ইসলাম শান্তির ধর্ম কেন ও কীভাবে-২
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০২ এএম | আপডেট: ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০২ এএম
একটা কথা সবাই জানে যে, শান্তি ও প্রশান্তির কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে মানুষের মন। মনে যদি শান্তি থাকে তাহলে গোটা সত্তায় শান্তি বিরাজ করে। আর মন যদি অশান্ত হয় মানবের গোটা সত্তা অশান্তিতে আক্রান্ত হয়। মনের শান্তির একমাত্র উপায় আল্লাহর স্মরণ, তাঁর প্রতি আস্থা ও সমর্পণ এবং জীবন ও জগতের সব বিষয়ে তাঁর ফয়সালায় সন্তুষ্টি। এই সম্পদ যে পেয়েছে জীবনে তার দুঃখ-কষ্ট থাকতে পারে, উপায়-উপকরণের স্বল্পতাও থাকতে পারে কিন্তু অশান্তি থাকে না। কারণ মহান আল্লাহ তার হৃদয়কে পরিতুষ্টি ও পরিতৃপ্তি দ্বারা পূর্ণ করে দেন। আল্লাহর প্রতি আস্থার অবলম্বনে তাঁর হৃদয় থাকে ভারমুক্ত ও শঙ্কামুক্ত। পক্ষান্তরে, এই সম্পদ যে পায়নি ভোগের সব উপকরণের মাঝেও সে শান্তি খুঁজে পায় না। অশান্তির আগুনে দগ্ধ হতে থাকে।
কারণ তুষ্টি ও আনন্দ, আস্থার অবলম্বন ও ভারমুক্ততা এবং বিবেকের দংশন থেকে মুক্তির মতো শান্তির উপকরণগুলো থেকে তার হৃদয়-মন বঞ্চিত থাকে। মনের এই ক্ষোভ, অতৃপ্তি ও হাহাকারের বহিঃপ্রকাশ ঘটে তার কর্ম ও আচরণে। তার শিক্ষাহীন হৃদয়ের ঔদ্ধত্য, হিংস্রতা, কুটিলতা ও কপটতা একে একে বাইরে বেরিয়ে আসতে থাকে এবং শুধু তাকেই নয়, তার আপনজন, প্রিয়জন, পাড়া-প্রতিবেশী, কর্তা-সহকর্মী অধীনস্ত সবাইকে সন্ত্রস্ত ও বিপদগ্রস্ত করে তোলে। ইসলামের নবী (সা.) কত সত্য বলেছেন- ‘মানব-দেহে একটি মাংসপি- রয়েছে। যখন তা শুদ্ধ হয় গোটা দেহ শুদ্ধ হয় আর যখন তা নষ্ট হয় গোটা দেহ নষ্ট হয়ে যায়। শোনো, তা হচ্ছে কলব (হৃদয়)।
সামষ্টিক জীবনের শান্তি নির্ভর করে পারস্পরিক অধিকার রক্ষা এবং একের অস্তিত্ব অন্যের জন্য অশান্তির কারণ না হওয়ার উপর। তাই ব্যক্তির পরিশুদ্ধি তথা মানবীয় সুকুমারবৃত্তির বিকাশ, উন্নত গুণাবলির উৎকর্ষ, মন্দ প্রবণতাসমূহের নিয়ন্ত্রণ, পরস্পরের হক ও অধিকার সম্পর্কে সচেতনতা এবং উত্তম পরিশীলিত আচরণ-উচ্চারণ অতি গুরুত্বপূর্ণ। আখলাক ও তাযকিয়া ইসলামী শিক্ষার এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। আখলাক তথা স্বভাব-চরিত্রের পরিশুদ্ধির সাথে ইসলামে অতি বিস্তৃতভাবে রয়েছে সামষ্টিক জীবনে পারস্পরিক কর্তব্য ও অধিকারের বর্ণনা ও শিক্ষা।
তাই ‘আখলাক’ ও ‘মুআশারা’ ইসলামী শিক্ষা ও জীবন-ব্যবস্থার দুই গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। বর্তমান বিশ্বসভ্যতার জন্য বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি যতটা অপরিহার্য পার্থিব জীবনের শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য ইসলামের ‘আখলাক’ ও ‘মুআশারা’র শিক্ষা তার চেয়েও বেশি অপরিহার্য। এই শিক্ষার চর্চা ও অনুশীলনের মাধ্যমেই সূচিত হতে পারে সামষ্টিক জীবনের শান্তি ও স্বস্তি। সুতরাং ‘ইসলাম শান্তির ধর্ম’- এই বিশ্বাস ও উচ্চারণের দাবি, আল্লাহমুখিতা, আল্লাহর প্রতি আস্থা ও সমর্পণ, খোদাভীতি ও আখিরাতের জবাবদিহিতার অনুভূতির মতো বৈশিষ্ট্যগুলোর পাশাপাশি ইসলামী আখলাক ও মুআশারা তথা ইসলামী স্বভাব-চরিত্র ও সামষ্টিক জীবনের ইসলামী নীতি ও বিধানের চর্চা ও অনুশীলন।
এরপর শান্তির জন্য শুধু শিষ্টের ও শিষ্টতার লালনই যথেষ্ট নয়, দুষ্টের ও দুষ্টপ্রবণতার দমনও অপরিহার্য। তাই শান্তির ধর্ম ইসলামে রয়েছে হদ-কিসাস-তাযীরের মতো নানা বিধান। রয়েছে নাহি আনিল মুনকার ও জিহাদের বিধান। এগুলো ইসলামের স্বতন্ত্র ও বিস্তৃত অধ্যায়। রাষ্ট্রের ক্ষমতাশীলদের দায়িত্ব এসব বিধানের জ্ঞান যথাযথভাবে অর্জন করে সেগুলো বাস্তবায়ন করা। এই অধ্যায়ের নীতি ও বিধানের সঠিক উপলব্ধি ও যথার্থ প্রয়োগ সামাজিক শান্তি ও শৃংখলা এবং ন্যায় ও সাম্য প্রতিষ্ঠার জন্য অপরিহার্য।
এমনিভাবে নাগরিকদের ফৌজদারি অপরাধের বিচারের পাশাপাশি এটাও নিশ্চিত হওয়া দরকার যে, ক্ষমতাবানগণ কর্তৃক যেন এমন কোনো অপরাধ সংঘটিত না হয়। হত্যা, গুপ্তহত্যা, গুম, খুনের মত অপরাধগুলো যেন কারো থেকেই সংঘটিত না হয়। সুতরাং ‘ইসলাম শান্তির ধর্ম’- এই বিশ্বাস ও উচ্চারণের এক দাবি, ইসলামের নাহি আনিল মুনকারের নীতি ও বিধানের যথার্থতা উপলব্ধি এবং স্ব স্ব ক্ষেত্রে ইসলামের বিধান অনুসারে এর চর্চা ও অনুশীলন।
এক কথায় ইসলাম বাস্তব অর্থে শান্তির ধর্ম। যে কেউ কোনো কিছুকে শান্তি মনে করে; ইসলামকে ওই অর্থে শান্তির ধর্ম মনে করা ভুল। অন্যায় অনাচার, অশ্লীলতা, জুলুম-অবিচার-হিংস্রতা ইত্যাদিকে কেউ যদি ‘শান্তি’ মনে করে তাহলে ইসলাম ওই অর্থে শান্তির ধর্ম নয়। কারণ এগুলো ‘শান্তি’ নয়, নির্বিচার ইচ্ছা পূরণ মাত্র, যা দুনিয়া আখেরাতের চূড়ান্ত অশান্তির কারণ। মুমিনের প্রতি কুরআন মাজীদের ইরশাদÑ ‘হে মুমিনগণ! তোমরা সর্বাত্মকভাবে ইসলামে প্রবেশ করো এবং শয়তানের পদাংক অনুসরণ করো না। নিশ্চয় সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।’ (সূরা বাকারা, ২০৮)
সুতরাং মুমিনের কর্তব্য, পূর্ণাঙ্গভাবে ইসলামে প্রবেশ করা এবং জীবনের সব অঙ্গনে ইসলামের সঠিক শিক্ষা ও বিধানের চর্চা ও বিস্তারে ব্রতী হওয়া। তাহলে আল্লাহর ইচ্ছায় আমাদের জীবনে পূর্ণ শান্তি বিরাজ করবে এবং ইসলাম শান্তির ধর্ম কথাটির সত্যতা ও যথার্থতা বাস্তবরূপে প্রতিফলিত হবে। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে ইসলামের পূর্ণ অনুসারী করুন এবং দুনিয়া ও আখিরাতের পূর্ণ শান্তি দান করুন। (আমীন) ইয়া রাব্বাল আলামীন।
বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
প্রোটিয়াদের হোয়াইট ওয়াশ করে পাকিস্তানের ইতিহাস
৯ গোলের উৎসবে লিভারপুলের বড় জয়
বড়দিনের ছুটির আগে রিয়ালের বড় জয়
ঘরের মাঠেই বিধ্বস্ত ইউনাইটেড
গোলশূন্য ড্রয়ে থামল চেলসির জয়রথ
এনার্জিপ্যাকের বার্ষিক সাধারণ সভায় ব্যবসায়িক প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনার ওপর গুরুত্বারোপ
আমার খাবার কি ফর্টিফায়েড?
হাসিনা পরিবারের নামে ১৩ বিশ্ববিদ্যালয়, ইউজিসি তাকিয়ে আছে সরকারের দিকে
ব্র্যাক ব্যাংকের রেমিটেন্স অ্যাওয়ার্ড অর্জন
দিনাজপুর জেলা শিক্ষা অফিসারের বিদায়ী সংবর্ধনা
নরসিংদীর শিবপুরে প্লাস্টিক কারখানা আগুনে পুড়ে ছাই
ডিসেম্বরে রেমিট্যান্স শূন্য যে ১০ ব্যাংকে
বিএনপি নির্বাচন ছাড়া ক্ষমতায় আসতে চায় না: আব্দুস সালাম
সরকারের আশ্বাসে শাহবাগ থেকে সরে গেলেন বিএসএমএমইউ ট্রেইনি চিকিৎসকরা
সাকাকে হারিয়ে চিন্তিত আর্সেনাল কোচ
৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারের প্রস্তাব জমা হবে : বদিউল আলম মজুমদার
সিনিয়র সচিব ড. নাসিমুল গনিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বদলী
মানিকগঞ্জের ঘিওরে ছাত্রদল নেতা লাভলু হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবিতে মানববন্ধন
বঙ্গবাজার পুড়ে যাওয়া মামলায় একজন গ্রেফতার
জনগণের প্রত্যাশা পূরণে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ধীর গতিতে চলছে: আমিনুল হক