বাংলা কবিতায় মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা
৩০ মার্চ ২০২৩, ০৯:২৪ পিএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ০৫:৪৩ পিএম
কারার ঐ লৌহকপাট,ভেঙ্গে ফেল, কর রে লোপাট,রক্ত-জমাট শিকল পূজার পাষাণ-বেদী।ওরে ও তরুণ ঈশান!বাজা তোর প্রলয় বিষাণ! ধ্বংস নিশান উড়ুক প্রাচীর প্রাচীর ভেদি।
জন্মলগ্ন থেকে মানুষ স্বাধীন সত্তা নিয়ে বেঁচে থাকতে চায়।পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে মুক্ত বিহঙ্গের মতো মন আকাশে উড়তে চায়।বাঙালির হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ ঘটনা আমাদের মুক্তিযুদ্ধ।বিদেশি বেনিয়া ও শাসকচক্রের হাতে বারবার পরাজিত হয়েছে বাঙালি জাতি।বন্ধন মুক্তির প্রচেষ্টা ছিল অব্যাহত, বাংলা মায়ের হাতে শেকল পরিয়েছে পাল,সেন, মোগল,ইংরেজ ও পাকিস্তানিরা।অনেক ত্যাগ,তিতক্ষা ও এক সাগর রক্তের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে আমাদের স্বাধীনতা। একটি স্বাধীন জাতি হিসেবে বিশ্বে মাথা তুলে দাঁড়াবার অধিকার আমরা পেয়েছি, পেয়েছি সার্বভৌম একটি স্বাধীন রাষ্ট্র। বশ্যতা নয়,বন্ধন নয়,মুক্তি চাই; মুক্তির নেশায় শোষণহীন,বঞ্চনামুক্ত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন বাঙালির চেতনাপ্রবাহকে জাগ্রত করেছিল।বিদ্রোহে,বিপ্লবে বাঙালি মুক্তির স্বাদ আস্বাদন করেছিল ১৯৭১-এ।মহান মুক্তিযুদ্ধ আমাদের প্লট পরিবর্তনের মূল ভিত্তি।সাহিত্য ক্ষেত্রে এর প্রভাব কম পড়েনি।গড়ে উঠেছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক বিশাল শিল্প- সাহিত্যের জ্ঞানাগার।সাহিত্যের বিভিন্ন শাখা ও স্তরের মতো কবিতায়ও তুলে ধরা হয়েছে দুঃখ-বেদনা,মুক্তির পরম আনন্দ আবেগ অনুভূতি দিয়ে কবি সাহিত্যিক জাতিকে দিয়েছেন দিক-নির্দেশনা।
দেশভাগের পর দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে শোষণ,পীড়ন,নির্যাতনের হাত থেকে উত্তরণের জন্য মুক্তির নেশায় কবিরা লেখেন মুক্তির কবিতা।স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে মুক্তিযুদ্ধের নানা স্মৃতি অনুভূতিতে ধারণ করে নবীন-প্রবীণ কবিদের হাতে রচিত হচ্ছে নানা রকম কবিতা যা এই পরিসরে উদ্বৃত সম্ভব নয়।
হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ই মার্চের উত্তাল সময়ের জাদুকরী ভাষণ ছিল বিশ্বখ্যাত একটি কবিতা।তাঁর ডাকে সারা দিয়ে স্বাধীনতা ও সার্বভৌমের লড়াইয়ে জীবনবাজি রেখে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল ছাত্রজনতা, কৃষক-শ্রমিক, শিক্ষক, লেখক, সৈনিক, বুদ্ধিজীবী সর্বস্তরের মানুষ। ত্রিশ লাখ শহীদের আত্মত্যাগে অর্জিত একটি লাল সূর্য,একটি পতাকা। কবি নির্মলেন্দু গুণের ভাষায়-শত বছরের শত সংগ্রাম শেষে রবীন্দ্রনাথের মতো দৃপ্ত পায়ে হেঁটে অতঃপর কবি এসে জনতার মঞ্চে দাঁড়ালেন।/তখন পলকে দারুণ ঝলকে তরীতে উঠিল জল,/হৃদয়ে লাগিল দোলা/জনসমুদ্রে জাগিল জোয়ার সকল দুয়ার খোলা-
কে রোধে তাঁহার বজ্রকণ্ঠ বাণী?
গণসূর্যের মঞ্চ কাঁপিয়ে কবি শোনালেন তাঁর অমর কবিতাখানি:
“এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম,এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।”
দেশের কবিরা হানাদার বাহিনীর বর্বরতার বিরুদ্ধে কলমকে শানিত রেখেছেন।দ্রোহ ও ঘৃণায় নরপশুদের বিরুদ্ধে কবিরা হাজারো পঙ্ক্তি রচনা করেছেন। অনেকে অস্ত্রহাতে অংশ নিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধে।পল্লিকবি জসীমউদ্দীনের দগ্ধগ্রাস
কবিতায়থ›কী যে কী হইল পশ্চিম হতে নরঘাতকেরা আসি/সারা গাঁও ভরি আগুনে জ্বালায়ে হাসিল অট্টহাসি।
সেপ্টেম্বর অন যশোর রোড – অ্যালেন গিন্সবার্গ শত শত চোখ আকাশটা দেখে, শত শত শত মানুষের দল, যশোর রোডের দুধারে বসত বাঁশের ছাউনি কাদামাটি জল। কাদামাটি মাখা মানুষের দল, গাদাগাদি করে আকাশটা দেখে, আকাশে বসত মরা ইশ্বর, নালিশ জানাবে ওরা বল কাকে। ঘরহীন ওরা ঘুম নেই চোখে, যুদ্ধে ছিন্ন ঘর বাড়ী দেশ, মাথার ভিতরে বোমারু বিমান, এই ...গ্ধ
রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ ্রবাতাসে লাশের গন্ধগ্ধকবিতায় --আজো আমি বাতাসে লাশের গন্ধ পাই/আজো আমি মাটিতে মৃত্যূর নগ্ননৃত্য দেখি,/ধর্ষিতার কাতর চিৎকার শুনি আজো আমি তন্দ্রার ভেতরেৃ/এ দেশ কি ভুলে গেছে সেই দু:স্বপ্নের রাত, সেই রক্তাক্ত সময় ?/বাতাসে লাশের গন্ধ ভাসে/মাটিতে লেগে আছে রক্তের দাগ।...শহীদদের প্রতিগ্ধথথআসাদ চৌধুরী
তোমাদের যা বলার ছিল/বলছে কি তা বাংলাদেশ ?/শেষ কথাটি সুখের ছিল ?/ঘৃণার ছিল ?/নাকি ক্রোধের,/প্রতিশোধের,/কোনটা ছিল ?/নাকি কোনো সুখের/নাকি মনে তৃপ্তি ছিল এই যাওয়াটাই সুখের।
নাগরিক কবি শামসুর রাহমান
অভিশাপ দিচ্ছিগ্ধ কবিতায়--
আজ এখানে দাড়িয়ে এই রক্ত গোধূলিতে/অভিশাপ দিচ্ছি।/আমাদের বুকের ভেতর যারা ভয়ানক কৃষ্ঞপক্ষ/দিয়েছিলো সেঁটে,...শামসুর রহমান স্বাধীনতা তুমি কবিতায় বলেন--স্বাধীনতা তুমি
রবিঠাকুরের অজর কবিতা,/অবিনাশী গান।/স্বাধীনতা তুমি
কাজী নজরুল ঝাঁকড়া চুলের বাবরি দোলানো:মহান পুরুষ,/ সৃষ্টিসুখের উল্লাসে কাঁপা-.../
রফিক আজাদের ্রএই সিঁড়ি কবিতায়--›এই সিঁড়ি নেমে গেছে বঙ্গোপসাগরে/সিঁড়ি ভেঙে রক্ত নেমে গেছে-/বত্রিশ নম্বর থেকে/সবুজ শস্যের মাঠ বেয়ে/অমল রক্তের ধারা ব’য়ে গেছে বঙ্গোপসাগরে।
দীর্ঘ ন’মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে যাঁরা আত্মত্যাগ করেছেন, সেই শহীদ সন্তানদের উদ্দেশ্যে বেগম সুফিয়া কামাল তাঁর মমতাময়ী দরদী কণ্ঠে উচ্চারণ করেন --›এই পৌষের শীত জর্জর রাত কাটে, আর শিশির ঝরে/মোর যাদুদের সমাধি ’পরে।/মায়ের চোখের বোনের চোখের বধূর চোখের মতন তারা/মাটিতে চাহিয়া আত্মহারা।/ন’মাস কেটেছে এ দেশের মাটি তাজা তাজা খুনে সিক্ত হয়ে,/উর্বর হয়ে এসেছে লয়ে/মৌসুমী ফুল ধানের গন্ধ মিঠা সোনা রোদ বাংলাদেশে-/যাদুরা আমার সেই আবেশে/ঘুমায়ে পড়েছে আহা! ক্লান্তিতে। থাক, ভাঙাবো না ওদের ঘুম।/মাটির ওপরে রাখিয়া চুম/দিলাম তোদেরে।’ (‘মোর যাদুদের সমাধী ’পরে’)
বাংলাদেশের অভ্যুদয় তথা মুক্তিযুদ্ধ কোনো বিছিন্ন ঘটনা নয়।দীর্ঘদিনের সংগ্রাম ও একটি রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত একটি স্বাধীন দেশ,একটি পতাকা,একটি মানচিত্র।
মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনার ক্ষেত্রগুলো হলো --ভাষা ও সংস্কৃতি,জাতীতাবাদী চেতনা,ধর্মনিরপেক্ষতা ও অসাম্প্রদায়িক চেতনা, সাম্যবাদী চেতনা এবং গণতান্ত্রিক চেতনা।
যাঁরা মুক্তিযুদ্ধ সরাসরি দেখেছেন এবং যাঁরা মুক্তিযুদ্ধ দেখেন নি মুক্তিযুদ্ধের কোনো স্মৃতি নেই তারাও মুক্তিযুদ্ধকে উপজীব্য করে লিখে যাচ্ছেন কবিতা,সমৃদ্ধ হচ্ছে আমাদের সাহিত্য ভান্ডার।
বিভাগ : সাহিত্য
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
বাংলাদেশের বিপক্ষে যে একাদশ দিয়ে মাঠে নামছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ
কিশোরগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ার কামালসহ তিনজন গ্রেফতার
প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানের সাক্ষাৎ
বেইজিং সংস্কৃতি ও পর্যটন ব্যুরো ও আটাবের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত
উইন্ডিজের বিপক্ষে মাঠে নামছে বাংলাদেশ
গাজায় যুদ্ধবিরতি ছাড়া বন্দী বিনিময় হবে না : হামাস
শান্তিরক্ষা মিশন মোতায়েন করতে চায় জাতিসংঘ হাইতিতে
চকরিয়ার বিএনপি নেতা আবু তাহের চৌধুরীর মৃত্যুতে সালাহউদ্দিন আহমদ ও হাসিনা আহমদের শোক
পুতিন পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে দ্বিধা করবেন না : সার্বিয়া
ক্লাইমেট অর্থায়ন ইস্যুতে দেশগুলোর মধ্যে দ্বন্দ্ব
লালমোহনে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত যুবদল নেতা চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু
ট্রাম্পের অ্যাটর্নির বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন আটকে গেল
‘ফিলিস্তিনের পর ইরান, সউদী ও তুরস্ক হবে পরবর্তী টার্গেট’
প্রতি বছর ৩ লাখ নথিবিহীন অভিবাসীকে বৈধতা দানের ঘোষণা স্পেনের
প্রেম-ভালোবাসা নিয়ে সবচেয়ে অসুখী দেশ জাপান-কোরিয়া
মুসলিম চিকিৎসক
শীর্ষে দিল্লি
সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সংবর্ধনা
ইসলামিক ফাউন্ডেশন এর বোর্ড অব গভর্নর সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সম্বর্ধনা
বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে আঞ্চলিক সহযোগিতার আহ্বান