রব্বুল আলামীন যাদের নিয়ে গর্ব করেন-১
১৪ মে ২০২৪, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ১৪ মে ২০২৪, ১২:০৩ এএম
বড় কেউ যদি কাউকে স্মরণ করে, সে গর্বিত হয় এবং নিজেকে ধন্য মনে করে। বরেণ্য কোনো মনীষী যদি কাউকে ভালবাসে, কাছে টেনে নেয়, সে যারপরনাই আনন্দিত হয়। তাহলে ওই সব মানুষের কত বড় সৌভাগ্য, স্বয়ং রাব্বুল আলামীন যাদের ভালবাসেন, যাদের নিয়ে ফেরেশতাদের সঙ্গে গর্ব করেন! হ্যাঁ, কিছু ভাগ্যবান মানুষ আছেন, আল্লাহ তা’আলা যাদের প্রশংসা করেন, তাদের আমল নিয়ে গর্ব করেন। যেসব খোশকিসমত বান্দা রাতের শেষ প্রহরে আরামের বিছানা ত্যাগ করে আপন রবের সামনে দাঁড়িয়ে যায়, ঘুমের আরাম ঝেড়ে ফেলে রোনাযারি ও ইবাদত-বন্দেগীতে মগ্ন হয়ে যায়, স্বয়ং আল্লাহ তা’আলা তাদের মহব্বত করেন, তাদের প্রশংসা করেন; এমনকি তাদেরকে নিয়ে ফেরেশতাদের সাথে গর্ব করেন।
‘ইবাদুর রহমান’ তথা দয়াময় আল্লাহর প্রিয় ও নৈকট্যপ্রাপ্ত বান্দা। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ উপাধি। দুনিয়া ও আখেরাতের সর্বশ্রেষ্ঠ মর্যাদা। যারা এই মহিমান্বিত অভিধায় ভূষিত হবেন তাদের একটি গুণ হল, তারা রাতের শেষ সময়টাকে রহমানের ইবাদত-বন্দেগীতে অতিবাহিত করেন। ইরশাদ হয়েছে : তারা রহমানের বান্দা, যারা ভূমিতে নম্রভাবে চলাফেরা করে, অজ্ঞলোক যখন তাদেরকে লক্ষ্য করে (অজ্ঞতাসুলভ) কথা বলে তখন তারা শান্তিপূর্ণ কথা বলে। এবং যারা রাত অতিবাহিত করে নিজ প্রতিপালকের সামনে (কখনো) সিজদারত অবস্থায় এবং (কখনো) দণ্ডায়মান অবস্থায়। (সূরা ফুরকান : ৬৩-৬৪)।
আবুদ দারদা রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : তিন শ্রেণির মানুষকে আল্লাহ তা’আলা মহব্বত করেন; তাদের প্রতি হাসেন এবং তাদের ব্যাপারে খুশি প্রকাশ করেন। এ তিন শ্রেণির মধ্যে দুই শ্রেণিই হল তাহাজ্জুদগুজার। এক শ্রেণির পরিচয় দেওয়া হয়েছে এভাবে : যার রয়েছে সুন্দরী স্ত্রী এবং নরম বিছানা। কিন্তু সে নিজের চাহিদা পরিত্যাগ করে রাতের বেলা উঠে যায়; আমাকে স্মরণ করে, আমার সাথে গোপন আলাপ করে। অথচ ইচ্ছে করলে সে ঘুমিয়ে থাকতে পারত।
কুরআন কারীমের বহু স্থানে আল্লাহ তা’আলা ঐসব বান্দার প্রশংসামূলক আলোচনা করেছেন, যারা রাতের শেষ প্রহরে ঘুম থেকে জেগে ওঠে এবং নামায, দুআ-যিকির ও ইস্তিগফারে মগ্ন থাকে। মুত্তাকী বান্দাদের প্রশংসা করতে গিয়ে আল্লাহ তা’আলা বলেন : মুত্তাকীগণ অবশ্যই উদ্যানরাজি ও প্রস্রবণসমূহের মাঝে থাকবে। তারা উপভোগ করতে থাকবে তাদের প্রতিপালক তাদেরকে যা-কিছু দেবেন। পার্থিব জীবনে তারা ছিল সৎকর্মশীল। তারা রাতের অল্প সময়ই নিন্দ্রায় অতিবাহিত করত এবং তারা সাহরীর সময় ইস্তিগফারে রত থাকত। (সূরা যারিআত : ১৫-১৮)।
বান্দা আল্লাহকে ভালবাসবে, আল্লাহ বান্দাকে ভালবাসবেন- এটাই তো বান্দার দিলের তামান্না, মুমিনের হৃদয়ের প্রত্যাশা। যারা শেষ রজনীতে আল্লাহর সামনে দাঁড়িয়ে যায়, তাঁর ইবাদতে মশগুল থাকে, তারা আল্লাহ তা’আলার ওলী হয়ে যান, আল্লাহ তাদেরকে আপন মহব্বত ও ভালবাসায় সিক্ত করেন। আবু যর গিফারী রা. বলেন, নবী (সা.) বলেছেন : তিন শ্রেণির মানুষকে আল্লাহ তা’আলা ভালবাসেন। এরপর ওই তিন শ্রেণির বিবরণ দিয়েছেন। তাদের এক শ্রেণি হলেন, যারা রাতের শেষভাগে ইবাদত-বন্দেগী ও যিকির-তিলাওয়াতে মগ্ন থাকে, এমনকি সফর ও ক্লান্তির হালতেও।
হাদীস শরীফের ভাষ্য হল : এক কাফেলা রাতভর সফর করেছে। সফর করতে করতে যখন দুনিয়ার সবকিছু থেকে ঘুম তাদের প্রিয় হয়ে উঠেছে, তখন যাত্রা বিরতি দিয়েছে এবং (বিছানায়) মাথা রেখেছে। এ অবস্থায় তাদের একজন নামাযে দাঁড়িয়ে আমার কাছে অনুনয়-বিনয় করছে এবং আমার আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করছে। (মুসনাদে আহমাদ : ২১৩৫৫)।
আল্লাহ তা’আলা যখন মানব সৃষ্টির ইচ্ছা করেন, পরামর্শ আকারে ফেরেশতাদের সামনে বিষয়টি পেশ করলেন। ফেরেশতাগণ বললেন, এরা তো যমিনে ফাসাদ সৃষ্টি করবে, খুনখারাবি করবে। আপনার স্তুতিগান ও উপাসনার জন্য তো আমরাই যথেষ্ট। আল্লাহ তা’আলা সংক্ষিপ্ত বাক্যে সারগর্ভ জবাব দিয়েছিলেন যে, আমি যা জানি তোমরা তা জানো না।
এখন বান্দা যদি এমন কোনো কর্ম সম্পাদন করে, যাতে আল্লাহ তা’আলার প্রতি নিরলস আনুগত্য প্রকাশ পায় এবং তাঁর প্রতি গভীর ভক্তি-মহব্বত যাহের হয়, তখন আল্লাহ তা’আলা খুশি হন এবং ফেরেশতাদের সাথে তার আলোচনা করেন। এই ধরনের মহৎ আমলের একটি হল রাতের শেষ অংশের আমল। যারা রাতের শেষ প্রহরে জাগ্রত হয়ে আল্লাহর সামনে দণ্ডায়মান হয় আল্লাহ তাদের নিয়ে গর্ব করেন, ফেরেশতাদের সামনে তাদের আলোচনা করেন।
আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বলেন, নবী (সা.) বলেছেন : আমাদের রব আল্লাহ তাআলা দুই ব্যক্তির প্রতি অত্যন্ত খুশি হন (তন্মধ্যে এক ব্যক্তি হল)- ওই ব্যক্তি, যে লেপ ও বিছানা ছেড়ে নিজের প্রিয়মানুষ ও পরিবারের মাঝ থেকে (শেষ রাতে) নামাযের জন্য উঠে গেছে। আল্লাহ তাআলা ফেরেশতাদের ডাক দিয়ে বলেন, হে আমার ফেরেশতারা! আমার এ বান্দার প্রতি লক্ষ্য কর। সে লেপ ও বিছানা ছেড়ে নিজের প্রিয়মানুষ ও পরিবারের মাঝ থেকে নামাযের জন্য দাঁড়িয়ে গেছে, আমার নি’আমতের আশায় এবং আমার আযাবের ভয়ে!... (মুসনাদে আবু ইয়ালা : ৫৩৬১)।
বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
বাংলাদেশের বিপক্ষে যে একাদশ দিয়ে মাঠে নামছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ
কিশোরগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ার কামালসহ তিনজন গ্রেফতার
প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানের সাক্ষাৎ
বেইজিং সংস্কৃতি ও পর্যটন ব্যুরো ও আটাবের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত
উইন্ডিজের বিপক্ষে মাঠে নামছে বাংলাদেশ
গাজায় যুদ্ধবিরতি ছাড়া বন্দী বিনিময় হবে না : হামাস
শান্তিরক্ষা মিশন মোতায়েন করতে চায় জাতিসংঘ হাইতিতে
চকরিয়ার বিএনপি নেতা আবু তাহের চৌধুরীর মৃত্যুতে সালাহউদ্দিন আহমদ ও হাসিনা আহমদের শোক
পুতিন পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে দ্বিধা করবেন না : সার্বিয়া
ক্লাইমেট অর্থায়ন ইস্যুতে দেশগুলোর মধ্যে দ্বন্দ্ব
লালমোহনে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত যুবদল নেতা চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু
ট্রাম্পের অ্যাটর্নির বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন আটকে গেল
‘ফিলিস্তিনের পর ইরান, সউদী ও তুরস্ক হবে পরবর্তী টার্গেট’
প্রতি বছর ৩ লাখ নথিবিহীন অভিবাসীকে বৈধতা দানের ঘোষণা স্পেনের
প্রেম-ভালোবাসা নিয়ে সবচেয়ে অসুখী দেশ জাপান-কোরিয়া
মুসলিম চিকিৎসক
শীর্ষে দিল্লি
সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সংবর্ধনা
ইসলামিক ফাউন্ডেশন এর বোর্ড অব গভর্নর সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সম্বর্ধনা
বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে আঞ্চলিক সহযোগিতার আহ্বান