হজ ব্যবস্থাপনা-২০২৩ : সউদী কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ ৩

মক্কার হোটেল ব্যবস্থাপনায় বিড়ম্বনা

Daily Inqilab ড. মুহাম্মদ ঈসা শাহেদী

০৭ আগস্ট ২০২৩, ১১:১৩ পিএম | আপডেট: ০৮ আগস্ট ২০২৩, ১২:০১ এএম

আমাদের ক’জনের থাকার ব্যবস্থা হয়েছিল মিসফালাহ ব্রিজের আগে গোলাকার ১০ তলা বিল্ডিং-এর তৃতীয় তলায়। একদিন পর হঠাৎ গুঞ্জন ওঠে, পাশের দুটি রুমে বিদ্যুৎ নেই। দেখতে দেখতে আমাদের রুমের এসিও বন্ধ হয়ে গেল। হোটেল ব্যবস্থাপনার সব ছেলে বাংলাদেশি। সবচে চতুর চট্টগ্রামের ছেলেটিকে জিজ্ঞেস করলাম। সে বুঝিয়ে বলল, মিস্ত্রি আনা হয়েছিল। সে টাকাও নিয়ে গেছে, কিন্তু আবার বিকল হয়ে গেছে। কমপ্রেসার নষ্ট। শেষে রাত পোহানোর পর ঠিক হয়ে গেল।

হজের মূল পর্ব মিনায় তিন দিন অবস্থানের পর হোটেলে ফিরলাম শ্রান্ত ক্লান্ত অবসন্ন দেহ নিয়ে। মনে হচ্ছিল পা দুটি কোথাও রেখে আসতে পারলে শান্তি পেতাম। কামরায় ঢুকে দেখি বাথরুমে পানি নাই। পাশের সিটে হাত-পা ছেড়ে দেয়া তরুণ ইফতিখারকে বললাম, এই অবস্থা রিসিপসনে একটু বলোনি। আঙ্কেল! রিসিপশনে যাওয়ার বা যোগাযোগের মতো শক্তি আমার শরীরে নেই। অগত্যা নিচে গেলাম। হোটেলের মূল আরবি মালিককে তো কেউ কখনো চোখে দেখেনি। যিনি ভাড়ায় নিয়েছেন তিনিও অদৃশ্য। দেখা গেল কয়েকশ’ লোকের নিবাস পুরো বিল্ডিংয়ে পানির হাহাকার। সবাই মিনা থেকে ফিরেছেন এমন সময় এই দুর্গতি। এক কর্মচারী ছেলে বলল, ৬টা মোটরের ৪টাই নষ্ট হয়ে গেছে গেল রাতে। আনতে হবে জেদ্দা হতে। সময় লাগবে। হোটেলে বয়োবৃদ্ধ ও মহিলারাও আছে। অবস্থাটা কি চিন্তা করা যায়।

রুমমেটদের মধ্যে একজন আসাদ হালিম ভাই বাংলাদেশে বিদ্যুতের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। আরেকজন ব্যাংক ম্যানেজার মাহমুদুন নবী। তৃতীয়জন দায়েরা জজ মোস্তফা কামাল ভাই। তাদেরও অভিন্ন মত হল, মধ্যম বা নিম্ন মানের হোটেলগুলোতে পানি ও বিদ্যুতের এই ভোগান্তির কথা নিশ্চয়ই সউদী কর্তৃপক্ষ জানে না। ভাষাগত কারণে তাদের সাথে যোগাযোগের বিড়ম্বনাও কেউ পোহাতে চায় না। সউদী কর্তৃপক্ষের উচিত যেভাবে নিরাপত্তা ও পরিচ্ছন্নতার কাজটি দক্ষতার সাথে আঞ্জাম দিচ্ছেন এবং হোটেল মালিকদের ইচ্ছার ওপর ছেড়ে দেননি, তেমনি বিদ্যুৎ ও পানি সরবরাহের ব্যাপারটিও সম্পূর্ণ নিজের হাতে নেয়া। বিদ্যুৎ সংযোগে বিঘœ ঘটার সঙ্গে সঙ্গে সরকারি লোকেরা দৌড়ে আসবে, হোটেল মালিকদের মিস্ত্রির বা মেকানিকের পেছনে দৌড়াতে হবে না, নষ্ট মেশিন বা যন্ত্রপাতির জন্য নিজস্ব উদ্যোগে জেদ্দায় যেতে হবে না, এমন ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে মক্কার ম্যানেজমেন্টকে। স্টারযুক্ত বা উন্নত হোটেলগুলোতে এ সমস্যা নাই বা প্রকট নয়, এ জন্যে সমস্যাটি কর্তৃপক্ষের কাছে প্রকট মনে হচ্ছে না। কিন্তু মদীনায়ও শুনেছি, কোনো কোনো ফন্দিবাজ হজ এজেন্সি সস্তায় বাড়ি ভাড়া নিয়ে হজযাত্রীদের জিম্মি করে এ ধরনের ভোগান্তির মধ্যে ঠেলে দিয়েছেন। অভিযোগ করলে হয়ত প্রতিকার পাবে; কিন্তু অভিযোগ করার ভাষা তো তারা জানে না, জায়গাও চেনে না।

আমাদের সুনির্দিষ্ট পরামর্শ, মক্কা মোকাররমা ও মদীনা মুনাওয়ারার সর্বত্র সব ধরনের আবাসিক হোটেল বা বাসাবাড়ির বিদ্যুৎ ও পানি সরবরাহের দায়িত্ব সরাসরি সউদী কর্তৃপক্ষকে গ্রহণ করতে হবে। বিশেষ করে বাথরুম ফিটিংসের অবস্থা নিরীক্ষণ করা একান্তই জরুরি। বিদ্যুৎ ও পানির মতো হজ এজেন্সিগুলোর পরিবেশিত খাবারের ওপরও নজরদারি থাকতে হবে।

হাজীরা হলেন দুয়ুফুর রহমান, আল্লাহর মেহমান। সেই সুবাদে সউদী আরবের মেহমান। মেহমানদের আতিথেয়তা আরব ঐতিহ্যের অবিচ্ছেদ্য অংশ। প্রয়োজনে হোটেল মালিকদের ওপর বর্ধিত কর আরোপ করুন। তবুও সামনের বছরগুলোতে সাধারণ হাজীরা যাতে এ ধরনের বিড়ম্বনার সম্মুখীন না হন, তার ব্যবস্থা করুন। এটি আমাদের আবদার, আমাদের প্রত্যাশা, প্রাণের দাবি।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

তিন বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণ করবে ইসি
‘রক্ত দিয়ে ছাত্ররা যা অর্জন করেছে, তা তাদেরই রক্ষা করতে হবে’
বাংলাদেশে বিনিয়োগের পরিকল্পনা করছে মার্কিন ব্যবসায়ী গ্রুপ
এস আলম পরিবারের ৩৬৮ কোটি টাকার জমি জব্দের আদেশ
সাংবাদিক সন্তানদের বৃত্তি প্রদান সরকারের যুগান্তকারী উদ্যোগ : উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম
আরও

আরও পড়ুন

সৈয়দপুরে বর্ধিত শুল্ক প্রত্যাহারের দাবিতে ফল ব্যবসায়ীদের মানববন্দন

সৈয়দপুরে বর্ধিত শুল্ক প্রত্যাহারের দাবিতে ফল ব্যবসায়ীদের মানববন্দন

সিলেটে ওবায়দুল কাদেরসহ ৭২ জনের বিরুদ্ধে মামলা

সিলেটে ওবায়দুল কাদেরসহ ৭২ জনের বিরুদ্ধে মামলা

যাত্রাবাড়ীতে বাকপ্রতিবন্ধীসহ আপন দুই বোনকে ধর্ষণ, আটক ১

যাত্রাবাড়ীতে বাকপ্রতিবন্ধীসহ আপন দুই বোনকে ধর্ষণ, আটক ১

তিন বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণ করবে ইসি

তিন বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণ করবে ইসি

আশুলিয়ায় ৬টি ইটভাটাকে ৩৬ লাখ টাকা অর্থদন্ড

আশুলিয়ায় ৬টি ইটভাটাকে ৩৬ লাখ টাকা অর্থদন্ড

গ্রামে আধুনিক চিকিৎসা সুবিধা সম্প্রসারণ জরুরি

গ্রামে আধুনিক চিকিৎসা সুবিধা সম্প্রসারণ জরুরি

অর্থনৈতিক কৌশল পুনর্নির্ধারণে টাস্কফোর্সের প্রতিবেদন হস্তান্তর

অর্থনৈতিক কৌশল পুনর্নির্ধারণে টাস্কফোর্সের প্রতিবেদন হস্তান্তর

বিস্কুটের উপর ভ্যাট বৃদ্ধি কেন?

বিস্কুটের উপর ভ্যাট বৃদ্ধি কেন?

বিএনপি বনাম নতুন রাজনৈতিক দল

বিএনপি বনাম নতুন রাজনৈতিক দল

সন্ত্রাসী হামলায় ধলাপাড়া রেঞ্জের বিট কর্মকর্তা ও বন প্রহরীসহ মারাত্মকভাবে আহত ৯

সন্ত্রাসী হামলায় ধলাপাড়া রেঞ্জের বিট কর্মকর্তা ও বন প্রহরীসহ মারাত্মকভাবে আহত ৯

জামালপুরে ট্রাকচাপায় অটোরিকশার ৫ যাত্রীর মৃত্যু

জামালপুরে ট্রাকচাপায় অটোরিকশার ৫ যাত্রীর মৃত্যু

পিলখানা হত্যাকাণ্ডের বিচার নিয়ে বিভ্রান্তি কাম্য নয়

পিলখানা হত্যাকাণ্ডের বিচার নিয়ে বিভ্রান্তি কাম্য নয়

জামায়াতে ইসলামী মানবিক ও দূর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে চায়: ডা. শফিকুর রহমান

জামায়াতে ইসলামী মানবিক ও দূর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে চায়: ডা. শফিকুর রহমান

‘রক্ত দিয়ে ছাত্ররা যা অর্জন করেছে, তা তাদেরই রক্ষা করতে হবে’

‘রক্ত দিয়ে ছাত্ররা যা অর্জন করেছে, তা তাদেরই রক্ষা করতে হবে’

পালিয়ে যাওয়া হাসিনা দেশের মাটিতে আসতে পারবে না :  খায়ের ভূঁইয়া

পালিয়ে যাওয়া হাসিনা দেশের মাটিতে আসতে পারবে না : খায়ের ভূঁইয়া

সামরিক শক্তিতে মিয়ানমার-ইরাকের চেয়ে এগিয়ে বাংলাদেশ

সামরিক শক্তিতে মিয়ানমার-ইরাকের চেয়ে এগিয়ে বাংলাদেশ

সরব হওয়ার দিন

সরব হওয়ার দিন

ইলিশসহ মৎস্য সম্পদ রক্ষায় বরিশালে চলছে বিশেষ কম্বিং অপারেশন

ইলিশসহ মৎস্য সম্পদ রক্ষায় বরিশালে চলছে বিশেষ কম্বিং অপারেশন

আশ্রয়

আশ্রয়

বাংলাদেশের বিভিন্ন উপজাতী ভাষা ও সংস্কৃতি

বাংলাদেশের বিভিন্ন উপজাতী ভাষা ও সংস্কৃতি