সংযমের শিক্ষা বাঁচাতে পারে গীবতের শাস্তি থেকে
০৪ মে ২০২৪, ১২:৩০ এএম | আপডেট: ০৪ মে ২০২৪, ১২:৩০ এএম
সমাজের সব জায়গায় বিশৃঙ্খলা তৈরীর জন্য যে বিষয়টি খুব বেশি চোখে পড়ে তা হলো পরচর্চা বা গীবত। দু’জন বা তার বেশি মানুষ একত্রিত হলেই তাদের মধ্যে কথা হয় তৃতীয় কোনো ব্যক্তিকে নিয়ে। যদিও এই পরচর্চা বা গীবতের জন্য নারীদেরই বেশি দেখা যায় তবে পুরুষও এ থেকে পিছিয়ে নেই। নারীরা যেমন সাংসারিক কাছের অবসরে একটু সময় পেলেই গল্পগুজবের ছলে মেতে ওঠে পরচর্চায় তেমনি পুরুষও। পরচর্চা বা গীবতের কারণে অনেক সময় সংসারে অশান্তি থাকে,সমাজে বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়, মারামারি খুনোখুনির ঘটনাও ঘটে। অথচ এই গীবতের বিষয়ে কঠিনভাবে সতর্ক করা হয়েছে পবিত্র কোরআনে। গীবত সম্পর্কে মহান আল্লাহপাক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে ইরশাদ করেছেন, ‘তোমরা একে অন্যের গীবত করো না। তোমাদের কেউ তোমাদের মৃত ভ্রাতার গোশত খেতে কি পছন্দ করো? নিশ্চয়ই তোমরা তা পছন্দ করো না এবং আল্লাহকে ভয় করো, অবশই আল্লাহ তাওবাহ কবুলকারী ক্ষমাশীল।’ (সূরা হুজরাত : আয়াত ১২)।
নিজের মৃত ভাইয়ের মাংস খাওয়ার মত এত বড় গোণাহ গীবত অথচ গীবতকে মানুষ খুব সহজভাবেই নেয়। অনেকেই এর জন্য যুক্তিও দেন এবং বলেন,সত্য কথা বললে সমস্যা কি?অনেকেই এই সত্য বলার জন্য নিজেকে সাহসী মানুষ ভাবেন,নিজেকে নিজেই সাহসী ও চালাকের তকমা দেন। আর এই গীবত শুধুমাত্র মুখের কথার মাঝেই সীমাবদ্ধ নয়। বরং হাত-পা নেড়ে, চোখে ইশারা করেও গীবত করা যায়। যেমন কোনো প্রতিবন্ধী বা পঙ্গু লোককে ব্যঙ্গ করে কথা বলা, বা তার এই পঙ্গুত্ব দোষটি প্রকাশ করার জন্য পঙ্গুর মতো চলাও, বা কোনো বামন বা ত্রুটিপূর্ণ মানুষ নিয়ে ইশারা ইঙ্গিত করাও গীবত। অর্থাৎ কারো অনুপস্থিতিতে তার সম্পর্কে এমন কথা বলা যা শুনলে সে মনে কষ্ট পাবে বা লজ্জা পাবে তাই গীবত। এ বিষয়ে ইমাম গাজ্জালী রহ. এক গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, ‘অবজ্ঞা, অবহেলা, বেশি কথন, ইঙ্গিত, ইশারা,লেখনী এবং হাসি-তামাশার মাধ্যমে অন্যের দোষ বয়ান করা যায়। এমন কি একজন লোকের বংশ, চরিত্র দ্বীন-দুনিয়া,চেহারা, পোশাক, মোটকথা প্রত্যেক বস্তুরই দোষ বের করা যায়’। এই বক্তব্য থেকে এটা স্পষ্ট যে, কোনো ব্যক্তির যে কোনো বিষয়ে দোষ ধরা, তা অন্যের কাছে বলে বেড়ানো, বা তা নিয়ে অপমান জনক কথা বলা সবই গীবত। যা সচরাচর মানুষ করে বেড়ায়। এর কথা ওর কাছে, ওর কথা তার কাছে। এ কারণে মহান আল্লাহপাক দৃঢ়তার সাথে এগুলোর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন এবং এ সকল কাজেকে মৃত ভ্রাতার গোশত ভক্ষণের সাথে তুলনা করেছেন।
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা কি জানো গীবত কাকে বলে?’ সাহাবিরা বললেন, ‘আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সা.) ভালো জানেন।’ তিনি বলেন, ‘তোমার কোনো ভাই সম্পর্কে এমন কথা বলা, যা সে অপছন্দ করে, তা-ই গীবত।’ সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞেস করলেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল, আমি যে দোষের কথা বলি, সেটা যদি আমার ভাইয়ের মধ্যে থাকে, তাহলেও কি গিবত হবে?’ উত্তরে রাসুল (সা.) বলেন, ‘তুমি যে দোষের কথা বলো, তা যদি তোমার ভাইয়ের মধ্যে থাকে, তবে তুমি অবশ্যই গীবত করলে আর তুমি যা বলছ, তা যদি তার মধ্যে না থাকে, তবে তুমি তার ওপর মিথ্যা অপবাদ আরোপ করলে (মুসলিম)। আমরা অনেকেই এই গীবত আর অপবাদের মধ্যে এই পার্থক্যটা বুঝতে পারি না। গীবত এবং অপবাদ দুটোই কবীরা গোণাহ এবং এর শাস্তি বড়ই কঠিন।
যে সব গোনাহ আল্লাহ ক্ষমা করবেন না তার মধ্যে হচ্ছে এই গীবত আর অপবাদ। ব্যভিচারের থেকেও মারাত্মক ও নিকৃষ্টতম পাপ ও কবিরা গোনাহ হলো এই গীবত। অন্যান্য পাপ তওবা করলে আল্লাহ ক্ষমা করেন কিন্তু গীবতকারীর গোণাহ শুধু তওবা করলে আল্লাহ ক্ষমা করবেন না যার গীবত করা হয়েছে সে ব্যক্তি যদি ক্ষমা করে, তবেই আল্লাহর কাছে তওবা করলে আল্লাহ ক্ষমা করবেন। গীবত বা পরচর্চা, পরনিন্দা ইসলামি শরীয়তে সম্পূর্ণরূপে হারাম ও নিষিদ্ধ করা হয়েছে এমনকি গীবত করা যেমন পাপ গীবত শোনাও তেমন সমান পাপ। গীবত খুবই মারাত্মক গোণাহ এবং এর পরিণাম ভয়াবহ এটা যারা না জানে তারাও যেমন এটাতে লিপ্ত আবার অনেক জানা মানুষও এর ভয়াবহতা ভুলে গিয়ে এই গীবতের মত পাপ কাজে জড়িয়ে যাচ্ছে। মহানবী হজরত মুহাম্মাদ (সা.) বলেছেন, ‘পরনিন্দাকারী জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না।’ (বুখারি ও মুসলিম)।
এজন্য গীবতের বিষয়ে সতর্ক থাকা উচিত। কেউ যদি আপনার সাথে অন্যের গীবত করে, তখন তাকে থামিয়ে দিবেন এবং আল্লাহর হুকুমের কথা স্মরণ করিয়ে দিবেন। গীবতের গোণাহ বিষয়ে সাবধান করে দিবেন। আর সে যদি আপনার কথা না শোনে তাহলে আপনি সেখান থেকে সরে আসুন। হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যখন আমাকে মিরাজে নিয়ে যাওয়া হলো, তখন আমাকে তামার নখবিশিষ্ট একদল লোকের পাশ দিয়ে নিয়ে যাওয়া হলো। তারা তাদের নখগুলো দিয়ে স্বীয় মুখম-লে ও বক্ষদেশে আঘাত করে ক্ষতবিক্ষত করছিল। আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে জিবরাইল! এরা কারা? জিবরাইল (আ.) বললেন, এরা দুনিয়াতে মানুষের গোশত ভক্ষণ করত এবং তাদের মানসম্মান নষ্ট করত। অর্থাৎ তারা মানুষের গীবত বা পরচর্চা করত। (আবু দাউদ)।
বিভাগ : ধর্ম দর্শন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ঘণকুয়াশায় আরিচা-কাজিরহাট, পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে ফেরি চলাচল বন্ধ
আওয়ামী লীগ যা করেছে, বিএনপি তার বিপরীত কাজ করে সুন্দর সমাজ গড়বে- কেন্দ্রীয় শ্রমিক দলের নেতা ইয়াকুব চৌধুরী
রোমাঞ্চকর ম্যাচে বার্সাকে হারিয়ে শীর্ষে আতলেটিকো
জেসুসের জোড়া গোলের রাতে আর্সেনালের বড় জয়
বিলুপ্তির পথে মাটির ঘর
চোর সন্দেহে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ
প্রতিবন্ধী স্কুল শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের অভিযোগ
কেরু চিনিকলে আখ মাড়াই মৌসুমের উদ্বোধন
বিহারিরা কেমন আছে
লক্ষ্মীপুরে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি
আসাদ সরকারের পতন : নতুন সিরিয়ায় ইসরাইলি আগ্রাসন
মেটলাইফ বাংলাদেশের গ্রাহকরা ডিসকাউন্ট পাবেন ওশান প্যারাডাইস হোটেলস ও রিসোর্টে
১৫ নারী ও শিশুকে হস্তান্তর
আবাসন ও গার্মেন্ট খাতের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে
মেহেরপুরে বেড়েছে গরম কাপড় বিক্রি
কাশিয়ানীর হাট-বাজার নিষিদ্ধ পলিথিনে সয়লাব
অ্যানুয়াল বিজনেস কন্টিনিউয়িটি প্ল্যান ড্রিল ২০২৪ আয়োজন করলো ব্র্যাক ব্যাংক
সমস্যায় জর্জরিত আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স
সবুজ গালিচায় হলুদের সমারোহ
আখাউড়ায় ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের মেধা বৃত্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত