কুষ্টিয়াবাসী অসহায় ছিলেন হানিফ-আতার রাজ্যে
১৮ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০১ এএম | আপডেট: ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০১ এএম
আওয়ামী লীগ টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থাকার সুবাদে কুষ্টিয়ার মাহবুবউল আলম হানিফ হয়ে ওঠেন ক্ষমতাধর নেতাদের একজন। পাশাপাশি গড়ে তুলেছেন সম্পদের পাহাড়। নিজ জেলা কুষ্টিয়া ছাড়াও রাজধানী ঢাকা ও ঢাকার বাইরে বাগেরহাটে ও গোপালগঞ্জে মাছের ঘেরসহ অন্তত ৪টি জেলায় তার সম্পদ ও ব্যবসা-বাণিজ্যে আছে বলে অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে।
উপজেলার নেতা থেকে হানিফ গত দেড় যুগে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের মতো শীর্ষ পদ অধিকারী হন। ১৯৯৬ সালে কুষ্টিয়া-২ আসন থেকে মনোনয়ন পেয়ে পরাজিত হন তিনি। এরপর আরো কয়েকবার দলীয় মনোনয়ন পেলেও বিজয়ী হতে পারেননি। এরপর ২০০৮ সালে মহাজোট গঠনের পর হানিফ মনোনয়ন বঞ্চিত হন। এরপর দল ক্ষমতায় এলে তাকে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী করা হয়। ২০১৩ সালের নির্বাচনে সদর আসন থেকে মনোনয়ন পেয়ে এমপি নির্বাচিত হয়ে কাউন্সিলে পেয়ে যান যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের মত শীর্ষ পদ। এরপর আর তাকে পিছনে তাকাতে হয়নি। বাড়তে থাকে তার প্রভাব-প্রতিপত্তি। দলে সাধারণ সম্পাদকের পদকে পুঁজি করেই সারাদেশে তার জাল ফেলে তৈরি করেন বড় নেটওয়ার্ক। বাগিয়ে নিয়েছেন নানা ব্যবসা-বাণিজ্য। গড়ে তোলেন বিশাল সাম্রাজ্য। দেশে নানা সম্পদ গড়ার পাশাপাশি কানাডাসহ কয়েকটি দেশে হানিফের সম্পদ ও ব্যবসা আছে বলেও জানা যায়। হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর গা ঢাকা দিয়ে আছেন হানিফ। পালিয়েছে তার দোসররাও।
মাহবুবউল আলম হানিফের বড় ভাই সাবেক সচিব রাশিদুল আলম শেখ পরিবারের জামাই। সেই সূত্র ধরেই হানিফ কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলায় আওয়ামী লীগের রাজনীতি করতেন। উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ছিলেন তিনি। মন্ত্রী হওয়ার খায়েস থাকলেও সে আশাপূরণ হয়নি নানা অপকর্মের কারণে। তবে রাজনীতির আড়ালে অর্থ আয় করা ছিল তার নেশা। তিনি দলের নেতাকর্মীদের পাত্তা না দিলেও বড় বড় ব্যবসায়ীদের সাথে আঁতাত করে চলতেন। এভাবে গত ১৫ বছরে অঘাধ সম্পদের মালিক বনে গেছেন তিনি। তার পুরো পরিবার থাকে কানাডায়। সেখানে তার কয়েক ভাই ও বোন বসবসা করে। সেখানে তার গাড়ি-বাড়িসহ সম্পদ আছে বলে জানা গেছে। দলের শীর্ষ পদ পাওয়ার পরই তার কাছে লোকজনের আনাগোনা বাড়তে থাকে। দলের পদ-পদবি পাওয়ার জন্য অনেকেই ছুটে আসতেন তার কাছে। এছাড়া ঢাকা তদবিরও কেন্দ্রিক নানা কাজের করতেন হানিফ। দলের পদ-পদবি দেওয়ার নামে যেমন অর্থ বাণিজ্য করেছেন, তেমনি নানা তদবির, টেন্ডার বাণিজ্যে, বড় বড় কাজ বাগিয়ে নেওয়ার মাধ্যমে হাতিয়ে নিয়েছেন শতকোটি টাকা। হানিফের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নাম কোয়েষ্ট ইন্টারন্যাশনাল বিএমটিসি। কাওরান বাজারে ভবনে তার ব্যবসায়ীক ও রাজনৈতিক অফিস। সেই অফিস ও কুষ্টিয়ার বাসায় বসেই সব কিছু একহাতে নিয়ন্ত্রণ করতেন তিনি। সর্বশেষ সংসদ নির্বাচনে হানিফ তার হলফনামায় আয়ের উৎস হিসেবে ব্যবসা উল্লেখ করেন। সর্বশেষ স্ত্রীর নামে কুষ্টিয়ায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে লাইসেন্স নেন। লালন কলা বিশ্ববিদ্যালয় নামে কার্যক্রম শুরু করেছিলেন জেলা পরিষদের নতুন ভবনে।
জেলা পরিষদ সূত্র জানা যায়, ৭ম ও ৮ম তলা মাসিক ৩ লাখ টাকা ভাড়ায় নেন হানিফ। আর এককালিন দিয়েছিলেন প্রায় অর্ধকোটি টাকা। শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা শেষ হলেও পট পরিবর্তনের কারনে কার্যক্রম আপাতত বন্ধ হয়ে গেছে। প্রতিষ্ঠান সাজাতে বিনিয়োগ করেছিলেন কয়েক কোটি টাকা।
দলের একাধিক সূত্র জানায়, রাজনীতিকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে গত ১৫ বছরে শত শত কোটি টাকা কামিয়ে নিয়েছেন তিনি। এসব টাকার বড় অংশ পাচার করেছেন কানাডাসহ কয়েকটি দেশে। দেশের কয়েকটি বড় বড় কোম্পানীর সাথে নামে-বেনামে হানিফের ব্যবসা আছে। এছাড়া গাজীপুরে পার্টনারে রিসোর্ট, কক্সবাজারে জমিসহ সম্পদের খবর পাওয়া গেছে। কুষ্টিয়া হানিফের ভাই আতার যে মার্কেট, দোকান ও শপিংমলে দোকান আছে সেগুলো দুইজনের অর্থে ক্রয় করা বলে জানা গেছে।
জেলা পরিষদ অফিস সূত্র জানিয়েছে, তাদের নতুন দুটি দোকান নেওয়া আছে কোটি টাকায়। এছাড়া তমিজউদ্দিন মার্কেট কমিটির সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক জানান, খেলার মাঠের পাশে দোতলা নতুন মার্কেটে ৮টি দোকান আছে তাদের নামে। দোকানের ভাড়াটিয়ারা জানান, প্রতিমাসে হানিফের ভাই আতা টাকা তুলতেন। জেলা পরিষদের বটতৈল এলাকায় তার ১২টি দোকানের খোঁজ পাওয়া গেছে। প্রতিটি দোকান ভাড়া দেওয়া আছে। স্থানীয় ব্যবসায়ী নাজিম উদ্দিন জানান, মার্কেট নির্মাণ করার পর এখানে হানিফ তার ভাইয়ের নামে ১২টি দোকান নেন। এসব দোকান থেকে মাসে লাখ টাকার বেশি ভাড়া ওঠে। শহরের বহুতল বিপনী বিতান পরিমল টাওয়ারেও একাধিক দোকান আছে হানিফ ও আতার নামে। মার্কেট কমিটি জানায়, দুটি দোকানের দাম কোটি টাকার ওপরে। প্রতি মাসে ভাড়া পায় অর্ধলাখ টাকা। এছাড়া সমবায় মার্কেটের নিচ ও দোতলায় একাধিক দোকান আছে। সেখানে ব্যবসা আছে হানিফ ও আতার। যৌথভাবে এসব ব্যবসা করতেন দুই ভাই।
শহরের হাউজিংয়ে ৫ কাঠার প্লটের ওপর ১০তলা বাড়ি নির্মাণ করা হয়েছে কয়েক বছর আগে। প্রতি তলায় ৪টি করে ফ্লাট আছে। হাউজিং এলাকার বাসিন্দা আনিসুর রহমান জানান, হাউজিং এর জমির সাথে স্থানীয় একজনের জমি দখল করে এ বাড়ি নির্মাণ করা হয় কয়েক বছর আগে। আতার নামে হলেও পেছনে ছিলেন হানিফ। লোকজনের চোখ এড়াতেই হানিফ এ বাড়ি আতার নামে করেছেন বলে মনে করেন স্থানীয়রা।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
আবারও ইসরাইলি হামলায় লেবাননে ২৪ ঘন্টায় নিহত ৫৯
শেষ বিকেলে লুইস-অ্যাথানেজের 'আক্ষেপে' ম্যাচে ফিরল বাংলাদেশে
রানআউট হজ,লুইসের ব্যাটে এগোচ্ছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ
জমকালো 'কনটেনন্ডার সিরিজ',কে কার বিপক্ষে লড়বেন?
তারেক রহমানের আর্থিক সহায়তা নিয়ে সিয়ামের বাড়িতে মীর হেলাল
অবশেষে ২৬ মামলার আসামি কুমিল্লার শীর্ষ সন্ত্রাসী আল-আমিন গ্রেফতার
'জুলাই অনির্বাণ’ এ রক্তপিপাসু হাসিনার নির্মমতা দেখে কাঁদছেন নেটিজেনরা
দেশনেত্রীর প্রতি অপরিসীম শ্রদ্ধা ও সম্মান
বিচার, সংস্কার ও নির্বাচনসহ সরকারের কাজের পরিধি বিশাল
অদক্ষ ফার্মাসিস্ট দ্বারাই চলছে ফার্মেসি
নির্বাচন কমিশন গঠন : গণতন্ত্রের পথে যাত্রা শুরু
বেনাপোল দিয়ে যাত্রী পারাপার কমেছে অর্ধেক, রাজস্ব আয় ও ব্যবসা বাণিজ্যে ধস
দৈনন্দিন জীবনে ইসলাম
মসজিদে পরে এসে ঘাড় ডিঙিয়ে সামনের কাতারে যাওয়া জায়েজ নেই
দুনিয়া ও আখেরাতের জন্য সুন্দর জীবন এবং কৃতজ্ঞতাবোধ
যুগে যুগে জুলুম ও জালিমের পরিণতি
সালাম ইসলামী সম্ভাষণ রীতির এক উৎকৃষ্ট উদাহরণ
করিমগঞ্জের নাম কি আদৌ শ্রীভূমি দিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ?
বিশাল স্বর্ণখনির সন্ধান পেলো চীন
মাছ ধরার নৌকার সঙ্গে ভারতীয় সাবমেরিনের সংঘর্ষ