মুসলমানদের ঐক্যই সমাধান

Daily Inqilab মুস্তাফিজ গাজী

২৪ আগস্ট ২০২৪, ১২:০১ এএম | আপডেট: ২৪ আগস্ট ২০২৪, ১২:০১ এএম

বর্তমান পৃথিবীতে মুসলমানের সংখ্যা প্রায় দুইশো কোটি। বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশেই কমবেশি মুসলমানের বসবাস আছে। তারমধ্য ৫৭টিই মুসলিম প্রধান দেশ। তারমধ্যে আবার পারমাণবিক শক্তিধর দেশও কয়েকটি আছে। বাকিগুলো যে কম শক্তিশালী তাও কিন্তু নয়। কোনো কোনো মুসলিম রাষ্ট্রের সেনাবাহিনী উল্লেখযোগ্য পর্যায়ে পৃথিবীতে খ্যাত। জাতিসংঘের শান্তি মিশনে বারবার সেরা খেতাব পাচ্ছে।

তুলনামূলকভাবে মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর অবস্থান পৃথিবীর সুবিধাজনক স্থানে। কোনো কোনো রাষ্ট্রের পথ ধরেই ইউরোপ আমেরিকার গমনপথ। আবার এমনও রাষ্ট্র আছে, যার সুদৃষ্টি ছাড়া অমুসলিম রাষ্ট্রগুলোর মোড়লপনার সুযোগ নেই। বললে অত্যুক্তি হবে না যে, ক্ষতিপয় মুনাফিক মুসলিম রাষ্ট্র-ই শত্রুর পা; যার উপর ঠিকে আছে সমস্ত জুলুমবাজি। যদিও কিছু কিছু রাষ্ট্র দারিদ্র্য পীড়িত কিন্তু সার্বিকভাবে মুসলমানদের অবস্থা মোটেও খারাপ হওয়ার কথা নয়। এক আরবের ২১টি দেশের সম্পদই পৃথিবীর উল্লেখযোগ্য শক্তি। মুসলমানদের এত এত সুবিধা ও সম্পদ থাকা সত্ত্বেও এত বড় বিপর্যয় কেনো?

৭ই অক্টোবরে গাজার ইস্যুটি নতুন করে সামনে আসার পর মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর অনৈক্য, দুর্নীতি, স্বৈরাচারিতা ও স্বার্থপরতা সবার চোখে ভাসছে। ইসরায়েলের দীর্ঘ ৭০ বছরের জুলুম নিপীড়নের পরও ফিলিস্তিনের পক্ষে কোনো মুসলিম রাষ্ট্র কোনোপ্রকার ভূমিকা রাখতে পারে নি। ৭ই অক্টোবর হামাসের হামলার পর আমেরিকা রণতরীসহ নানা সাহায্য নিয়ে ছুটে এসেছে ইসরায়েলে। অনেক দেশের সরকারও দূর থেকে বা স্বয়ং ইসরায়েলে গিয়ে তাদের ধ্বংসযজ্ঞে সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়ে এসেছে। বিভিন্ন দেশ থেকেও সেনারা ইসরায়েলের হয়ে ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছে অসহায়, নিরুপায় ও বিপর্যস্ত গাজায়। এর ভিতরে কোনো মুসলিম রাষ্ট্র ফিলিস্তিনের জন্য তেমন কোনো ভূমিকা-ই রাখতে পারে নি। অথচ ইসরায়েল ও আমেরিকা যে বিমান ও ট্যাংক দিয়ে এই হত্যাকা- চালাচ্ছে তা-ও অপর আরেক মুসলিম রাষ্ট্রের খনিজ থেকে উত্তলিত তেলে চলছে। মিশরের সরকার আরো কৌশল বাতলে দিচ্ছে হামাসকে কিভাবে সমূলে ধ্বংস করা যায়! দিনদিন মুসলিম উম্মাহর দুর্দশা বেড়েই চলেছে। অথচ পড়শী মুসলিম রাষ্ট্রগুলো নীরব দর্শকের ভূমিকায় আছে। তাদের ভিতরে একটুও ভাবান্তর ঘটছে না। মুসলমানদের পারস্পরিক ঐক্য হচ্ছে ফরজ। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা সবাই আল্লাহর রজ্জু দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরো এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না।’ (সূরা আলে ইমরাম:১০৩) আল্লাহর আদেশ অমান্য করে মুসলমানরা আজ সবচেয়ে বেশি বিক্ষিপ্ত, বিচ্ছিন্ন।

উনবিংশ শতাব্দী থেকে মুসলিম উম্মাহ পাল ছাড়া ভেড়ার মত হয়ে গেছে। অতীতে যেকোনো স্থানে মুসলিম অঞ্চল আক্রান্ত হলে নানান প্রান্ত থেকে মুসলমানরা সাহায্যের জন্য ছুটে আসত। এর নিষ্পত্তি বা উল্লেখযোগ্য সমাধান ছাড়া ক্ষান্ত হত না। আমরা দেখতে পারি ক্রুসেড বা হিংস্র তাতারদের ইতিহাস। তাদের কেউ উম্মাহর প্রতিরোধের সামনে টিকতে পারে নি। কিন্তু বর্তমানে?

উসমানী সাম্রাজ্যের পতনের মধ্য দিয়ে যে চিড় মুসলিম উম্মাহর ভাগ্যে ঘটেছে, তা দিনদিন গভীর থেকে গভীর হচ্ছে। জাতিসংঘ তৈরি হয়েছে ঠিকই কিন্তু মুসলমানদের রক্তঝরা বাড়ছে বৈ কমছে না। মুসলমানদের কল্যাণে মুসলিম রাষ্ট্রগুলো মিলে তৈরি করেছিল ওআইসি। কিন্তু নানা ঘাটতি ও ঐক্যের অভাবে তারা আজও কোনো ভূমিকা রাখতে পারে নি। রোহিঙ্গা ইস্যু থেকে নিয়ে সেই রক্তাক্ত গাজা পর্যন্ত প্রতিটি স্থানেই মুসলমানদের সবচেয়ে বড় যে দুর্বলতাটি ধরা পড়েছে, তা হল ঐক্যের ঘাটতি। প্রতিটি মুসলিম রাষ্ট্রই তার নিজের স্বার্থ ও কল্যাণের বাইরে টু শব্দ পর্যন্ত করতে নারাজ। নইলে ৫৭টি মুসলিম রাষ্ট্রের জোড়ালো প্রতিবাদের মুখে বিশ্বের যেকোনো বিষয় নিষ্পত্তি পর্যন্ত যেতে বাধ্য থাকত। অথবা আরবের রাষ্ট্রগুলো তেল রপ্তানিতে কঠিনতা আরোপ করলেও এর সুরাহা আশা করা যেত। মোটকথা মুসলিম উম্মাহর সব আছে। যেটা নেই সেটার জন্যই এই দুর্গতি। আর সেটা হল ঐক্য।

মহানবী হজরত মুহাম্মদ সাঃ এই দুর্গতির দিকে ইঙ্গিত করে সাড়ে চৌদ্দশত বছর আগেই বলেছিলেন, ‘অনতিদূরে সকল বিজাতি তোমাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হবে, যেমন ভোজনকারীরা ভোজপাত্রের উপর একত্রিত হয়। (এবং চারদিক থেকে ভোজন করে থাকে।) একজন বলল, আমরা কি তখন সংখ্যায় কম থাকব, হে আল্লাহর রসূল? তিনি বললেন, বরং তখন তোমরা সংখ্যায় অনেক থাকবে। কিন্তু তোমরা হবে তরঙ্গতাড়িত আবর্জনার ন্যায় (শক্তিহীন, মূল্যহীন)। আল্লাহ তোমাদের শত্রুদের বক্ষ থেকে তোমাদের প্রতি ভীতি তুলে নেবেন এবং তোমাদের হৃদয়ে দুর্বলতা সঞ্চার করবেন। একজন বলল, হে আল্লাহর রসূল! দুর্বলতা কী? তিনি বললেন, দুনিয়াকে ভালোবাসা এবং মরতে না চাওয়া।’ (আবূ দাঊদ ৪২৯৯, মুসনাদে আহমাদ ২২৩৯৭)

মুসলমানরা এখন বিলাসিতায় মগ্ন হয়ে গেছে। ভ্রাতৃত্বের দাবি ভুলে গেছে। দ্বীনের প্রতি গাফলতি এসে গেছে। নির্যাতন কাটিয়ে বীরদর্পে মাথা উত্তোলন করতে হলে প্রথমেই ইমান আমল মজবুত করতে হবে। বুঝতে হবে মুমিনের প্রতি মুমিনের কি অধিকার। বিশ্বের যেকোনো প্রান্তে একজন মুসলিম নির্যাতিত হলে এর আঘাত প্রতিটি মুসলিমের হৃদয়ে লাগার কথা। তাই দ্বীনের দাবি। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘সব মুসলমান একটি দেহের মতো, যদি তার চোখ অসুস্থ হয় তাহলে পুরো শরীর অসুস্থ হয়ে যায়; যদি তার মাথা অসুস্থ হয় তাহলে পুরো শরীর অসুস্থ হয়ে যায়।’ (সহিহ মুসলিম : ৬৭৫৪)। আল্লাহ মুসলিম উম্মাহকে হেফাজত করুন। ঐক্য দান করে নিজেদের জান মাল হেফাজত করার তৌফিক দান করুন। আমীন।


বিভাগ : ইসলামী জীবন


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

শাওয়াল মাসের ফজিলত
মানুষের শ্রবণশক্তি এবং দৃষ্টিশক্তির পরীক্ষা
নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় ইসলামের নির্দেশনা
মুমিন জীবনে সফলতা ও বিজয় অনিবার্য
ভবিষ্যৎ ও অদৃশ্যের নিয়ন্ত্রণ কেবল আল্লাহ তা’য়ালারই হাতে
আরও
X

আরও পড়ুন

ধুলো দূষণে নাকাল ফরিদপুরের লক্ষাধিক মানুষ, দেখার কেউ নেই!

ধুলো দূষণে নাকাল ফরিদপুরের লক্ষাধিক মানুষ, দেখার কেউ নেই!

আইনজীবী তালিকাভুক্তির এমসিকিউ পরীক্ষার ফল প্রকাশিত, উত্তীর্ণ ১৩২৫৮

আইনজীবী তালিকাভুক্তির এমসিকিউ পরীক্ষার ফল প্রকাশিত, উত্তীর্ণ ১৩২৫৮

বিএনপি, জামায়াত, এনসিপির দৌড়ঝাঁপ, জোটের নানা হিসাব

বিএনপি, জামায়াত, এনসিপির দৌড়ঝাঁপ, জোটের নানা হিসাব

ভারত ও পাকিস্তানকে আলোচনায় বসার আহ্বান সউদীর

ভারত ও পাকিস্তানকে আলোচনায় বসার আহ্বান সউদীর

শামির রেকর্ডের ম্যাচে ঘরের মাঠে ধরাশয়ী চেন্নাই

শামির রেকর্ডের ম্যাচে ঘরের মাঠে ধরাশয়ী চেন্নাই

সিরিয়ায় আসাদ যুগ শেষ, জাতিসংঘে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদ আল-শাইবানীর ঘোষণা

সিরিয়ায় আসাদ যুগ শেষ, জাতিসংঘে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদ আল-শাইবানীর ঘোষণা

আজ ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে জামায়াতের বৈঠক

আজ ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে জামায়াতের বৈঠক

বার্সার বিপক্ষে ফাইনাল বর্জনের গুঞ্জন নিয়ে রিয়ালের বিবৃতি

বার্সার বিপক্ষে ফাইনাল বর্জনের গুঞ্জন নিয়ে রিয়ালের বিবৃতি

বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে পাকিস্তানের ৫ মন্ত্রী

বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে পাকিস্তানের ৫ মন্ত্রী

ভারত ও পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর মধ্যে ফের গোলাগুলি

ভারত ও পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর মধ্যে ফের গোলাগুলি

পাকিস্তান-ভারত উত্তেজনা প্রশমনে মধ্যস্থতার প্রস্তাব ইরানের

পাকিস্তান-ভারত উত্তেজনা প্রশমনে মধ্যস্থতার প্রস্তাব ইরানের

সাবেক এপিএস মোয়াজ্জেমের বিষয়ে দুদককে তদন্তের অনুরোধ করলেন উপদেষ্টা আসিফ

সাবেক এপিএস মোয়াজ্জেমের বিষয়ে দুদককে তদন্তের অনুরোধ করলেন উপদেষ্টা আসিফ

কুয়েট ভিসি-প্রোভিসিকে অব্যাহতি দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি

কুয়েট ভিসি-প্রোভিসিকে অব্যাহতি দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি

সউদীর কাছে ১০০ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র বিক্রি করবে যুক্তরাষ্ট্র, শিগগিরই চুক্তি

সউদীর কাছে ১০০ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র বিক্রি করবে যুক্তরাষ্ট্র, শিগগিরই চুক্তি

‘গাজার পর বিশ্বের আরেক উন্মুক্ত কারাগার কাশ্মীর’

‘গাজার পর বিশ্বের আরেক উন্মুক্ত কারাগার কাশ্মীর’

অনুষ্ঠিত হলো ‘হেলথ অ্যান্ড ওয়েলবিয়িং মার্কেটিং ফেস্ট ২.০’

অনুষ্ঠিত হলো ‘হেলথ অ্যান্ড ওয়েলবিয়িং মার্কেটিং ফেস্ট ২.০’

এক্সপ্রেসওয়েতে ট্রাকের ধাক্কায় নিহত হলো মোটরসাইকেল আরোহী

এক্সপ্রেসওয়েতে ট্রাকের ধাক্কায় নিহত হলো মোটরসাইকেল আরোহী

পাকিস্তানি নাগরিকদের ফেরত পাঠাতে রাজ্যগুলিকে নির্দেশ দিলেন অমিত শাহ

পাকিস্তানি নাগরিকদের ফেরত পাঠাতে রাজ্যগুলিকে নির্দেশ দিলেন অমিত শাহ

গাজায় ইসরায়েলি হামলায় একদিনে নিহত ৮৪, মানবিক সংকট চরমে

গাজায় ইসরায়েলি হামলায় একদিনে নিহত ৮৪, মানবিক সংকট চরমে

মুক্তির দ্বিতীয় সপ্তাহেও যুক্তরাষ্ট্রে 'বরবাদ' ঝড়

মুক্তির দ্বিতীয় সপ্তাহেও যুক্তরাষ্ট্রে 'বরবাদ' ঝড়