ঢাকা   শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪ | ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

কৃপণতা : সফলতা আর সমৃদ্ধির জন্য এ বাধা দূর করতেই হবে-২

Daily Inqilab মাওলানা শিব্বীর আহমদ

২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১২:০৫ এএম | আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১২:০৯ এএম

সূরা বাকারার ২৫৪ নং আয়াত, যা আমরা গত আলোচনায় উদ্ধৃত করে এসেছি, তাতে আল্লাহ তাআলা সতর্ক করে দিয়েছেন আমাদেরকে এই বলে- দুনিয়াতে তোমাদেরকে যে সম্পদ দেয়া হয়েছে তার ব্যবহার এবং তা থেকে উপকৃত হতে চাইলে তা ব্যয় করতে হবে দুনিয়াতেই। মৃত্যু-পরবর্তী জীবনে এ সম্পদ ব্যয় করার কোনো সুযোগ থাকবে না। সেখানে ক্রয়-বিক্রয় বলতে কিছু থাকবে না। আবার দুনিয়ার এ জীবনে একজনের হাতে সম্পদ দেখে আরো দশজন তার বন্ধু বনে যায়। ন্যায়-অন্যায়ের পরোয়া না করে তার পক্ষে তারা দাঁড়িয়ে যায়।

সম্পদকে কেন্দ্র করে এই যে বন্ধুত্ব, তাও এ দুনিয়াতেই সীমাবদ্ধ। দুনিয়াতে আল্লাহর দান এ সম্পদকে কাজে লাগিয়ে যদি তাঁর সন্তুষ্টি হাসিল করা না যায়, পরকালে তাহলে এ সম্পদের ফল ভোগ করার কোনো সুযোগ থাকবে না। যেখানে যতটুকু প্রয়োজন, সম্পদ ব্যয় করতে হবে। কী দুনিয়াবি ব্যক্তিগত প্রয়োজন আর কী ইবাদত; কার্পণ্যকে আশ্রয় দেয়া যাবে না কোথাও। ব্যক্তিগত প্রয়োজনে মুমিনের সম্পদ ব্যয়ও কীভাবে তার জন্যে পুণ্য বয়ে আনে, লক্ষ্য করুন- রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : সন্দেহ নেই, আল্লাহর সন্তুষ্টির প্রত্যাশায় তুমি যা কিছুই ব্যয় কর, তাতে তুমি পুরস্কৃত হবেই, এমনকি তোমার স্ত্রীর মুখে যে খাবার তুমি তুলে দাও তাতেও (রয়েছে তোমার জন্যে পুরস্কার)। (সহীহ বুখারী : ১২৯৫)।

এই হচ্ছে মুমিনের সম্পদ ব্যয়ের ফল। নিজের ক্ষুধা মেটানোর জন্যেও যখন সে কিছু খাবে, তার লক্ষ্য তখন থাকে শারীরিক শক্ত অর্জন, যা কাজে লাগিয়ে সে আল্লাহপাকের ইবাদত করতে পারবে। স্ত্রী-সন্তানাদির জন্যে যখন সে কোনোকিছু কিনে নিয়ে আসে, তার লক্ষ্য থাকে আল্লাহপাকের পক্ষ থেকে প্রদত্ত দায়িত্ব পালন এবং তা দিয়ে তাঁর সন্তুষ্টি অর্জন। এমনকি নতুন কাপড়চোপড় যখন সে কিনতে যায় তখনো তার মাথায় থাকে আল্লাহ তাআলার দেয়া নিআমতের প্রকাশ ও কৃতজ্ঞতার কথা।

আর এ সম্পদ ব্যয় যদি হয় ফরয ইবাদত যাকাত আদায়ের জন্য, ওয়াজিব কুরবানী কিংবা সদাকাতুল ফিত্র আদায়ের জন্যে, এ সম্পদ ব্যয় যদি হয় আল্লাহ তাআলার অভাবী দুঃখী বান্দাদের অভাব ও দুঃখ ঘুচাবার জন্যে, আল্লাহর দ্বীন প্রচারের জন্যে, যদি তা ব্যয় হয় তাঁর সৃষ্টির সেবায় রাস্তার ধারে নলকূপ স্থাপনে কিংবা পথিকদের জন্যে কোনো বিশ্রামাগার নির্মাণে, তাহলে তো এর পুরস্কারের কথা বলাই বাহুল্য। শর্ত একটাই- নিয়তটাকে খালেস করে নিতে হবে।

কিন্তু স্বভাবজাত কার্পণ্যকে যদি জয় করা না যায়, কার্পণ্য যদি ইবাদত পালনে এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রদত্ত দায়িত্ব আদায়ে বাধা হয়ে দাঁড়ায়, তাহলে তার অশুভ পরিণতির কথাও বর্ণিত হয়েছে এ পাক কুরআনেই। কোথাও বলা হয়েছে লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তির কথা, কোথাও বলা হয়েছে সম্পদকে বেড়ি বানিয়ে তাদের গলায় ঝুলিয়ে দেয়ার কথা, কোথাওবা সেই সম্পদকে জাহান্নামের আগুনে উত্তপ্ত করে তা দিয়ে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে ছেকা দেয়ার কথা।
ইরশাদ হয়েছে : আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে যা দিয়েছেন, যারা তা নিয়ে কার্পণ্য করে, তারা যেন কিছুতেই মনে না করে- এটা তাদের জন্যে কল্যাণকর; বরং তা তাদের জন্যে অকল্যাণকর। তারা যা নিয়ে কৃপণতা করেছে অচিরেই তা তাদের গলায় বেড়ি বানিয়ে দেয়া হবে। আর আকাশসমূহ ও পৃথিবীর উত্তরাধিকার তো আল্লাহর। আল্লাহ তোমাদের কৃতকর্ম সম্পর্কে অবহিত। (সূরা আলে ইমরান : ১৮০)।

আরেক আয়াতে বলা হয়েছে : আর যারা স্বর্ণ ও রৌপ্য পুঞ্জীভূত করে এবং তা আল্লাহর পথে ব্যয় করে না, তাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির সুসংবাদ দাও; যেদিন জাহান্নামের আগুনে তা উত্তপ্ত করা হবে এবং তা দিয়ে তাদের ললাট, পার্শ¦দেশ ও পৃষ্ঠদেশে দাগ দেয়া হবে। (তাদেরকে তখন বলা হবে,) এটাই সে সম্পদ, যা তোমরা নিজেদের জন্যে পুঞ্জীভূত করতে। সুতরাং তোমরা যা পুঞ্জীভূত করেছিলে তার স্বাদ আস্বাদন কর। (সূরা তাওবা : ৩৪-৩৫)।

কার্পণ্য নানা স্তরের হতে পারে। কেউ হয়ত নিজের প্রয়োজনে কিংবা ফরয-ওয়াজিব ইবাদতের ক্ষেত্রে সম্পদ ঠিকই ব্যয় করে, কিন্তু অন্যের প্রয়োজনে, দুঃস্থ-অভাবীদের সেবায় দু’পয়সাও তার পকেট থেকে বের হয় না। কেউ হয়ত নিজের প্রয়োজনের খরচটুকুও সহজে করতে পারে না। এর পেছনে কারণ তো একটাই- শয়তান তাকে ভয় দেখায়, সম্পদ ব্যয় করলে একসময় দরিদ্র হয়ে পড়বে।


বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

বড়কে মান্য করুন, বৃদ্ধকে সম্মান করুন-১
সন্তানদের কিসের উপর রেখে যাচ্ছি-২
সন্তানদের কিসের উপর রেখে যাচ্ছি-১
কে অন্ধ, কে চক্ষুষ্মান
সে-ই স্বাধীন যে সিজদা করে এক আল্লাহকে
আরও

আরও পড়ুন

মাইলফলকের টেস্ট স্মরণীয় করে রাখতে চান মিরাজ

মাইলফলকের টেস্ট স্মরণীয় করে রাখতে চান মিরাজ

আজারবাইজানে কপ-২৯ সম্মেলনে ঠাকুরগাঁওয়ের ইএসডিওর সাইড ইভেন্ট অনুষ্ঠিত

আজারবাইজানে কপ-২৯ সম্মেলনে ঠাকুরগাঁওয়ের ইএসডিওর সাইড ইভেন্ট অনুষ্ঠিত

বেতন পেয়ে অবরোধ প্রত্যাহার করল বেক্সিমকোর শ্রমিকেরা

বেতন পেয়ে অবরোধ প্রত্যাহার করল বেক্সিমকোর শ্রমিকেরা

লেবাননে ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত ৪৭

লেবাননে ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত ৪৭

ট্রাম্প প্রশাসনের জন্য মনোনীত দুই সদস্যের বিরুদ্ধে যৌন কেলেঙ্কারির অভিযোগ

ট্রাম্প প্রশাসনের জন্য মনোনীত দুই সদস্যের বিরুদ্ধে যৌন কেলেঙ্কারির অভিযোগ

ট্রাম্প ব্যবসায়ী, আমরাও একজন ব্যবসায়ী পার্টনার চাই : টাইম ম্যাগাজিনকে ড. ইউনূস

ট্রাম্প ব্যবসায়ী, আমরাও একজন ব্যবসায়ী পার্টনার চাই : টাইম ম্যাগাজিনকে ড. ইউনূস

আদানির দুর্নীতি : এবার ভারতেই বির্তকের মুখে মোদি সরকার

আদানির দুর্নীতি : এবার ভারতেই বির্তকের মুখে মোদি সরকার

প্রেসিডেন্টর সঙ্গে তিন বাহিনী প্রধানের সৌজন্য সাক্ষাৎ

প্রেসিডেন্টর সঙ্গে তিন বাহিনী প্রধানের সৌজন্য সাক্ষাৎ

নিজ্জর হত্যায় মোদীর সংশ্লিষ্টতার দাবি কানাডার সংবাদমাধ্যমের ,‘হাস্যকর’ দাবি ভারতের

নিজ্জর হত্যায় মোদীর সংশ্লিষ্টতার দাবি কানাডার সংবাদমাধ্যমের ,‘হাস্যকর’ দাবি ভারতের

পাকিস্তানে যাত্রীবাহী গাড়িতে গুলি, নিহত ৪২

পাকিস্তানে যাত্রীবাহী গাড়িতে গুলি, নিহত ৪২

এক সপ্তাহে রিজার্ভ বাড়ল ৬ কোটি ১০ লাখ ডলার

এক সপ্তাহে রিজার্ভ বাড়ল ৬ কোটি ১০ লাখ ডলার

ইউক্রেন যুদ্ধ বৈশ্বিক সংঘাতে পরিণত হচ্ছে : পুতিন

ইউক্রেন যুদ্ধ বৈশ্বিক সংঘাতে পরিণত হচ্ছে : পুতিন

মুরগি-সবজিতে কিছুটা স্বস্তি, আলু এখনো চড়া

মুরগি-সবজিতে কিছুটা স্বস্তি, আলু এখনো চড়া

নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা, যা বলল যুক্তরাষ্ট্র

নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা, যা বলল যুক্তরাষ্ট্র

মার্কিন শ্রম প্রতিনিধি দল ঢাকা আসছে আজ

মার্কিন শ্রম প্রতিনিধি দল ঢাকা আসছে আজ

পার্থে শুরুতেই চাপে ভারত

পার্থে শুরুতেই চাপে ভারত

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ১৮ সদস্যবিশিষ্ট কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ১৮ সদস্যবিশিষ্ট কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা

সেনাকুঞ্জে খালেদা জিয়ার সঙ্গে জামায়াত আমীরের কুশল বিনিময়

সেনাকুঞ্জে খালেদা জিয়ার সঙ্গে জামায়াত আমীরের কুশল বিনিময়

সিঙ্গেল সিটের দাবিতে গভীর রাতেও হলের বাইরে ছাত্রীরা

সিঙ্গেল সিটের দাবিতে গভীর রাতেও হলের বাইরে ছাত্রীরা

ইসরাইলি হামলায় গাজায় নিহতের সংখ্যা ৪৪ হাজার অতিক্রম করলো

ইসরাইলি হামলায় গাজায় নিহতের সংখ্যা ৪৪ হাজার অতিক্রম করলো