কৃপণতা, অপচয় ও মধ্যমপন্থা

Daily Inqilab জাফর আহমাদ

২৪ মে ২০২৩, ০৯:৩৭ পিএম | আপডেট: ২৫ মে ২০২৩, ১২:০৩ এএম

কৃপণতা বা ব্যয়কুন্ঠতা : আল্লাহ তা’আলা বলেন,“যারা আল্লাহর দেয়া ধন-সম্পদের বেলায় কৃপণতা প্রদর্শন করে তারা যেন এ ভুলের মধ্যে নিমজ্জিত না থাকে যে, তা তাদের জন্য কল্যাণকর বরং তা তাদের জন্য অকল্যাণকর। যে সম্পদের বেলায় তারা কৃপণতা প্রদর্শন করেছে সে সম্পদ কিয়ামতের দিন তাদের গলায় হার রূপে পরিয়ে দেয়া হবে।”(আল ইমরান ঃ ১৮০)
আরবী ভাষার ‘বখিল’ অর্থ কৃপণ। বোখল অর্থ কৃপণতা, ব্যয়কুন্ঠতা বা অর্থ ব্যয়ে কাতরতা। আবহমানকাল ধরে আমাদের সমাজে আরবী ‘বখিল’ শব্দটি বহুল প্রচলিত। যার দরুন বাংলা ক্রিয়ারূপের মতো ‘বখিলতা’ ব্যবহার করে থাকে। বোখল বা কার্পণ্যের শরীয়ত নির্ধারিত অর্থ হল-‘যা আল্লাহর রাহে ব্যয় করা কারো ওপর ওয়াজিব, তা না করা।’ এ কারনেই কার্পণ্য বা বোখল হারাম এবং আল কুরআনে জাহান্নামের ভীতি প্রদর্শন করা হয়েছে। যে সব ব্যয় ওয়াজিবের আওতাভুক্ত নয়, সে সব ক্ষেত্রে কার্পণ্য করা হারামের অন্তর্ভুক্ত নয়। অবশ্য সাধারণ অর্থে তাকেও কার্পণ্য বলা হয়ে থাকে। এ ধরনের কার্পণ্য বা বোখল হারাম নয় তবুও এটি উত্তমের পরিপন্থী এক অভ্যাস।

‘কৃপণতা একটি সামাজিক অপরাধ। বোখল বা কার্পণ্য অর্থেই আরও একটি শব্দ কুরআন ও হাদীসে ব্যবহৃত হয়েছে। তা হলো ‘শুহ্’। এর আভিধানিক অর্থ হলো: কৃপণ হওয়া, কমে যাওয়া, লোভ করা ইত্যাদি। এ শব্দটি যখন নাফসুন শব্দের সাথে সম্বন্ধযুক্ত করে ‘শুহ্হান নাফস’ বলা হয় তখন তা দৃষ্টি ও মনের সংকীর্ণতা, পরশ্রীকাতরতা এবং মনের নীচতার সমার্থক হয়ে যায় যা বখিলী বা কৃপণতার চেয়েও ব্যাপক অর্থ বহণ করে। এ বৈশিষ্টের অধিকারী ব্যক্তি অন্যের অধিকার স্বীকার করে না। সে চায় দুনিয়ার সবকিছু সে-ই লাভ করুক। অন্য কেউ যাতে কিছু না পায়। নিজে তো দান করেই না বরং সে অন্যের দান করাটাও পছন্দ বা সহ্য করতে পারে না। তার লালসার দৃষ্টি নিজ সম্পদের বাইরে অন্যের সম্পদের ওপর গিয়েও পড়ে। সে চায় চারদিকে যত ভাল বস্তু আছে তা সে দুহাতে লুটে নিবে অন্যরা কিছু পাবে না।

এ কারনেই রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ“ শুহ্ বা কৃপণতা থেকে নিজেকে রক্ষা করো। কারণ এটিই তোমাদের পূর্বের লোকদের ধ্বংস করেছে। এটিই তাদেরকে রক্তপাত ঘটাতে এবং অপরের মর্যাদাহানি নিজের জন্য বৈধ করতে প্ররোচিত করেছে। এটিই তাদের জুলুম করতে উদ্বুদ্ধ করেছে তাই তারা জুলুম করেছে। পাপের নির্দেশ দিয়েছে তাই পাপ করেছে এবং আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করতে বলেছে তা তারা আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করেছে। (বুখারী, মুসলিম, নাসাঈ, আহমাদ) আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ“ যারা শুহ্ বা মনের সংকীর্ণতা, কার্পণ্য থেকে মুক্ত থেকেছে, তারাই সফলকাম হয়েছে।”(তাগাবুন ঃ ১৬)

কৃপনতা একটি সামাজিক ব্যাধিও বটে। এটি সামাজিক ভ্রাতৃত্ববোধ, প্রেম-প্রীতি ও ভালবাসার বন্ধন ছিন্ন করে। একটি সুস্থ সমাজের মৌলিক বৈশিষ্ট্য হলো ভ্রাতৃত্ববোধ। এটি ছাড়া কখনো একটি সুস্থ্য-সুশীল সমাজ গঠিত হতে পারেনা। একটি সুস্থ সমাজের মেীলিক বৈশিষ্ট্য হলো ভ্রার্তৃত্ববোধ। এটি ছাড়া কখনো একটি সুস্থ্য-সুশীল সমাজ গঠিত হতে পারেনা।

কৃপণতার শাস্তি সম্পর্কে কঠোর হুশিয়ারী প্রদান করা হয়েছে। আল-কুরআনের একাধিক আয়াতে এটিকে অকল্যাণকর বলে অভিহিত করা হয়েছে এবং কুরআনে কৃপণ ব্যক্তিকে কষ্টদায়ক শাস্তি প্রদানের কথা বলা হয়েছে। “যারা স্বর্ণ-রোপ্য জমা করে রাখে এবং আল্লাহর পথে ব্যয় করে না। তাদেরকে কষ্টদায়ক শাস্তির সংবাদ দাও।”(সুরা তওবাঃ ৩৪) এ আয়াতে এটি একটি অকল্যাণকর ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ “কৃপণ ব্যক্তি জান্নাত হতে দুরে,আল্লাহ হতে দুরে, কিন্তু জাহান্নামের নিকটবর্তী।”(তিরমিযি)

যারা অর্থগৃধু ও অর্থলোলুপ মুলত তারাই হাড়কৃপণ হয়। সম্পদের পুজা করতে করতে এক পর্যায়ে তার মধ্যে মানবিক প্রেম-প্রীতি, ভ্রাতৃত্ব ও সহানুভুতি কোন কিছুই আর থাকে না। এমনকি তার নিজের লোককেও চরম বিপদের সময়ে দান করতে সে কুন্ঠাবোধ করে।

সমাজে যারা কৃপণ তারাই সাধারণত কায়েমী স্বার্থবাদী হয়ে থাকে। সমাজের মানুষকে শোষণ করতে করতে এরা সম্পদের পাহাড় জমা করে। একদিকে শোষণের ধারাকে অব্যাহত রাখা এবং অন্যদিকে সম্পদের পাহাড়কে ধরে রাখার জন্য এরা কায়েমী স্বার্থবাদীর ভ’মিকায় অবতীর্ণ হয়। সম্পদের লোভে এতটাই অন্ধ হয় যে কোন পরিবর্তনের এরা বিরুদ্বিতা করে থাকে। এ জন্য যুগে যুগে কালে কালে আম্বিয়ায়ে কেরাম কর্তৃক পরিচালিত ইসলামী আন্দোলন যে সকল ব্যক্তি ও গোষ্ঠির চরম বিরুধীতার সম্মুখীন হতে হয়েছে, তাদের অন্যতম হলো কায়েমী স্বার্থবাদী। তারা কখনোই ইসলামী আন্দোলনকে সহ্য করতে পারিনি। কৃপণতা এমন ধরনের কায়েমী স্বার্থবাদী সৃষ্টি করে থাকে যার ফলে এরা অবশেষে ইসলামের দুষমনে পরিণত হয়।

ইসলামী সমাজ ব্যবস্থায় সম্পদের সুষম বন্টন এবং সামাজিক ও অর্থনৈতিক ভারসাম্যের পরিবেশ সৃষ্টি হবে। যাকাত হবে এ সমাজে বিরাজমান ব্যাপক পার্থক্য হ্রাসের একটি কার্যকরী প্রতিষ্ঠান এ ছাড়াও অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর করার জন্য ইসলামী রাষ্ট্রের হাতে রয়েছে শরীয়ত সম্মত আরো কয়েকটি (ঞড়ড়ষং)-যেমন:- সাদাকা, মেরাস, ওশর, খারাজ ও জিজিয়া ইত্যাদি। কৃপণেরা এর একটিকেও স্বীকার করে না। কৃপণ ব্যক্তিদের দ্বারা গঠিত সমাজ ব্যবস্থায় যাকাত নামক মৌলিক ইবাদতের কোন মূল্য থাকে না। ফলে সমাজ ব্যবস্থায় সম্পদের সুষম বন্টন ব্যাহত হয় এবং সামাজিক ও অর্থনৈতিক ভারসাম্য হুমকির সম্মুখীন হয়। অথচ আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সমাজে বিরাজমান ব্যাপক পার্থক্য হ্রাসের জন্যই যাকাত ফরয করেছেন। আল্লাহ তায়ালা বলেছেনঃ“তাদের ধন-সম্পদে প্রার্থী ও বঞ্চিতদের অধিকার রয়েছে।” (সুরা আল জারিয়াহ্-১৯) কিন্তু কৃপণ ব্যক্তিদের কাছে এর কোনটিরই মুল্য নেই। ফলে সমাজ ব্যবস্থায় ধনী ও গরীবের মধ্যে পাহাড় সম বৈষম্য সৃষ্টি হয় । এবং সম্পদ গুটি কয়েক কৃপণ ব্যক্তি বা পরিবারের হাতে কুক্ষিগত হয়। ফলে জাতীয় উন্নয়ন মুখ থুবড়ে পড়ে।

সুদ কৃপণ শ্রেণী গোষ্ঠীদের শোষণের প্রধান হাতিয়ার। যারা সুদখোর তারাই কৃপণ আবার যারা কৃপণ তারাই সুদখোর। কৃপণ ও সুদখোর পরস্পরের পরিপূরক। কৃপণেরা যেমন টাকা আর সম্পদের লোভে পাগল ও মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তিতে পরিণত হয়, অনুরূপভাবে সুদখোরও টাকার পিছনে পাগলের মতো ছুটে ভারসাম্যহীন ব্যক্তিতে পরিণত হয়। এদের উভয়েরই স্বার্থপরতার মাত্রা এতটুকু বৃদ্ধি পায় যে, সে তখন পৃথিবীর কোন কিছুই পরোয়া করে না। তাদের সুদখোরীর কারণে এক পর্যায়ে মানবিক প্রেম-প্রীতি, ভ্রাতৃত্ব ও সহানুভুতির মাত্রা শূন্যের কোটায় নেমে আসে। এমনকি তার নিজের লোককেও চরম বিপদের সময়ে বিনা সুদে ধার দিতে কুন্ঠাবোধ করে। সুদ তাকে এতটুকু অন্ধ করে তুলে যে, জাতীয় সামষ্টিক কল্যাণের ওপর কোন ধ্বংসকর প্রভাব পড়লো এবং কতলোক দুরবস্থার স্বীকার হলো এসব বিষয়ে তাদের কোন মাথা ব্যথাই থাকে না। দুনিয়াতে তার এই পাগলপারা অবস্থা। আর যেহেতু মানুষকে আখেরাতে সেই অবস্থায় ওঠানো হবে যে অবস্থায় সে মৃত্যুবরণ করেছে। তাই কিয়ামতের দিন সুদখোর ব্যক্তি একজন পাগল ও বুদ্বিভ্রষ্ট লোকের চেহারায় আত্মপ্রকাশ করবে। সুদের মাধ্যমে সমাজের নিম্ন আয়ের লোকদের অবশিষ্ট সামান্য সম্পদটুকুও চুম্বকের ন্যায় চুষে নেয়। ফলে ধনী ও গরীবের মধ্যে পাহাড় সম বৈষম্য সৃষ্টি হয়। এরাই সমাজে শ্রেনী সংগ্রামের মূলহোতা।

মুমিন কখনো কৃপণ হতে পারে না। মুমিন অবশ্যই ঔদার্য মনের অধিকারী হবে। কারণ সংকীর্ণতা বা কৃপণতা হলো ইহুদীদের বৈশিষ্ট্য। হযরত আবু সাইদ খুদরী (রাঃ) বর্ণনা করেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ “ দুটি স্বভাব এমন যা কোন মুসলমানের মধ্যে থাকতে পারে না। অর্থাৎ কৃপণতা ও দুশ্চরিত্রতা। (তিরমিযি ও আবু দাউদ) আবু হোরায়রা (রাঃ) বর্ণনা করেছেন। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ“ কৃপণতা এবং ঈমান কোন মুসলমানের অন্তরে একত্রে অবস্থান করতে পারে না।”(নাসায়ী)) আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ “তোমরা কিছুতেই কল্যাণ লাভ করতে পারবে না, যতোক্ষণ না নিজেদের প্রিয় বন্তু দান করবে।” (আলে ইমরান ঃ ৯২) আল্লাহ তায়ালা আরো বলেনঃ “দান কর। এতে তোমাদের নিজেদের জন্যেই কল্যাণ রয়েছে। যারা মনের সংকীর্ণতা বা কার্পণ্য থেকে মুক্ত থেকেছে , তারাই সফলকাম হয়েছে।”(তাগাবুন ঃ ১৬) “ঈমানদার পুরুষ এবং ঈমানদার স্ত্রীলোকেরাই প্রকৃতপক্ষে পরস্পর পরস্পরের দায়িত্বশীল বা সাহায্যকারী বন্ধু । এদের পরিচয় এবং বৈশিষ্ট্য এই যে, এরা নেক কাজের আদেশ দেয়, অন্যায় কাজ থেকে বিরত রাখে, নামায কায়েম করে এবং যাকাত আদায় করে, আল্লাহ ও রাসুলের বিধান মেনে চলে। প্রকৃতপক্ষে এদের প্রতিই আল্লাহ রহমত বর্ষণ করেন।” (সুরা-তাওবা-৭১) সুতরাং এ দায়িত্বজ্ঞান সম্পন্ন ব্যাক্তি বা গোষ্ঠী কখনো ভারসাম্যহীন জাতিতে পরিণত হতে পারে না। এ ছাড়াও আরো অনেক আয়াত ও হাদীসে দানের নির্দেশনা রয়েছে এবং কৃপণতার কঠিণ শাস্তির বিধান বর্ণিত হয়েছে।

অপচয় বা মাত্রাতিরিক্ত ব্যয়: অপচয় বা মাত্রাতিরিক্ত ব্যয় হলো, ব্যয়কুণ্ঠতা বা কৃপণতার বিপরীতধর্মী বিষয়। কৃপণতার পাশাপাশি ইসলাম অপচয় বা মাত্রাতিরিক্ত ব্যয়কেও অপরাধ হিসাবে চিহ্নিত করেছে। অপচয়কারীকে শয়তানের ভাই হিসাবে সম্বন্ধযুক্ত করা হয়েছে। আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ “আর সীমা অতিক্রম করো না। কারণ সীমা অতিক্রমকারীদেরকে আল্লাহ পছন্দ করেন না। (সুরা আনয়াম ঃ ১৪১) “অপব্যয় করো না। অপব্যয়কারী শয়তানের ভাই, আর শয়তান হচ্ছে তার প্রভুর প্রতি অকৃতজ্ঞ।”(সুরা বণী ইসরাঈলঃ২৬-২৭) ইসলামী সমাজ ও রাষ্ট্রের নৈতিক, তামাদ্দুনিক, অর্থনৈতিক ও আইনগত ১৪টি মূলনীতি যা সুরা বণী ইসরাঈলে বর্ণিত হয়েছে, এটি হলো, তার একটি গুরুত্বপূর্ণ মুলনীতি। এই মুলনীতিটি যদি কোন সমাজ বা রাষ্ট্রে না মানা হয় তবে সেই সমাজ ও রাষ্ট্রে বিকৃতি দেখা দিবে এবং আর্থ সামাজিক অবস্থায় ভারসাম্যহীনতার সৃষ্টি হবে।

অপচয়ও কৃপণতার মতো একটি সামাজিক অপরাধ। সমাজে এমন কিছু মানবিক মূল্যবোধ বিবর্জিত লোক দেখা যাবে, যারা কৃপণ এবং দানশীল কোনটিই নয়। তবে বেহুদা কাজে টাকা পয়সা ঠিকই খরচ করে থাকে। যাকাত ও ইসলামের অন্যান্য দানের প্রতি তারা ভ্রুক্ষেপই করে না। বিভিন্ন পার্টি ও আয়োজনে লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে থাকে। খ্যাতি,সুনাম অথবা আবেগের বশবর্তি হয়ে ক্লাব, নাটক বা অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে লক্ষ লক্ষ টাকা ডোনেশন প্রদান করেন। কিন্তু খোঁজ নিয়ে দেখা যাবে যে নিজের মিল- ইন্ডাষ্ট্রির স্বল্পভেতনভোগী সাধারণ শ্রমিকটির বেতন মাসের পর মাস বাকি পড়ে আছে। তার বিবেকের কঠিণ দরজায় ছোট্র এ শ্রমিকটির করূণ কষ্টের যাতনা কড়া নাড়তে পারে না। এটি কৃপণতার জন্য নয়। বরং এটি একটি বদ অভ্যাস। এ ধরনের আচরণ ইসলামে গ্রহণ যোগ্য নয়। কারণ শ্রমিকের গা-এর ঘাম শুকানোর আগেই মজুরী পরিশোধের তাগিদ দিয়েছেন মানবতার বন্ধু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। তাছাড়া এদের কঠিণ হৃদয়ের কাছে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আরেকটি বাণী উপস্থাপন করছি। রাসুলুলাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন ঃ “তোমাদের চাকর-চাকরাণী ও দাস-দাসীরা প্রকৃতপক্ষে তোমাদের ভাই। তাদেরকে আলাহ তায়ালা তোমাদের অধীনস্ত করেছেন। সুতরাং আল্লাহ যার ভাইকে তার অধীন করে দিয়েছেন সে তার ভাইকে যেনো তাই খাওয়ায় যা সে নিজে খায়, তাকে পরিধান করায় যা সে নিজে পরিধান করে। আর তার সাধ্যের বাইরে কেনো কাজ যেনো তার ওপর না চাপায়। একান্ত যদি চাপান হয়, তবে তা সমাধানের ব্যাপারে তাকে সাহায্য করা উচিৎ।”(বুখারী-মুসলিম)

নিজেদের ছেলে-মেয়েদের পেছনে কোটি কোটি টাকা প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে খরচ করে অথচ ঘরের মধ্যে যেই কাজের লোকটি বাস করে তার প্রতি অবহেলা করা হয়। যেই মজাদার খাদ্য সে নিজের হাতে তৈয়ার করল সেটির সামান্যও তার ভাগ্যে জোটে না। বরং খাদ্যের উচ্ছিষ্টগুলো তাদের জন্য রেখে দেয়া হয়। ব্যবহারের জন্য পুরাতন কাপড়-চোপর দেয়া হয়। রাতে ঘুমাবার জন্য ছোট্র একটি পাকঘরের মেঝে গরম-শীতকে উপেক্ষা করে তাদেরকে বসবাস করতে হয়। মানবতার লাঞ্চনা আর বঞ্চনা এর চেয়ে বেশী আর কি হতে পারে ? অথচ মানবতার মহান বন্ধু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন ঃ “তোমাদের কোন ভৃত্য যদি তোমাদের জন্য খাদ্য প্রস্তুত করে নিয়ে আসে তখন তাকে হাতে ধরে নিজের সঙ্গে খেতে বসাও, সে যদি বসতে না চায় তবু দুই/এক মুঠি খাদ্য অন্ততঃ তাকে অবশ্যই খেতে দিবে। কারণ সে আগুণের উত্তাপ ও ধুম্র এবং খাদ্য প্রস্তুত করার কষ্ট সহ্য করেছে।(তিরমিযি)

মধ্যমপন্থা বা ভারসাম্যতা: এই দুই প্রান্তিক চরিত্রের মাঝামাঝি ইসলাম মধ্যমপন্থা অবলম্বনের জন্য জোর তাগিদ প্রদান করেছে। একটি ভারসাম্যপুর্ণ জাতির নেতা হিসাবে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাঁর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে এ ধরনের নির্দেশই দিয়েছেন। আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ “তোমার হাত গলার সাথে বেঁধে রেখো না, (অর্থাৎ ব্যয়ের বেলায় কৃপণ হয়ো না) আর একেবারে খোলা ছেড়েও দিও না (অর্থাৎ নিজের সব কিছু উজাড় করে দিয়ে খালি হাতে বসে থেকো না)-অন্যথায় তুমি তিরস্কৃত ও অক্ষম হয়ে যাবে।”(সুরা বণী ইসরাঈল ঃ ২৯) এর অর্থ হলো লোকদের মধ্যে এতটুকু ভারসাম্য থাকতে হবে যাতে তারা কৃপণ হয়ে অর্থের আবর্তন রুখে না দেয় এবং অপব্যয়ী হয়ে নিজের অর্থনৈতিক শক্তি ধ্বংস না করে ফেলে। (চলবে)

লেখক : ম্যানেজার, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লি:, জিন্দাবাজার শাখা, সিলেট।


বিভাগ : ধর্ম দর্শন


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

বড়দিনের ধর্মীয় ইতিহাস ও তাৎপর্য
ইসলামি অর্থনীতির স্বরূপইসলামি অর্থনীতির স্বরূপ
হাজারো পীর-আউলিয়ার শিরোভূষণ সৈয়দ সুফি ফতেহ আলী ওয়াইসি (র.)
আল-কুরআন তাজকেরায়ে মীলাদ নামায়ে আম্বিয়া (আ:)
ঘুষ : দেয়া-নেয়া দুটিই অপরাধ
আরও

আরও পড়ুন

রোমাঞ্চকর ম্যাচে বার্সাকে হারিয়ে শীর্ষে আতলেটিকো

রোমাঞ্চকর ম্যাচে বার্সাকে হারিয়ে শীর্ষে আতলেটিকো

জেসুসের জোড়া গোলের রাতে আর্সেনালের বড় জয়

জেসুসের জোড়া গোলের রাতে আর্সেনালের বড় জয়

বিলুপ্তির পথে মাটির ঘর

বিলুপ্তির পথে মাটির ঘর

চোর সন্দেহে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ

চোর সন্দেহে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ

প্রতিবন্ধী স্কুল শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের অভিযোগ

প্রতিবন্ধী স্কুল শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের অভিযোগ

কেরু চিনিকলে আখ মাড়াই মৌসুমের উদ্বোধন

কেরু চিনিকলে আখ মাড়াই মৌসুমের উদ্বোধন

বিহারিরা কেমন আছে

বিহারিরা কেমন আছে

লক্ষ্মীপুরে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি

লক্ষ্মীপুরে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি

আসাদ সরকারের পতন : নতুন সিরিয়ায় ইসরাইলি আগ্রাসন

আসাদ সরকারের পতন : নতুন সিরিয়ায় ইসরাইলি আগ্রাসন

মেটলাইফ বাংলাদেশের গ্রাহকরা ডিসকাউন্ট পাবেন ওশান প্যারাডাইস হোটেলস ও রিসোর্টে

মেটলাইফ বাংলাদেশের গ্রাহকরা ডিসকাউন্ট পাবেন ওশান প্যারাডাইস হোটেলস ও রিসোর্টে

১৫ নারী ও শিশুকে হস্তান্তর

১৫ নারী ও শিশুকে হস্তান্তর

আবাসন ও গার্মেন্ট খাতের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে

আবাসন ও গার্মেন্ট খাতের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে

মেহেরপুরে বেড়েছে গরম কাপড় বিক্রি

মেহেরপুরে বেড়েছে গরম কাপড় বিক্রি

কাশিয়ানীর হাট-বাজার নিষিদ্ধ পলিথিনে সয়লাব

কাশিয়ানীর হাট-বাজার নিষিদ্ধ পলিথিনে সয়লাব

অ্যানুয়াল বিজনেস কন্টিনিউয়িটি প্ল্যান ড্রিল ২০২৪ আয়োজন করলো ব্র্যাক ব্যাংক

অ্যানুয়াল বিজনেস কন্টিনিউয়িটি প্ল্যান ড্রিল ২০২৪ আয়োজন করলো ব্র্যাক ব্যাংক

সমস্যায় জর্জরিত আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

সমস্যায় জর্জরিত আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

সবুজ গালিচায় হলুদের সমারোহ

সবুজ গালিচায় হলুদের সমারোহ

আখাউড়ায় ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের মেধা বৃত্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত

আখাউড়ায় ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের মেধা বৃত্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত

নিউ ইয়র্কের আদালতে অভিযুক্ত লুইজি

নিউ ইয়র্কের আদালতে অভিযুক্ত লুইজি

কিউবায় সমাবেশ

কিউবায় সমাবেশ