মাটির গহনা
১৬ মার্চ ২০২৩, ০৮:০১ পিএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ০৭:৪৮ এএম
বটগাছগুলোও আগের মতোই কালের স্মৃতি বুকে নিয়ে মাথা উচু করে দাঁড়িয়ে আছে। মেঘনার ঘাটে আগের মতোই মানুষের ভিড়। সেই আগের মতোই মেঘনার জল অসীম আনন্দে রুনুঝুনু বাদ্য বাজিয়ে ঢেউয়ে ঢেউয়ে গলাগলি করে বেলাভূমিতে এসে আছড়ে পড়ছে..
দোকানের পাশ দিয়ে যাবার সময় কয়েকটি পুতুল হাতে নিয়ে মেয়েটি বলে, এগুলোই পছন্দ হয়েছে।
আর কিছু নিবে না? মাটির গহনা? মেলায় এসে মাটির গহনা না নিলে, মেলায় আসাই বৃথা।
মাটির গহনা আমি চিনি না; তুমি পছন্দ করে কিনে দাও।
গহনা পছন্দ করতে গিয়ে দেখা গেলÑ গহনার স্তুপের পাশেই আলাদাভাবে কয়েকটি সুদর্শন গহনা সাজিয়ে রাখা আছে। সোহাগীকে সেগুলো হাতে তুলে নিতে দেখে দোকানদার বলে, এগুলো বেঁচা হইয়া গেছে, এগুলো বাদ দিয়ে পছন্দ করেন।
বিক্রি হয়ে গেছে মানে? তাহলে এরকমই দেন।
এগুলো অর্ডার দেওয়া মাল, এমন আর হইব না।
বিস্ময়ের দৃষ্টিতে তাকিয়ে সোহাগী বলে, কেন? কে অর্ডার দিয়েছে? যে-ই অর্ডার দিয়ে থাকে না কেন, আমি ওগুলো-ই নিব।
এইগুলো শ্রীমদ্দির সাজন ভাই অডার দিয়া গেছে। ওনি, আমার রেগুলার কাস্টমার। সবসময় আমার কাছ থেকে মাল নেয়। এগুলো ওনারে ছাড়া অন্য কারো কাছে বিক্রি করুম না।
সোহাগী স্বগত: করতে থাকে, সাজন! সে এখন কার জন্য গহনা কিনে? এ বয়সে মাটির গহনা দিয়ে কী করে ও?
দোকানির উদ্দেশ্যে সোহাগী বলে, ওনি এখনো এসে এগুলো নিয়ে যায় না কেন?
প্রতি বছরই মেলার পহেলা দিনে আইস্যা মাটির জিনিস কিইন্যা দোকানে রাইখ্যা যায়, মেলার শেষদিন সবগুলোই মেঘনার পানিতে ডুবাইয়্যা দেয়।
ভ্রু কূঁচকে তাকায় সোহাগী, আশ্চর্য! মাটির পুতুল পানিতে ডুবিয়ে দেয়, মানে?
ক্যামনে কমু! আপনি মেলার শেষদিন আইস্যা দেইখ্যা যাইয়্যেন। বহুত লোক, সাজনের তামাশা দ্যহনের লাইগ্যা গাঙের পাড়ে আইসা খাঁড়াইয়্যা থাহে...
মেলার শেষদিন! বেলা ভাটি পড়ে এলো। নদীর পারে অগণিত মানুষের ভিড়। সকলে তাকিয়ে আছে নদীর দিকে...
হঠাৎ কোত্থেকে উন্মাদ মাতালের মতো কে একজন ছুটে আসে নদীতীরে। লোকটির হাতে অগণিত মাটির পুতুল, কাচের চুড়ি ও গহনা। তাকে দেখামাত্র সকলেই হাততালি দিয়ে হইচই শুরু করে...
দূর থেকে তাকিয়ে থাকে সোহাগী, এ উম্মাদ লোকটিই সাজন! হাটুচলে নেমে চোখ বন্ধ করে, কত কী ভাবতে ভাবতে এক এক করে হাতের পুতুলগুলো বিনয়ের সাথে পানির মধ্যে ছেড়ে দিয়েছে।
সাময়িক বিরতির পর, আবার পানিতে নেমে মাটির গহনাগুলোকে একের পর এক মেঘনার ঢেউ খেলানো পানির ওপর ছেড়ে দেয় এই বলতে বলতেÑ রে মেঘনার জল, আমার গহনাগুলো কাছে পৌছাইয়্যা দিস প্রাণগোবিন্দের কাছে..
সবগুলোই পানিতে ডুবিয়ে দিয়ে নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়ে সাজন। ¯œান সেরে নদী থেকে ওঠে সোজা গ্রামের দিকে ছুট লাগায়ে...
সোহাগীর পাশ কাটিয়ে যাবার সময় ওর বুকের ভেতরে মৃদু কাঁপন জেগে ওঠে! ডাকতে চাইলেও, ডাকতে পারছে না।
কিছুটা দূর চলে যাবার পর সোহাগী পেছন থেকে মৃদুস্বরে ডাকতে থাকে, সাজন, ও সাজন..
সে আপন পথেই ছুটে চলছে; কে কার ডাক শোনে!
এদিকে বৈশাখী বিকেলে দিনান্তের সুর বেজে ওঠছে ব্যথাভরা রাগিণীতে! দিবাচর বিহগের দল ব্যাকুল-চিত্তে কূলায় ফিরছে! ধীরে ধীরে নেমে আসছে রাতের আঁধার..! আবছায়া আঁধার থেকে অদূরে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে, সাজন... ও সাজন...
বিভাগ : সাহিত্য
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
নাটকীয় শেষ দশ মিনিটে দুই গোল শোধ করে বার্সাকে রুখে দিল সেল্তা
বিবর্ণ সিটিকে ইতিহাদেই বিধ্বস্ত করলো টটেনহ্যাম
নটিংহ্যামকে হারিয়ে চার ম্যাচের জয়খরা কাটালো আর্সেনাল
স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসা জাতীয়করণের দাবী অত্যন্ত যৌক্তিক
পাঠ্যবই ছাপায় অনিয়মে আনন্দ প্রিন্টার্সকে সতর্কতা
দক্ষিণ লেবাননে ৬ চিকিৎসাকর্মী নিহত
জনগণের সাথে জনসংযোগ বাড়াতে হবে
আমরা যুদ্ধে বিশ্বাসী না কেউ গায়ে পড়লে জবাবের প্রস্তুতি রাখতে হবে: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
বাফুফের নতুন সভাপতি তাবিথের কাছে ২৭ রেফারির চিঠি
ফের বাড়লো সোনার দাম, ভরি ১ লাখ ৪২ হাজার টাকা
বাংলাদেশে খেলা নিয়ে অনিশ্চিয়তায় হামজা!
বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামেই হবে অনূর্ধ্ব-২০ নারী সাফের খেলা
সিলেটে মাজিদের ফিফটি
অ্যাম্বাসেডর কাপ উশুতে সেনাবাহিনী চ্যাম্পিয়ন
মাদক শুধু ব্যক্তিকে নয় পরিবারকেও ধ্বংস করে
সাধারণ মানুষের পেটে লাথি মেরে আ.লীগ নিজেদের ভাগ্য গড়েছে : এমরান সালেহ প্রিন্স
ধর্মদ্রোহী সরকারের সময় কোনো ধর্মই নিরাপদ ছিল না
দৌলতখানে শীতকালীন সবজি পরিচর্যায় ব্যস্ত কৃষক
সুন্দরগঞ্জে ছয় পা বিশিষ্ট বাছুরের জন্ম
বৈষম্যের শিকার কুমিল্লার ১৫ হাজার এতিম শিশু