একটি হাদিস ও জীবন পরিবর্তনকারী চারটি কথা

Daily Inqilab মাওলানা মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক

১৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:১৯ এএম | আপডেট: ১৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:১৯ এএম

‘মুস্তাদরাকে হাকেম’সহ হাদিসের অনেক কিতাবে একটি হাদিস বর্ণিত হয়েছে : সা’দ ইবনে আবী ওয়াক্কাস রা: বলেন, এক ব্যক্তি নবী (সা.) এর দরবারে এসে বললেন, আল্লাহর রাসূল! আমাকে নসিহত করুন এবং সংক্ষেপে বলুন। তখন নবী (সা.) তাকে বললেন : ১. মানুষের হাতে যা আছে, তা থেকে নিরাশ হয়ে যাও। ২. লোভ করবে না। কারণ লোভই হল নগদ দারিদ্র্য। ৩. তুমি নামাজ এমনভাবে আদায় করবে, যেন তুমি দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়ে যাচ্ছ! ৪. এমন কথা ও এমন কাজ থেকে বিরত থাকবে, যার জন্য পরে তোমাকে ক্ষমা চাইতে হয়। (মুস্তাদরাকে হাকেম-৭৯২৮)

নবী কারিম (সা.) তাকে চারটি নসিহত করলেন : ১. মানুষের হাতে কী আছে, দেখবে না। কার পকেটে কী আছে, কার কাছে কী ধন-সম্পদ আছে, তার দিকে যেন তোমার নজর না যায়! তা থেকে নিরাশ ও বিমুখ হয়ে তোমার দৃষ্টি থাকবে একমাত্র আল্লাহর রহমতের দিকে। আল্লাহ যা দিয়েছেন তার ওপর সন্তুষ্ট থাকবে। অন্যের পকেটের দিকে কখনো তাকাবে না! হালাত ও জরুরত আসতেই পারে। প্রথমেই তোমার মাথায় আসতে হবে যে, আল্লাহ দান করবেন। সেই উদ্দেশ্যে দুই রাকাত সালাতুল হাজত পড়ে দুআ করবে। আর তার জন্য কোনো বৈধ উপায়-উপকরণ গ্রহণ করার থাকলে সেটিও করবে। কিন্তু অন্য কেউ আমাকে দিয়ে দিক এমনটি যেন আমার মাথায় না আসে। আসলে সেটি মাথা থেকে সরাতে হবে!

অনেক সময় মানুষের হঠাৎ জরুরত এসে যায়। হঠাৎ কোনো ঠেকা এসে যায়। যেটি বাহ্যত তার সামর্থ্যরে বাইরে। এ ধরনের ক্ষেত্রে অনেকের মাথায় প্রথমেই যা আসে তা হলোÑ কেউ যদি আমার সহযোগিতা করত! অমুক যদি আমার জরুরতটা পূরণ করে দিত! কিন্তু না; এমন করা যাবে না। এমনকি কর্জ বা ঋণ নিতে হলে, সে ক্ষেত্রেও প্রথমে আমার মাথায় সালাতুল হাজত ও দুআর কথা আসতে হবে। এক কথায় মানুষের কাছে কিছু পাওয়ার আশা করবে না। ‘আশা’ তো থাকতেই পারবে না; বরং থাকতে হবে নিরাশা। কে দেবে আমাকে? কেন দেবে? কিছু চাইব তো নয়-ই; চাওয়ার ভানও করব না। তোমার মেজাজ যদি এমন হয়ে যায়, তোমাকে মানুষ ভালোবাসবে। মানুষের ভালোবাসা পাওয়ার এটিও একটি উপায়।

২. লোভ করবে না। কারণ লোভই হলো নগদ দারিদ্র্য। সুবহানাল্লাহ! আবার খেয়াল করুন। নবীজী বলেছেন : লোভই হলো নগদ দারিদ্র্য। কারণ লোভ করা মানে তুমি নিজের অবস্থার ওপর কখনোই সন্তুষ্ট হতে পারবে না। কেবল মনে করবে, আমার নাই! আমার নাই! আমাকে আল্লাহ যা দিয়েছেন তার ওপর যদি আমি সন্তুষ্ট থাকি এবং লোভ না করি, তাহলে আমার চেয়ে প্রাচুর্যবান আর কে আছে! কারণ অন্তরের প্রাচুর্যই প্রকৃত প্রাচুর্য। হাদিস শরিফে নবীজী (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘অভাবমুক্তি ও প্রাচুর্য সম্পদের আধিক্যের কারণে হয় না; বরং প্রকৃত প্রাচুর্য তো হল অন্তরের প্রাচুর্য।’ (সহিহ বুখারি-৬৪৪৬)

দুনিয়ার জীবনে আমরা শান্তি পাই না। আমাদের জীবনে শান্তি আসে না। শান্তি না আসার বড় কারণ কী? শান্তি না আসার বড় একটি কারণ হলো আমাদের প্রয়োজন বাড়িয়ে ফেলা। জরুরি নয় এমন অনেক কিছুকে আমরা জরুরি মনে করি। তাই আমাদের কর্তব্য হলোÑ আমি কী কী ছাড়া চলতে পারি আর কী কী ছাড়া চলতে পারি না, সেটি শনাক্ত করা। কোনো খরচ বাড়ানোর আগে আমাকে চিন্তা করতে হবে খরচ কমানোর। এটি জিন্দেগির গুরুত্বপূর্ণ ফায়সাফা এবং অনেক হাদিসের নির্যাস এই চিন্তাটা।

৩. নামাজ আদায় করবে এমনভাবে, যেন তুমি দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়ে যাচ্ছ! এই নামাজই হয়তো আমার জীবনের শেষ নামাজÑ এমন অনুভূতি নিয়ে নামাজ আদায় কর। নামাজে এমনভাবে মন লাগাও, যেন জীবনের শেষ নামাজ পড়ছ। এমনভাবে নামাজ পড়লে নামাজে এমনিতেই খুশু-খুজু আসবে, ইনশাআল্লাহ।

৪. এমন কথা ও এমন কাজ থেকে বিরত থাকো, যার জন্য পরে তোমাকে ক্ষমা চাইতে হয়। এমন কথা বলবেই না। এমন কথা বা কাজ করবেই কেন যে, পরে আবার ওজরখাহি করতে হয়? ‘সরি’ বা ‘দুঃখিত’ বলতে হয়? হ্যাঁ, অনিচ্ছাকৃত কখনো হয়ে গেলে তার জন্য ক্ষমা চেয়ে নেবে; এটি ভালো গুণ। কিন্তু তোমাকে তো সতর্ক থাকতে হবে, যেন এমন কাজ না হয়। আর বুঝে-শুনে এমন কাজ করার তো কোনো প্রশ্নই আসে না। উপরোক্ত হাদিসে এ চারটি নসিহত করা হয়েছে। আমাদের জিন্দেগি ঠিক হওয়ার জন্য অনেক বেশি নসিহতের প্রয়োজন আছে কি? এই চারটি জিনিসের প্রতি লক্ষ্য রাখলে দ্বীন-দুনিয়া সবই ঠিক হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে কবুল করুন, তাওফিক দান করুন, আমিন!


বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

যে আল্লাহর প্রতি ঈমান রাখে সে যেন জবানের হেফাজত করে-১
সৃষ্টির বৈচিত্র্যে স্রষ্টার পরিচয়-২
সৃষ্টির বৈচিত্র্যে স্রষ্টার পরিচয়-১
ওজনে হেরফের : আমি কি আল্লাহর সামনে দাঁড়াব না
চার রাকাতবিশিষ্ট নামাজে মুসাফিরের ইমামতি প্রসঙ্গে।
আরও

আরও পড়ুন

গলাচিপায় ২৬টি কচ্ছপ সহ নারী আটক এক বছরের কারাদন্ড

গলাচিপায় ২৬টি কচ্ছপ সহ নারী আটক এক বছরের কারাদন্ড

লক্ষ্মীপুরে এখনো স্বাভাবিক হয়নি ট্রাফিক পুলিশের কার্যক্রম, সড়কে জনদুর্ভোগ

লক্ষ্মীপুরে এখনো স্বাভাবিক হয়নি ট্রাফিক পুলিশের কার্যক্রম, সড়কে জনদুর্ভোগ

বিস্ফোরক মামলায় গ্রেপ্তার ১০ আসামি

বিস্ফোরক মামলায় গ্রেপ্তার ১০ আসামি

শার্শা সীমান্তের ইছামতি নদীর পাড় থেকে অজ্ঞাত ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার

শার্শা সীমান্তের ইছামতি নদীর পাড় থেকে অজ্ঞাত ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার

মধুপু‌রে মোটরসাইকেল পিকআপের মু‌খোমু‌খি সংঘর্ষে ইমাম ও মোয়া‌জ্জি‌ন নিহত

মধুপু‌রে মোটরসাইকেল পিকআপের মু‌খোমু‌খি সংঘর্ষে ইমাম ও মোয়া‌জ্জি‌ন নিহত

নাচোলে বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে ছুরিকাঘাতে দুই কিশোর নিহত, আহত ৪

নাচোলে বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে ছুরিকাঘাতে দুই কিশোর নিহত, আহত ৪

ইন্দোনেশিয়ায় মৃত্যুদণ্ড থেকে রেহাই পেয়ে ফিলিপিনে ফিরলেন মেরি ভেলোসো

ইন্দোনেশিয়ায় মৃত্যুদণ্ড থেকে রেহাই পেয়ে ফিলিপিনে ফিরলেন মেরি ভেলোসো

কোটচাঁদপুর থেকে ৮ জুয়াড়ি যৌথ বাহিনীর হাতে আটক

কোটচাঁদপুর থেকে ৮ জুয়াড়ি যৌথ বাহিনীর হাতে আটক

পাকিস্তান থেকে এবার দ্বিগুণ কনটেইনার নিয়ে আসছে সেই জাহাজ

পাকিস্তান থেকে এবার দ্বিগুণ কনটেইনার নিয়ে আসছে সেই জাহাজ

স্বৈরাচারের দোসর নজিবুর ৩ দিনের রিমান্ডে

স্বৈরাচারের দোসর নজিবুর ৩ দিনের রিমান্ডে

পশ্চিমবঙ্গে চিন্ময়ের আইনজীবীর সঙ্গে সাক্ষাৎ বিজেপি নেতাদের

পশ্চিমবঙ্গে চিন্ময়ের আইনজীবীর সঙ্গে সাক্ষাৎ বিজেপি নেতাদের

মোরেলগঞ্জে তারেক রহমানের পক্ষ থেকে বিএনপি নেতার শীতবস্ত্র বিতরণ

মোরেলগঞ্জে তারেক রহমানের পক্ষ থেকে বিএনপি নেতার শীতবস্ত্র বিতরণ

ট্রাম্পের শুল্ক হুমকির প্রেক্ষিতে কানাডার সীমান্ত সুরক্ষায় নতুন পদক্ষেপ

ট্রাম্পের শুল্ক হুমকির প্রেক্ষিতে কানাডার সীমান্ত সুরক্ষায় নতুন পদক্ষেপ

কনসার্ট প্রসঙ্গে রাহাতের ভিডিও বার্তা, যা বললেন তিনি

কনসার্ট প্রসঙ্গে রাহাতের ভিডিও বার্তা, যা বললেন তিনি

ইজতেমার দুপক্ষের দ্বন্দ্ব সমাধানে যা বললেন হাসনাত আবদুল্লাহ

ইজতেমার দুপক্ষের দ্বন্দ্ব সমাধানে যা বললেন হাসনাত আবদুল্লাহ

চাঁদপুরে গণঅভ্যুত্থানে আহতের ওপর হামলার ঘটনায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নিন্দা

চাঁদপুরে গণঅভ্যুত্থানে আহতের ওপর হামলার ঘটনায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নিন্দা

সিরিয়ার রিজার্ভ প্রায় শূন্য হলেও অক্ষত ২৬ টন সোনার মজুত

সিরিয়ার রিজার্ভ প্রায় শূন্য হলেও অক্ষত ২৬ টন সোনার মজুত

লেবানন থেকে আরও ৯৪ বাংলাদেশি দেশে ফিরেছে

লেবানন থেকে আরও ৯৪ বাংলাদেশি দেশে ফিরেছে

এবার মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের বিরুদ্ধে পাঁচ ফিলিস্তিনির মামলা

এবার মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের বিরুদ্ধে পাঁচ ফিলিস্তিনির মামলা

ইজতেমা মাঠের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ৪ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন

ইজতেমা মাঠের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ৪ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন