কৃতজ্ঞতা প্রকাশকারী বান্দা আল্লাহর কাছে প্রিয় জুমার খুৎবা পূর্ব বয়ান
২১ জুন ২০২৪, ০৪:৩৬ পিএম | আপডেট: ২১ জুন ২০২৪, ০৪:৩৬ পিএম
বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব মুফতি মো. রুহুল আমিন আজ জুমার খুৎবা পূর্ব বয়ানে বলেছেন, মোবাইলের যুগে সারা দুনিয়া এখন হাতের মুঠোয়; গুনা ও নেক আমলও হাতের মুঠোয়। এক সময়ে নাচানাচি শেষ হয়ে যাবে। যখন সময় হবে এক সেকেন্ডও দুনিয়ায় থাকার সুযোগ হবে না। সংশোধনেরও সুযোগ পাওয়া যাবে না। যারা রবকে ভুলতে পারে না এবং পরকালকে ভুলতে পারে না তারাই কামিয়াবি। আমি আল্লাহর কাছেই ফিরে যাবো এই একীন রাখতে হবে। খতিব বলেন, বিজ্ঞানের দ্বারা উপকৃত হোন কিন্ত এর দ্বারা প্রভাবিত হয়ে আল্লাহকে ভুলে যাওয়া যাবে না। আল্লাহকে অস্বীকার করার জন্য বিজ্ঞান দেয়া হয়নি। আল্লাহ মানুষকে বিনামূল্যে ঈমান দান করেছেন। ঈমানের দৌলতকে হেফাজতের জন্য বেশি বেশি দোয়া করতে হবে। নিয়মিত পবিত্র কোরআন পড়তে হবে। কোরআন পড়া মানে আল্লাহর সাথে কথা বলা। আল্লাহ বলেন, হে ঈমানদারগণ সালাত আদায় করো এবং নবীর ওপর দরুদ পাঠ করো। একবার দরুদ পাঠ করলে দশটি রহমত বর্ষিত হয়। যে যত বেশি দরুদ পড়বে সে ততবেশি নবীর কাছে যাওয়ার সুযোগ পাবেন। প্রতিদিন অধিক পরিমাণ দরুদ পাঠ করতে হবে। আল্লাহ সবাইকে তৌফিক দান করুন। আমিন।
গাজীপুরের টঙ্গী পূর্ব আরিচপুর সরকার বাড়ী ঈদগাহ মসজিদুল আকসার খতিব মাওলানা রিয়াদুল ইসলাম মল্লিক আজ জুমার খুৎবা পূর্ব বয়ানে বলেন, আল্লাহর কাছে প্রিয় হলো কোনো ইবাদত পূর্ণ হওয়ার পরে শুকরিয়া আদায় করা। আল্লাহ তায়ালা ইবাদতের পাশাপাশি সরাসরি শুকরিয়া আদায় করার কথাও বলেছেন। ইরশাদ হয়েছে-“বরং আল্লাহরই এবাদত করুন এবং কৃতজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত থাকুন।” সূরা যুমার, আয়াত ৬৬)।
অযুর বিধান পূর্ণ করার পর আল্লাহ তা’আলা শুকরিয়া আদায় করার কথা বলেছেন- “হে মুমিনগণ, যখন তোমরা নামাযের জন্যে উঠ, তখন স্বীয় মুখমন্ডল ও হস্তসমূহ কনুই পর্যন্ত ধৌত কর এবং পদযুগল টাখনুসহ। যদি তোমরা অপবিত্র হও তবে সারা দেহ পবিত্র করে নাও এবং যদি তোমরা রুগ্ন হও, অথবা প্রবাসে থাক অথবা তোমাদের কেউ প্রসাব-পায়খানা সেরে আসে অথবা তোমরা স্ত্রীদের সাথে সহবাস কর, অতঃপর পানি না পাও, তবে তোমরা পবিত্র মাটি দ্বারা তায়াম্মুম করে নাও-অর্থাৎ, স্বীয় মুখ-মন্ডল ও হস্তদ্বয় মাটি দ্বারা মুছে ফেল। আল্লাহ তোমাদেরকে অসুবিধায় ফেলতে চান না; কিন্তু তোমাদেরকে পবিত্র রাখতে চান এবং তোমাদের প্রতি স্বীয় নেয়ামত পূর্ণ করতে চান-যাতে তোমরা কৃতজ্ঞাতা প্রকাশ কর।” (সূরা মায়েদা, আয়াত ৬)। হাদিসে নামাজের পরে শুকরিয়া আদায় করার কথা বলা হয়েছে। হযরত মুয়াজ ইবনে জাবালকে নবী সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম ফরজ নামায শেষে শুকরিয়া আদায় করার কথা বলেছেন।
“মুআয ইবনু জাবাল (রাযি.) থেকে বর্ণিত- একদা রাসূলুল্লাহ (সা.) তার হাত ধরে বললেন, হে মু‘আয! আল্লাহর শপথ! আমি অবশ্যই তোমাকে ভালবাসি, আল্লাহর শপথ! আমি অবশ্যই তোমাকে ভালবাসি। তিনি বললেন, হে মু‘আয! আমি তোমাকে ওয়াসিয়াত করছি, তুমি প্রত্যেক সালাতের পর এ দু‘আটি কখনো পরিহার করবে না- “আল্লাহুম্মা আঈন্নী ‘আলা যিকরিকা ওয়া শুকরিকা ওয়া হুসনি ‘ইবাদাতিকা” (অর্থাৎ- হে আল্লাহ! আপনার স্মরণে, আপনার কৃতজ্ঞতা প্রকাশে এবং আপনার উত্তম ‘ইবাদাতে আমাকে সাহায্য করুন)। সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ১৫২২। হজ ও কোরবানি এর ব্যতিক্রম নয়। কিন্তু প্রশ্ন হলো কেন শুকরিয়া আদায় করবে? কারণ তিনি ইবাদত করার জন্য সঠিক পথ দেখিয়েছেন। আদায় করার সুযোগ দিয়েছেন । এর জন্য পুরস্কার নির্ধারণ করেছেন এবং কবুল হওয়ার ব্যাপারে প্রতিশ্রæতি দিয়েছেন। বিশেষ করে যারা ইবাদত করতে বিভিন্ন ত্রæটি-বিচ্যুতি করেছেন তাদের বেশি করে ইস্তেগফার ও শুকরিয়া আদায় করা যাতে করে তাদের ত্রæটি গুলো এর দ্বারা দূর হয়ে যায়। এজন্যে আল্লাহ তা’আলা কোরআন মাজীদের বিভিন্ন আয়াতে বিভিন্ন ইবাদতের আলোচনা করে তার অনুগ্রহের কথা বলেছেন বিশেষ করে তার শুকরিয়া আদায় করার ব্যাপারে জোর তাগিদ দিয়েছেন। যেমন হজের আলোচনা করতে গিয়ে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন- “তোমাদের উপর তোমাদের পালনকর্তার অনুগ্রহ অন্বেষন করায় কোন পাপ নেই। অতঃপর যখন তওয়াফের জন্য ফিরে আসবে আরাফাত থেকে, তখন মাশ‘ আরে-হারামের নিকটে আল্লাহকে স্মরণ কর। আর তাঁকে স্মরণ কর তেমনি করে, যেমন তোমাদিগকে হেদায়েত করা হয়েছে। আর নিশ্চয়ই ইতিপূর্বে তোমরা ছিলে অজ্ঞ।” (সূরা বাকারা ,আয়াত ১৯৮)। হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম বাইতুল্লা নির্মাণের পর বলেন- “হে আমাদের পালনকর্তা, আমি নিজের এক সন্তানকে তোমার পবিত্র গৃহের সন্নিকটে চাষাবাদহীন উপত্যকায় আবাদ করেছি; হে আমাদের পালনকর্তা, যাতে তারা নামায কায়েম রাখে। অতঃপর আপনি কিছু লোকের অন্তরকে তাদের প্রতি আকৃষ্ট করুন এবং তাদেরকে ফলাদি দ্বারা রুযী দান করুন, সম্ভবতঃ তারা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবে”। (সূরা ইব্রাহীম, আয়াত ৩৭)। কোরবানি সম্পন্ন হওয়ার পর আল্লাহ তাআলা নিচের আয়াতে শুকরিয়া আদায় করার কথা বলেছেন- “এবং কা’বার জন্যে উৎসর্গীকৃত উটকে আমি তোমাদের জন্যে আল্লাহর অন্যতম নিদর্শন করেছি। এতে তোমাদের জন্যে মঙ্গল রয়েছে। সুতরাং সারিবদ্ধভাবে বাঁধা অবস্থায় তাদের যবেহ করার সময় তোমরা আল্লাহর নাম উচ্চারণ কর। অতঃপর যখন তারা কাত হয়ে পড়ে যায় তখন তা থেকে তোমরা আহার কর এবং আহার করাও ধৈয্যশীল অভাবগ্রস্থকে ও সাহায্যপ্রার্থীদেরকে। এমনিভাবে আমি এগুলোকে তোমাদের বশীভ‚ত করে দিয়েছি, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর।” (সূরা হজ , আয়াত ৩৬)
জিলহজ মাসে বিশেষ করে যে এবাদতগুলো করেছে সেগুলোকে উল্লেখ করে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের শুকরিয়া আদায় করে বলবে- হে আল্লাহ! আপনি আমাকে জিলহজের ১০ দিন এবাদতের সুযোগ দিয়েছেন সেজন্য আলহামদুলিল্লাহ। হে আল্লাহ আপনি আমাকে আরাফার রোজা রাখার তৌফিক দিয়েছেন সেজন্য আলহামদুলিল্লাহ। হে আল্লাহ ! আপনি আমাকে কোরবানি করার সুযোগ দিয়েছেন সেজন্য আলহামদুলিল্লাহ। এভাবে বান্দা যখন প্রত্যেক ইবাদতের ক্ষেত্রে আল্লাহ তায়ালার শুকরিয়া আদায় করবে তখন অতিরিক্ত আরো বেশি করে তার ইবাদতের সুযোগ মিলবে। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন- “যখন তোমাদের পালনকর্তা ঘোষণা করলেন যে, যদি কৃতজ্ঞতা স্বীকার কর, তবে তোমাদেরকে আরও দেব এবং যদি অকৃতজ্ঞ হও তবে নিশ্চয়ই আমার শাস্তি হবে কঠোর।” (সূরা ইব্রাহীম, আয়াত ৭)। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে তার শুকরিয়া বেশি করে আদায় করার তৌফিক দান করুন। আমিন।
পাবনার শিবরামপুরস্থ মাওলানা মহিউল ইসলাম (রহ.) জামে মসজিদের অতিথি খতিব মাওলানা মো. মনিরুল ইসলাম আজ জুমার খুৎবা পূর্ব বয়ানে বলেন, আল্লাহ তায়ালা যাদেরকে সামর্থ্য দিয়েছিলেন তারা পশু কোরবানি করেছেন। আর যাদেরকে সামর্থ্য দেননি তারা কোরবানি করতে পারেননি। কোরবানি আমরা করি বা না করি সামর্থ থাকুক বা না থাকুক কিন্তু কোরবানির শিক্ষা সকলের জন্য। কোরবানির মূল শিক্ষা হলো এখলাস। আরও বলা হয়, সমস্ত কাজ আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীনের সন্তুষ্টির জন্য করা। লোক দেখানো এবাদতকে বলা হয় রিয়া। কোরআনে কারিমের ভাষায় যাকে শিরক বলা হয়েছে।খতিব বলেন, মহান আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেছেন: যে ব্যক্তি তার রবের সাথে সাক্ষাতের আশা করে, সে যেন নেক আমল করে এবং তার রবের এবাদতের সাথে কাউকে শরিক না করে। কাবিলের কোরবানি কবুল হয়েছিল না ইখলাস না থাকার কারণে। পক্ষান্তরে হাবিলের কোরবানি কবুল হয়েছিল শুধু এখলাছের কারণে। এজন্য আমাদের বাকি জীবনটা পরিচালিত করতে হবে এখলাসের ভিত্তিতে। তাহলে আমাদের জীবনের সমস্ত আমল আল্লাহর দরবারে কবুল হবে। একজন মুসলমানের জিন্দেগীর সমস্ত আমলই এবাদত, যখন সে তার নিয়তকে সহীহ করবে। খাওয়া দাওয়া, ব্যবসা-বাণিজ্য, পেশাব পায়খানা, ঘুম, হাসি তামাশা, সন্তানকে সময় দেওয়া, স্ত্রীকে সময় দেওয়া, স্ত্রীর সঙ্গে আনন্দ মজা করা সবকিছুই তখন তার এবাদত হয়ে দাঁড়াবে। এজন্য নিজের জীবনে নিয়তকে পরিশুদ্ধ করা একান্ত জরুরি। আল্লাহ সবাইকে তৌফিক দান করুন। আমিন।
বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
বাংলাদেশের বিপক্ষে যে একাদশ দিয়ে মাঠে নামছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ
কিশোরগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ার কামালসহ তিনজন গ্রেফতার
প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানের সাক্ষাৎ
বেইজিং সংস্কৃতি ও পর্যটন ব্যুরো ও আটাবের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত
উইন্ডিজের বিপক্ষে মাঠে নামছে বাংলাদেশ
গাজায় যুদ্ধবিরতি ছাড়া বন্দী বিনিময় হবে না : হামাস
শান্তিরক্ষা মিশন মোতায়েন করতে চায় জাতিসংঘ হাইতিতে
চকরিয়ার বিএনপি নেতা আবু তাহের চৌধুরীর মৃত্যুতে সালাহউদ্দিন আহমদ ও হাসিনা আহমদের শোক
পুতিন পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে দ্বিধা করবেন না : সার্বিয়া
ক্লাইমেট অর্থায়ন ইস্যুতে দেশগুলোর মধ্যে দ্বন্দ্ব
লালমোহনে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত যুবদল নেতা চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু
ট্রাম্পের অ্যাটর্নির বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন আটকে গেল
‘ফিলিস্তিনের পর ইরান, সউদী ও তুরস্ক হবে পরবর্তী টার্গেট’
প্রতি বছর ৩ লাখ নথিবিহীন অভিবাসীকে বৈধতা দানের ঘোষণা স্পেনের
প্রেম-ভালোবাসা নিয়ে সবচেয়ে অসুখী দেশ জাপান-কোরিয়া
মুসলিম চিকিৎসক
শীর্ষে দিল্লি
সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সংবর্ধনা
ইসলামিক ফাউন্ডেশন এর বোর্ড অব গভর্নর সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সম্বর্ধনা
বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে আঞ্চলিক সহযোগিতার আহ্বান