সহজ ও সুন্দর মৃত্যুর জন্য আপনজনদের করণীয়
৩১ মে ২০২৩, ০৮:৩০ পিএম | আপডেট: ০১ জুন ২০২৩, ১২:০০ এএম
মৃত্যু অনিবার্য
কুরআন মাজীদে আল্লাহ তাআলা বলেন,-‘হে নবী আপনি বলুন, তোমরা যে মৃত্যু থেকে পালায়ন করছ, সেই মৃত্যু অবশ্যই তোমাদের সাথে সাক্ষাত করবে। অতপর তোমাদেরকে ফিরিয়ে দেওয়া হবে এমন সত্তার কাছে যিনি দৃশ্য-অদৃশ্য সকল কিছু জানেন। এরপর তিনি তোমাদেরকে তোমাদের কর্ম সম্পর্কে অবগত করবেন।’ [সূরা জুমআ:৮] অন্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘প্রত্যেক প্রাণীই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে। আর কিয়ামত দিবসে তোমাদেরকে দেওয়া হবে তোমাদের কর্মের পরিপূর্ণ প্রতিদান। যে ব্যক্তিকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেওয়া হলো আর জান্নাতে প্রবেশ করানো হলো সে সফলতা লাভ করল। [সূরা আলে ইমরান:১৮৫] পবিত্র এই আয়াত দুটির বার্তা হচ্ছে, মৃত্যু অনিবার্য। অনিবার্য এই মৃত্যুর ডাকে সবাই সাড়া দিবে। পাড়ি জমাবে দুনিয়ার ওপারে। সাড়া না দিয়ে কেউ পার পাবে না। কোনো কিছু ভালো বলে বিবেচিত হওয়ার জন্য সুন্দর সমাপ্তি জরুরী। এ বিষয়ে বাংলায় একটি প্রসিদ্ধ প্রবাদও আছে। প্রবাদটি হলো- ‘শেষ ভালো যার সব ভালো তার’। বাস্তবতাও এমনি। যে কোনো বিষয় ভালোভাবে শেষ হলে তার প্রসংশার কোনো শেষ থাকে না। আবার শেষটা যদি কোনো কারণে খারাপ হয়ে যায়, তাহলে নিন্দা ও তিরিস্কারের ঝড় বয়ে যায়। কুরআন-সুন্নাহর দৃষ্টিতে মৃত্যুর বিষয়টিও এমনি। পরপারে সুন্দর ও সুখময় জীবনের জন্য সুন্দর মৃত্যুর বিকল্প নেই। মৃত্যুটা যদি ঈমানের সঙ্গে হয়। বিদায়কালে ঈমানটা যদি সঙ্গে নিয়ে যাওয়া যায়, তাহলে দুনিয়ার পাহাড়সম দুঃখ-কষ্ট, ব্যাথা-বেদনা সবই তখন তচ্ছ। আর যদি এর বিপরীত কিছু হয়, শয়তানের ধোঁকায়, নফসের প্রবঞ্চনায় নিজের ঈমানটা খুইয়ে বসে, ঈমান হারিয়ে দুনিয়া থেকে বিদায় নেয়, তাহলে দুনিয়ার সকল সুখ-শান্তি, আরাম-আয়েশ সব কিছুই তখন গৌণ। তার পরকালের পুরো জীবনটাই কাটবে শুধু অসহ্য দুঃখ-কষ্ট আর আযাব-গযবে। এ জন্যই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘আমল তো শেষ অবস্থা অনুসারেই বিবেচিত হবে।’ [বুখারী, হাদীস:৬৬০৭] হাদীসটির ভাষ্যমতে যার মৃত্যু সুন্দর হবে, ঈমান নিয়ে দুনিয়া থেকে বিদায় নিবে, তার পরকালের জীবনটাও সুন্দর হবে। ফুলে-ফলে ভরে উঠবে তার পরকালীন জীবন। তাই সুন্দর মৃত্যু হওয়াটা পরম সৌভাগ্যের বিষয়।
সহজ ও সুন্দর মৃত্যুর জন্য আপনজনদের করণীয়
এ জন্য একজন মৃত্যুপথযাত্রীর আত্মীয়-স্বজন ও আপনজনদের উচিত তার সুন্দর মৃত্যুর জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করা। কুরআন-হাদীসের আলোকে একজন মৃত্যুগামী ব্যক্তির সহজ ও সুন্দর মৃত্যুর জন্য তার আত্মীয়-স্বজন ও আপনজনদের কিছু করণীয় আছে। সেগুলো হলো-
১. তার জন্য দুআ করা
এ আমলটি দূরের কাছের সবাই করতে পারেন। তার মৃত্যু যেন ঈমানের সঙ্গে হয় এবং সহজ হয়- এ দুআ করা। এ দুআটুকুর জন্য পাশে বা কাছে থাকার প্রয়োজন হয় না। যারা সংবাদ পেয়েছে সবাই এ দুআ করতে পারে। সুন্দর মৃত্যুর জন্য এ দুআ খুবই জররী। আত্মীয়-স্বজন ও আপনজনদের এ দুআর কল্যাণে যদি মৃত্যুগামী ব্যক্তির মৃত্যু সুন্দর হয়, তাহলে তো সে চির সফল। মহা সৌভাগ্যবান। তাই এখন সুন্দর মৃত্যুর জন্য দুআটাই তার বেশি দরকার। এই দুআতে কেবল মৃত্যুগামী ব্যক্তির উপকার হবে- ব্যাপারটি এমন কিন্তু নয়; বরং দুআকারীরও এতে ব্যাপক উপকার হয়। এক হাদীসে আছে, কেউ যদি তার কোনো মুসলিম ভাইয়ের জন্য দূর থেকে দুআ করে, তাহলে ফিরিশতারা বলেন, দুআকারীকেও যেন দুআকৃত বিষয়গুলো দান করা হয়। [মুসলিম, হাদীস: ২৭৩২-২৭৩৩] তাই কোনো আপনজন মৃত্যুগামী ব্যক্তির সুন্দর মৃত্যু, সহজ মৃত্যু ও ঈমানের সাথে মৃত্যুর জন্য দুআ করলে, আশা করা যায়, দুআকারীরও মৃত্যু হবে সুন্দর, সহজ ও ঈমানের সঙ্গে হবে।
২. কালীমার তালকীন করা
দ্বিতীয় করণীয় হলো, মাইয়িতকে কালীমার তালকীন করা। এ ব্যাপারে সাহাবী আবূ সাঈদ খুদরী রা. এর বাচনিক মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমরা তোমাদের মৃত্যুপথযাত্রীদের ‘লা ইলাহ ইল্লাহ’র তালকীন কর। [মুসলিম, হাদীস:৯১৬-৯১৭] ‘লা ইলাহ ইল্লাহ’র তালকীনের অর্থ হলো, মুমূর্ষ ব্যক্তির পাশে বসে মৃদু আওয়াজে [এমন আওয়াজ যেন কালিমার আওয়াজ মুমূর্ষ ব্যক্তি শুনতে পায়] কালিমা পড়তে থাকা। তবে মনে রাখতে এ অবস্থায় তাকে কিছুতেই মুখে উচ্চারণ করে কালিমা পড়ার আদেশ করা যাবে না। কোনো প্রকার জোরাজুরি করা যাবে না। এতে হিতে বিপরীত হতে পারে। তাই নিয়ম হলো, তার পাশে বসে মৃদু আওয়াজে কেবল কালিমা পড়তে থাকা। কালিমা বলুন বা এ জাতীয় কিছু বলা যাবে না। তার পাশে বসে যখন এভাবে কালিমা পড়া হবে এবং তিনি যখন কালিমার আওয়াজ শুনতে পাবেন, তখন আশা করা যায়, তিনি নিজেই কালিমা পড়ে নিবেন। আর যার মৃত্যু হবে কালিমার সাথে। যার শেষ কথা হবে এই কালিমা, হাদীসের ভাষ্যমতে তিনি জান্নাতী। সাহাবী মুআয ইবনে জাবাল রা. এর বর্ণনায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যার দুনিয়ার জীবনের শেষ কথা হবে লা ইলাহ ইল্লাহ, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। [সুনানে আবূ দাউদ, হাদীস:৩১১৬]
৩. মুমূর্ষ ব্যক্তির পাশে থেকে সূরা ইয়াসীন তিলাওয়াত করতে থাকা
মুমূর্ষ ব্যক্তির জন্য তৃতীয় আরেকটি আমলের কথা হাদীসে পাওয়া যায়। সেটি হলো, মুমূর্ষ ব্যক্তির পাশে থেকে সূরা ইয়াসীন তিলাওয়াত করতে থাকা। সাহাবী মাকাল ইবনে ইয়াসার রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন,‘তোমরা তোমাদের মৃত্যুপথযাত্রীদের পাশে বসে সূরা ইয়াসীন তিলাওয়াত কর।’ [সুনানে আবূ দাউদ, হাদীস: ৩১২১; সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস:৩০০২] আপনজনদের উচিত মুমূর্ষ ব্যক্তির সুন্দর ও সহজ মৃত্যুর জন্য উপরোক্ত আমলগুলো গুরুত্ব দিয়ে করা।
লেখক: ইমাম ও খতীব, মসজিদুল আমান, গাঙ্গিনারপাড়, মোমেনশাহী
বিভাগ : ধর্ম দর্শন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ঘণকুয়াশায় আরিচা-কাজিরহাট, পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে ফেরি চলাচল বন্ধ
আওয়ামী লীগ যা করেছে, বিএনপি তার বিপরীত কাজ করে সুন্দর সমাজ গড়বে- কেন্দ্রীয় শ্রমিক দলের নেতা ইয়াকুব চৌধুরী
রোমাঞ্চকর ম্যাচে বার্সাকে হারিয়ে শীর্ষে আতলেটিকো
জেসুসের জোড়া গোলের রাতে আর্সেনালের বড় জয়
বিলুপ্তির পথে মাটির ঘর
চোর সন্দেহে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ
প্রতিবন্ধী স্কুল শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের অভিযোগ
কেরু চিনিকলে আখ মাড়াই মৌসুমের উদ্বোধন
বিহারিরা কেমন আছে
লক্ষ্মীপুরে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি
আসাদ সরকারের পতন : নতুন সিরিয়ায় ইসরাইলি আগ্রাসন
মেটলাইফ বাংলাদেশের গ্রাহকরা ডিসকাউন্ট পাবেন ওশান প্যারাডাইস হোটেলস ও রিসোর্টে
১৫ নারী ও শিশুকে হস্তান্তর
আবাসন ও গার্মেন্ট খাতের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে
মেহেরপুরে বেড়েছে গরম কাপড় বিক্রি
কাশিয়ানীর হাট-বাজার নিষিদ্ধ পলিথিনে সয়লাব
অ্যানুয়াল বিজনেস কন্টিনিউয়িটি প্ল্যান ড্রিল ২০২৪ আয়োজন করলো ব্র্যাক ব্যাংক
সমস্যায় জর্জরিত আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স
সবুজ গালিচায় হলুদের সমারোহ
আখাউড়ায় ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের মেধা বৃত্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত