আবাসন ও গার্মেন্ট খাতের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে
২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০৩ এএম
দীর্ঘদিন ধরে দেশের অর্থনীতি অত্যন্ত নাজুক ও বিপর্যয়কর পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার শাসনামলে ব্যাংকে লুটপাট থেকে শুরু করে বিভিন্ন বড় প্রকল্পে এন্তার দুর্নীতি ও অর্থপাচারে অর্থনীতি ফোকলা হয়ে গেছে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পতন ও পলায়নের পর বিধ্বস্ত অর্থনীতি নিয়েই অন্তর্বর্তী সরকারকে যাত্রা শুরু করতে হয়েছে। অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে এই খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে সরকার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। দেশের অর্থনীতিতে এখনো সেভাবে গতি ফিরেনি। দেশের অর্থনীতির অন্যতম বড় আবাসন খাতে দীর্ঘদিন ধরেই মন্দাবস্থা চলছে। গতকাল দৈনিক ইনকিলাবের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, আবাসন খাতে ফ্ল্যাট-প্লট বেচা-কেনা অর্ধেকে নেমে গেছে। অথচ এ খাতে গড়ে ২ ট্রিলিয়ন ডলারের বেশি বিনিয়োগ রয়েছে। আশা করা হচ্ছে, ২০২৮ সালের মধ্যে এ খাতের বিনিয়োগ ৩ ট্রিলিয়ন ডলারের বেশি দাঁড়াবে। এক্ষেত্রে নানা বাঁধা হয়ে রয়েছে। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর অনেক ক্রেতা ফ্ল্যাট-প্লট কেনা নিয়ে দ্বিধা-দ্বন্দ্বের মধ্যে পড়েছে। তাদের মধ্যে অনিশ্চয়তা কাজ করছে। অর্থনৈতিক পরিস্থিতি কি দাঁড়াবে, এ শঙ্কায় কনফিডেন্স পাচ্ছে না। এছাড়া রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, উচ্চ নিবন্ধন ফি, নির্মাণসামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধি, ডিটেইল এরিয়া প্ল্যান সংশোধন না করাসহ বেশকিছু সমস্যার কারণে আবাসন খাতে মন্দাবস্থা সৃষ্টি করেছে। অর্থনৈতিক মন্দাবস্থার মধ্যে গার্মেন্ট খাতে শ্রমিক আন্দোলনের নামে বিশৃঙ্খলা, একের পর এক কারখানা বন্ধ, এ খাতকে নাজুক পরিস্থিতিতে ঠেলে দিয়েছে। গতকাল দৈনিক ইনকিলাবের আরেকটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজীপুরে বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের ১৬টি গার্মেন্ট কারখানা ৪৫ দিনের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এতে প্রায় ৪০ হাজার কর্মী বেকার হয়ে পড়েছে। অর্থনীতিতে এটা একটা বড় ধাক্কা হিসেবে কাজ করবে বলে অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন। তারা মনে করছেন, এতগুলো কারখানা হুট করে বন্ধ করে দেয়া কোনোভাবেই উচিৎ হয়নি।
বলার অপেক্ষা রাখে না, অর্থনীতির অন্যতম প্রধান দুই খাত আবাসন ও গার্মেন্টের মন্দাবস্থা খুবই শঙ্কার বিষয়। এই দুই খাতে লাখ লাখ শ্রমজীবী নিয়োজিত। এর সাথে ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ হিসেবে শত শত কারখানা গড়ে উঠেছে। সেখানেও হাজার হাজার কর্মী নিয়োজিত। আবাসন খাতে নির্মাণের সাথে রড, সিমেন্ট, ইট, বালুসহ ইন্টেরিয়র ডেকোরেশনের অনেক উৎপাদনশীল কারখানা জড়িয়ে আছে। এসব খাতে বিপুল অংকের অর্থ বিনিয়োগ রয়েছে। আবাসন খাতের যেসব সমস্যা চলছে, তার আশু সমাধান না হলে, খাতসহ সংশ্লিষ্ট সবকিছু পুরোপুরি স্থবির হয়ে পড়বে। শত শত কোটি টাকা বিনিয়োগ করে মাসের পর মাস ধরে তৈরি ফ্ল্যাট বিক্রি করতে না পেরে উদ্যোক্তারা হতাশ হয়ে পড়েছেন। তাদের বিনিয়োগকৃত অর্থ আটকে রয়েছে। এতে ব্যাংক ঋণের সুদের হার বৃদ্ধি এবং ঋণ পরিশোধ করতে গিয়ে তাদের নিদারুণ সমস্যার মধ্যে থাকতে হচ্ছে। নতুন করে উদ্যোগও নিতে পারছেন না। ফলে এ খাতের হাজার হাজার কর্মী বেকার হয়ে পড়ছে। মানুষের যে মৌলিক চাহিদা বাসস্থান, তার সংকট বাড়ছে। আবাসন খাতের নি¤œগামিতা অর্থনীতির জন্য খারাপ ইঙ্গিত। যে খাতটি প্রতিষ্ঠিত এবং অর্থনীতি ও কর্মসংস্থানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে, সে খাতের সমস্যা সমাধান ও সুযোগ-সুবিধা দিয়ে টিকিয়ে রাখা সরকারের দায়িত্ব। অন্যদিকে, রফতানি আয়ের প্রধানতম খাত গার্মেন্টে দীর্ঘদিন ধরেই ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত চলছে। অন্তর্বর্তী সরকারকে ব্যর্থ ও বেকায়দায় ফেলে দিতে পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনা ও তার দোসররা শ্রমিকদের বিভিন্ন দাবি-দাওয়ার নামে আন্দোলন উসকে দিয়ে এ খাতে বিশৃঙ্খল ও অস্থিরতা সৃষ্টি করে চলেছে। এমন পরিস্থিতিতে, বেক্সিমকোর মতো বড় শিল্প প্রতিষ্ঠানের গার্মেন্ট কারখানা বন্ধ ঘোষণা পরিস্থিতিকে আরও ঘোলাটে করে তুলবে বলে অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন। এ খাতে অভিঘাত সৃষ্টি করবে। ইতোমধ্যে বেকার হয়ে পড়া বিপুল সংখ্যক শ্রমিক এখন কোথায় যাবে, কিভাবে জীবিকা অর্জন করবে, সেটা বড় প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে। অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, মালিক-কর্তৃপক্ষের অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে প্রতিষ্ঠান বন্ধ বা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে না। মালিকের অনুপস্থিতিও প্রতিষ্ঠান বন্ধের কারণ হতে পারে না। প্রতিষ্ঠান চলবে প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর মধ্যে। এক্ষেত্রে, মালিকপক্ষের লোকজন রয়েছে। তারা দায়িত্ব পালন করবে। যত হিসাব-নিকাষ তারাই করবে। সরকারের উচিৎ, তাদের সাথে বসে প্রতিষ্ঠানকে কীভাবে টিকিয়ে রেখে উৎপাদন অব্যাহত রাখা যায়, সে চিন্তা করা। কারো দেনাপাওনা থাকলে তা মালিকপক্ষের লোকজনের সাথে বসে ফয়সালা করা। প্রতিষ্ঠানকে বন্ধের দিকে ঠেলে দেয়া এক ধরনের অপরিনামদর্শী পদক্ষেপ। বাংলাদেশের গার্মেন্ট খাত ধ্বংস করে দেয়া এবং ক্রেতারা যাতে অন্যদেশে চলে যায়, এজন্য অনেক আগে থেকেই ষড়যন্ত্র চলছে। এটা নতুন কিছু নয়। এক্ষেত্রে অনুকূল পরিবেশ তৈরি করে দেয়া সরকারের দায়িত্ব। তা নাহলে, এ খাতে আদমজী জুট মিল বন্ধ করে দেয়ার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে। অনেকেরই জানা, নব্বই দশকে যখন আদমজী জুট মিল বন্ধ করে দেয়া হয়, তখন ভারতে অনেকগুলো পাটকল স্থাপিত হয়েছে। এ থেকে বুঝতে অসুবিধা হয় না, বাংলাদেশের পাটকল বন্ধের নেপথ্যে কোন উদ্দেশ্য কাজ করেছিল। একইভাবে গার্মেন্ট খাতে যে ধরনের প্রবণতা দেখা যাচ্ছে, তাতে গার্মেন্ট খাতও পাট শিল্পের দশাপ্রাপ্ত হলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।
অর্থনীতির অন্যতম দুই স্তম্ভ আবাসন ও গার্মেন্ট খাত টিকিয়ে রাখা সরকারের দায়িত্ব। যে খাত উদ্যোক্তাদের শ্রমে-ঘামে এবং হাজার হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগে গড়ে উঠেছে, তা রক্ষা করতে সরকারকে উদ্ভুত সমস্যার সমাধানে উদ্যোগী হতে হবে। আবাসন খাতকে কীভাবে গতিশীল করা যায়, তা নিয়ে উদ্যোক্তাদের সাথে বসে সহায়তা, পরিকল্পনা ও দিকনির্দেশনা দিতে হবে। গার্মেন্ট খাতের বন্ধ কারখানা খোলার ব্যবস্থাসহ নতুন করে যাতে কোনো কারখানা বন্ধ না হয়, সে ব্যাপারে পদক্ষেপ নিতে হবে। আবাসন খাত ও গার্মেন্ট খাত দুর্বল হয়ে পড়লে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। বিনিয়োগকারিরা যেমন নিরুৎসাহী হবে, তেমনি তদের কাছে ভুল বার্তা যাবে। সরকারকে মনে রাখতে হবে, তার কাজ ধ্বংসপ্রাপ্ত অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধার করা। রাজনীতি রাজনীতির জায়গায় থাকবে, অর্থনীতি অর্থনীতির জায়গায় থাকবে। রাজনীতির কারণে অর্থনীতি কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে না। এটা আত্মঘাতী হয়ে দাঁড়াবে। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর আইএমএফ, বিশ্বব্যাংকসহ বিভিন্ন সংস্থা মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার ঋণ দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তবে ঋণ বা অন্যের অর্থ দিয়ে টেকসই উন্নয়ন করা যায় না। শেখ হাসিনাও উন্নয়নের নামে বহু ঋণ করেছেন। তাতে দুর্নীতির উন্নয়ন ছাড়া কিছু হয়নি। ফলে উন্নয়নের জন্য ঋণ মূল নিয়ামকের ভূমিকা পালন করতে পারে না। এজন্য, নিজস্ব অর্থের উৎস শক্তিশালী করতে হয়। আবাসন ও গার্মেন্ট খাত নিজস্ব অর্থের অন্যতম প্রধান উৎস। এই দুই খাতের ভিত্তি শক্ত ও এগিয়ে নিতে সরকারকে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হতে হবে। প্রয়োজনীয় বন্দোবস্ত দ্রুত করতে হবে।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
বাংলাদেশি রোগী পেতে সীমান্ত পর্যন্ত মেট্রো চালু করবে ভারত
হাত ফসকে আইফোন পড়ে গেল মন্দিরের দানবাক্সে, ফেরত দিতে অস্বীকৃতি
কুয়াশায় ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে একাধিক দুর্ঘটনা: নিহত ১, আহত ১৫
ঢাকার বায়ুমানে উন্নতির কোনো লক্ষণ নেই, বিপজ্জনকের কাছাকাছি
উগ্রবাদী সন্ত্রাসী 'সাদ' পন্থীদের কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে সাতক্ষীরায় মানববন্ধন
বাংলাদেশ সীমান্তে অত্যাধুনিক ড্রোন মোতায়েন ভারতের
নরসিংদীতে দুর্বৃত্তের গুলিতে ছাত্রদলকর্মী নিহত
সিনেটে প্রার্থী হতে সরে দাঁড়ালেন লারা ট্রাম্প
আমাদেরকে আর স্বৈরাচার হতে দিয়েন না : পার্থ
মার্চের মধ্যে রাষ্ট্র-সংস্কার কাজ শেষ হবে : ধর্ম উপদেষ্টা
জামালপুরে দুই ইজিবাইকের চাপায় সাংবাদিক নুরুল হকের মৃত্যু
বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী রাখাইনের সামরিক সদর দফতরের দখল নিয়েছে আরাকান আর্মি
ব্রাজিলে বাস-ট্রাক সংঘর্ষে নিহত ৩২
নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিয়োগ সিরিয়ায়
ঘনকুয়াশায় ৩ ঘন্টা পর আরিচা-কাজিরহাট নৌরুটে ফেরি সার্ভিস চালু
গাজায় যুদ্ধবিরতির আলোচনা চূড়ান্ত পর্যায়ে
কনসার্ট মঞ্চে স্বৈরাচার হাসিনার বিচার দাবি
গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত আরও ১৪ ফিলিস্তিনি
ঘনকুয়াশায় আরিচা-কাজিরহাট, পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে ফেরি চলাচল বন্ধ
আওয়ামী লীগ যা করেছে, বিএনপি তার বিপরীত কাজ করে সুন্দর সমাজ গড়বে: ইয়াকুব চৌধুরী