ঢাকা   শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪ | ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

শরীয়তের ওপর আমলই সব সমস্যার সমাধান-১

Daily Inqilab সাইয়েদ মুহাম্মদ রাবে হাসানী নদভী

১৯ এপ্রিল ২০২৪, ১২:০৮ এএম | আপডেট: ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ১২:০৮ এএম

মুসলমান ও মুসলিম শব্দ দুটি অর্থগতভাবে ওই ব্যক্তিকে নির্দেশ করে যিনি নিজেকে আল্লাহর হুকুম এবং তাঁর সন্তুষ্টির সামনে সোপর্দ করে দেন। আরবি ভাষায় ইসলাম শব্দের আভিধানিক অর্থ সমর্পণ করা, সোপর্দ করা। তেমনিভাবে প্রকৃত মুসলিম ওই ব্যক্তিকে বলে যিনি তার সত্তাকে আল্লাহর নির্দেশনার কাছে সোপর্দ করে দেন। তিনি এই প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হন যে, আমি তাই করব, আমার প্রভু যা চান। আমি সে কাজই করব, আমার প্রভু যা করার অনুমতি দিয়েছেন। যখন আমাদেরকে আত্মসমর্পণ বা নিজেকে আপন প্রভুর সন্তুষ্টির সামনে হাওয়ালা করে দেয়ার ব্যাপার রয়েছে, তখন আমাদের জানা প্রয়োজন আমাদের প্রভু কী বলেছেন? আর কোন ধরনের আমল তিনি আমাদের জীবনের জন্য পছন্দ করেছেন?

আমাদের সমাজে বাস্তবে যা হচ্ছে তা হল, নিছক মুসলিম ঘরে জন্ম নেয়ার দ্বারাই মুসলমান সাধারণত আশ্বস্ত হয়ে যায়। আর এতেই তারা মনে করে থাকে আমরা মুসলমান। যখন আমরা মুসলমান তখন আল্লাহ তাআলার ওপর যেন আমাদের এই হক প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায় যে, তিনি আমাদের সঙ্গে রহম, দান ও সাহায্যমূলক আচরণ করবেন। কারণ আমরা মুসলমান। কিন্তু এ বিষয়টি সাধারণত ভুলে যাই যে, মুসলমান (মুসলিম) দ্বারা উদ্দেশ্য শুধু এই নয় যে, মুসলমান মা-বাবার ঘরে জন্ম হয়েছে। বরং মুসলমানের উদ্দেশ্য হচ্ছে, নিজেকে আল্লাহ তাআলার নির্দেশের কাছে সোপর্দ করে দেয়া।

সুতরাং আমরা আমাদের জীবনের হিসাব কষে বলি, আমরা কি আমাদের নিজেদেরকে আল্লাহর নির্দেশের সামনে সোপর্দ করে দিয়েছি? মুসলমানদের শান এটা বলা হয়েছে, বরং তাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে, সে যেন আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের সঙ্গে এই পরিমাণ মহব্বত রাখে, যা তার পিতা-মাতা, সন্তান এবং আত্মীয়-স্বজনের চেয়েও বেশি হয়। হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা ওই পর্যন্ত পরিপূর্ণ মুমিন হতে পারবে না যতক্ষণ না আমি তোমাদের কাছে তোমাদের পিতা-মাতা, আপন সন্তান এবং সমস্ত মানুষের চেয়ে অধিক প্রিয় না হব।’

আর যখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে আমাদের এই পরিমাণ মহব্বত হবে তখন এটা স্পষ্ট যে, আমরা তাঁর ইরশাদাতের বিরোধিতা করতে পারব না। বরং আমাদের কারো জন্য এমন কোনো কাজ করা উচিত হবে না যা রাসূল (সা.) এর হিদায়াত ও ইরশাদের বিরোধী হয় কিংবা যা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পছন্দ করেননি। আর যদি আমরা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পছন্দের পরিপন্থী কোনো কাজ করি তাহলে এর অর্থ হলো-প্রকৃত পক্ষে আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ওই মহব্বত করি না যে মহব্বতের নির্দেশ আমাদেরকে দেয়া হয়েছে। সে মহব্বত নিজের সন্তান-সন্তুতি এবং পিতা-মাতাকে মহব্বতের চেয়েও বেশি।

এ ব্যাপারে প্রথমত প্রয়োজন হলো আমাদের ওই আহকামসমূহ জানা যে আহকামের ওপর আমল করায় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হুকুম বাস্তবায়ন করা হয়। আর যার ওপর আমল করা ব্যতিরেকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে আমাদের প্রকৃত মহব্বত প্রমাণিত হবে না। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মহব্বতই যদি আমাদের জীবনে অর্জিত না হয় তাহলে আখেরাতে আমাদের কী ফায়দা হাসিল হবে?

শুধু আহকাম জেনে নেয়ার দ্বারাই কাজ চলবে না। মাসায়েল জেনে নেয়ার প্রয়োজন এজন্য যে, সে অনুযায়ী আমল করতে হয়। এটা বুঝা উচিত যে, আল্লাহ তাআলা তাঁর নুসরত ও মদদ, রহম ও করমের ওয়াদা করেছেন ভালো কাজের ভিত্তিতে। আর ভালো কাজের উদ্দেশ্য হচ্ছে, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নির্দেশ পালন করা। যখন এ পদ্ধতি অবলম্বন করা হবে তখনই আল্লাহর সাহায্য ও দয়া আমাদের ওপর হবে। আল্লাহ না করুক, আমরা যদি আল্লাহর হুকুম পালন না করি এবং তাঁর অবাধ্যতা করি, আল্লাহর রাসূলের হিদায়াতের বিরুদ্ধাচরণ করি, তাহলে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের রহম ও করমের আশা আমরা করতে পারি না। আমরা তাঁর নাফরমানি করব আর তিনি আমাদের ওপর রহম করবেন- এটা কীভাবে হয়? এটা কি যুক্তিসঙ্গত কোনো কথা?


বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

বড়কে মান্য করুন, বৃদ্ধকে সম্মান করুন-১
সন্তানদের কিসের উপর রেখে যাচ্ছি-২
সন্তানদের কিসের উপর রেখে যাচ্ছি-১
কে অন্ধ, কে চক্ষুষ্মান
সে-ই স্বাধীন যে সিজদা করে এক আল্লাহকে
আরও

আরও পড়ুন

ট্রাম্প প্রশাসনের জন্য মনোনীত দুই সদস্যের বিরুদ্ধে যৌন কেলেঙ্কারির অভিযোগ

ট্রাম্প প্রশাসনের জন্য মনোনীত দুই সদস্যের বিরুদ্ধে যৌন কেলেঙ্কারির অভিযোগ

ট্রাম্প ব্যবসায়ী, আমরাও একজন ব্যবসায়ী পার্টনার চাই : টাইম ম্যাগাজিনকে ড. ইউনূস

ট্রাম্প ব্যবসায়ী, আমরাও একজন ব্যবসায়ী পার্টনার চাই : টাইম ম্যাগাজিনকে ড. ইউনূস

আদানির দুর্নীতি : এবার ভারতেই বির্তকের মুখে মোদি সরকার

আদানির দুর্নীতি : এবার ভারতেই বির্তকের মুখে মোদি সরকার

প্রেসিডেন্টর সঙ্গে তিন বাহিনী প্রধানের সৌজন্য সাক্ষাৎ

প্রেসিডেন্টর সঙ্গে তিন বাহিনী প্রধানের সৌজন্য সাক্ষাৎ

নিজ্জর হত্যায় মোদীর সংশ্লিষ্টতার দাবি কানাডার সংবাদমাধ্যমের ,‘হাস্যকর’ দাবি ভারতের

নিজ্জর হত্যায় মোদীর সংশ্লিষ্টতার দাবি কানাডার সংবাদমাধ্যমের ,‘হাস্যকর’ দাবি ভারতের

পাকিস্তানে যাত্রীবাহী গাড়িতে গুলি, নিহত ৪২

পাকিস্তানে যাত্রীবাহী গাড়িতে গুলি, নিহত ৪২

এক সপ্তাহে রিজার্ভ বাড়ল ৬ কোটি ১০ লাখ ডলার

এক সপ্তাহে রিজার্ভ বাড়ল ৬ কোটি ১০ লাখ ডলার

ইউক্রেন যুদ্ধ বৈশ্বিক সংঘাতে পরিণত হচ্ছে : পুতিন

ইউক্রেন যুদ্ধ বৈশ্বিক সংঘাতে পরিণত হচ্ছে : পুতিন

মুরগি-সবজিতে কিছুটা স্বস্তি, আলু এখনো চড়া

মুরগি-সবজিতে কিছুটা স্বস্তি, আলু এখনো চড়া

নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা, যা বলল যুক্তরাষ্ট্র

নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা, যা বলল যুক্তরাষ্ট্র

মার্কিন শ্রম প্রতিনিধি দল ঢাকা আসছে আজ

মার্কিন শ্রম প্রতিনিধি দল ঢাকা আসছে আজ

পার্থে শুরুতেই চাপে ভারত

পার্থে শুরুতেই চাপে ভারত

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ১৮ সদস্যবিশিষ্ট কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ১৮ সদস্যবিশিষ্ট কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা

সেনাকুঞ্জে খালেদা জিয়ার সঙ্গে জামায়াত আমীরের কুশল বিনিময়

সেনাকুঞ্জে খালেদা জিয়ার সঙ্গে জামায়াত আমীরের কুশল বিনিময়

সিঙ্গেল সিটের দাবিতে গভীর রাতেও হলের বাইরে ছাত্রীরা

সিঙ্গেল সিটের দাবিতে গভীর রাতেও হলের বাইরে ছাত্রীরা

ইসরাইলি হামলায় গাজায় নিহতের সংখ্যা ৪৪ হাজার অতিক্রম করলো

ইসরাইলি হামলায় গাজায় নিহতের সংখ্যা ৪৪ হাজার অতিক্রম করলো

ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন অ্যার্টনি জেনারেল পাম বন্ডি

ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন অ্যার্টনি জেনারেল পাম বন্ডি

‘আ.লীগকে রাজনীতিতে সুযোগ দেওয়া মানে শহীদদের সঙ্গে গাদ্দারি করা’

‘আ.লীগকে রাজনীতিতে সুযোগ দেওয়া মানে শহীদদের সঙ্গে গাদ্দারি করা’

বাংলাদেশের বিপক্ষে যে একাদশ দিয়ে মাঠে নামছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ

বাংলাদেশের বিপক্ষে যে একাদশ দিয়ে মাঠে নামছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ

কিশোরগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ার কামালসহ তিনজন গ্রেফতার

কিশোরগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ার কামালসহ তিনজন গ্রেফতার