ভারত থেকে অপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি নিষিদ্ধে আইনি নোটিশ

Daily Inqilab অনলাইন ডেস্ক

২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৪:২৮ পিএম | আপডেট: ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৪:২৮ পিএম

 

ভারত থেকে অপ্রয়োজনীয় সব পণ্য আমদানি নিষিদ্ধ করতে আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে। রোববার (২৯ ডিসেম্বর) রেজিস্ট্রি ডাকযোগে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. মাহমুদুল হাসান এ নোটিশ পাঠান।

 

 

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান, আমদানি ও রপ্তানি প্রধান নিয়ন্ত্রকের দপ্তরের প্রধান নিয়ন্ত্রককে নোটিশটি পাঠানো হয়েছে।

 

 

নোটিশে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিকভাবে পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে বিশ্বের সব দেশ অর্থনীতির নীতি ‘তুলনামূলক সুবিধা’ নীতি অনুসরণ করে থাকে। আন্তর্জাতিকভাবে আমদানির ক্ষেত্রে ‘তুলনামূলক সুবিধা’ বলতে এমন একটি অর্থনৈতিক নীতি বোঝায়, যেখানে একটি দেশ সেই সব পণ্য বা সেবা আমদানি করে, যেগুলো দেশীয়ভাবে উৎপাদন করা সম্ভব হলেও তা তুলনামূলকভাবে বেশি ব্যয়ে উৎপাদিত হয়। এই নীতির মাধ্যমে দেশটি নিজের সম্পদ ও দক্ষতা সেসব খাতে কেন্দ্রীভূত করে, যেখানে তার তুলনামূলক সুবিধা রয়েছে। ফলে দেশটি কম খরচে উচ্চ মানসম্পন্ন পণ্য আমদানি করতে পারে এবং বাণিজ্যের মাধ্যমে আর্থিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটায়।

 

 

উদাহরণ স্বরূপ, ইউরোপ ও আমেরিকার দেশগুলো বাংলাদেশ থেকে গার্মেন্টস পণ্য আমদানি করে থাকে। এক্ষেত্রে ইউরোপ ও আমেরিকার দেশগুলো ‘তুলনামূলক সুবিধা’ নীতি অনুসরণ করে থাকে। ইউরোপ ও আমেরিকার দেশগুলো যদি তাদের দেশে গার্মেন্টস পণ্য উৎপাদন করতে চায় তাহলে তাদের খরচ অনেক বেশি পড়বে। এজন্য বাংলাদেশ থেকে কম দামে গার্মেন্টস পণ্য আমদানি করা তাদের জন্য অধিক লাভজনক।

 

 

কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয় এই যে, ভারত থেকে পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে এই আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের আমদানির নীতি ‘তুলনামূলক সুবিধা’ অনুসরণ করা হচ্ছে না। বাংলাদেশ ভারত থেকে কিছু প্রয়োজনীয় পণ্য আমদানির পাশাপাশি ব্যাপক পরিমাণ অপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি করে থাকে।

 

 

এছাড়া আরও একটি বিষয় এই যে, বাংলাদেশের যে সব আমদানিকারকরা ভারতীয় পণ্য আমদানি করেন তারা অধিকাংশই প্রকৃত আমদানিকারক নন । তারা মূলত ভারতীয় রপ্তানিকারকদের দালাল। এই দালাল আমদানিকারকরা ভারতীয় রপ্তানিকারকদের নির্দেশে কম দামে মালামাল আমদানি করে সেগুলো বাংলাদেশে উচ্চমূল্যে বিক্রি করে। এ আমদানির মূল্য হুন্ডি করে ভারতীয়দের কাছে পাঠিয়ে দেয় এবং বিনিময়ে কিছু কমিশন পান। এর ফলে দেখা যায়, বিভিন্ন সময় গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয় যে, কোনো কোনো পণ্য খুব কম দামে ভারত থেকে আমদানি হয়েছে, কিন্তু বাজারে গিয়ে ক্রেতারা দেখতে পায় পণ্যের দাম কোনোভাবেই কমেনি। অন্যদিকে সরকার জনগণের দুর্দশা লাঘবে ভারত থেকে বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে শুল্ক ছাড় দেয় কিন্তু এতেও বাজারে কোনো প্রভাব পড়েনা। তবে এর ফলে ভারতীয় রপ্তানিকারকদের ও তাদের বাংলাদেশি দালাল আমদানিকারকদের লাভ হয়। কারণ তারা কম খরচে বাংলাদেশে পণ্য আমদানি করে বেশী দামে বিক্রি করে থাকে।

 

 

মূলত ভারতীয় রপ্তানিকারকরা তাদের ব্যাবসায়িক অপকৌশলের অংশ হিসেবে বাংলাদেশে দালাল আমদানিকারকদের ব্যবহার করে থাকে। এর ফলে সব অপ্রয়োজনীয় পণ্য বাংলাদেশের বাজারে ছেড়ে দেয়।

 

 

ভারতীয় রপ্তানিকারকদের এই অপকৌশলের ফলে বাংলাদেশ কয়েকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, প্রথমত কমদামে পণ্য আমদানি হলেও বাংলাদেশের বাজারে সেগুলো উচ্চমূল্যে বিক্রি হয়। দ্বিতীয়ত আমদানি মূল্য কম দেখানোর কারণে সরকার কম শুল্ক পায় । তৃতীয়ত আমদানি করা পণ্য বেশি দামে বিক্রি করে দালালরা লাভের অংশ হুন্ডি করে ভারতীয়দের কাছে পাঠিয়ে দেয় ফলে মানিলন্ডারিং হয়। চতুর্থত, ভারতীয় রপ্তানিকারকরা তাদের মাধ্যমে সব অপ্রয়োজনীয় পণ্য বাংলাদেশের বাজারে ছেড়ে দেয় এর ফলে বাংলাদেশের স্থানীয় শিল্পকারখানা ব্যাপকভাবে আর্থিক ক্ষতির শিকার হয় এবং বাংলাদেশের ক্ষুদ্রশিল্প ভালোভাবে গড়ে উঠতে পারে না। পঞ্চমত, অপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানিতে দেশের মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রার অপচয় হয়।

নোটিশ পাওয়ার ৭ (সাত) দিনের মধ্যে ভারত থেকে সব অপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি নিষিদ্ধ করতে এবং যে সমস্ত বাংলাদেশি দালালরা পণ্য আমদানি করেন এবং হুন্ডি বা মানি লন্ডারিংয়ের মাধ্যমে লাভের টাকা পাঠান, তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানানো হয়েছে। অন্যথায় এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে হাইকোর্টে রিট পিটিশন দায়ের করা হবে বলে জানান আইনজীবী।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

আগস্টের পর বাংলাদেশ থেকে হিন্দুরা নয়, মুসলিমরাই বেশি ভারতে গেছেন

আগস্টের পর বাংলাদেশ থেকে হিন্দুরা নয়, মুসলিমরাই বেশি ভারতে গেছেন

নেচে-গেয়ে শুরু হলো তারকাদের নতুন বছর

নেচে-গেয়ে শুরু হলো তারকাদের নতুন বছর

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বহিষ্কৃত সহ-সমন্বয়ক গ্রেফতার

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বহিষ্কৃত সহ-সমন্বয়ক গ্রেফতার

এবার জিম্বাবুয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে বাতিল করল মৃত্যুদণ্ড

এবার জিম্বাবুয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে বাতিল করল মৃত্যুদণ্ড

বছরের প্রথম দিনেও ঢাকার বায়ু  ‘খুবই অস্বাস্থ্যকর’

বছরের প্রথম দিনেও ঢাকার বায়ু  ‘খুবই অস্বাস্থ্যকর’

হবিগঞ্জে গ্যাস লাইনে বিস্ফোরণে চাঁদপুরে মামা ভাগিনার বাড়িতে শোকের মাতম

হবিগঞ্জে গ্যাস লাইনে বিস্ফোরণে চাঁদপুরে মামা ভাগিনার বাড়িতে শোকের মাতম

ফিলিস্তিনে ইসরাইলি বর্বরতায় নিহত প্রায় ১৩ হাজার শিক্ষার্থী

ফিলিস্তিনে ইসরাইলি বর্বরতায় নিহত প্রায় ১৩ হাজার শিক্ষার্থী

ভার্জিনিয়ায় এফবিআই-এর অভিযানে ইতিহাসের বৃহত্তম বিস্ফোরক জব্দ

ভার্জিনিয়ায় এফবিআই-এর অভিযানে ইতিহাসের বৃহত্তম বিস্ফোরক জব্দ

ছাত্র জনতার জীবন দিয়ে অর্জিত সাফল্যকে হাইজ্যাক করার চেষ্টা হচ্ছে- মামুনুল হক

ছাত্র জনতার জীবন দিয়ে অর্জিত সাফল্যকে হাইজ্যাক করার চেষ্টা হচ্ছে- মামুনুল হক

নরসিংদীতে ছাত্রদল কর্মী হুমায়ুন হত্যা মামলার প্রধান আসামি অস্ত্রসহ সেনাবাহিনীর হাতে আটক

নরসিংদীতে ছাত্রদল কর্মী হুমায়ুন হত্যা মামলার প্রধান আসামি অস্ত্রসহ সেনাবাহিনীর হাতে আটক

গাজার স্বাস্থ্যব্যবস্থা ধ্বংসের পথে: জাতিসংঘের প্রতিবেদন

গাজার স্বাস্থ্যব্যবস্থা ধ্বংসের পথে: জাতিসংঘের প্রতিবেদন

গাজায় শীতকালীন বিপর্যয়ের মধ্যে ইসরায়েলি হামলায় গত ২৪ ঘন্টায় নিহত ৭ ফিলিস্তিনি

গাজায় শীতকালীন বিপর্যয়ের মধ্যে ইসরায়েলি হামলায় গত ২৪ ঘন্টায় নিহত ৭ ফিলিস্তিনি

জ্বলন্ত ফানুস পড়ে মিরপুর-ধানমন্ডিতে আগুন

জ্বলন্ত ফানুস পড়ে মিরপুর-ধানমন্ডিতে আগুন

অপকর্মের হোতা পুলিশ কর্তারা এখনও বহাল

অপকর্মের হোতা পুলিশ কর্তারা এখনও বহাল

দুই সচিবের চুক্তিতে নিয়োগ পাওয়ার সম্ভবনা

দুই সচিবের চুক্তিতে নিয়োগ পাওয়ার সম্ভবনা

হঠাৎ বেপরোয়া ছিনতাইকারী চক্র

হঠাৎ বেপরোয়া ছিনতাইকারী চক্র

ট্রাম্পের পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান রাশিয়ার

ট্রাম্পের পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান রাশিয়ার

দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি

দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি

ইসরাইলি হামলায় গাজায় আরও ২৭ ফিলিস্তিনি নিহত

ইসরাইলি হামলায় গাজায় আরও ২৭ ফিলিস্তিনি নিহত

প্রথম সরকারি সফরে সউদী যাচ্ছেন সিরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী

প্রথম সরকারি সফরে সউদী যাচ্ছেন সিরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী