সাফা মারওয়া : হাজেরা আ. এর স্মৃতিধন্য দু’টি পাহাড়

Daily Inqilab এ. কে. এম. ফজলুর রহমান মুন্শী

১৪ জুন ২০২৪, ১২:১৬ এএম | আপডেট: ১৪ জুন ২০২৪, ১২:১৬ এএম

আল্লাহ তা‘আালার মকবুল বান্দাহদের থেকে প্রতিপন্ন এমন সব কর্মকাÐ যা তারা এবাদতের নিয়তে আদায় করে থাকেন, যেগুলো সরাসরি নির্ধারিত এবাদত নয়। কিন্তু পরম দয়াময় আল্লাহর দরবারে এগুলো এতই পছন্দনীয় ও মুস্তাহাব হয়ে থাকে যে, সেগুলো সম্মানিত এবাদতের অংশ বানিয়ে দেয়া হয়। এর উদাহরণ হযরত হাজেরা আ.-এর সাইয়্যেদেনা ইসমাঈল আ.-এর জন্য পানির তালাশে সাফা ও মারওয়া দুই পাহাড়ের মধ্যবর্তী স্থানে পাগলের মতো দৌড়ানো। আল্লাহ তা‘আলার নিকট এই প্রিয় সেবিকার এই কাজ এতই পছন্দনীয় হলো যে, তিনি একে মানাসেকে হজের অংশ বানিয়ে দিলেন, ব্যবহারিক ভাষায় একে ‘সাঈ’ বলে এবং তা হজ ও ওমরার ওয়াজিবসমূহের অন্তর্ভুক্ত।

একথা সুস্পষ্টভাবে জানা থাকা দরকার যে, সাঈ এর সাত চক্করের মধ্যে নির্দিষ্ট কোনো জিকির, দোয়া কালাম, ওয়াজিফা অথবা কোরআনের আয়াত তিলাওয়াত করা হয় না। তবে আপনি যদি ইচ্ছা করেন তবে কোরআনুল কারীমের বিভিন্ন সূরা তেলাওয়াত করতে পারেন, বিভিন্ন দোয়া, তাসবিহাত ও মোনাজাত করতে পারেন। দরুদ শরীফ বারবার পাঠ করতে পারেন। আর যদি স্মরণে কিছুই না আসে, তাহলে শুধু আল্লাহর নাম জিকির করতে পারেন। অথবা যেকোনো উত্তম কালেমা আপনার মনে আসে পাঠ করতে পারেন। এসবই জায়েজ। যদি কোনো কিছু মনে না আসে তবে চুপচাপ সাঈ এর সাত চক্কর সাফা এবং মারওয়ার মধ্যে পূর্ণ করুন।

সাফা এবং মারওয়ার সাঈ সংক্রান্ত ঐতিহাসিক পটভ‚মিকাকে তুলে ধরে ইমাম বুখারী (১৯৪-২৫৬ হি.) এবং অন্যান্য হাদিস শাস্ত্রের ইমামগণ এবং তাফসির শাস্ত্রের ইমামগণ বহুসংখ্যক হাদিস ও রেওয়ায়েতে বর্ণনা করেছেন। তন্মধ্যে একটি রেওয়ায়েত হলো এই : হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বর্ণনা করেন, হযরত ইব্রাহীম আ., হযরত হাজেরা আ. এবং দুগ্ধপোষ্য ছেলে হযরত ইসমাঈল আ.-কে (শাম থেকে) মক্কায় নিয়ে আসলেন। তৎকালে মক্কায় মানুষ আবাদ ছিল না এবং পানির নাম-নিশানাও ছিল না। সুতরাং তিনি এ দু’জনকে বাইতুল্লাহর কাছে ছেড়ে দিলেন এবং একটি পোটলায় কিছু খেজুর এবং মশকের মধ্যে কিছু পানিও তাদের দিলেন।

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. আরও বর্ণনা করেছেন : হযরত ইসমাঈল আ.-এর মাতা হাজেরা আ. ইসমাঈল আ.-কে দুগ্ধপান করাতে লাগলেন এবং সেই পানি হতে পান করতে লাগলেন। এক সময় তার মশকের পানি শেষ হয়ে গেল। যার ফলে তিনি এবং তার ছেলে পিপাসার্ত হয়ে পড়লেন। তিনি দেখতে পেলেন যে, তার দু’বছর বয়স্ক ছেলে পিপাসা-কাতর হয়ে উভয় পা মাটিতে মারছেন। এই দৃশ্য সহ্য করতে না পেরে তিনি পানির তালাশে বের হলেন।

সেই স্থানের কাছেই ছিল ‘সাফা’ পাহাড়, এতে আরোহণ করে করে উপত্যকার এদিকে-সেদিকে তাকাতে লাগলেন। যদি কিছু নজরে আসে। কিন্তু তিনি কাউকে দেখতে পেলেন না। সুতরাং সাফা হতে অবতরণ করে উপত্যকায় চলে আসলেন এবং পরিধেয় বসন আঁটসাঁট করে বিপদগ্রস্ত মানুষের মতো দ্রæত দৌড়ে তিনি তা পার হলেন এবং ‘মারওয়া’ পাহাড়ে আরোহণ করে এদিকে-সেদিকে কোথাও মানুষকে তালাশ করতে লাগলেন। কিন্তু তিনি কাউকে দেখতে পেলেন না। এভাবে তিনি (সাফা এবং মারওয়ার মধ্যবর্তী স্থানে) সাতবার চক্কর দিলেন। বর্ণনাকারী আরও বলেন, হুজুর আকরাম সা. ইরশাদ করেছেন, এ কারণেই মানুষ সাফা এবং মারওয়ার মধ্যে (হযরত হাজেরা আ.-এর সুন্নাতের ওপর আমল করতে গিয়ে) সাঈ করেন। (বুখারী, কিতাবুল আম্বিয়া : খ. ২, পৃ. ১২২৮-১২২৯, বর্ণনা সংখ্যা ৩১৮৪)।

এ ঘটনার প্রায় ৫ হাজার বছর অতিবাহিত হয়েছে। এখন সেই উপত্যকা নেই, এমনকি সেই পাহাড়ি অবস্থাও নেই। এমনকি আল্লাহর প্রিয় সেই সেবিকা হাজেরা আ.-এর ওপর যে অবস্থার অবতারণা ঘটেছিল, তাও অবশিষ্ট নেই। তারপরও হাজী সাহেবান আল্লাহর নির্দেশ পালনস্বরূপ সাঈ করেন। যখন হাজী সাহেবান ও ওমরাকারীগণ সাফা এবং মারওয়ার সেই অংশে উপস্থিত হন, তখন তারাও দৌড়ে সেই স্থান অতিক্রম করেন। হযরত হাজেরা আ. স্বীয় কলিজার টুকরা হযরত ইসমাঈল আ. এর জন্য পানির তালাশে এক পাহাড় হতে অন্য পাহাড়ের চূড়ায় উঠতে নিচু এই উপত্যকাকে পাড়ি দেওয়ার জন্য দৌড়ে ছিলেন। আল্লাহ তা‘আলার নিকট প্রিয় সেবিকা হাজেরা আ.-এর এই আমল খুবই পছন্দীয় হলো। আর আজও আমরা সেই পেরেশানি ও হৃদকম্পনের খেয়ালে ও চিন্তায় ধারণ করে আল্লাহ তা’আলার নির্দেশ পালনার্থে সাঈ করি।

 

 


বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

সোনালী ব্যাংকে হুইসেল ব্লোয়ার্স পলিসি বিষয়ক কর্মশালা অনুষ্ঠিত

সোনালী ব্যাংকে হুইসেল ব্লোয়ার্স পলিসি বিষয়ক কর্মশালা অনুষ্ঠিত

বীমা সেবার পরিধি বাড়াতে গার্ডিয়ান লাইফ ইন্স্যুরেন্স-ব্র্যাক হেলথকেয়ার স্ট্র্যাটিজিক পার্টনারশিপ চুক্তি

বীমা সেবার পরিধি বাড়াতে গার্ডিয়ান লাইফ ইন্স্যুরেন্স-ব্র্যাক হেলথকেয়ার স্ট্র্যাটিজিক পার্টনারশিপ চুক্তি

পদ্মায় পানি বেড়ে দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে ভাঙন আতঙ্ক

পদ্মায় পানি বেড়ে দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে ভাঙন আতঙ্ক

ঐতিহাসিক প্রয়োজনেই আওয়ামী লীগের জন্ম -আনন্দ র‌্যালি পূর্ব অনুষ্ঠানে আ জ ম নাছির উদ্দিন

ঐতিহাসিক প্রয়োজনেই আওয়ামী লীগের জন্ম -আনন্দ র‌্যালি পূর্ব অনুষ্ঠানে আ জ ম নাছির উদ্দিন

ডেঙ্গু ঝুঁকিতে বাকৃবি

ডেঙ্গু ঝুঁকিতে বাকৃবি

স্ট্রিট ফুডের বিশুদ্ধতা নিশ্চিত করতে হবে

স্ট্রিট ফুডের বিশুদ্ধতা নিশ্চিত করতে হবে

পাহাড় ধসে মৃত্যুর মিছিল বাড়ছেই

পাহাড় ধসে মৃত্যুর মিছিল বাড়ছেই

আবহাওয়ার পূর্বাভাস কেন সঠিক হয় না?

আবহাওয়ার পূর্বাভাস কেন সঠিক হয় না?

নেতানিয়াহু পদত্যাগ করুন, নয়তো জিম্মি বিনিময় অসম্ভব

নেতানিয়াহু পদত্যাগ করুন, নয়তো জিম্মি বিনিময় অসম্ভব

মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কবলে রুশ অ্যান্টি-ভাইরাস জায়ান্ট ক্যাসপারস্কি

মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কবলে রুশ অ্যান্টি-ভাইরাস জায়ান্ট ক্যাসপারস্কি

তাইওয়ানের স্বাধীনতা চাইলেই চরম শাস্তি!

তাইওয়ানের স্বাধীনতা চাইলেই চরম শাস্তি!

তীব্র তাপপ্রবাহ, মক্কা-মদিনায় জুমার খুতবা সংক্ষিপ্ত করার নির্দেশ

তীব্র তাপপ্রবাহ, মক্কা-মদিনায় জুমার খুতবা সংক্ষিপ্ত করার নির্দেশ

দক্ষিণ-পূর্ব তুরস্কে বিশাল দাবানল, নিহত অন্তত ১২

দক্ষিণ-পূর্ব তুরস্কে বিশাল দাবানল, নিহত অন্তত ১২

আফগানিস্তানে রাষ্ট্রদূত নিয়োগ দিয়েছে নিকারাগুয়া

আফগানিস্তানে রাষ্ট্রদূত নিয়োগ দিয়েছে নিকারাগুয়া

নেতানিয়াহুর আসন্ন সফর ও কংগ্রেসে ভাষণ নিয়ে উদ্বিগ্ন হোয়াইট হাউস

নেতানিয়াহুর আসন্ন সফর ও কংগ্রেসে ভাষণ নিয়ে উদ্বিগ্ন হোয়াইট হাউস

৩৩০০ বছরের পুরনো জাহাজের ধ্বংসাবশেষ মিলল ভূমধ্যসাগরে

৩৩০০ বছরের পুরনো জাহাজের ধ্বংসাবশেষ মিলল ভূমধ্যসাগরে

এনভিডিয়ার চমক শেষে ফের শীর্ষে মাইক্রোসফট

এনভিডিয়ার চমক শেষে ফের শীর্ষে মাইক্রোসফট

যৌথ মহড়ার জন্য দ.কোরিয়ায় পৌঁছেছে মার্কিন বিমানবাহী রণতরী

যৌথ মহড়ার জন্য দ.কোরিয়ায় পৌঁছেছে মার্কিন বিমানবাহী রণতরী

দক্ষিণ মেক্সিকোতে এক সপ্তাহের মধ্যে দু’জন মেয়র নিহত

দক্ষিণ মেক্সিকোতে এক সপ্তাহের মধ্যে দু’জন মেয়র নিহত

ইসরাইলের স্পর্শকাতর লক্ষ্যবস্তুর ফুটেজ প্রকাশ করল হিজবুল্লাহ

ইসরাইলের স্পর্শকাতর লক্ষ্যবস্তুর ফুটেজ প্রকাশ করল হিজবুল্লাহ