হজ ও কুরবানি ইসলামের মহিমান্বিত দুটি ইবাদত

Daily Inqilab মুহাম্মাদ আশিক বিল্লাহ তানভীর

১৩ জুন ২০২৪, ১২:০৯ এএম | আপডেট: ১৩ জুন ২০২৪, ১২:০৯ এএম

ইসলামের পরিচয়-চিহ্ন বহনকারী মহিমান্বিত দুটি ইবাদতÑ হজ ও কুরবানি সংঘটিত হয় যিলহজ মাসে। পবিত্র কুরআন মাজীদে হজ ও কুরবানিকে শাআইরুল্লাহ আখ্যা দেয়া হয়েছে। সূরা হজে কুরবানির বিষয়ে আল্লাহ তাআলা বলেন : কুরবানির উট (ও গরু) তোমাদের জন্য আল্লাহ ‘শাআইর’ (নিদর্শনাবলি)-এর অন্তর্ভুক্ত করেছি। তোমাদের জন্য তাতে রয়েছে কল্যাণ। সুতরাং যখন তা সারিবদ্ধ অবস্থায় দাঁড়ানো থাকে, তোমরা তার উপর আল্লাহর নাম নাও। তারপর যখন (যবেহ হয়ে যাওয়ার পর) তা কাত হয়ে মাটিতে পড়ে যায়, তখন তার গোশত নিজেরাও খাও এবং ধৈর্যশীল অভাবগ্রস্তকেও খাওয়াও; এবং তাকেও, যে নিজ অভাব প্রকাশ করে। এভাবেই আমি এসব পশুকে তোমাদের বশীভূত করে দিয়েছি, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর। (সূরা হজ : ৩৬)।

একই সূরায় আল্লাহ তাআলা হজের আলোচনার পর শাআইরুল্লাহর প্রসঙ্গটি স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন : এসব বিষয় স্মরণ রেখ। আর যে কেউ আল্লাহর ‘শাআইর’ তথা নিদর্শনাবলিকে সম্মান করবে তা তো তার হৃদয়ের তাকওয়া থেকেই (উদ্ভূত)। (সূরা হজ : ৩২)। এ মাসের যে দিনটি বিশেষ তাৎপর্য ধারণ করে তা হচ্ছে যিলহজের দশম তারিখ। হাদিসের ভাষায় ‘ইয়াওমুন নাহর’। রাসূলুল্লাহ (সা.) এ দিনের ব্যাপারে বলেন : আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তাআলার নিকট সবচেয়ে মহিমান্বিত দিন হচ্ছে ‘ইয়াওমুন নাহর’ তথা কুরবানির দিন। এরপর হচ্ছে ‘ইয়াওমুল ক্বার’ অর্থাৎ এর পরের দিন। (সুনানে আবু দাউদ : ১৭৬৫)।

আল্লাহ তাআলা এ দিনকে মুসলমানের জন্য ঈদ সাব্যস্ত করেছেন। রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন : আমাকে ‘ইয়াওমুল আযহা’র আদেশ করা হয়েছে (অর্থাৎ, এ দিনে কুরবানি করার আদেশ করা হয়েছে); এ দিবসকে আল্লাহ তাআলা এ উম্মতের জন্য ঈদ বানিয়েছেন। (মুসনাদে আহমাদ : ৬৫৭৫)।

অতএব সম্মান, মর্যাদা, আশারায়ে যিলহজ, হজ, কুরবানি, ইয়াওমে আরাফা, আইয়ামে তাশরীক প্রভৃতি সমূহ কল্যাণে বেষ্টিত একটি মাস যিলহজ মাস। কাজেই এ মাসের খায়ের ও বরকত হাছিল করার ব্যাপারে মুমিন বেখবর থাকতে পারে না। আমলে আমলে, নেকী ও কল্যাণের মাধ্যমে এ মাসের বরকতময় মুহূর্তগুলো প্রাণবন্ত রাখার মাঝেই সে সফলতা খুঁজে নেয়।

যিলহজ এসেছে। যিলহজ চলে যাবে। বুদ্ধিমান সে, যে এ সুযোগকে তোহফা হিসেবে গ্রহণ করবে। আল্লাহ তাআলার নেক বান্দাগণ এমনসব মুহূর্তগুলো গণীমত মনে করতেন। তারা নিজেরাও আমলে মনোযোগী হতেন এবং সন্তান-সন্ততিসহ অধীনস্থ সবাইকে আমলে উৎসাহী করতেন।

হযরত সাঈদ ইবনে জুবাইর (রাহ.) যিলহজের এ দিনগুলোতে ইবাদত বাড়িয়ে দিতেন। তিনি বলতেন, এ রাতগুলোতে তোমরা ঘরের বাতি বন্ধ করো না। অর্থাৎ রাত্রি জাগরণ করে আমলে লিপ্ত থাক। তিনি আরো বলতেন, তোমরা ঘরের খাদেমদেরও আরাফার দিনের রোযার জন্য সাহরী খেতে তুলে দাও। (হিলইয়াতুল আউলিয়া ৪/২৮১)।

তো আমরা নিজেরাও আমলের প্রতি মনোযোগ দেব এবং আমাদের সন্তান-সন্ততিদেরও আমলে অভ্যস্ত করব। তাদেরকে ছোট থেকেই আমলের তরবিয়তে গড়ে তুলব। উপহার দেব তাদেরকে আমলের এক নূরানী পরিবেশ। সাধারণত রমযান মাসে অনেকের মাঝে আমলের বেশ উদ্যম থাকে। নিঃসন্দেহে এটা প্রশংসার বিষয়। তবে রমযান ছাড়াও যে আরো কত কত বরকতময় আমলের মওসুম রয়েছে, সেগুলোর প্রতিও খেয়াল করা উচিত। কুরআন-হাদিসে যে সকল মুহূর্তকে বিশেষভাবে মূল্যায়ন করা হয়েছে সেগুলোর প্রতি আগ্রহী হওয়া মুমিনের ঈমানের দাবি। সচেতন মুমিন এ মুহূর্তগুলোকে উৎকৃষ্ট উপলক্ষ্য হিসেবেই গ্রহণ করে।

অতএব বিশেষ বিশেষ মওসুমগুলোতে যদি এভাবে খায়ের ও নেকের পথে অগ্রসর হওয়া যায় এবং গুনাহ ও নাফরমানি থেকে বিরত থাকা যায় তাহলে ধীরে ধীরে আমার মাঝে গোটা বছর, এমনকি গোটা যিন্দেগী ঈমান-আমল নিয়ে বেঁচে থাকা এবং গুনাহমুক্ত জীবনযাপন করা সহজ হবে ইনশাআল্লাহ।


বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

সোনালী ব্যাংকে হুইসেল ব্লোয়ার্স পলিসি বিষয়ক কর্মশালা অনুষ্ঠিত

সোনালী ব্যাংকে হুইসেল ব্লোয়ার্স পলিসি বিষয়ক কর্মশালা অনুষ্ঠিত

বীমা সেবার পরিধি বাড়াতে গার্ডিয়ান লাইফ ইন্স্যুরেন্স-ব্র্যাক হেলথকেয়ার স্ট্র্যাটিজিক পার্টনারশিপ চুক্তি

বীমা সেবার পরিধি বাড়াতে গার্ডিয়ান লাইফ ইন্স্যুরেন্স-ব্র্যাক হেলথকেয়ার স্ট্র্যাটিজিক পার্টনারশিপ চুক্তি

পদ্মায় পানি বেড়ে দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে ভাঙন আতঙ্ক

পদ্মায় পানি বেড়ে দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে ভাঙন আতঙ্ক

ঐতিহাসিক প্রয়োজনেই আওয়ামী লীগের জন্ম -আনন্দ র‌্যালি পূর্ব অনুষ্ঠানে আ জ ম নাছির উদ্দিন

ঐতিহাসিক প্রয়োজনেই আওয়ামী লীগের জন্ম -আনন্দ র‌্যালি পূর্ব অনুষ্ঠানে আ জ ম নাছির উদ্দিন

ডেঙ্গু ঝুঁকিতে বাকৃবি

ডেঙ্গু ঝুঁকিতে বাকৃবি

স্ট্রিট ফুডের বিশুদ্ধতা নিশ্চিত করতে হবে

স্ট্রিট ফুডের বিশুদ্ধতা নিশ্চিত করতে হবে

পাহাড় ধসে মৃত্যুর মিছিল বাড়ছেই

পাহাড় ধসে মৃত্যুর মিছিল বাড়ছেই

আবহাওয়ার পূর্বাভাস কেন সঠিক হয় না?

আবহাওয়ার পূর্বাভাস কেন সঠিক হয় না?

নেতানিয়াহু পদত্যাগ করুন, নয়তো জিম্মি বিনিময় অসম্ভব

নেতানিয়াহু পদত্যাগ করুন, নয়তো জিম্মি বিনিময় অসম্ভব

মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কবলে রুশ অ্যান্টি-ভাইরাস জায়ান্ট ক্যাসপারস্কি

মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কবলে রুশ অ্যান্টি-ভাইরাস জায়ান্ট ক্যাসপারস্কি

তাইওয়ানের স্বাধীনতা চাইলেই চরম শাস্তি!

তাইওয়ানের স্বাধীনতা চাইলেই চরম শাস্তি!

তীব্র তাপপ্রবাহ, মক্কা-মদিনায় জুমার খুতবা সংক্ষিপ্ত করার নির্দেশ

তীব্র তাপপ্রবাহ, মক্কা-মদিনায় জুমার খুতবা সংক্ষিপ্ত করার নির্দেশ

দক্ষিণ-পূর্ব তুরস্কে বিশাল দাবানল, নিহত অন্তত ১২

দক্ষিণ-পূর্ব তুরস্কে বিশাল দাবানল, নিহত অন্তত ১২

আফগানিস্তানে রাষ্ট্রদূত নিয়োগ দিয়েছে নিকারাগুয়া

আফগানিস্তানে রাষ্ট্রদূত নিয়োগ দিয়েছে নিকারাগুয়া

নেতানিয়াহুর আসন্ন সফর ও কংগ্রেসে ভাষণ নিয়ে উদ্বিগ্ন হোয়াইট হাউস

নেতানিয়াহুর আসন্ন সফর ও কংগ্রেসে ভাষণ নিয়ে উদ্বিগ্ন হোয়াইট হাউস

৩৩০০ বছরের পুরনো জাহাজের ধ্বংসাবশেষ মিলল ভূমধ্যসাগরে

৩৩০০ বছরের পুরনো জাহাজের ধ্বংসাবশেষ মিলল ভূমধ্যসাগরে

এনভিডিয়ার চমক শেষে ফের শীর্ষে মাইক্রোসফট

এনভিডিয়ার চমক শেষে ফের শীর্ষে মাইক্রোসফট

যৌথ মহড়ার জন্য দ.কোরিয়ায় পৌঁছেছে মার্কিন বিমানবাহী রণতরী

যৌথ মহড়ার জন্য দ.কোরিয়ায় পৌঁছেছে মার্কিন বিমানবাহী রণতরী

দক্ষিণ মেক্সিকোতে এক সপ্তাহের মধ্যে দু’জন মেয়র নিহত

দক্ষিণ মেক্সিকোতে এক সপ্তাহের মধ্যে দু’জন মেয়র নিহত

ইসরাইলের স্পর্শকাতর লক্ষ্যবস্তুর ফুটেজ প্রকাশ করল হিজবুল্লাহ

ইসরাইলের স্পর্শকাতর লক্ষ্যবস্তুর ফুটেজ প্রকাশ করল হিজবুল্লাহ