কুয়াকাটা
০৬ এপ্রিল ২০২৩, ১০:০১ পিএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ০৯:২৭ এএম

সাগরকন্য কুয়াকাটা অপার সৌন্দর্যের এক লীলাভূমি। ১৮ কিলোমিটার দীর্ঘ এ সমুদ্র সৈকতে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের মনোরম দৃশ্য দুটোই দেখা যায়। কুয়াকাটা বরিশাল বিভাগের পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলায় মধ্যে অবস্থিত। এখানে রয়েছে- মৎস্য-শিকার, কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত, বৌদ্ধ মন্দির, সমুদ্রতীর, ম্যানগ্রোভ বন (টেংরাগিরির ফাতরার বন যা সমুদ্রসৈকতের পশ্চিম দিকের সংরক্ষিত যা দ্বিতীয় সুন্দরবন হিসেবে পরিচিত), তিন নদীর মোহনা, ঝাউবন ছাড়াও অনেক দর্শনীয় স্থান। এ ছাড়া কুয়াকাটায় রয়েছে হিন্দু ও বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় তীর্থস্থান।
কুয়াকাটা নামকরণের নেপথ্যে জানা যায়, ১৮ শতকে মোগল শাসকদের দ্বারা বার্মা (বর্তমান মায়ানমার) থেকে বিতাড়িত হয়ে আরাকান অধিবাসী (রাখাইনরা) এই অঞ্চলে এসে প্রথম বসবাস শুরু করেন। সে সময় এ এলাকায় সুপেয় পানির অভাব পূরণ করতে তারা এখানে অনেক কুয়ো বা কূপ খনন করেছিলেন; সেই থেকেই এই অঞ্চলের নামকরণ হয়Ñ কুয়াকাটা।
আমরা মনজুর কাদের মহিলা কলেজ বেড়া (পাবনা) থেকে বিগত ২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ রাত সাড়ে ৯টার দিকে যাত্রা করলাম কুয়াকাটার উদ্দেশ্যে। আমাদের সঙ্গে ছিলেন কলেজের অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ, অধ্যাপক ম-লী ও তাদের পরিবার। গাড়ি চলছে। ভিতরে তরুণ শিক্ষকরা গান গেয়ে, কৌতুক বলে বিনোদন দিচ্ছে। কেউবা কবিতা আবৃত্তি করছে। কথা বলতে বলতে যেমন হাঁটাপথ দ্রুত ফুরিয়ে যায়, তেমনি গান আর কৌতুকে আমরা কখন যে বরিশালে এসে পৌঁছিলাম খেয়ালই করতে পারিনি। এর মধ্যে অবশ্য দু-একজন একচোট ঘুমিয়েও নিয়েছে। তার মধ্যে আমাদের রসায়ন বিভাগের আবু স্যার অন্যতম। মাঝে মাঝে তার নাকও ডাকছে। সবাই যেমন কিছুটা ক্লান্ত, তেমনি কিছুটা ক্ষুধার্ত। হঠাৎ সবাইকে অবাক করে দিয়ে আমাদের ইংরেজি ম্যাডাম রেজিনা খানম বাড়ি থেকে নিয়ে আসা বিরানি সবার হাতে তুলে দিলেন; সাথে দিলেন আমাদের গ্রন্থাগারিক মোমেনা আপার আনা মিষ্টি। হালকা কিছু পেটে পড়ায় ক্ষুধার হাত থেকে এ যাত্রা কিছুটা হলেও রক্ষা হলো।
আমরা সকাল ৯টার দিকে কুয়াকাটার হোটেলে এসে পৌঁছিলাম। হোটেলে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে বের হলাম কাক্সিক্ষত সমুদ্র সৈকতের উদ্দেশ্যে। কুয়াকাটার সৈকতের স্থলভাগ খুবই মনোরম। সমুদ্রে সৈকত থেকে দেখা মেলে ঝাঁকে ঝাঁকে গাঙচিল ও অন্যান্য পাখির। আছে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা ভ্রমণ পিয়াসুরা। কেউবা জলময় নরম বালি মাটিতে হেঁটে বেড়াচ্ছে, কেউবা সমুদ্র-¯œান করছে। আমরাও ক’জন সমুদ্রে অবগাহন করলাম। বিশাল সমুদ্রে এই প্রথম অবগাহন আমার। এ যেন এক অন্যরকম অনুভূতি! সামনের দিকে তাকাতেই দেখা যায় অসীম জলরাশি। যেন কোনো কুল-কিনারা নেই!
সমুদ্রের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আরো ভালো করে উপভোগ করতে আমরা লঞ্চে করে দলবেঁধে যাত্রা করলাম ফাতরার বনের উদ্দেশ্যে। লঞ্চের দোতলায় আমরা বসে সমুদ্র-দৃশ্য উপভোগ করছি। একপাশ দিয়ে চলছে আমাদের লঞ্চ কিন্তু বিপরীত দিকে তাকালে অকুল পাথারÑ কুল-কিনারাহীন। তরুণ শিক্ষকরা গান গাচ্ছে। আর সে গানে লিড দিচ্ছে আমাদের সিনিয়র শিক্ষক (সহকারী অধ্যাপক) আবু সাইদ। পরিশিষে তিনিও পর পর কয়েকটি গান গেয়ে সকলকে বিনোদন দিলেন। প্রায় ঘণ্টাখানেক পর আমরা পৌঁছিলাম কাক্সিক্ষত বনে। সমুদ্র সৈকতের পশ্চিমদিকে (ঝালকাঠি জেলায়) অবস্থিত এটি একটি ম্যানগ্রোভ বন। সংরক্ষিত বনভূমি ফাতরার বন ইতোমধ্যে দ্বিতীয় সুন্দরবন হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে ভ্রমণ-পিপাসুদের কাছে। এখানে রয়েছে কেওড়া, গেওয়া, সুন্দরী, ফাতরা, গরান, বাইন, গোলপাতা ইত্যাদি ম্যানগ্রোভ প্রজাতির উদ্ভিদ। তবে এখানে তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য বন্যপ্রাণী দেখতে পেলাম না।
এরপর কুয়াকাটায় ঝাউবন, ত্রিমোহনা, কাঁকড়ার বিচ, শুঁটকি পল্লীতে যাই আমরা। শুঁটকি পল্লীতে গিয়ে দেখলাম বেশ কয়েকটি শুঁটকির দোকান রয়েছে। তারপাশে কীভাবে প্রাকৃতিকভাবে মাছ শুকানো হয় সেটি দেখলাম। এরপর আমরা সেখানে থেকে সমুদ্রের পাশ দিয়েই ঝাউবনে গেলাম। এ বিচ থেকেই আমরা সূর্যাস্ত দেখলাম। কীভাবে সূর্যটা ধীরে ধীরে যেন সমুদ্র-গর্ভে হারিয়ে যাচ্ছে। না দেখলে তা বলে বোঝানো মুশকিল।
পরের দিন বিকেলে রাখাইন পল্লী তথা বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় তীর্থস্থানে যাই। অগণিত ভক্তরা এখানে রাস পূর্ণিমা এবং মাঘী পূর্ণিমা উৎসবে মিলিত হন। এই উপলক্ষ্যে তীর্থযাত্রীরা উপসাগরে পবিত্র ¯œøান করেন এবং ঐতিহ্যবাহী মেলায় অংশ নেন। সমুদ্র সৈকতের অদূরে অবস্থিত ১০০ বছরের পুরনো বৌদ্ধ মন্দিরে গৌতম বুদ্ধের মূর্তি এবং দুটি পুরনো কূপ রয়েছে। বৌদ্ধ মূর্তিটির উচ্চতা ৩২ ফুট। তৎকালীন সময়ে বার্মা থেকে আগত ৫ জন ভাস্কর্যের এটি তৈরি করতে সময় লেগেছিল প্রায় ৩ বছর। কূপটির বয়সও ২০০ বছরেরও অধিক। অনেকের মতে, যে কূপগুলো থেকে কুয়াকাটার নামকরণ হয়েছে তার মধ্যে এ দুটি উল্লেখযোগ্য। এগুলো পরিদর্শন শেষে আমরা রাখাইন পল্লীর বাজারে কিছু কেনাকাটা করি। সামুদ্রিক ঝিনুক, ঝিনুকমালা, শঙ্খ, রাখাইনদের তৈরি লুঙ্গি, গামছা ইত্যাদি।
কুয়াকাটায় সব সময়ই পর্যটকের আনাগোনা দেখা থাকে। তবে শীতকাল ও ছুটির দিনে বেশি মানুষ ছুঁটে আসে এখানে। আর এ ভীড়কে কেন্দ্র করে স্থানীয় হোটেলের কর্মকর্তারা নানা সিন্ডিকেট করে হোটেল-ভাড়া বৃদ্ধি করে। কুয়াকাটা পর্যটন কেন্দ্র তাদের জীবিকার অন্যতম মাধ্যম হয়ে দাঁড়ালেও এ সৈকত সর্বজনীনভাবে উপযোগী হয়ে উঠতে পারেনি। কারণ খাবার মানসম্মত না হলেও মূল্য অনেক বেশি। তবে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা, সৈকতের সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ, আবাসন ও হোটেল উন্নয়ন, রাস্তাঘাট সংস্কার ইত্যাদি কার্যক্রমের উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলেই সাগরকন্যা কুয়াকাটা হবে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের জন্য অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান।
বিভাগ : সাহিত্য
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
পৃথিবীর মানচিত্রে ইসরাইলের অস্তিত্বের কোনো নৈতিক অধিকার নেই- শেখ জাহাঙ্গীর আলম

ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের ঈদ পুণর্মিলনী অনুষ্ঠিত

মার্কিন পণ্যে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের প্রস্তাব ইউরোপের ২৭ দেশের

সেক্রেটারি জেনারেলের আগমন উপলক্ষে লাকসামে জামায়াতের স্বাগত মিছিল

তিস্তা প্রকল্প নিয়ে যা বললেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

সুনামগঞ্জে বাংলা নববর্ষ উদযাপন উপলক্ষে প্রস্তুতিমূলক সভা

এসবিএসি ব্যাংকের নতুন এএমডি মো. রবিউল ইসলাম

ফিলিস্তিনের গাজায় গণহত্যার প্রতিবাদে আশুলিয়ায় ছাত্রদলে বিক্ষোভ মিছিল

মাদারীপুরে সাংবাদিকদের নিয়ে ফেসবুকে মিথ্যা অপপ্রচার করায় মানহানি মামলা

কিংসকে হারিয়ে ফাইনালে দশজনের আবাহনী

ট্রাম্পকে প্রতিশোধমূলক শুল্ক চাপাতে নিষেধ করেছিলেন মাস্ক!

ইসরায়েলের হামলা বন্ধে জাতিসংঘকে কার্যকর ভূমিকা নিতে হবে-কাজী শিপন

সিরিয়া ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র, ইসরাইল ও তুরস্ক চুক্তি করবে, আশাবাদ ট্রাম্পের

বনফুল শোরুমে ইসরায়েলি পণ্য বিক্রি না করার সিদ্ধান্ত

৪৬তম বিসিএস লিখিত পরীক্ষা পেছাতে পিএসসিতে পরীক্ষার্থীদের অবস্থান

নাসার সঙ্গে আর্টেমিস চুক্তি সাক্ষর করল বাংলাদেশ

রাজশাহীর চারঘাটে মদপানে দু’জনের মৃত্যু

১১ জেলেকে ট্রলারসহ অপহরণ আরাকান আর্মির

ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভে ভাঙচুর-লুটপাটে চার মামলা, গ্রেপ্তার ৫৬

আনফিল্ডেই থাকছেন ফন ডাইক