অনুগল্প

Daily Inqilab ইনকিলাব

২৩ মার্চ ২০২৩, ০৮:৫৩ পিএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ০৭:৩৬ এএম

একজন মুসাফির হেঁটে যাচ্ছেন সুদৃশ্য রাজপথ দিয়ে। পরনে দামী সুট-টাই। তার পেছনে পেছনে চলছেন আরেক মুসাফির; পরনে ময়লা তালিযুক্ত ফতুয়া। দ্বিতীয় মুসাফির হাঁটছেন একটু দ্রুত গতিতেÑ যাতে প্রথম মুসাফিরকে তিনি ধরতে পারেন।
দ্বিতীয় মুসাফির জোর কদমে হেঁটে এসে প্রথম মুসাফিরের পাশে এসে দাঁড়ান। প্রথম মুসাফির তার উপস্থিতিতে থমকে দাঁড়িয়ে পড়েন। বিরক্তির দৃষ্টিতে তাকান তার দিকে।
Ñস্যার, কিছু সাহায্য দেন।
Ñযা ভাগ! প্রথম মুসাফির দ্রুত গতিতে পুনরায় পথচলা শুরু করেন।
দ্বিতীয় মুসাফিরও জোর কদমে চলতে থাকেন।

কিছুদূর চলার পর রাস্তার বিপরীত দিক থেকে তাদের সামনে এসে দাঁড়ান তৃতীয় মুসাফির। দ্বিতীয় মুসাফিরকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, কোথায় যাচ্ছেন আপনি?
দ্বিতীয় মুসাফির সামনের রাজবাড়ির দিকে হাত ইশারা করে দেখান।
Ñকিন্তু আপনি খালি গায়ে কেন?
তৃতীয় মুসাফিরের কথায় দ্বিতীয় মুসাফির অবাক হন। তালিযুক্ত হলেও তার পরনে জামা রয়েছে। তার স্ত্রী মমতামাখা হাতে পরিয়ে দিয়েছে জামাটি। গরিব বলে কি লোকটি তার সাথে তামাশা করছে?
Ñদেখুন, আমি গরিব ভিখারি হতে পারি, তাই বলে আপনি আমার সাথে তামাশা করতে পারেন না।
Ñনা, তামাশা নয়। আমি তো আপনাকে খালি গায়েই দেখছি। আর আপনি ভিখারি হতে যাবেন কেন, আপনি বোধহয় গরমে সুটটি ফেলে রেখেছেন?
Ñকি বলছেন এসব! ভালো একটি জামা কিনতে পারি না, আবার সুট?
Ñআমি সত্যিই বলছি, আপনার সামনেই একটা সুট পড়ে আছে, দেখুন।
Ñআরে ওটা তো সাহেব পরে আছে। আমার সাথেই উনি...
Ñকই আপনার সাহেব? আমি তো শুধু একটি সুট পড়ে থাকতে দেখছি।
দ্বিতীয় মুসাফির এবার ভালো করে চারপাশে তাকান। সত্যিই তো সাহেববাবুটি নেই, তার বদলে পায়ের সামনে পড়ে আছে একটি সুট!
প্রচ- ভীড়!
জ্যোতিষী প্রসেনজিৎ হাত দেখে মানুষের ভবিষ্যৎ বলে দিচ্ছেন। তিনি সকলের বামহাত উল্টেপাল্টে তালুতে রেখাগুলো নিরিখ করে দেখছেন- কার ভাগ্যে রবি-মঙ্গলের প্রভাব, কার ভাগ্যে শনি-রাহুর প্রভাব রয়েছে। যাদের ভাগ্য শনির দশা বা রাহু গ্রাসের কবলে পড়েছে তারা ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে জ্যোতিষীর কাছে প্রতিকারের উপায় জানতে ব্যস্ত হয়ে পড়ছে। জ্যোতিষী তাদের সাহস, সান্ত¦না আর উপায় বাতলে দিয়ে পকেট ফুলে-ফেঁপে তুলছেন।
চারপাশে শীতের সন্ধে ঘনিয়ে আসছে। জ্যোতিষীর পাশ থেকেও ভীড় কমে গেছে। এমন সময় চাদরপরা এক আগন্তুক এসে দাঁড়ায় তার সামনে।
আগন্তুককে উদ্দেশ্য করে জ্যোতিষী বলেন, জলদি বসে পড়–ন, হাত দেখান। সন্ধে ঘনিয়ে আসছে, বাড়ি ফিরতে হবে।
আগন্তুক হাঁটুগেড়ে বসে আস্তে আস্তে চাদরের ভিতর থেকে হাত দুটো বের করে জ্যোতিষীর সামনে রাখে।
জ্যোতিষী প্রসেনজিৎ হতবাক হয়ে দেখেন, তার দুটো হাতই কবজি পর্যন্ত কাটা!...

সেই কতকাল আগর কথা!
চাঁদ আর অবনীর মাঝে বেশ বন্ধুত্ব ছিল। বন্ধুত্ব থেকে ধীরে ধীরে প্রেম-ভালোবাসা। চাঁদ কাব্যি করে অবনীকে নিয়ে। তার দেহের সমস্ত আলো ছড়িয়ে দিতে চায় অবনীর মাঝে। অবনীও তাতে মুগ্ধ হয- সারা শরীর আলোকিত হয়ে ওঠে।
বেশ চলছিল চাঁদ আর অবনীর প্রেম। কিন্তু কিছুদিন যাবার পর চাঁদের ¯িœগ্ধপ্রেম অবনীর ভালো লাগেনা। এ প্রেমের মধ্যে কোনো উত্তাপ নেই, নেই কোনো ক্লাইমেক্স। হঠাৎ তার সূর্যের দিকে নজর পডে। সূর্যের শক্তি আর ক্ষমতা দেখে অবনী অবাক হয়। একসময় সে সূর্যের প্রেমে পড়ে যায়। অবনী চাঁদের কাছে থেকে সরে পড়ে।
অবনীর এমন ব্যবহারে চাঁদ বিমর্ষ হয়ে পড়ে। তার জীবনে অমাবশ্যার কালো অন্ধকারে নেমে আসে। কিছুই ভালোলাগে না ওর। চাঁদ অবনীকে ভুলতে চেষ্টা করে কিন্তু পারে না। প্রতিদিন রাতে অবনীর দেহে আলো ছড়ায়; নীরবে ভালোবেসে মনে শান্তি খোঁজার চেষ্টা করে। কিন্তু চাঁদের আলোর উত্তাপ অবনীকি টের পায় কখনো?।
সেই থেকে চাঁদ শুধু এভাবেই ঘুরে বেড়ায় অবনীর পিছে; আর অবনী ছুটে চলে সূর্যের দিকে।


বিভাগ : সাহিত্য


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

কবিতা
নষ্ট সময়
সুলতান আলাউদ্দিন হোসেন শাহ : বাংলা সাহিত্যের স্বর্ণযুগের কারিগর
কবিতা
বাসের টিকিট ও মফিজের ভাবনা
আরও
X

আরও পড়ুন

রেস্তোরাঁয় হামলার ঘটনায় প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতি

রেস্তোরাঁয় হামলার ঘটনায় প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতি

লালপুরে থানা থেকে আসামি ছিনিয়ে নিল ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা

লালপুরে থানা থেকে আসামি ছিনিয়ে নিল ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা

ইসরায়েলী পণ্য বিক্রি করবে না বলে জানিয়ে দিলো  সিলেটের যে প্রতিষ্টান !

ইসরায়েলী পণ্য বিক্রি করবে না বলে জানিয়ে দিলো  সিলেটের যে প্রতিষ্টান !

দাগির বিশেষ প্রদর্শনীতে মজলুম ফিলিস্তিন গণহত্যার প্রতিবাদ

দাগির বিশেষ প্রদর্শনীতে মজলুম ফিলিস্তিন গণহত্যার প্রতিবাদ

আলেমদের জুডিশিয়াল কিলিংয়ের সাথে জড়িত তুরিনের নানা অপকর্মের ফিরিস্তি!

আলেমদের জুডিশিয়াল কিলিংয়ের সাথে জড়িত তুরিনের নানা অপকর্মের ফিরিস্তি!

কমলগঞ্জে বৃষ্টির জন্য নামাজ-দোয়া

কমলগঞ্জে বৃষ্টির জন্য নামাজ-দোয়া

নরসিংদীতে জামায়াত-শিবিরের চাঁদা দাবির ঘটনা কাল্পনিক - দাবি জামায়াতে ইসলামীর

নরসিংদীতে জামায়াত-শিবিরের চাঁদা দাবির ঘটনা কাল্পনিক - দাবি জামায়াতে ইসলামীর

চীনের উত্থান ‘অপ্রতিরোধ্য’, মোড়লগিরি করতে করতে ক্লান্ত যুক্তরাষ্ট্র

চীনের উত্থান ‘অপ্রতিরোধ্য’, মোড়লগিরি করতে করতে ক্লান্ত যুক্তরাষ্ট্র

পৃথিবীর মানচিত্রে ইসরাইলের অস্তিত্বের কোনো নৈতিক অধিকার নেই- শেখ জাহাঙ্গীর আলম

পৃথিবীর মানচিত্রে ইসরাইলের অস্তিত্বের কোনো নৈতিক অধিকার নেই- শেখ জাহাঙ্গীর আলম

ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের ঈদ পুণর্মিলনী অনুষ্ঠিত

ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের ঈদ পুণর্মিলনী অনুষ্ঠিত

মার্কিন পণ্যে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের প্রস্তাব ইউরোপের ২৭ দেশের

মার্কিন পণ্যে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের প্রস্তাব ইউরোপের ২৭ দেশের

সেক্রেটারি জেনারেলের আগমন উপলক্ষে লাকসামে জামায়াতের স্বাগত মিছিল

সেক্রেটারি জেনারেলের আগমন উপলক্ষে লাকসামে জামায়াতের স্বাগত মিছিল

তিস্তা প্রকল্প নিয়ে যা বললেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

তিস্তা প্রকল্প নিয়ে যা বললেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

সুনামগঞ্জে বাংলা নববর্ষ উদযাপন উপলক্ষে প্রস্তুতিমূলক সভা

সুনামগঞ্জে বাংলা নববর্ষ উদযাপন উপলক্ষে প্রস্তুতিমূলক সভা

এসবিএসি ব্যাংকের নতুন এএমডি মো. রবিউল ইসলাম

এসবিএসি ব্যাংকের নতুন এএমডি মো. রবিউল ইসলাম

ফিলিস্তিনের গাজায় গণহত্যার প্রতিবাদে আশুলিয়ায় ছাত্রদলে বিক্ষোভ মিছিল

ফিলিস্তিনের গাজায় গণহত্যার প্রতিবাদে আশুলিয়ায় ছাত্রদলে বিক্ষোভ মিছিল

মাদারীপুরে সাংবাদিকদের নিয়ে ফেসবুকে মিথ্যা অপপ্রচার করায় মানহানি মামলা

মাদারীপুরে সাংবাদিকদের নিয়ে ফেসবুকে মিথ্যা অপপ্রচার করায় মানহানি মামলা

কিংসকে হারিয়ে ফাইনালে দশজনের আবাহনী

কিংসকে হারিয়ে ফাইনালে দশজনের আবাহনী

ট্রাম্পকে প্রতিশোধমূলক শুল্ক চাপাতে নিষেধ করেছিলেন মাস্ক!

ট্রাম্পকে প্রতিশোধমূলক শুল্ক চাপাতে নিষেধ করেছিলেন মাস্ক!

ইসরায়েলের হামলা বন্ধে জাতিসংঘকে কার্যকর ভূমিকা নিতে হবে-কাজী শিপন

ইসরায়েলের হামলা বন্ধে জাতিসংঘকে কার্যকর ভূমিকা নিতে হবে-কাজী শিপন