প্রত্যাবাসন বিষয় সামনে এলেই রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ঘটানো হয় নাশকতা
১৩ মার্চ ২০২৩, ১০:২১ পিএম | আপডেট: ২৮ এপ্রিল ২০২৩, ০৩:৩৩ পিএম
চীনের চাপে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে নমনীয় এখন মিয়ানমার। কিন্তু প্রত্যাবাসন বিষয় সামনে এলেই রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ঘটানো হয় নাশকতা অগ্নিকাণ্ড ও বেড়ে যায় খুনাখুনি। তদন্ত কমিটির মতে এই নাশকতা উদ্দেশ্যমূলক ও প্রভাব বিস্তারে।
রোহিঙ্গা সমস্যাটি বাংলাদেশের না হলেও পার্শ্ববর্তী মিয়ানমারের। আরাকান রাজ্যের নির্যাতিত লাখো রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়ায় এটি এখন বাংলাদেশের জন্য বড় বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশ সরকার মানবিক কারণে এই বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে আশ্রয় দিয়ে খাদ্য দিয়ে সহযোগিতা করে আসলেও বাংলাদেশের পক্ষে অনির্দিষ্টকাল এই বোঝা বহন করা সম্ভব নয়। তাই বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গাদের আশ্রয় এবং সার্বিক সহযোগিতার পাশাপাশি তাদের নিজের দেশ মিয়ানমারের আরকানে প্রত্যাবাসনের কাজটিও করে আসছিল শুরু থেকেই। আর এজন্য মিয়ানমার-চীনসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতা নিয়ে বিষয়টি সুরাহা করার চেষ্টা করে আসছে বাংলাদেশ সরকার। কিন্তু মিয়ানমারের অসহযোগিতাসহ নানা কারণে এই প্রত্যাবাসন হোঁচট খেয়েছে বারবার।
দেখা গেছে যখনই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়টি সামনে এসেছে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কোন না কোন অঘটন ঘটেছে। হয় গোলাগুলি নতুবা অগ্নিকাণ্ড অথবা অন্য কোন গোলযোগের ঘটনা ঘটতে দেখা গেছে। সম্প্রতি রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে হঠাৎ উদ্যোগী হয়েছে মিয়ানমার। এ উদ্যোগের অংশ হিসেবে গত সপ্তাহে ইয়াঙ্গুনে নিযুক্ত আট দেশের কূটনীতিককে রাখাইনে নিয়ে যাওয়া হয়। তাঁদের মধ্যে বাংলাদেশ, ভারত ও চীনের কূটনীতিকেরাও ছিলেন। কিন্তু ঠিক এই প্রক্ষাপটেই গত ৫ মার্চ দুপুরে উখিয়ার বালুখালী ১১ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এতে দুই হাজার শেড এর দেড় লাখ রেহিঙ্গা আশ্রয়হীন হয়ে পড়ে। আহত হয় শতাধিক নারী ও শিশু।
পুলিশ ও রোহিঙ্গা নেতাদের তথ্য মতে, গত সাড়ে চার মাসে আশ্রয় শিবিরে ২৫টির বেশি সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনায় ৩০ জন রোহিঙ্গা খুন হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছেন ১৫ জন রোহিঙ্গা মাঝি, ৭ জন আরসা সন্ত্রাসী ও অন্যান্য সাধারণ রেহিঙ্গা। সম্প্রতি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সংঘঠিত অগ্নিকাণ্ডের বিষয়টি তদন্তে একটি কমিটি গঠন করে জেলা প্রশাসন।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাটি পরিকল্পিত নাশকতা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এই ঘটনা ঘটিয়েছে বলে প্রমাণ পেয়েছে তদন্ত কমিটি। তবে কারা এই আগুন লাগিয়েছে তাদের নাম পরিচয় সনাক্ত করতে পারেনি। এ ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত করে মামলা করা জরুরী। অগ্নিকাণ্ডের কারণ জানতে কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের পক্ষে গঠিত সাত সদস্যের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে মামলা দায়েরসহ নিয়মিত ভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চিরুনি অভিযান এবং গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়ানোসহ ১০টি সুপারিশ করা হয়েছে। গত রবিবার বিকেল চারটায় কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিং কালে তদন্ত কমিটির প্রধান জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ আবু সুফিয়ান এই তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি আরো জানান, কক্সবাজারের উখিয়ার বালুখালী ১১ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের গত ৫ মার্চ দুপুরে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাটি পরিকল্পিত নাশকতা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এ নিয়ে চার পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদনে নানা প্রমাণপত্র হিসেবে ৭৪টি পৃষ্ঠা সংযুক্ত করা হয়েছে। তদন্তকালে অন্তত ৫০ জন রোহিঙ্গাসহ সংশ্লিষ্টদের সাথে আলাপ করা হয়েছে বলে জানানো হয়। যাদের সাথে তদন্ত কমিটি কথা হয় তারা বলেছেন এটা পরিকল্পিত নাশকতা। তারা যেসব তথ্য দিয়েছে তাতে ভিন্ন ভিন্ন নাম পাওয়া গেয়েছে। কিন্তু এদের শনাক্ত করা কঠিন। তাই মামলার পর তদন্ত করে তাদের শনাক্ত করার পক্ষে তদন্ত কমিটি।
তদন্ত কমিটির মতে দুই হাজার শেল্টার পুড়ে ছাই হয়ে যায় এবং ১৫ হাজারেরও বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এছাড়া পানির লাইন, ব্রিজ, লার্নিং সেন্টারসহ প্রায় ২ হাজারের মত ছোট ছোট স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রোহিঙ্গাদের পরিচয় পত্রসহ আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র পুড়ে গেছে। পাশাপাশি ২ হাজারের মত মানুষও আহত হয়। কিন্তু নিহতের কোন খবর পাওয়া যায়নি। সার্বিক পর্যালোচনায় এটি প্রতীয়মান যে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে পরিকল্পিত ভাবে এই নাশকতা ঘটানো হয়। কিন্তু কে বা কারা এই আগুন লাগিয়েছে বা কোথায় এর উৎপত্তি তা জানা যায়নি। এই ঘটনায় রোহিঙ্গারা আরসা নামক এক সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর নাম গণমাধ্যমকে জানায়।
আরাকান থেকে রোহিঙ্গা বিতাড়নের তিন মাসের মাথায় ২০১৭ সালের নভেম্বরে প্রত্যাবাসন বিষয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশ চুক্তি সই করেছিল। এ চুক্তির নেপথ্যে ছিল চীন। কিন্তু গত প্রায় ছয় বছরে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে কোনো অগ্রগতি হয়নি। ২০১৮ সালে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের বেঁধে দেওয়া সময়ে এক দফা প্রত্যাবাসন শুরুর চেষ্টা ব্যর্থ হয়। পরে চীনের মধ্যস্থতায় ২০১৯ সালে আবার প্রত্যাবাসন শুরুর চেষ্টা হয়েছিল, কিন্তু শেষ পর্যন্ত কিছুই হয়নি।
সূত্রমতে, প্রত্যাবাসনসংক্রান্ত আলোচনায় চীন যুক্ত হওয়ার পর ২০২০ সাল থেকে ছোট পরিসরে রোহিঙ্গাদের আরাকানে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে কথাবার্তা হচ্ছে। কয়েক মাস ধরে এ বিষয়ে মিয়ানমারকে চাপ দিয়ে যাচ্ছে চীন। এরই অংশ হিসেবে মিয়ানমারের মংডু ও সিটুওয়ে শহরে অর্ন্তবর্তীকালীন শিবিরসহ আশপাশের এলাকা ৮ দেশের ১১ কূটনীতিককে সরেজমিন দেখানো হয়েছে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
সচিবালয়ের গেটে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া-পুলিশের ফাঁকা গুলি
ফ্রান্সের উগ্র ডানপন্থী রাজনীতিবিদ মারি লা পেনের মৃত্যু
দুদক কার্যালয় থেকে গ্রেপ্তার তিন ভুয়া কর্মকর্তা রিমান্ডে, হত্যা মামলায় যুবলীগ নেতা সোহাগ রিমান্ডে,
শিগগিরই চালের দাম কমে আসবে : বাণিজ্য উপদেষ্টা
কুরস্কে ২৪ ঘন্টায় ইউক্রেনের ৪৮৫ সেনা নিহত
পশ্চিম তীরে বন্দুক হামলায় ৩ ইসরাইলি নিহত
ঢাবিতে হাসিনার ‘ডামি নির্বাচন’ প্রদর্শনী
জুলাই গণহত্যা: হাসিনাসহ ৯৭ জনের পাসপোর্ট বাতিল
শিগগিরই চালের দাম কমে আসবে: বাণিজ্য উপদেষ্টা
গাজায় ফিলিস্তিনিদের ত্রাণ সহযোগিতা দিচ্ছে হাফেজ্জী চ্যারিটেবল সোসাইটি
ট্রাম্প প্রশাসনের পররাষ্ট্রনীতি যুদ্ধ নাকি বন্ধুত্বের পক্ষে
মিথ্যা ন্যারেটিভ ভেঙ্গে দেয়া আমাদের ইতিহাসের দায়বদ্ধতার অংশ
বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে
এক-পঞ্চমাংশ এইচ-১বি ভিসাই ভারতীয় সংস্থাগুলোর কাছে
গ্রীনল্যান্ড সফরে যাচ্ছেন ট্রাম্প জুনিয়র
মক্কা-মদিনায় ভারী বৃষ্টিতে বন্যা
ভারতে চীনের পরিবর্তে বাড়ছে জাপানি বিনিয়োগ
পশ্চিম তীরে ৩ ইসরাইলি নিহত
যুক্তরাষ্ট্র-কানাডা একীভূত করার প্রস্তাব ট্রাম্পের
অস্ট্রিয়ায় সরকার গঠন করছেন অতি ডানপন্থি নেতা কিকল