কিয়ামাত, ছাআত ও বাআছ-এর মর্মকথা-২
০৭ জুন ২০২৪, ১২:১২ এএম | আপডেট: ০৭ জুন ২০২৪, ১২:১২ এএম
হযরত ইস্রাফিল (আ.) দুই বার শিক্ষায় ফুৎকার দিবেন। প্রথম শিঙ্গায় ফুৎকারকে নাফখে এমাতাত বা নাফখে উলা বলে। এই ফুৎকারের সাথে সাথে বিশ্ব জগত ধ্বংস হয়ে যাবে। কোন কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না। আল কুরআনে ইরশাদ হয়েছে : আর তারা আল্লাহকে যথোচিত সম্মান করেনি অথচ কিয়ামতের দিন সমস্ত যমীন থাকবে তাঁর মুঠোতে এবং আসমানসমূহ থাকবে ভাঁজ করা অবস্থায় তাঁর ডান হাতে। পবিত্র ও মহান তিনি, তারা যাদেরকে শরীক করে তিনি তাঁদের ঊর্ধ্বে। (সূরা আয যুমার : আয়াত-৬৭)।
মোট কথা, কিয়ামতের দিন সমস্ত মানুষ (যারা আজ আল্লাহ তায়ালার বড়ত্ব ও মহত্বের অনুমান করতেও অক্ষম) নিজ চোখে দেখতে পাবে যমীন ও আসমান আল্লাহ তায়ালার হাতে একটা নগণ্যতম বল ও ছোট একটি রুমালের মতো। হাদিস শরীফে এসেছে : একবার রাসূলুল্লাহ (সা.) মিম্বরে উঠে খুতবা দিচ্ছিলেন। খুতবা দানের সময় তিনি এ আয়াতটি তিলাওয়াত করলেন এবং বললেন : আল্লাহ তায়ালা আসমান ও যমীনকে (অর্থাৎ গ্রহ সমূহকে) তাঁর মুষ্ঠির মধ্যদিয়ে এমনভাবে ঘুরাবেন যেমন শিশুরা বল ঘুরিয়ে থাকে এবং বললেন : আমিই একমাত্র আল্লাহ। আমিই বাদশাহ। আমিই সর্ব শক্তিমান। আমিই বড়ত্ব ও শ্রেষ্ঠত্বের মালিক। কোথায় পৃথিবীর বাদশাহরা? কোথায় শক্তিমানরা? কোথায় অহংকারীরা? এভাবে বলতে বলতে রাসূলুল্লাহ (সা.) এমনভাবে কাঁপতে থাকলেন যে, তিনি মিম্বর সহ পড়ে না যান আমাদের সে ভয় হতে লাগল। (সহীহ মুসলিম : ২৭৮৮)।
কিয়ামত বা মহা প্রলয় সংঘটিত হওয়ার বিষয়টি হযরত ই¯্রাফিল (আ.)-এর শিঙ্গার ফু’কারের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তিনি শিঙ্গায় ফুৎকার দিলেই কিয়ামত শুরু হয়ে যাবে। শিঙ্গায় ফুৎকারের বিষয়টি মহান আল্লাহপাক আল কুরআনে বহু বার উল্লেখ করেছেন। যথা : ইরশাদ হয়েছে : আর শিঙ্গায় ফুঁক দেয়া হবে, অত:পর আমি তাদের সবাইকে পুরোপুরি একত্রিত করব। (সূরা আল কাহ্ফ : ৯৯)। এই আয়াতে কারীমায় সবাইকে বলতে সাধারণ জ্বিন ও মানবজাতিকে বোঝানো হয়েছে, উদ্দেশ্য এই যে, শিঙ্গায় ফুঁক দেয়ার মাধ্যমে হাশরের মাঠে সমগ্র জ্বিন ও মানুষকে একত্রিত করা হবে। (ফাতহুল কাদির)। এখানে দ্বিতীয় বার শিঙ্গা ফুৎকারের কথা বলা হয়েছে। দ্বিতীয় শিঙ্গায় ফুৎকারকে নাফখে এহ্ইয়া বা নাফখে ছানিয়া বলে।
আল কুরআনে ইরশাদ হয়েছে (ক) অতঃপর আবার শিঙ্গায় ফুৎকার দেয়া হবে। অনন্তর সবাই দাঁড়িয়ে একে অন্যের প্রতি তাকাতে থাকবে। (সূরা আয যুমার : ৬৮)। (খ) শিঙ্গায় ফুৎকার দেয়া হবে। অতঃপর তারা পুরাতন কবর থেকে উঠে মহান রাব্বুল আলামীনের দিকে দৌড়াতে থাকবে। (সূরা ইয়াসীন : ৫১)। (গ) মন দিয়ে শোন! যেদিন নিকটবর্তী স্থান হতে এক ঘোষণাকারী ঘোষণা দিতে থাকবে। সকলে সে বজ্র কঠিন নিনাদ বাস্তবে শুনতে পাবে। তাফসীর বিশারদগণ বলেন : উল্লিখিত আয়াতে কারীমাতে বর্ণিত ঘোষণাকারী হলেন হযরত ই¯্রাফিল (আ.)।
তিনি শিঙ্গায় ফুৎকার দিয়ে এই ঘোষণা জারী করবেন, হে পুরাতন হাড়সমূহ, ছিন্নভিন্ন হয়ে যাওয়া জোড়াসমূহ টুকরা টুকরা হয়ে যাওয়া মাংসসমূহ, বিক্ষিপ্ত ও অবিন্যস্ত কেশরাজি! তোমাদের প্রতি নির্দেশ এই যে সর্বশক্তিমান ও সর্বাধিপতি মহান পরওয়ার দিগারের সিদ্ধান্ত অনুসারে তোমরা একত্র ও সমবেত হয়ে যাও। শিঙ্গায় দুই ফুৎকারের মাঝের সময়টি হবে চল্লিশ দিন। (দুনিয়ার হিসাবে চল্লিশ হাজার বছর। (আকাইদে সিফারনিয়্যাহ : ২/১৬৪)।
(ঘ) সেদিন শিঙ্গায় ফুঁক দেয়া হবে এবং যেদিন আমি অপরাধিদেরকে নীলচক্ষু তথা দৃষ্টিহীন অবস্থায় সমবেত করব। (সূরা ত্বাহা : ১০২)। অর্থাৎ ভয়ে ও আতত্বে তাদের দেহের রক্ত শুকিয়ে যাবে এবং তাদের অবস্থা এমন হয়ে যাবে, যেন তাদের শরীরে এক বিন্দু রক্ত ও নেই। অথবা তারা নীল চক্ষু ওয়ালাদের মত দৃষ্টিহীন হয়ে যাবে এবং অত্যধিক ভয়ে তাদের চোখের মনি স্থির হয়ে যাবে। (ফাতহুল কাদীর)। (ঙ) আর যে দিন শিঙ্গায় ফুঁঁক দেয়া হবে সেদিন আসমানসমূহ ও যমীনের সকলেই ভীত বিহŸল হয়ে পড়বে। তবে আল্লাহ তায়ালা যাদেরকে চাইবেন তারা ব্যতীত। এবং সকলেই তাঁর কাছে আসবে হীন অবস্থায়। (সূরা আন নামল : আয়াত-৮৭)।
এই আয়াতে ‘ফাজেআ’ শব্দের অর্থ হল অস্থির ও উদ্বিগ্ন হওয়া। (ফাতহুল কাদীর)। অন্য এক আয়াতে ‘ফাজেআ’ শব্দের পরিবর্তে ‘ছায়েক্বা’ শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে। (সূরা আয্ যুমার : আয়াত-৬৮)। এর অর্থ অজ্ঞান হওয়া। যদি উভয় আয়াতকে সিঙ্গার প্রথম ফুৎকারের সাথে সম্পর্ক যুক্ত করা হয়, তাহলে উভয় শব্দের সারমর্ম হবে এই যে, শিঙ্গায় ফুঁক দেয়ার সময় সবাই অস্থির উদ্বিগ্ন হবে, তারপর অজ্ঞান হয়ে যাবে এবং অবশেষে মারা যাবে। (ইবনে কাসীর)।
কোন কোন তাফসীরবিদ এ ফুৎকারকে শিঙ্গায় দ্বিতীয় ফুৎকারের সাথে সংশ্লিষ্ট করেছেন। যার পর সকল মৃতরা পুনরুজ্জীবন লাভ করবে। আয়াতের মর্ম এই যে, সবাই জীবিত হওয়ার সময় ভীত বিহŸল অবস্থায় উত্থিত হবে। অথবা তাড়াতাড়ি আহŸানে সারা দেয়ার কথা বোঝানো হয়েছে। কারণ তাড়াতাড়ি আহŸানে সাড়া দেয়াকেও ‘ফাজেআ’ বলা হয়ে থাকে। (কুরতুবী)।
বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
বাংলাদেশের বিপক্ষে যে একাদশ দিয়ে মাঠে নামছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ
কিশোরগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ার কামালসহ তিনজন গ্রেফতার
প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানের সাক্ষাৎ
বেইজিং সংস্কৃতি ও পর্যটন ব্যুরো ও আটাবের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত
উইন্ডিজের বিপক্ষে মাঠে নামছে বাংলাদেশ
গাজায় যুদ্ধবিরতি ছাড়া বন্দী বিনিময় হবে না : হামাস
শান্তিরক্ষা মিশন মোতায়েন করতে চায় জাতিসংঘ হাইতিতে
চকরিয়ার বিএনপি নেতা আবু তাহের চৌধুরীর মৃত্যুতে সালাহউদ্দিন আহমদ ও হাসিনা আহমদের শোক
পুতিন পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে দ্বিধা করবেন না : সার্বিয়া
ক্লাইমেট অর্থায়ন ইস্যুতে দেশগুলোর মধ্যে দ্বন্দ্ব
লালমোহনে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত যুবদল নেতা চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু
ট্রাম্পের অ্যাটর্নির বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন আটকে গেল
‘ফিলিস্তিনের পর ইরান, সউদী ও তুরস্ক হবে পরবর্তী টার্গেট’
প্রতি বছর ৩ লাখ নথিবিহীন অভিবাসীকে বৈধতা দানের ঘোষণা স্পেনের
প্রেম-ভালোবাসা নিয়ে সবচেয়ে অসুখী দেশ জাপান-কোরিয়া
মুসলিম চিকিৎসক
শীর্ষে দিল্লি
সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সংবর্ধনা
ইসলামিক ফাউন্ডেশন এর বোর্ড অব গভর্নর সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সম্বর্ধনা
বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে আঞ্চলিক সহযোগিতার আহ্বান