সমৃদ্ধি অর্জনে দান-খয়রাতের ভূমিকা
০৩ জুন ২০২৪, ১২:০০ এএম | আপডেট: ০৩ জুন ২০২৪, ১২:০০ এএম
যে সকল উপাত্ত বা উপকরণ সম্পদ বৃদ্ধি ও সমৃদ্ধির পথ সুগম করে তোলে তন্মধ্যে দান-খয়রাত বা আল্লাহর পথে ব্যয় করা অন্যতম। কোরআনুল কারীমে দান-খয়রাত বুঝাতে তিনটি শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে। যথা- (১) ইনফাক : ব্যয় করা, খরচ করা। (২) ইতআম : খাওয়ানো, খাদ্য দান করা এবং (৩) সাদাকাহ : দান-খয়রাত করা। আল্লাহর পথে ব্যয় করা বলতে উল্লিখিত তিন শ্রেণীর দানকেই বুঝায়। চাই তা ফরজ হোক, ওয়াজিব হোক, নফল অথবা মোস্তাহাব হোক।
এ প্রসঙ্গে কোরআনুল কারীমে ইরশাদ হয়েছে: ‘হে ঈমানদারগণ, তোমরা নিজেদের উপার্জিত বস্তু থেকে এবং আমি ভূমি থেকে তোমাদের জন্য যা উৎপন্ন করেছি তা থেকে উৎকৃষ্ট বস্তু খরচ বা দান করো।’ (সূরা বাকারাহ : ২৬৭)। এই দানের সওয়াব এক থেকে শুরু করে সাত শ’ গুন পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়। আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে : ‘যারা নিজেদের ধন-সম্পদ আল্লাহর পথে খরচ করে, তাদের উপমা একটি শস্য বীজ, যা সাতটি শীষ উৎপাদন করে, প্রত্যেক শীষে একশত শস্যকনা, আল্লাহ যাকে ইচ্ছা বহুগুনে বর্ধিত করে দেন, আল্লাহ প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ।’ (সূরা বাকারাহ : ২৬১)।
এই আয়াতের কারীমার অর্থ ও মর্মের প্রতি গভীর দৃষ্টিতে তাকালে সহজেই অনুধাবন করা যায় যে, আল্লাহর পথে দান করার সওয়াব বহুগুনে বর্ধিত করা হয়। তবে, এর জন্য তিনটি শর্ত রয়েছে। প্রথমত : দান-সাদাকাহ যোগ্য ও উপযুক্ত নয় এমন ব্যক্তিকে দিলে দান-সাদাকাহ ব্যর্থ হয়ে যাবে। দ্বিতীয়ত : যে ব্যক্তি দান-খয়রাত করবে তাকে সৎ ও সৎ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হতে হবে। নিয়তের মাঝে কোনোরূপ আবিলতা থাকতে পারবে না।
যদি যশ অর্জনের জন্য বা লোক দেখানোর জন্য দান-খয়রাত করে তা বিফলে যাবে। এর দ্বারা কোনো পুণ্য লাভ করা যাবে না। সে ব্যক্তি অজ্ঞ ও মূর্খ কৃষকের মতো, যে অনুর্বর বা মরুভূমিতে বীজ বপন করে, যার ফলে বীজ মরে যায়, অঙ্কুর উদগম হয় না। তৃতীয়ত : আল্লাহর পথে যে মাল-সম্পদ খরচ করবে তা পবিত্র হালাল হতে হবে। হাদিস শরীফে সুস্পষ্টভাবে বলে দেয়া হয়েছে যে, আল্লাহপাক পবিত্র, তিনি হালাল বস্তু ব্যতীত কিছুই কবুল করেন না।
বস্তুত, আল্লাহপাকের দরবারে দান-খয়রাত গ্রহণযোগ্য হওয়ার দুটি শর্ত রয়েছে। এর একটি হলো, দান-খয়রাত করে অনুগ্রহ প্রকাশ করা যাবে না, মনোতুষ্টির ভাব দেখানো যাবে না। আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত আল কোরআনে ইরশাদ করেছেন, ‘যারা নিজেদের ধন-সম্পদ আল্লাহর পথে ব্যয় করে এবং যা ব্যয় করে তা মানুষের কাছে বলে বেড়ায় না, এবং গ্রহীতাকেও ক্লেশ দেয় না, তাদের জন্য তাদের প্রতিপালকের নিকট পুরস্কার রয়েছে। তাদের কোনো ভয় নেই এবং তারা চিন্তান্বিতও হবে না। (সূরা বাকারাহ : ২৬৯)।
মোট কথা, গ্রহীতার সাথে এমন কোনো আচরণ করা যাবে না, যাতে সে নিজেকে হেয়, ঘৃণিত মনে করে ও কষ্ট পায়। আর দ্বিতীয়টি হলো, দান-খয়রাত রাতে ও দিনে এবং প্রকাশ্যে ও গোপনে মুক্ত মনে আদায় করতে হবে। আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত আল কোরআনে এ প্রসঙ্গে ইরশাদ করছেন, ‘যারা নিজেদের ধন-সম্পদ রাতে ও দিনে, গোপনে ও প্রকাশ্যে খরচ করে তাদের পুণ্যফল তাদের প্রতিপালকের নিকট রয়েছে। তাদের কোনো ভয় ও শঙ্কা নেই এবং তারা দুশ্চিন্তাগ্রস্তও হবে না।’ (সূরা বাকারাহ : ২৭৪)।
বস্তুত, আল্লাহর পথে খরচকারীগণ পরকালীন অধিক নেকি লাভের পাশাপাশি দুনিয়ার জীবনেও প্রচুর অর্থ-সম্পদ লাভ করে থাকেন। এতদ প্রসঙ্গে আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত আল কোরআনে ঘোষণা করছেন, ‘তোমরা যা কিছু (আল্লাহর পথে) খরচ করো তিনি তার বিনিময় প্রদান করেন। তিনি উত্তম রিজিক (সম্পদ) দাতা।’ (সূরা সাবা : ৩৯)। এ আয়াতের ব্যাখ্যায় ইমাম ইবনে কাছির (রাহ.) বলেছেন, যারা আল্লাহর পথে খরচ করে, আল্লাহপাক তাদেরকে এর বিনিময় দুনিয়া এবং আখেরাতে উভয় জাহানেই প্রদান করেন।
এ প্রসঙ্গে হজরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, প্রতিদিন সকালে দু’জন ফেরেশতা আল্লাহর বান্দাহর নিকট আসে। তাদের একজন এই দোয়া করে, হে আল্লাহ, তোমার পথে দানকারীকে উত্তম বিনিময় প্রদান করো। আর দ্বিতীয়জন বলে, হে আল্লাহ, তোমার পথে যারা খরচ করে না তাদের ধন-সম্পদ ধ্বংস করে দাও। (সহিহ বুখারি : খ. ৩, পৃ. ৩০৪)। এখানে উত্তম বিনিময় দান করার অর্থ হচ্ছে দুনিয়া এবং আখেরাতে উভয় জাহানে দান করা। সুতরাং সমৃদ্ধি অর্জনে দান-খয়রাতের ভূমিকা যে বিশিষ্ট স্থান দখল করে রয়েছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
বাংলাদেশের বিপক্ষে যে একাদশ দিয়ে মাঠে নামছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ
কিশোরগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ার কামালসহ তিনজন গ্রেফতার
প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানের সাক্ষাৎ
বেইজিং সংস্কৃতি ও পর্যটন ব্যুরো ও আটাবের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত
উইন্ডিজের বিপক্ষে মাঠে নামছে বাংলাদেশ
গাজায় যুদ্ধবিরতি ছাড়া বন্দী বিনিময় হবে না : হামাস
শান্তিরক্ষা মিশন মোতায়েন করতে চায় জাতিসংঘ হাইতিতে
চকরিয়ার বিএনপি নেতা আবু তাহের চৌধুরীর মৃত্যুতে সালাহউদ্দিন আহমদ ও হাসিনা আহমদের শোক
পুতিন পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে দ্বিধা করবেন না : সার্বিয়া
ক্লাইমেট অর্থায়ন ইস্যুতে দেশগুলোর মধ্যে দ্বন্দ্ব
লালমোহনে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত যুবদল নেতা চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু
ট্রাম্পের অ্যাটর্নির বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন আটকে গেল
‘ফিলিস্তিনের পর ইরান, সউদী ও তুরস্ক হবে পরবর্তী টার্গেট’
প্রতি বছর ৩ লাখ নথিবিহীন অভিবাসীকে বৈধতা দানের ঘোষণা স্পেনের
প্রেম-ভালোবাসা নিয়ে সবচেয়ে অসুখী দেশ জাপান-কোরিয়া
মুসলিম চিকিৎসক
শীর্ষে দিল্লি
সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সংবর্ধনা
ইসলামিক ফাউন্ডেশন এর বোর্ড অব গভর্নর সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সম্বর্ধনা
বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে আঞ্চলিক সহযোগিতার আহ্বান