নতের অনুসরণ, ফেরেশতাদের দুআ-ইসতিগফার লাভ ইত্যাদি সবকিছুই ইলমে দ্বীন শিক্ষা করার ফযীলত। আর যে কোনো মানুষই বোঝে, এ ফযীলত অর্জনের নির্দিষ্ট কোনো বয়স নেই। যে কোনো মানুষই ইলম শিক্ষা করার মাধ্যমে এ ফযীলতগুলো অর্জন করতে পারে।

আবু আমর ইবনুল আলা’কে একবার জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, বৃদ্ধ বয়সে ইলম শিক্ষা করা কি উত্তম কাজ? তিনি উত্তরে বলেন, বেঁচে থাকাটা যদি তার জন্য উত্তম হয় তবে ইলম অর্জন করা কেন উত্তম হবে না! (আলফাকীহ ওয়াল মুতাফাক্কিহ, খতীব বাগদাদী, খ. ২, পৃ. ১৬৭)। কোনো একজন আলেমকে একবার জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, কতদিন পর্যন্ত মানুষকে শিখতে হবে? তিনি উত্তরে বলেন, মৃত্যু পর্যন্ত।

কিছু বয়স হওয়ার পর দ্বীন শেখার ইতিবাচক দিক রয়েছে, যা ইলম অর্জনের জন্য অনেক সহায়ক। কারণ, অনেক ক্ষেত্রেই শিশু-কিশোর অভিভাবকদের চাপে ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় দ্বীনী ইলম অর্জন করে। ভেতরের প্রেরণা, নিজের ইচ্ছা, ফযীলত অর্জন করার মানসিকতা অনেক ক্ষেত্রেই থাকে অনুপস্থিত। তবে একজন বয়স্ক ব্যক্তির দ্বীন শিক্ষা করার অবস্থা হয় এর থেকে ভিন্ন। বয়স্ক ব্যক্তির মনে দ্বীনী শিক্ষা অর্জনের প্রেরণা সৃষ্টি হয় মনের ভেতর থেকে।
সেখানে অন্যের পক্ষ থেকে চাপ কিংবা বাধ্যবাধকতারও কোনো ব্যাপার থাকে না; বরং সাধারণত ব্যক্তি নিজ উদ্যোগে ইলম অর্জনের ফযীলত হাসিল করার জন্য এবং সহীহভাবে দ্বীনের উপর চলার জন্য দ্বীনী ইলম অর্জনে সচেষ্ট হয়। হৃদয়ের আহ্বানে সাড়া দিয়েই ইলম অর্জনে নিমগ্ন হয়। তাই বয়স্ক ব্যক্তির অদম্য আগ্রহ, তীব্র বাসনা তাকে অনেক দ্রুত এগিয়ে নিয়ে যায় লক্ষ্যপানে।

তাছাড়া একজন বয়স্ক ব্যক্তির বুঝ ও অনুধাবন শক্তি তীক্ষè হয়ে থাকে। যে কোনো বিষয় অল্প সময়ে বোঝা ও অনুধাবন করা তার জন্য সহজ। ফলে দ্বীনের অনেক কিছুর বুঝ অল্প সময়েই তার অর্জন হয়, যা শেখাকে সহজ ও ত্বরান্বিত করে। সাথে সাথে বাস্তব অনুশীলনের মাধ্যমে ইলম অনুযায়ী আমল করার সাওয়াবও অর্জিত হয়।

পড়াশোনার ক্ষেত্রে আগ্রহ ও পূর্ণ মনোযোগ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আগ্রহ ও মনোযোগ পূর্ণমাত্রায় থাকলে দীর্ঘ সময়ের পড়া অল্প সময়েই আয়ত্ত হয়ে যায়। পরিণত বয়সের একজন ব্যক্তির ক্ষেত্রে দ্বীনী শিক্ষা অর্জনের সময় এ আগ্রহ ও মনোযোগ সাধারণত পূর্ণ মাত্রায় থাকে, যা অল্প সময়ে তাকে অনেক এগিয়ে দেয়।

বয়সকালে দ্বীন শেখার ক্ষেত্রে একটি চিন্তা অনেকের মনেই উঁকি দেয়। তা হলো, বয়স একটু বেশি হয়ে গেলে কিছু আর মনে থাকতে চায় না। কোনো কিছু মুখস্থ করতে হলে অনেক সময় লাগে। এ চিন্তার বাস্তবতা অস্বীকার করা যায় না। তবে এ বাস্তবতা মেনে নিয়েই বলছি, মানুষ যখন কোনো কাজের হিম্মত করে তার জন্য শতভাগ চেষ্টা ব্যয় করে তখন সে কাজটি আল্লাহ তাআলা তার জন্য সহজ করে দেন। একটা উদাহারণ দেই। ইমাম কাফফাল শাশী। ফিকহে শাফেয়ীর অবিসংবাদিত ইমাম।

আল্লামা সামআনী (রাহ.) তার ব্যাপারে লিখেছেন : তিনি ছিলেন জ্ঞান, প্রজ্ঞা, মুখস্থশক্তি এবং তাকওয়া-পরহেযগারিতে যুগের অনন্য ব্যক্তি। ফিকহে শাফেয়ীর মধ্যে তার যে প্রভাব ও অবদান রয়েছে তা তার যুগের অন্য কারো ছিল না। বিভিন্ন দেশ থেকে ফকীহগণ ইলম অর্জনের জন্য তার উদ্দেশে সফর করতেন। তার হাতে অনেক ইমাম গড়ে উঠেছেন। এ মহান মনীষীও ইলম শেখা শুরু করেছেন ৩০ বছর বয়সে। ইলম শেখা শুরু করার পর তিনি তার পেশা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে ইলম অর্জনে নিমগ্ন হন। (সিয়ারু আলামিন নুবালা ১৩/১৩০)।

বড়দের দ্বীন শিক্ষার দ্বারা এটা বুঝানো হচ্ছে না যে, সবকিছু ছেড়ে দিয়ে এখনই মাদরাসায় ভর্তি হয়ে যেতে হবে; বরং প্রতিদিনের ব্যস্ততার মাঝে কিছু সময় ফারেগ করে আমরা ইলম অর্জন করতে পারি। আমার পরিচিত একজনকে দেখেছি, কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হয়েও প্রতিদিন একটু একটু কুরআন মুখস্থ করতে করতে তিনি হাফেয হয়েছেন। আমরাও চাইলে কুরআন মুখস্থ করতে পারি; হাফেয হওয়া সম্ভব না হলে অন্তত কিছু অংশ তো হিফয করতে পারি।

কুরআন বিশুদ্ধভাবে পড়তে শেখা ও প্রয়োজনীয় মাসআলাগুলো জানা- এটা তো একজন মুসলমান হিসেবে আমাদের সবার দায়িত্ব। এর পাশাপাশি আরো কিছু দ্বীনী বিষয়ের জ্ঞানও উলামায়ে কেরামের সাথে পরামর্শ করে শেখা যেতে পারে। আল্লাহ তাআলা আমাদের মনে দ্বীন শেখার আগ্রহ দান করুন এবং সকলকে তাওফিক দান করুন। (আমীন)।


বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

বড়কে মান্য করুন, বৃদ্ধকে সম্মান করুন-১
সন্তানদের কিসের উপর রেখে যাচ্ছি-২
সন্তানদের কিসের উপর রেখে যাচ্ছি-১
কে অন্ধ, কে চক্ষুষ্মান
সে-ই স্বাধীন যে সিজদা করে এক আল্লাহকে
আরও

আরও পড়ুন

মাইলফলকের টেস্ট স্মরণীয় করে রাখতে চান মিরাজ

মাইলফলকের টেস্ট স্মরণীয় করে রাখতে চান মিরাজ

আজারবাইজানে কপ-২৯ সম্মেলনে ঠাকুরগাঁওয়ের ইএসডিওর সাইড ইভেন্ট অনুষ্ঠিত

আজারবাইজানে কপ-২৯ সম্মেলনে ঠাকুরগাঁওয়ের ইএসডিওর সাইড ইভেন্ট অনুষ্ঠিত

বেতন পেয়ে অবরোধ প্রত্যাহার করল বেক্সিমকোর শ্রমিকেরা

বেতন পেয়ে অবরোধ প্রত্যাহার করল বেক্সিমকোর শ্রমিকেরা

লেবাননে ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত ৪৭

লেবাননে ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত ৪৭

ট্রাম্প প্রশাসনের জন্য মনোনীত দুই সদস্যের বিরুদ্ধে যৌন কেলেঙ্কারির অভিযোগ

ট্রাম্প প্রশাসনের জন্য মনোনীত দুই সদস্যের বিরুদ্ধে যৌন কেলেঙ্কারির অভিযোগ

ট্রাম্প ব্যবসায়ী, আমরাও একজন ব্যবসায়ী পার্টনার চাই : টাইম ম্যাগাজিনকে ড. ইউনূস

ট্রাম্প ব্যবসায়ী, আমরাও একজন ব্যবসায়ী পার্টনার চাই : টাইম ম্যাগাজিনকে ড. ইউনূস

আদানির দুর্নীতি : এবার ভারতেই বির্তকের মুখে মোদি সরকার

আদানির দুর্নীতি : এবার ভারতেই বির্তকের মুখে মোদি সরকার

প্রেসিডেন্টর সঙ্গে তিন বাহিনী প্রধানের সৌজন্য সাক্ষাৎ

প্রেসিডেন্টর সঙ্গে তিন বাহিনী প্রধানের সৌজন্য সাক্ষাৎ

নিজ্জর হত্যায় মোদীর সংশ্লিষ্টতার দাবি কানাডার সংবাদমাধ্যমের ,‘হাস্যকর’ দাবি ভারতের

নিজ্জর হত্যায় মোদীর সংশ্লিষ্টতার দাবি কানাডার সংবাদমাধ্যমের ,‘হাস্যকর’ দাবি ভারতের

পাকিস্তানে যাত্রীবাহী গাড়িতে গুলি, নিহত ৪২

পাকিস্তানে যাত্রীবাহী গাড়িতে গুলি, নিহত ৪২

এক সপ্তাহে রিজার্ভ বাড়ল ৬ কোটি ১০ লাখ ডলার

এক সপ্তাহে রিজার্ভ বাড়ল ৬ কোটি ১০ লাখ ডলার

ইউক্রেন যুদ্ধ বৈশ্বিক সংঘাতে পরিণত হচ্ছে : পুতিন

ইউক্রেন যুদ্ধ বৈশ্বিক সংঘাতে পরিণত হচ্ছে : পুতিন

মুরগি-সবজিতে কিছুটা স্বস্তি, আলু এখনো চড়া

মুরগি-সবজিতে কিছুটা স্বস্তি, আলু এখনো চড়া

নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা, যা বলল যুক্তরাষ্ট্র

নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা, যা বলল যুক্তরাষ্ট্র

মার্কিন শ্রম প্রতিনিধি দল ঢাকা আসছে আজ

মার্কিন শ্রম প্রতিনিধি দল ঢাকা আসছে আজ

পার্থে শুরুতেই চাপে ভারত

পার্থে শুরুতেই চাপে ভারত

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ১৮ সদস্যবিশিষ্ট কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ১৮ সদস্যবিশিষ্ট কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা

সেনাকুঞ্জে খালেদা জিয়ার সঙ্গে জামায়াত আমীরের কুশল বিনিময়

সেনাকুঞ্জে খালেদা জিয়ার সঙ্গে জামায়াত আমীরের কুশল বিনিময়

সিঙ্গেল সিটের দাবিতে গভীর রাতেও হলের বাইরে ছাত্রীরা

সিঙ্গেল সিটের দাবিতে গভীর রাতেও হলের বাইরে ছাত্রীরা

ইসরাইলি হামলায় গাজায় নিহতের সংখ্যা ৪৪ হাজার অতিক্রম করলো

ইসরাইলি হামলায় গাজায় নিহতের সংখ্যা ৪৪ হাজার অতিক্রম করলো