কুড়িগ্রামে বিপদসীমার ওপরে তিস্তার পানি
১৪ আগস্ট ২০২৩, ১১:৪০ পিএম | আপডেট: ১৫ আগস্ট ২০২৩, ১২:০৫ এএম
দুঃশ্চিন্তায় নদী পাড়ের মানুষ : ব্যারেজের সবকটি গেট খুলে দেওয়া হয়েছে : বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত
বৃষ্টি ও উজানের ঢলে কুড়িগ্রামে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৩৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে জেলার উপর দিয়ে প্রবাহিত ধরলা, ব্রহ্মপুত্র, দুধকুমারসহ সবগুলো নদীর। এদিকে পানি বৃদ্ধি পেয়ে প্লাবিত হয়ে পড়েছে জেলার নদ-নদীর অববাহিকায় নিম্নাঞ্চগুলো। তলিয়ে গেছে আমন আবাদসহ বিভিন্ন সবজির ক্ষেত।
গতকাল সকালে পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে কাউনিয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়াও ব্রহ্মপুত্র নদের পানি নুনখাওয়া পয়েন্টে ৬৯ সেন্টিমিটার, ব্রহ্মপুত্র নদের পানি চিলমারী পয়েন্টে ৫৮ সেন্টিমিটার ও ধরলা নদীর পানি সদর পয়েন্টে বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৬৪ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
তিস্তার অববাহিকার গড়াইপিয়ার এলাকার নয়ন মিয়া বলেন, ২ থেকে ৩ দিন থেকে আবারও তিস্তা নদীর পানি হু হু করে বৃদ্ধি পাচ্ছে। পানি বাড়া দেখে এখানকার মানুষেরা অনেক দুঃশ্চিতায় আছে। তাছাড়াও তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পেলেও নদী ভাঙে, পানি কমলেও নদী ভাঙে। তিস্তা পাড়ের মানুষের বারোমাসেই কষ্ট।
ধরলা নদীর অববাহিকার সিতাইঝাড় এলাকার ইসমাইল হোসেন বলেন, আবার ধরলা নদীর পানি বাড়ার কারণে বাড়ির চারিদিকে পানি চলে আসছে। এভাবে যদি আরও ২ থেকে ৩ দিন পানি বৃদ্ধি পায় তাহলে অবস্থা খারাপ হওয়ার সম্ভাবনা আছে।
কুড়িগ্রাম কৃষি স¤প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক বিপ্লব কুমার মোহন্ত ইনকিলাবকে জানান, জেলায় টানা বৃষ্টিপাতের ফলে ৩৩৫ হেক্টর জমির আমন ও ৫০ হেক্টর জমির সবজি ক্ষেত পানিতে তলিয়ে গেছে। কোন ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা নেই, পানি নেমে গেলে সবঠিক হয়ে যাবে।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বিপদসীমার সামান্য নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে ধরলা ও দুধকুমার নদের পানিও। আসা করা হচ্ছে ২ থেকে ৩ দিনের মধ্যে নদ নদীর পানি কমতে শুরু করবে। তবে এই মুহূর্তে বড় ধরনের বন্যা হওয়ার আশঙ্কা নেই। এদিকে, উজানের ঢল আর ভারী বৃষ্টিপাতে লালমনিরহাটে তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে নদীর বিপদসীমার ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে তিস্তা নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলে পানি প্রবেশ করেছে। ইতোমধ্যেই নদী অববাহিকার অর্ধশতাধিক চরের কয়েক হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এই নিয়ে ৫ম বারের মতো তিস্তা পাড়ের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়লো। পানি নিয়ন্ত্রণে ব্যারাজে ৪৪টি গেট খুলে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। তিস্তা তীরবর্তী এলাকায় রাস্তাঘাট ও ঘরবাড়িতে পানি প্রবেশ করে দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে। নতুন এলাকায় প্রবেশ করছে পানি। নদীপাড়ে দেখা দিয়েছে বন্যা। তিস্তার পানি ঘরবাড়িতে প্রবেশ করায় দুর্ভোগে পড়েছে মানুষ।
গতকাল সোমবার সকাল ৬টায় দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজের পয়েন্টে তিস্তার পানিপ্রবাহ রেকর্ড করা হয়েছে ৫২.৩৫সেন্টিমিটার, যা বিপদসীমার ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তিস্তার পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় লালমনিরহাটের ৫ উপজেলার তিস্তা চর অঞ্চলের ঘরবাড়িতে পানি প্রবেশ করে। চরের রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে। পানি বৃদ্ধির ফলে নতুন নতুন এলাকায় প্লাবিত হচ্ছে। ঘরবাড়ি ও রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে গিয়ে দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে। এতে দেখা দিয়েছে ভয়াবহ বন্যা।
ডালিয়া পাউবো’র উপ প্রকৌশলী রাশেদুল ইসলাম বলেন, সকাল ৬টা থেকে তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে পানি ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তিস্তায় পানি বেড়ে যাওয়ায় লালমনিরহাটের পাঁচ উপজেলার নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল ও চরের বসতবাড়িতে পানি প্রবেশ করায় নতুন করে বন্যার আশঙ্কা প্রকাশ করছেন তিস্তা পারের মানুষ। তিস্তার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় কিছুটা ভোগান্তিতে পরেছে সাধারণ তিস্তাপাড়ের মানুষ।
তিস্তার পানি বেড়ে যাওয়ায় লালমনিরহাটের ৫ উপজেলার পাটগ্রামের দহগ্রাম, হাতীবান্ধার গড্ডিমারী, দোয়ানী, সানিয়াজান ইউনিয়নের নিজ শেখ সুন্দর, সিঙ্গামারি ইউনিয়নের ধুবনী, সিন্দুর্না, পাটিকাপাড়া, ডাউয়াবাড়ী, কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী, শৈইলমারী, নোহালী, চর বৈরাতি, আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা, পলাশী ও সদর উপজেলার ফলিমারীর চর খুনিয়াগাছ, রাজপুর, গোকুÐা ইউনিয়নের তিস্তা নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলে বন্যা দেখা দিয়েছে। তিস্তার পানি কমতে থাকায় ভোগান্তিতে পড়েছে তিস্তা পারের মানুষ। গড্ডিমারি ইউনিয়নের নিজ গড্ডিমারী গ্রামের ইউপি সদস্য জাকির হোসেন বলেন, প্রায় ২০ দিন পর আবারও তিস্তার পানি বাড়ছে। এতে তিস্তা পারের নিম্ন এলাকায় পানি প্রবেশ করেছে। চলাচলের ভোগান্তি সৃষ্টি হয়েছে।
হাতীবান্ধার সিন্দুর্না ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আরিফুল ইসলাম আরিফ বলেন,তিস্তার পানি বৃদ্ধিতে অত্র ইউনিয়নের তিস্তা পারে মানুষের চলাচলের ভোগান্তি সৃষ্টি হয়েছে। তিস্তা পরের লোকজনের সার্বক্ষণিক খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীল কুমার বলেন, পানি বিপদসীমার উপরে প্রবাহিত হচ্ছে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টি না হলে এবং উজান থেকে পানির চাপ কমে গেলে তিস্তার পানি কমে আসবে। ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আসফাউদ্দৌলা জানান, তিস্তার পানি বিপদসীমার ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তাই দেশের সর্ববৃহৎ সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি গেট খুলে পানিপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
মেসির সঙ্গে প্রেমের গুঞ্জন উড়িয়ে দিলেন সেই সাংবাদিক
দেশের মানুষ হাসিনার ফাঁসি চায় :ভোলায় সারজিস আলম
জীবনযাত্রা ব্যয় আরো বাড়তে পারে
সাবেক ওসি শাহ আলমকে ধরতে সারা দেশে রেড অ্যালার্ট
মনে হচ্ছে পারমাণবিক বোমা ফেলা হয়েছে লস অ্যাঞ্জেলেসে
খালেদা জিয়ার চিকিৎসা ভালোভাবেই হচ্ছে
চাল ও মুরগির বাজার অস্থিতিশীল
সামরিক খাতে বাংলাদেশকে সহায়তা করতে চায় তুরস্ক
মানুষ জবাই করা আর হাত-পা ভেঙে দেয়ার নাম তাবলিগ নয় :জুমার খুৎবা-পূর্ব বয়ান
মুজিব কোট এখন ‘বাচ্চাদের পটি’
সীমান্তে প্রতিরোধ ব্যূহ
গণঅভ্যুত্থানে শহীদ আরও ৬ জনের লাশ ঢামেক মর্গে
মালয়েশিয়ায় এনআইডি ও স্মার্ট কার্ড সেবা কার্যক্রম চালু হচ্ছে
সাংবাদিক মিজানুর রহমান খানের চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকী আজ শনিবার
ক্র্যাবের সভাপতি তমাল, সাধারণ সম্পাদক বাদশাহ্
মুকসুদপুরে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বিএনপির দু’গ্রুপে সংঘর্ষ : আহত ২৫
ভারতকে গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক সহযোগী মনে করে তালেবান
মাইনাস টু ফর্মুলার আশা কখনো পূরণ হবে না : আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী
গাজীপুর কারাগারে শ্রমিক লীগ নেতার মৃত্যু
ট্রাম্পের শপথ অনুষ্ঠানে শীর্ষ পর্যায়ের দূত পাঠাবে চীন