জবানের অপব্যবহার ধ্বংস ডেকে আনে
০৪ জুন ২০২৪, ১২:০৭ এএম | আপডেট: ০৪ জুন ২০২৪, ১২:০৭ এএম
বাকশক্তি আল্লাহ তাআলার বড় নিআমত ও মহা দান। বান্দার বহুবিধ কল্যাণ এতে নিহিত। বহুমুখী প্রয়োজন পূরণের লক্ষ্যে তিনি এ নিআমত বান্দাকে দান করেছেন। অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দিয়ে এসব প্রয়োজন পূরণ করা সম্ভব নয়। যবানের নিআমত থেকে বঞ্চিত হলে অন্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ এর প্রতিনিধিত্ব করতে পারে না। কোনো কিছুই যবানের বিকল্প হতে পারে না।
মানুষের মনের ভাব, দুঃখ-কষ্ট, ব্যথা-বেদনা, আনন্দ-উল্লাস প্রকাশে যবান অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। বলতে গেলে যবান সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের মুখপাত্র। বোবার মনের কত দুঃখ-কষ্ট, কত আনন্দ-বেদনা, কিন্তু কাউকে জানাতে পারে না, জীবনের প্রতিটি ধাপে যার বিরূপ প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। যে বাকশক্তি হারিয়েছে সে-ই উপলব্ধি করতে পারে- যবান কত বড় নিআমত!
সাধারণত যার মুখে জড়তা আছে, স্বতঃস্ফূর্তভাবে কথা বলতে পারে না তার জীবনেই তো কত সমস্যা। কত কষ্ট পেতে হয় তাকে। কত জায়গায় লজ্জা পেতে হয়। অথচ আমরা নির্বিচারে যত্রতত্র যবানের অপব্যবহার করে চলেছি। বস্তুত, এত বড় নিআমতের উপলব্ধি আমাদের মাঝে না থাকার কারণ হলো বিনামূল্যে কোনো কষ্ট স্বীকার ছাড়াই এ নিআমত আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে দান করেছেন।
হায়! আমরা যদি একটু বুঝতাম, কত দামী এ নিআমত! রব্বে কারীমের কত বড় দান! একটু ভেবেছি কি- কীভাবে কথা বলছি? এত সুন্দর আওয়াজ কীভাবে বের হয়? কোথা থেকে এ ধ্বনিগুলো উচ্চারিত হয়? আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে কত বড় নিআমত দান করেছেন আর আমরা তাঁর নাফরমানিতে লিপ্ত। এ যবানের কত অপব্যবহার করছি হিসাবও নেই। কত পাপ এ যবান দিয়ে হচ্ছে, আমাদের অনুভূতিও নেই। একটু ভেবেছি কি, কথা বলার জন্য যদি মিনিট হিসাব করে বিল পরিশোধ করতে হত, তাহলে জীবনটা কত দুর্বিষহ হত।
আল্লাহ আমাদের এই নিআমত এমনিতেই দিয়ে দিয়েছেন। কথা বলতে কোনো কষ্টও পোহাতে হয় না। তাই অনেক বেশি শুকরিয়া আদায় করা প্রয়োজন। অথচ আমরা নির্বিচারে যবানের প্রতি জুলুম করে যাচ্ছি। নাফরমানির কাজে ব্যবহার করছি। এ যবান দিয়ে খালেকের বিরুদ্ধাচরণ করছি। এমনকি শিরকী-কুফরী কথাও যারা বলছে এই যবান ব্যবহার করেই বলছে। অনুভূতি-অনুশোচনাও নেই। রাসূল (সা.) বলেন : বান্দা চিন্তা-ভাবনা ছাড়া এমন কথা বলে ফেলে, যার কারণে সে (পূর্ব-পশ্চিমের দূরত্ব পরিমাণ) জাহান্নামের অতলে নিক্ষিপ্ত হবে। (সহীহ বুখারী : ৬৪৭৭)।
বহু ক্ষেত্রে যবানের অপব্যবহার গভীর সম্পর্ককেও তছনছ করে দেয়। নিবিড় বন্ধুত্বের মাঝেও ফাটল ধরায়। দীর্ঘদিনের আত্মীয়তাকে মুহূর্তে শেষ করে দেয়। হৃদয়কে জর্জরিত করে। অন্তরকে ক্ষত-বিক্ষত করে, যা কখনও মানুষ ভুলতে পারে না। কারণ, যবানের আঘাতের ঘা শুকায় না। কবি বলেছেন : বর্শার ফলার আঘাতের উপশম হয়। তবে যবানের আঘাতের কোনো উপশম নেই।
যবানের সঠিক ব্যবহার যেমন প্রভূত কল্যাণ বয়ে আনে তেমনি এর অপব্যবহার ধ্বংস ডেকে আনে। এজন্যে রাসূল (সা.) উম্মতের যবানের ব্যবহার নিয়ে বেশি উদ্বিগ্ন হতেন। হযরত সুফিয়ান ইবনে আব্দুল্লাহ আসসাকাফী (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ...আমি রাসূল (সা.)-কে বললাম, আমার কোন্ বিষয়ে আপনি সবচেয়ে বেশি আশঙ্কা করেন। তখন তিনি নিজ জিহ্বা ধরলেন এরপর বললেন, এটা। (মুসনাদে আহমাদ : ১৫৪১৯)।
যবান খুব দামী নিআমত। সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের মাঝে যবানের বিশেষ মর্যাদা রয়েছে। পারস্পরিক কথাবার্তা, লেনদেন, আলাপ-আলোচনা, সব কিছুতেই মুখের ভূমিকা অপরিসীম। এটা সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের প্রতিনিধি ও মুখপাত্র। যবানের যথাযথ ব্যবহারের দ্বারা দুনিয়া-আখেরাতে মানুষ যেভাবে উপকৃত হতে পারে তদ্রƒপ এর অপব্যবহার দ্বারা ডেকে আনতে পারে ধ্বংস। এই যবান যেমন সত্তর বছরের বৃদ্ধকে ঈমানের স্বীকারোক্তি দ্বারা জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি দেয় তেমনি কুফরের উচ্চারণ দ্বারা তা মানুষকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করে।
যার বাকশক্তি মজবুত এবং যে সুন্দর উপস্থাপনে পারঙ্গম যবানের অপব্যবহারে তার ক্ষতির আশঙ্কাও ততো বেশি। তাই তো রাসূল (সা.) তাঁর উম্মতকে সতর্ক করে দিয়েছেন। উম্মে সালামা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি নবীজী (সা.) থেকে বর্ণনা করেন, একবার নবীজী (সা.) ঘরের দরজায় কিছু মানুষকে বিবাদে লিপ্ত দেখে বললেন : আমিও মানুষ। আমার কাছে (বিচার নিয়ে) বাদী-বিবাদী আসে। কখনো এমন হয় যে, তোমাদের একজনের চেয়ে অপরজন দলীল উপস্থাপনে বেশি পারঙ্গম। ফলে (দলীল উপস্থাপন থেকে) আমি কাউকে সত্যবাদী মনে করি আর (সেই ভিত্তিতে) কারো পক্ষে ফয়সালা করি। কখনো যদি এমন ঘটে- আমি অপর মুসলিমের হক কারো জন্য ফয়সালা করে দিলাম তাহলে (শুনে রাখ) তা হবে জাহান্নামের আগুনের একটি টুকরা। (এখন তার ইচ্ছা, চাইলে) সে তা গ্রহণ করুক অথবা তা থেকে নিজেকে রক্ষা করুক। (সহীহ বুখারী : ৭১৮১)।
বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
বাংলাদেশের বিপক্ষে যে একাদশ দিয়ে মাঠে নামছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ
কিশোরগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ার কামালসহ তিনজন গ্রেফতার
প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানের সাক্ষাৎ
বেইজিং সংস্কৃতি ও পর্যটন ব্যুরো ও আটাবের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত
উইন্ডিজের বিপক্ষে মাঠে নামছে বাংলাদেশ
গাজায় যুদ্ধবিরতি ছাড়া বন্দী বিনিময় হবে না : হামাস
শান্তিরক্ষা মিশন মোতায়েন করতে চায় জাতিসংঘ হাইতিতে
চকরিয়ার বিএনপি নেতা আবু তাহের চৌধুরীর মৃত্যুতে সালাহউদ্দিন আহমদ ও হাসিনা আহমদের শোক
পুতিন পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে দ্বিধা করবেন না : সার্বিয়া
ক্লাইমেট অর্থায়ন ইস্যুতে দেশগুলোর মধ্যে দ্বন্দ্ব
লালমোহনে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত যুবদল নেতা চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু
ট্রাম্পের অ্যাটর্নির বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন আটকে গেল
‘ফিলিস্তিনের পর ইরান, সউদী ও তুরস্ক হবে পরবর্তী টার্গেট’
প্রতি বছর ৩ লাখ নথিবিহীন অভিবাসীকে বৈধতা দানের ঘোষণা স্পেনের
প্রেম-ভালোবাসা নিয়ে সবচেয়ে অসুখী দেশ জাপান-কোরিয়া
মুসলিম চিকিৎসক
শীর্ষে দিল্লি
সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সংবর্ধনা
ইসলামিক ফাউন্ডেশন এর বোর্ড অব গভর্নর সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সম্বর্ধনা
বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে আঞ্চলিক সহযোগিতার আহ্বান