বাকশক্তির ব্যবহার, শৈথিল্য ও সীমালঙ্ঘন-২

Daily Inqilab মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম

০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০৩ এএম

আল্লাহর প্রতি ঈমানের অর্থ আল্লাহ সর্বশক্তিমান ও সর্বজ্ঞ। তিনি সকলের সব কথা ও কাজ দেখেন ও শোনেন। তিনি কারও কোনো কাজ বৃথা যেতে দেবেন না। ভাল-মন্দ কাজ অনুযায়ী অবশ্যই প্রতিফল দেবেন। আর আখিরাতে বিশ্বাসের মানে মৃত্যুর পর এমন এক জগতে আমাদের যেতে হবে, যেখানে ইহজগতে কৃত যাবতীয় কাজের প্রতিদান দেয়া হবে। কাজ ভাল হলে তার পুরস্কারে জান্নাত লাভ হবে আর মন্দ হলে ভোগ করতে হবে জাহান্নামের শাস্তি।

কথা বলা ও নীরবতা অবলম্বন করা, উভয়টিই যখন কাজ তখন মুমিন ব্যক্তির কর্তব্য এই ঈমানের ভিত্তিতেই উভয়টিই সম্পাদন করা। অর্থাৎ সময়ের দাবি যদি হয় কথা বলা, তবে অবশ্যই বলা। আর যদি দাবি হয় না বলা, তবে বলা হতে বিরত থাকা। যদি কথা বলা সময়ের দাবি হয়, আর তা না বলা হয়, তবে কেন বলা হলো না, এর জবাব আখিরাতে আল্লাহর দরবারে দিতে হবে। অনুরূপ দাবি যদি হয় না বলার, তা সত্ত্বেও বলা হয়, সেক্ষেত্রেও অহেতুক কেন বলা হলো সে জবাবও আল্লাহর আদালতে দিতে হবে।

যেক্ষেত্রে সময়ের দাবি কথা বলা, সেখানে এটাও বিচার্য যে, ওই দাবি পূরণে আমি কতটুকু সক্ষম। সক্ষমতা ছাড়া কথা বলতে গেলে অনেক সময়ই তা উপকারের স্থলে অপকারের কারণ হয়ে থাকে। বিভিন্ন মিটিং ও সভা সেমিনারে লক্ষ্য করা গেছে, অনুপযুক্ত লোক কথা বলতে গিয়ে সম্পূর্ণ মজলিসটাই মাটি করে ফেলেছে। এমনও দেখা গেছে যে, হকের পক্ষের লোক তার অযোগ্যতার কারণে না হক কথা বলে বাতিলপন্থিদের হাসির খোরাক জুগিয়েছে। এমন তো হামেশাই দেখা যায় যে, অতিউৎসাহীর অদম্য কথার কারণে যোগ্য লোকের কথা বলার সুযোগ হয় না। ফলে সভা-সেমিনার দ্বারা কাক্সিক্ষত সুফল লাভ থেকে মানুষ বঞ্চিত থেকে যায়।

যে মজলিসে কথা বলার যোগ্যতা আমার নেই, সেখানে কথা বলার কোনো অধিকার আমার থাকে কি? এমন লোকের কথা বলা মানেই অনধিকারচর্চা ও অন্যের অধিকার হরণ। সর্বোপরি কথা বলার লক্ষ্য-উদ্দেশ্য নস্যাৎ করা। এহেন কথা বলা কিছুতেই ভালো কথার মধ্যে পড়ে না। ফলে তা বলারও কোনও বৈধতা থাকে না। আল্লাহ ও আখিরাতে বিশ্বাসীর তা থেকে বিরত থাকাই বাঞ্ছনীয়।

ওই বাঞ্ছনীয় নীরবতা অনেক সময় আমরা অবলম্বন করতে পারি না আবেগের কারণে। হয়ত কথার বিষয়বস্তুটি দ্বীন ও ঈমান সম্পর্কিত। আমার আজন্ম লালিত বিশ্বাসের বিপরীতে কোনও আওয়াজ উঠেছে। তা নিয়ে চারদিকে শোরগোল। বিজ্ঞজনেরা তার উপযুক্ত জবাব দিচ্ছেন কিংবা জুতসই জবাব তালাশ করছেন। কিন্তু আমার সেই দিকে নজর নেই। আমার আবেগ যারা যখম করেছে, নিজ জ্ঞান-প্রজ্ঞার যতই অভাব থাকুক না কেন, তাদের এক হাত না দেখিয়ে ক্ষান্ত হতে আমি রাজি নই।

এটা আবেগের তাড়না। এ তাড়নায় মাঠে নেমে পড়াটা হঠকারিতা। আমার যা প্রত্যাশা, তাই যখন আরও যোগ্য-বিজ্ঞ লোকদের দ্বারা সম্পন্ন হতে যাচ্ছে, তখন অযোগ্য হাতে তীর ছুড়ে সুযোগ্যদের ক্ষমতাকে প্রশ্নের মুখে ফেলছি কেন? এই আবেগতাড়িত উচ্চবাচ্যের পরিণামে হাতের নাগালে এসে যাওয়া বিজয় যদি বেহাত হয়ে যায়, সেজন্য কি আমাকেই দায়ী থাকতে হবে না? বস্তুত আবেগতাড়িত কথা কখনও সুফল দায়ী হয় না। সে কথা নিজ ঘরে হোক বা বাইরে। আপনজনদের উদ্দেশে হোক বা শত্রুর বিরুদ্ধে।

বাকশক্তির ক্ষমতা অমিত। এর কৌশলী ব্যবহার নির্জীব, নিরুদ্যাম প্রাণে চেতনার আগুন জ্বালিয়ে দিতে পারে, একটা ঘুমন্ত জাতিকে নবজাগরণের উদ্দীপনায় উদ্ধাবিত করতে পারে এবং এক পরাধীন জাতিকে স্বাধীনতা অর্জনের সংগ্রামে উন্মাতাল করে তুলতে পারে। এহেন শক্তিকে বিচারবোধহীন আবেগের বশে ব্যবহার করা কিছুতেই সমীচীন নয়।

তাতে প্রাণ যেতে পারে, ঘর ভাঙতে পারে, দাঙ্গা লেগে যেতে পারে, গৃহযুদ্ধ দেখা দিতে পারে এবং দেশও টুকরো-টুকরো হয়ে যেতে পারে। ব্যক্তির ক্ষমতা ও প্রভাবের বিস্তার অনুপাতে ছোট-বড় নানা অঘটনই এর ফলে ঘটতে পারে। সুতরাং এ শক্তির ব্যবহারে চিন্তা ও বিচক্ষণতা অতীব জরুরি। যাতে ব্যক্ত কথা ভালো কথা রূপে গণ্য হয়।
সুতরাং নিজ বাকশক্তির ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে হবে। বাঁচতে হবে কথার সীমালঙ্ঘন থেকে এবং পরিহার করতে হবে শৈথিল্য। অর্থাৎ বাকশক্তির ব্যবহারে ইতিদাল ও মধ্যপন্থা আকড়ে ধরতে হবে।

হাদিস শরীফে নবী কারীম (সা.) যে তিনটি কাজ করতে হুকুম দিয়েছিলেন, তার সর্বপ্রথম এটিই : বাকশক্তিকে নিজ নিয়ন্ত্রণে রাখ। অর্থাৎ যেখানে কথা বলা দরকার সেখানে বল, তা প্রয়োজন পরিমাণে বল এবং যেখানে কথা বলার প্রয়োজন নেই, সেখানে মৌনতা অবলম্বনে সক্ষম থাক। আল্লাহ তাআলা আমাদের তাওফিক দান করুনÑ আমীন।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

ব্যাংকিং সেবা খাতে এখনো ভারতীয় আধিপত্য

ব্যাংকিং সেবা খাতে এখনো ভারতীয় আধিপত্য

পরিষ্কার বার্তা চায় জনগণ

পরিষ্কার বার্তা চায় জনগণ

অবশেষে টিউলিপ সিদ্দিকের পদত্যাগ

অবশেষে টিউলিপ সিদ্দিকের পদত্যাগ

কারাগারে এস কে সুর

কারাগারে এস কে সুর

‘গ্রিনল্যান্ডকে সামরিক এলাকা বানাতে চান ট্রাম্প’

‘গ্রিনল্যান্ডকে সামরিক এলাকা বানাতে চান ট্রাম্প’

ছাত্রলীগ নেত্রী নিশি দুই দিনের রিমান্ডে

ছাত্রলীগ নেত্রী নিশি দুই দিনের রিমান্ডে

অভি খালাস! তাহলে খুনী কে?

অভি খালাস! তাহলে খুনী কে?

জল্পনা উড়াল চীনা সংস্থা টিকটক কিনছেন না মাস্ক

জল্পনা উড়াল চীনা সংস্থা টিকটক কিনছেন না মাস্ক

ধামরাইয়ে খাদ্যদ্রব্য তৈরির কারখানায় ফের আবার ডাকাতির চেষ্টা

ধামরাইয়ে খাদ্যদ্রব্য তৈরির কারখানায় ফের আবার ডাকাতির চেষ্টা

রাজউক জোনাল অফিস স্থানান্তর আদেশের প্রতিবাদে মানববন্ধন

রাজউক জোনাল অফিস স্থানান্তর আদেশের প্রতিবাদে মানববন্ধন

দ্বিতীয় দিনের মতো অনশনে অব্যাহতি পাওয়া এসআইরা

দ্বিতীয় দিনের মতো অনশনে অব্যাহতি পাওয়া এসআইরা

বন্ধ বেক্সিমকো খুলে দেয়ার দাবিতে শ্রমিকদের মানববন্ধন

বন্ধ বেক্সিমকো খুলে দেয়ার দাবিতে শ্রমিকদের মানববন্ধন

আধুনিক ডেটা ওয়্যারহাউজ স্থাপন করবে বিবিএস

আধুনিক ডেটা ওয়্যারহাউজ স্থাপন করবে বিবিএস

পরিবারসহ জ্যাকব ও ছেলেসহ সাবেক মন্ত্রী শাহাব উদ্দিনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

পরিবারসহ জ্যাকব ও ছেলেসহ সাবেক মন্ত্রী শাহাব উদ্দিনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

প্রিন্স মামুনের বিরুদ্ধে চার্জগঠন শুনানির নতুন তারিখ

প্রিন্স মামুনের বিরুদ্ধে চার্জগঠন শুনানির নতুন তারিখ

সামাজিক ও আচরণ পরিবর্তনের বিষয় পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্তির আহ্বান ইউজিসি’র

সামাজিক ও আচরণ পরিবর্তনের বিষয় পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্তির আহ্বান ইউজিসি’র

চুক্তিতে নিয়োগের দৌড়ে নওফেলের জালাল উদ্দিন চৌধুরী

চুক্তিতে নিয়োগের দৌড়ে নওফেলের জালাল উদ্দিন চৌধুরী

পুলিশের চাকরি হারিয়ে ছিনতাইয়ে নামেন হাকিম

পুলিশের চাকরি হারিয়ে ছিনতাইয়ে নামেন হাকিম

ভোটার তালিকা হালনাগাদে সহায়তা করবে ইউএনডিপি

ভোটার তালিকা হালনাগাদে সহায়তা করবে ইউএনডিপি

সাকরাইনে মেতেছে পুরান ঢাকা

সাকরাইনে মেতেছে পুরান ঢাকা