বৈচিত্র্যময় নজরুল কামরুল হাসান আকাশ
০৩ আগস্ট ২০২৩, ০৫:৩৬ পিএম | আপডেট: ০৩ আগস্ট ২০২৩, ০৫:৩৬ পিএম
ছেলেবেলায় তার ডাক নাম ছিল ‘দুখু মিয়া’। তিনি অবিভক্ত বাংলার (বর্তমানে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ) বর্ধমান জেলার আসানসোলের জামুরিয়া থানার চুরুলিয়া গ্রামে এক দরিদ্র মুসলিম পরিবারে ১৩০৬ বঙ্গাব্দের ১১ জ্যৈষ্ঠ (১৮৯৯ সালের ২৫ মে) জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম কাজী ফকির আহমেদ ও মায়ের নাম জাহেদা খাতুন। তাঁর পিতা ছিলেন মসজিদের ইমাম ও মাযারের খাদেম। মাতা ছিলেন গৃহিণী। কাজী নজরুল ইসলাম বাংলাদেশের জাতীয় কবি। তার রচিত “চল্ চল্ চল্,” বাংলাদেশের রণসংগীত। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের অন্যতম এই প্রাণপুরুষের নামের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে ‘বিদ্রোহী কবি’, ‘প্রেমের কবি’, ‘সাম্যের কবি’সহ নানা উপাধী।
১৯৭২ সালের ২৪ মে কাজী নজরুল ইসলামের জন্মদিনে বাংলাদেশ সরকারের আমন্ত্রণে তিনি সপরিবারে ঢাকা আসেন। এসময় তাকে বাংলাদেশের জাতীয়তা প্রদান করা হয় এবং জাতীয় কবি হিসেবে বরণ করে নেওয়া হয়। কবির ‘চল্ চল্ চল্, ঊর্ধ্ব গগনে বাজে মাদল’কে সামরিক সংগীত হিসেবে নির্বাচিত করে তাকে সম্মানিত করা হয়।
তিনি ছিলেন একাধারে বিংশ শতাব্দীর অন্যতম অগ্রণী বাঙালী কবি, গল্পকার, ঔপন্যাসিক, নাট্যকার, শিশু সাহিত্যিক, অনুবাদক, প্রাবন্ধিক, সম্পাদক, রাজনৈতিক, সাংবাদিক, গীতিকার, সুরকার, স্বরলিপিকার, গীতিনাট্যকার, গীতালেখ্য রচয়িতা, চলচ্চিত্র কাহিনীকার, চলচ্চিত্র পরিচালক, সংগীত পরিচালক, গায়ক, বাদক, সংগীতজ্ঞ এবং অভিনেতা। তিনি বাংলা সাহিত্য, সমাজ ও সংস্কৃতি ক্ষেত্রের অন্যতম প্রগতিশীল ব্যক্তিত্ব এবং বাঙালী মনীষার এক তুঙ্গীয় নিদর্শন। পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশ দুই বাংলাতেই তার কবিতা ও গান সমানভাবে সমাদৃত। তার কবিতায় বিদ্রোহী দৃষ্টিভঙ্গির কারণে তাকে “বিদ্রোহী কবি” নামে আখ্যায়িত করা হয়েছে। তার কবিতার মূল বিষয়বস্তু ছিল মানুষের ওপর মানুষের অত্যাচার এবং সামাজিক অনাচার ও শোষণের বিরুদ্ধে সোচ্চার প্রতিবাদ।
কবি নজরুলের প্রাথমিক শিক্ষা ছিল ধর্মীয়। স্থানীয় এক মসজিদে সম্মানিত মুয়াজ্জিন হিসেবেও কাজ করেছিলেন। কৈশোরে বিভিন্ন থিয়েটার দলের সাথে কাজ করতে যেয়ে তিনি কবিতা, নাটক এবং সাহিত্য সম্বন্ধে সম্যক জ্ঞান লাভ করেন। ১৯১৭ সালের শেষভাগে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় ৪৯ নম্বর বাঙালী পল্টনে যোগ দেন। এরপর থেকে ১৯২০ সালের মার্চ-এপ্রিল পর্যন্ত, অর্থাৎ প্রায় আড়াই বছর সময়ের মধ্যে তিনি ৪৯ বেঙ্গল রেজিমেন্টের সাধারণ সৈনিক কর্পোরাল থেকে কোয়ার্টার মাস্টার হাবিলদার পর্যন্ত হয়েছিলেন। ভারতীয় সেনাবাহিনীতে কিছুদিন কাজ করার পর তিনি সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে বেছে নেন। এসময় তিনি ব্রিটিশ রাজের বিরুদ্ধে প্রত্যক্ষ সংগ্রামে অবতীর্ণ হন। প্রকাশ করেন "বিদ্রোহী" এবং "ভাঙার গান" এর মতো কবিতা; ধূমকেতু'র মতো সাময়িকী। জেলে বন্দী হলে পর লিখেন "রাজবন্দীর জবানবন্দী"। এই সব সাহিত্যকর্মে সাম্রাজ্যবাদের বিরোধিতা ছিল সুস্পষ্ট। ছোটগল্প, উপন্যাস, নাটক লিখলেও তিনি মূলত কবি হিসেবেই বেশি পরিচিত। বাংলা সাহিত্যে তিনি এক নতুন ধারার জন্ম দেন। কাজী নজরুল ইসলামের লিখা “বাঁধনহারা” বাংলা সাহিত্যের প্রথম পত্রোপন্যাস। বেশকিছু আরবী কবিতাও তিনি অনুবাদ করেছিলেন। যা তার কাব্যগ্রন্থ "নির্ঝর" (১৯৩৯) এর অন্তর্ভুক্ত।
তিনি ইসলামী সঙ্গীত এর পাশাপাশি অনেক উৎকৃষ্ট শ্যামা সংগীত ও হিন্দু ভক্তিগীতিও রচনা করেন। কাজী নজরুল ইসলাম ৩ হাজারেরও অধিক গান রচনা করেছেন। অধিকাংশ গানে তিনি নিজেই সুরারোপ করেছেন। যা এখন নজরুল সঙ্গীত বা “নজরুলগীতি” নামে সুপরিচিত এবং বিশেষ জনপ্রিয়। তিনি আধুনিক বাংলা গানের জগতে ‘বুলবুল’ নামে খ্যাত। অমর সব সাহিত্য সৃষ্টির পাশাপাশি কাজী নজরুলকে পাওয়া যায় একজন চলচ্চিত্রকর্মী হিসেবেও। চলচ্চিত্রে তিনি অভিনয় করেছেন, পরিচালনা করেছেন এবং গানও গেয়েছেন। শুধু তাই নয়, বাঙালী মুসলমানদের মধ্যে প্রথম চলচ্চিত্র পরিচালনায় আসেন কাজী নজরুল ইসলাম। অভিনেতা, গীতিকার, সুরকার, কাহিনীকারসহ নানান আঙ্গিকে তিনি চলচ্চিত্রের সাথে যুক্ত ছিলেন। তার বেশকিছু ছবির নাম জানা যায় যেমন- জামাই ষষ্ঠী (১৯৩১), "জ্যোৎস্নার রাত" (১৯৩১), ‘প্রহল্লাদ’ (১৯৩১), ‘ঋষির প্রেম’(১৯৩১), জলসা (১৯৩১), ‘বিষ্ণুমায়া’ (১৯৩২), ‘চিরকুমারী’ (১৯৩২), ‘কৃষ্ণকান্তের উইল’(১৯৩২), ‘কলঙ্ক ভঞ্জন’(১৯৩২), ‘রাধাকৃষ্ণ’ (১৯৩৩), কপালকুণ্ডলা (১৯৩৩), 'জয়দেব’ (১৯৩৩), ধ্রুব (১৯৩৪), পাতালপুরী (১৯৩৫), গ্রহের ফের (১৯৩৭), বিদ্যাপতি (১৯৩৮), সাপুড়ে (১৯৩৯), রজত জয়ন্তী’(১৯৩৯), ‘নন্দিনী’ (১৯৪১), ‘অভিনয়’ (১৯৪১), ‘দিকশূল’(১৯৪১), চৌরঙ্গী (১৯৪২), দিলরুবা (১৯৪২)।
১৯৩৩ সালে পায়োনিয়ার ফিল্মস কোম্পানী প্রতিষ্ঠা করেন কাজী নজরুল ইসলাম। এই প্রতিষ্ঠান থেকে "ধ্রুব" নামে একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করা হয়। পুরাণের কাহিনী নিয়ে গিরিশচন্দ্র ঘোষের লেখা ‘ধ্রুব চরিত’ অবলম্বনে সিনেমাটি নির্মিত হয়। নজরুল এ ছবির গান লেখেন এবং সংগীত পরিচালনা করেন। তিনি দেবর্ষি নারদের চরিত্রে অভিনয়ও করেন এবং একটি গানে কণ্ঠ দেন। ১৯৩৪ সালের ১ জানুয়ারি ‘ধ্রুব’ মুক্তি পায়। কিন্তু তিনি অভিনয়ের জন্য যথাযথ সম্মানী পাননি।
ও লে ম্যাডান থিয়েটার্স প্রথম বাংলা সবাক ছবি নির্মাণের মধ্য দিয়ে তার চলচ্চিত্রে যুক্ত হওয়া। জানা যায়, ১৯৩০ এর দশকে নজরুল পার্শি মালিকানাধীন চলচ্চিত্র নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ম্যাডান থিয়েটার্সের ‘সুর ভাণ্ডারী’ পদে নিযুক্ত হন। এই পদটি ছিল খুব গুরুত্বপূর্ণ। যে শিল্পীরা সিনেমায় গাইবেন তাদের গান শেখানো এবং যে অভিনেতা ও শিল্পী অভিনয় করবেন ও গাইবেন তাদের শুদ্ধ উচ্চারণ শেখানোর দায়িত্ব পালন করেছেন কাজী নজরুল ইসলাম।
১৯৩১ সালে প্রথম বাংলা সবাক চলচ্চিত্র ‘জামাই ষষ্ঠী’তেও সুর ভান্ডারীর কাজ করেন নজরুল। ম্যাডান থিয়েটার্স কোম্পানী'র আরও যেসব চলচ্চিত্রের সঙ্গে তিনি সম্পৃক্ত ছিলেন সেগুলো হল, "জ্যোৎস্নার রাত", "প্রহল্লাদ", "ঋষির প্রেম", "বিষ্ণুমায়া", "চিরকুমারী", "কৃষ্ণকান্তের উইল", "কলঙ্ক ভঞ্জন", "রাধাকৃষ্ণ" এবং "জয়দেব"।
১৯৩১ সালে মুক্তি পাওয়া "জলসা" ছবিতে কাজী নজরুল ইসলাম তার "নারী" কবিতার আবৃত্তি করেন এবং একটি গানে কণ্ঠ দেন। ১৯৩৩ সালে গীতিকার হিসেবে "কপালকুণ্ডলা" ছবিতে যুক্ত হন এই সাম্যের কবি।
১৯৩৪ সাল সত্যেন্দ্রনাথের সঙ্গে যৌথভাবে 'ধ্রুব" পরিচালনা করেন তিনি। এতে অভিনয়ও করেছিলেন নারদের চরিত্রে। ছবির গীতিকার ও সংগীত পরিচালক হিসেবেও কাজ করেছেন তিনি। ১৮টি গানের মধ্যে ১৭টি গান ছিলো নজরুলের লেখা। তিনি নিজে কণ্ঠও দেন এ ছবির ৩টি গানে।
১৯৩৫ সাল "পাতালপুরী" ছবিতে সংগীত পরিচালনা করেন নজরুল। ১৯৩৭ সালে সংগীত পরিচালনা করেন "গ্রহের ফের" সিনেমায়। ১৯৩৮ সালে কাজী নজরুল ইসলামের "বিদ্যাপতি" নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মিত হয়।
১৯৩৮ সালে রবীন্দ্রনাথের "গোরা" অবলম্বনে নির্মিত চলচ্চিত্রে সংগীত পরিচালনা করেন। এতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮৬১-১৯৪১) এর গানে সুরারোপ করেন কাজী নজরুল ইসলাম।
১৯৩৯ সালে মুক্তি পায় "সাপুড়ে"। এর কাহিনীকার ও সুরকার ছিলেন কাজী নজরুল ইসলাম। পরিচালক দেবকী বসু (১৮৯৮-১৯৭১)। বেদে সম্প্রদায়ের জীবনভিত্তিক এ সিনেমাটি দারুণ ব্যবসা সফল হয়েছিল। বেদে জীবন সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহের জন্য নজরুল বেশ কিছুদিন বেদে দলের সঙ্গে ছিলেন। "সাপুড়ে" নামে সিনেমাটির হিন্দি রিমেকও হয়েছিল। তার সঙ্গেও সম্পৃক্ত ছিলেন তিনি।
"রজত জয়ন্তী", "নন্দিনী", "অভিনয়", "দিকশূল" ইত্যাদি বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্রের গান লিখেছিলেন নজরুল। তার গানগুলো সে সময় লোকের মুখে মুখে ফিরত।
১৯৪১-৪২ সালে ‘মদিনা’ নামে একটি চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্যকার, গীতিকার, সুরকার ও সংগীত পরিচালক ছিলেন নজরুল। এ সিনেমার জন্য তিনি ১৫টি গান লেখেন। কিন্তু ১৯৪২ সালে নজরুল অসুস্থ হয়ে পড়ায় সিনেমাটি আর মুক্তি পায়নি।
"চৌরঙ্গী"(১৯৪২) ছবির গীতিকার, সুরকার ও সংগীত পরিচালক ছিলেন নজরুল। একই বছর মুক্তিপ্রাপ্ত ‘দিলরুবা’ সিনেমার গীতিকার ও সুরকার ছিলেন নজরুল। চৌরঙ্গী হিন্দীতে নির্মিত হলে সে ছবির জন্য ৭টি হিন্দী গান লেখেন তিনি।
১৯৪১ সালে শেরেবাংলা একে ফজলুল হক (১৮৭৩-১৯৬২) এর পৃষ্ঠপোষকতায় নজরুল ‘বেঙ্গল টাইগার্স পিকচার্স’ নামে একটি চলচ্চিত্র প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান গঠন করেন। তার সঙ্গে ছিলেন আব্বাসউদ্দীন আহমদ (১৯০১-১৯৫৯), ওস্তাদ মোহাম্মদ হোসেন খসরু (১৯০৩-১৯৫৯), হুমায়ূন কবীর (১৯০৬-১৯৭০), এস ওয়াজেদ আলী (১৮৯০-১৯৫১), মোহাম্মদ মোদাব্বের (১৯০৮-১৯৮৪), আজিজুল হক (১৮৯২-১৯৪৭) প্রমুখ। এতে বোঝা যায়, চলচ্চিত্রের প্রতি অনুরক্ত ছিলেন কাজী নজরুল ইসলাম। এই উপমহাদেশে চলচ্চিত্রের গোড়াপত্তনের দিকেই চলচ্চিত্রের সঙ্গে জড়িয়ে ছিলেন তিনি। জানা যায়, সেইসময় তিনি গাড়িও কিনেছিলেন। কিন্তু খরচ বহনে অক্ষম হওয়াতে কিছুদিন পর সেটা বিক্রিও করে দেন।
১৯৩৫ সালের "ভারত শাসন আইন" ছিলো অখন্ড ভারতের ইতিহাসে অন্যতম একটি মাইলফলক। আর এই আইন পাসের পর ১৯৩৭ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে তৎকালীন কুমিল্লা থেকে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেছিলেন কাজী নজরুল ইসলাম। যদিও সেই নির্বাচনে হেরেছিলেন তিনি।
জানা যায়, কাজী নজরুল ইসলাম ১৯৪২ সালের দিকে অসুস্থ হয়ে পড়েন। পিকস ডিজিজে আক্রান্ত হন। একই সাথে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন। ফলে সেই প্রতিষ্ঠানটির কাজ বেশিদূর এগোয়নি আর। এক বছরেরও বেশি সময় ধরে তার চিকিৎসা চলে লুম্বিনী পার্ক ও রাঁচি মেন্টাল হসপিটালে। পরে ১৯৫২ সালে ইংল্যান্ড এবং ১৯৫৩ সালে জার্মানীতে পাঠানো হয় তাকে। এই সময়ে একেবারেই বাকশক্তি হারিয়ে ফেলেন কবি। এর ফলে আমৃত্যু তাকে সাহিত্যকর্ম থেকে বিচ্ছিন্ন থাকতে হয়। ১৯৫৩ থেকে ১৯৭২ সাল পর্যন্ত অসুস্থ অবস্থায় নীরবে-নিভৃতেই কাটে তার জীবন।
ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের চুরুলিয়ায় “নজরুল অ্যাকাডেমি” নামে একটি বেসরকারি নজরুল-চর্চা কেন্দ্র আছে। চুরুলিয়ার কাছে আসানসোল মহানগরে ২০১২ সালে “কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়” স্থাপিত হয়েছে। আসানসোলের কাছেই দুর্গাপুর মহানগরের লাগোয়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নাম, উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলায় অবস্থিত “নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর” থেকে রাজধানী কলকাতার যোগাযোগ-রক্ষাকারী প্রধান সড়কের নাম, কলকাতা মেট্রোর গড়িয়া বাজার মেট্রো স্টেশনটির নাম কাজী নজরুল ইসলামের নামে রাখা হয়েছে। নজরুলের স্মৃতিবিজড়িত “ত্রিশালে” (বাংলাদেশের ময়মনসিংহ জেলায়) ২০০৫ সালে “জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়” নামক সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এছাড়া ঢাকা শহরের একটি প্রধান সড়কের নাম, বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় কবির স্মৃতিতে “নজরুল একাডেমী”, “বুলবুল ললিতকলা একাডেমী” ও শিশু সংগঠন “বাংলাদেশ নজরুল সেনা” স্থাপিত হয়। সরকারিভাবে স্থাপিত হয়েছে গবেষণা প্রতিষ্ঠান “নজরুল ইন্সটিটিউট”।
কাজী নজরুল ইসলামকে ১৯৪৫ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক বাংলা সাহিত্যের সর্বোচ্চ পুরস্কার “জগত্তারিণী” স্বর্ণপদক প্রদান করা হয়। ১৯৬০ সালে ভারতের “পদ্মভূষণ” সম্মাননায় ভূষিত করা হয়। ১৯৭৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তাকে সম্মানসূচক “ডি.লিট” উপাধীতে ভূষিত করে। ১৯৭৬ সালে বাংলাদেশ সরকার কবিকে “একুশে পদকে” ভূষিত করে। দীর্ঘ ৩৪ বছর নির্বাক থাকার পর ১৯৭৬ সালের ২৯ আগস্ট (১২ ভাদ্র ১৩৮৩ বঙ্গাব্দ) তৎকালীন পিজি (বর্তমানে বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় কবি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুর পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত করা হয় গানের বুলবুল কবি কাজী নজরুল ইসলাম'কে।
তিনি লিখে গেছেন ২২টি কাব্যগ্রন্থ, ৩ হাজারের অধিক গানসংবলিত ১৪টি সংগীত গ্রন্থ, ৩টি কাব্যানুবাদ ও ৩টি উপন্যাস গ্রন্থ, ৩টি নাটক, ৩টি গল্পগ্রন্থ, ৫টি প্রবন্ধ, ২টি কিশোর নাটিকা, ২টি কিশোর কাব্য, ৭টি চলচ্চিত্র কাহিনিসহ অসংখ্য কালজয়ী রচনা। তার কাব্যগ্রন্থ- অগ্নিবীণা (১৯২২), দোলন-চাঁপা (১৯২৩), বিষের বাঁশী (১৯২৪), ভাঙ্গার গান (১৯২৪), ছায়ানট (১৯২৫), চিত্তনামা (১৯২৫), সঞ্চিতা (১৯২৫), সাম্যবাদী (১৯২৬), পুবের হাওয়া (১৯২৬), সর্বহারা (১৯২৬), সিন্ধু হিন্দোল (১৯২৭), ফনীমনসা (১৯২৭), জিঞ্জীর (১৯২৮), চক্রবাক (১৯২৯), প্রলয় শিখা (১৯৩০), সাতভাই চম্পা (১৯৩৩), নির্ঝর (১৯৩৯), নতুন চাঁদ (১৯৩৯), মরুভাস্কর (১৯৫১), সঞ্চয়ন (১৯৫৫), শেষ সওগাত (১৯৫৮), ঝড় (১৯৬০)। গল্পগ্রন্থ- ব্যথার দান (১৯২২), রিক্তের বেদন (১৯২৪), শিউলিমালা (১৯৩২)। উপন্যাস- বাঁধনহারা (১৯২৪), মৃত্যু-ক্ষুধা (১৯২৭), কুহেলিকা (১৯২৮)। প্রবন্ধগ্রন্থ- যুগবাণী (১৯২২), দুর্দিনের যাত্রী (১৯২২), রাজবন্দীর জবানবন্দী (১৯২৩), রুদ্র-মঙ্গল (১৯২৩)। নাটক- ঝিলিমিলি (১৯৩১), আলেয়া (১৯৩২), পুতুলের বিয়ে (১৯৩৪) ইত্যাদি। সঙ্গীতগ্রন্থ- বুলবুল (১৯২৮), সন্ধ্যা (১৯২৯), চোখের চাতক (১৯২৯), নজরুল গীতিকা (১৯৩০), নজরুল স্বরলিপি (১৯৩১), চন্দ্রবিন্দু (১৯৩১), সুরসাকী (১৯৩২), বনগীতি (১৯৩১), জুলফিকার (১৯৩১), গুল বাগিচা (১৯৩৩), গীতি শতদল (১৯৩৪), সুর মুকুর (১৯৩৪), গানের মালা (১৯৩৪), স্বরলিপি (১৯৪৯), বুলবুল (দ্বিতীয় ভাগ; ১৯৫২), রাঙ্গা জবা (১৯৬৬)।
বিভাগ : সাহিত্য
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
বাংলাদেশের বিপক্ষে যে একাদশ দিয়ে মাঠে নামছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ
কিশোরগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ার কামালসহ তিনজন গ্রেফতার
প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানের সাক্ষাৎ
বেইজিং সংস্কৃতি ও পর্যটন ব্যুরো ও আটাবের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত
উইন্ডিজের বিপক্ষে মাঠে নামছে বাংলাদেশ
গাজায় যুদ্ধবিরতি ছাড়া বন্দী বিনিময় হবে না : হামাস
শান্তিরক্ষা মিশন মোতায়েন করতে চায় জাতিসংঘ হাইতিতে
চকরিয়ার বিএনপি নেতা আবু তাহের চৌধুরীর মৃত্যুতে সালাহউদ্দিন আহমদ ও হাসিনা আহমদের শোক
পুতিন পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে দ্বিধা করবেন না : সার্বিয়া
ক্লাইমেট অর্থায়ন ইস্যুতে দেশগুলোর মধ্যে দ্বন্দ্ব
লালমোহনে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত যুবদল নেতা চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু
ট্রাম্পের অ্যাটর্নির বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন আটকে গেল
‘ফিলিস্তিনের পর ইরান, সউদী ও তুরস্ক হবে পরবর্তী টার্গেট’
প্রতি বছর ৩ লাখ নথিবিহীন অভিবাসীকে বৈধতা দানের ঘোষণা স্পেনের
প্রেম-ভালোবাসা নিয়ে সবচেয়ে অসুখী দেশ জাপান-কোরিয়া
মুসলিম চিকিৎসক
শীর্ষে দিল্লি
সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সংবর্ধনা
ইসলামিক ফাউন্ডেশন এর বোর্ড অব গভর্নর সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সম্বর্ধনা
বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে আঞ্চলিক সহযোগিতার আহ্বান