শাওয়াল মাসের গুরুত্ব ও তাৎপর্য
২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২:০৭ এএম | আপডেট: ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২:০৭ এএম
বরকতময় রমজান মাসের পর আসে শাওয়ালুল মুআজ্জম বা মহিমাময় শাওয়াল মাস। রমজানের বরকত লাভের জন্য ত্যাগ, কষ্ট-ক্লেশ ও দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার পর ঈদের খুশি নিয়ে পশ্চিম আকাশে উদিত হয় শাওয়ালের নতুন চাঁদ। মাসটির প্রথম দিনেই পালিত হয় মুসলমানদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল ফিতর।
ঈদ শব্দটি আরবি, যার অর্থ আনন্দ, বারবার ফিরে আসা। ফিতর শব্দটিও আরবি, যার অর্থ রোজা ভাঙা। ঈদুল ফিতরের অর্থ রোজা শেষ হওয়ার আনন্দ, আল্লাহর নিয়ামত উপভোগের অনুমতি লাভের আনন্দ। ঈদের দিন আল্লাহ তাআলার অনেকগুলো অনুগ্রহ—যেমন নিষেধ করার পর আবার দিনে পানাহারের অনুমতি প্রদান, ফিতরা আদায় করার সুযোগ দান ইত্যাদি বারবার ফিরে আসে।
আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, মহানবী (সা.) যখন মদিনায় আসেন, তখন দেখেন যে সেখানকার লোকেরা বছরে দুই দিন (নওরোজ ও মেহেরজান উৎসব) আনন্দ করে, খেলাধুলা করে। তিনি বললেন, ‘আল্লাহ তাআলা তোমাদের এই দুই দিনের পরিবর্তে আরও অধিক উত্তম ও কল্যাণকর দুটি দিন দিয়েছেন। এক. ঈদুল আজহা এবং দুই. ঈদুল ফিতর।’ (আবু দাউদ: ১ / ১৬১)
এভাবে মুসলমানদের ইতিহাসে পৃথক উৎসবের সূচনা হয়। এটা দ্বিতীয় হিজরি, অর্থাৎ ৬২৪ খ্রিষ্টাব্দের ঘটনা। মহানবী (সা.) ঘোষণা করলেন, ‘সব জাতিরই ঈদ বা উৎসবের দিন থাকে, এটা আমাদের ঈদ।’ (সহিহ্ বুখারি, হাদিস: ৩৯৩১)
আল-বিদায়া ওয়ান-নিহায়া গ্রন্থে ইবনে জারির (রা.)-এর বর্ণনা মতে, দ্বিতীয় হিজরিতে মহানবী (সা.) প্রথম ঈদ পালন করেন। ঈদ মুসলমানদের জীবনে শুধু আনন্দই নয়; বরং এটি একটি মহান ইবাদতও বটে। এর মাধ্যমে মুসলিম উম্মাহ ঐক্যবদ্ধ হওয়ার প্রেরণা খুঁজে পায়, ধনী-গরিব, ছোট-বড়, দেশি-বিদেশি সব ভেদাভেদ ভুলে যায় এবং সব শ্রেণি ও সব বয়সের মানুষ ঈদের জামাতে শামিল হয়ে মহান প্রভুর শোকর আদায়ে নুয়ে পড়ে। ঈদের দিন প্রত্যুষে ফজরের নামাজ জামাতে আদায় করার মাধ্যমে দিনটি শুরু করা। এ দিনের সুন্নাত কাজগুলো হচ্ছে- মিসওয়াক করা, গোসল করা, পবিত্র ও উত্তম কাপড় পরিধান করা, সুগন্ধি ব্যবহার করা, শরিয়ত মোতাবেক সুসজ্জিত হওয়া, ঈদগাহে এক পথ দিয়ে যাওয়া ও অন্য পথ দিয়ে আসা, ঈদগাহে তাড়াতাড়ি যাওয়া, ঈদগাহে হেঁটে যাওয়া, ঈদের নামাজ ঈদগাহে পড়া, ঈদগাহে যাওয়ার পথে নি¤œ স্বরে তাকবির পড়া, ঈদের নামাজে যাওয়ার সময় বিজোড় সংখ্যক খেজুর বা মিষ্টান্ন দ্রব্য খাওয়া, মনোযোগ দিয়ে খুতবা শোনা এবং কায়মনোবাক্যে দোয়া করা, আত্মীয়-স্বজনের খোঁজখবর নেওয়া, ঈদের নামাজের আগেই ফিতরা আদায় করে দেওয়া ইত্যাদি।
আরবি বর্ষপঞ্জির দশম মাস শাওয়াল তার অবস্থান ও মর্যাদার কারণে ইসলামি জীবনব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। শাওয়াল আরবি শব্দ। এর অর্থ হলো উঁচু করা, উন্নতকরণ ইত্যাদি। আল্লাহ তাআলা ফরজ ইবাদতের পর সুন্নত ও নফল ইবাদতের প্রতি উৎসাহ ও নির্দেশনা দেন। কোরআন মজিদে এরশাদ হয়েছে, ‘যখন তুমি (ফরজ) দায়িত্ব সম্পন্ন করবে, তখন উঠে দাঁড়াবে এবং (নফলের মাধ্যমে) তোমার রবের প্রতি অনুরাগী হবে।’ (সুরা ইনশিরাহ, আয়াত: ৭-৮)
এতে রমজান মাসের নির্ধারিত ফরজ ইবাদতের পর এই মাসে নফল ইবাদত পালনের গুরুত্ব অনুধাবন করা যায়। (তাফসিরে মাজহারি)
রমজানের রোজার পর ফজিলতপূর্ণ রোজার মধ্যে শাওয়ালে ছয়টি রোজা রাখা সুন্নত। মহানবী (সা.) বলেন, ‘যারা রমজানে রোজা পালন করে এবং শাওয়ালে আরও ছয়টি রোজা রাখে; তারা যেন পূর্ণ বছরই রোজা পালন করে।’ (মুসলিম, হাদিস: ১১৬৪)
ঈদুল ফিতরের দিন বাদে এ ছয়টি রোজা লাগাতারভাবে রাখা যায় আবার বিরতি দিয়েও রাখা যায়। তবে আলাদা আলাদা করে রাখাই উত্তম। বিনা ওজরে কেউ রমজানের কোনো রোজা কাজা করলে, আগে রমজানের কাজা রোজা আদায় করবে, তারপর শাওয়ালের রোজা রাখবে। কোনো সংগত কারণে রমজানের কিছু রোজা বাদ গেলে যেমন অসুস্থতা বা সফরের কারণে কিংবা নারীদের ঋতুস্রাব বা সন্তান জন্মদানকালীন স্রাবের কারণে, তাহলে সেগুলো শাওয়ালের ছয় রোজার আগে আদায় করাই উত্তম। তবে শাওয়াল মাসে উল্লিখিত ছয় রোজা রেখে পরে যেকোনো সময়ে রমজানের কাজা রোজাগুলো আদায় করে নিলেও হাদিসে বর্ণিত ছয় রোজার ফজিলত লাভ করবে। হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, ‘আমার ওপর রমজানের যে কাজা রোজা বাকি থাকত; তা পরবর্তী শাবান ব্যতীত আমি আদায় করতে পারতাম না।’ (সহিহ্ বুখারি, হাদিস: ১৯৫০)
মহানবী (সা.) এই রোজাগুলো রাখার ব্যাপারে বিশেষ তাগিদ দিয়েছেন। তিনি নিজেও শাওয়াল মাসের ছয় রোজা রাখতেন এবং সাহাবায়ে কেরাম (রা.)-কে তা পালনে উৎসাহিত করতেন। তা ছাড়া হাদিসের ভাষ্য মতে, শাওয়াল মাসে বিয়ে-শাদি সুন্নত, যেরূপ শুক্রবারে ও জামে মসজিদে এবং বড় মজলিশে আক্দ অনুষ্ঠিত হওয়া সুন্নত। কারণ হজরত আয়েশার বিয়ে শাওয়াল মাসের শুক্রবারে মসজিদে নববিতেই হয়েছিল। (মুসলিম)
প্রতিটি নেক কাজেই রয়েছে আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রতিদান প্রাপ্তির নিশ্চয়তা। আল্লাহ বলেন, ‘কেউ কোনো সৎকাজ করলে সে তার ১০ গুণ সওয়াব পাবে।’ (সুরা আনআম, আয়াত: ১৬০) মহানবী (সা.) বলেন, ‘আমাদের মহান রব এরশাদ করেন, রোজা হলো ঢালস্বরূপ। বান্দা এর মাধ্যমে নিজেকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করবে। রোজা আমার জন্যই; আমিই এর পুরস্কার দেব।’ (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস: ১৪৬৬৯) তাই নামাজ, নফল রোজা, তিলাওয়াত ও অন্যান্য ইবাদত রমজান ছাড়া বাকি ১১ মাসেও বজায় রাখা জরুরি।
লেখক: গবেষক, কলামিস্ট, পাঠান পাড়া, (খান বাড়ী) কদমতলী, সদর, সিলেট-৩১১১।
বিভাগ : ধর্ম দর্শন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
রোমাঞ্চকর ম্যাচে বার্সাকে হারিয়ে শীর্ষে আতলেটিকো
জেসুসের জোড়া গোলের রাতে আর্সেনালের বড় জয়
বিলুপ্তির পথে মাটির ঘর
চোর সন্দেহে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ
প্রতিবন্ধী স্কুল শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের অভিযোগ
কেরু চিনিকলে আখ মাড়াই মৌসুমের উদ্বোধন
বিহারিরা কেমন আছে
লক্ষ্মীপুরে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি
আসাদ সরকারের পতন : নতুন সিরিয়ায় ইসরাইলি আগ্রাসন
মেটলাইফ বাংলাদেশের গ্রাহকরা ডিসকাউন্ট পাবেন ওশান প্যারাডাইস হোটেলস ও রিসোর্টে
১৫ নারী ও শিশুকে হস্তান্তর
আবাসন ও গার্মেন্ট খাতের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে
মেহেরপুরে বেড়েছে গরম কাপড় বিক্রি
কাশিয়ানীর হাট-বাজার নিষিদ্ধ পলিথিনে সয়লাব
অ্যানুয়াল বিজনেস কন্টিনিউয়িটি প্ল্যান ড্রিল ২০২৪ আয়োজন করলো ব্র্যাক ব্যাংক
সমস্যায় জর্জরিত আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স
সবুজ গালিচায় হলুদের সমারোহ
আখাউড়ায় ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের মেধা বৃত্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত
নিউ ইয়র্কের আদালতে অভিযুক্ত লুইজি
কিউবায় সমাবেশ