দেশ ও জাতি ধ্বংসের কারণ ‘অন্যায়, অবিচার,ব্যভিচার ও পাপাচার’
১৬ মে ২০২৪, ১২:০৪ এএম | আপডেট: ১৬ মে ২০২৪, ১২:০৪ এএম
মহান আল্লাহ পাকের ঘোষণা, জলে-স্থলে যে বিপর্যয় (মহামারি ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ)আসে তা মানুষের কৃতকর্মের ফল। যার ফলে তাদের কোনো কোনো কর্মের শাস্তি তিনি আস্বাদন করান, যাতে তারা (আল্লাহর পথে) ফিরে আসে। বলুন, তোমরা পৃথিবীতে ভ্রমণ কর এবং তোমাদের পূর্ববর্তীদের পরিণাম কী হয়েছে তা দেখ। তাদের অধিকাংশই ছিল মুশরিকগ্ধ (আল কোরআন, সূরা রুম, আয়াত-৪১-৪২)।
আয়াতের ‘কৃতকর্মের ফল’কে আমরা দু›ভাগে ভাগ করতে পারি। প্রথমত পৃথিবীতে যে প্রাকৃতিক বিপর্যয় ঘটে তার কারণগুলো মানুষ ঘটায়। মানুষ উন্নত জীবনযাপনের জন্য বেশি কলকারখানা স্থাপন করছে, যানবাহন বাড়ছে, বেশি কার্বন নির্গত হচ্ছে, যার ফলে বিশ্বের উষ্ণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। গ্রিন হাউস ইফেক্টের কারণে বরফঢাকা পর্বতের বরফ গলে যাচ্ছে। বিশাল মেরু প্রদেশের বরফ গলে যাচ্ছে। ফলে সমুদ্রের পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশসহ সমুদ্র উপকূলীয় দেশগুলোর নি¤œ অঞ্চল প্লাবিত হয়ে যাচ্ছে। উপকূলীয় এলাকায় লবণাক্ততা বৃদ্ধি পাচ্ছে ফলে ফসলের মাঠ, গাছপালা, বন, নষ্ট হচ্ছে। উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে সাইক্লোন, টর্নেডোর পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা আগেই সতর্ক করেছে বৈশ্বিক উষ্ণতার সঙ্গে ঋতু পরিবর্তনের প্রভাব পড়বে, বন্যা খরা বাড়বে, মশা বৃদ্ধি পাবে, এভাবে মানুষ তার কর্মের মাধ্যমে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ডেকে আনছে।
আয়াতের মৌলিক ব্যাখ্যা হল- মানুষ অন্যায় পাপাচারে লিপ্ত হচ্ছে। আল্লাহর হুকুমের অবাধ্য হচ্ছে ফলে আল্লাহ তাদের রোগব্যাধি প্রাকৃতিক দুর্যোগের মাধ্যমে সতর্ক করছেন। যেভাবে অতীতে বিভিন্ন শক্তিশালী জাতিকে আল্লাহ ধ্বংস করেছিলেন। নবী হুদ (আ.) সতর্ক করার পর ও আদ জাতি আল্লাহর হুকুমের অবাধ্য হওয়ায় প্রথম তিন বছর তাদের জমিনে বৃষ্টি বর্ষণ বন্ধ ছিল। তাদের ফসল উৎপাদন বন্ধ হয়। তবু তারা সতর্ক হয়নি ফলে সাত দিন আট রাতের বজ্র ঝড়ে তারা সবাই মারা যায়। সামুদ জাতি হযরত সালেহ (আ.)-এর অবাধ্য হয়। আল্লাহর কুদরতি উটকে হত্যা করে, নবী সালেহ (আ.)কে হত্যার সিদ্ধান্ত নেয়। ফলে আল্লাহ পাক প্রস্তর বর্ষণে ও বজ্রপাতের মাধ্যমে তাদের ধ্বংস করেন। হযরত লুত (আ.)-এর কওম, স্বাভাবিক যৌন সম্পর্কের পরিবর্তে সমকামিতায় লিপ্ত হয়। আল্লাহ পাক পুরো এলাকাটিকে জিবরাইল (আ.)-এর মাধ্যমে উল্টিয়ে দেন এবং তাদের ওপর প্রস্তর বর্ষিত হয়। ফলে লুত (আ.)-এর কওমের পুরো এলাকা সাগরে পরিণত হয় যা লোহিত সাগর বা মৃত সাগর নামে জর্ডানের পাশে আজও রয়েছে। পৃথিবীর অন্যান্য সাগরে মাছসহ বহু জলজ প্রাণীর বসবাস কিন্তু লোহিত সাগরে মাছ তো দূরে থাক কোনো জলজ প্রাণী জন্মে না। সাগরে বা নদীতে মানুষ ডুবে যায় কিন্তু লোহিত সাগরে কোনো কিছু না ডুবে শুকনো কাঠের মতো ভেসে থাকে। নুহ (আ.) সাড়ে নয়শ বছর পর্যন্ত মানুষকে আল্লাহর পথে দিনরাত আহ্বান করেন। কিন্তু মাত্র ৪০ জন ছাড়া কেউ তার আহ্বানে সাড়া দেয়নি। আল্লাহ পাক বন্যা দিয়ে গোটা পৃথিবী তলিয়ে অবাধ্যদের ধ্বংস করে দিয়েছেন। আল্লাহ অবাধ্য ফেরাউনকে নীলনদে ডুবিয়ে মেরেছেন, নবী মূসা (আ.)কে নদীর মধ্য দিয়ে পথ করে দিয়েছেন। অবাধ্য ফেরাউনের লাশ আজও আমাদের জন্য নিদর্শন হিসেবে মিসরের জাদুঘরে রেখে দিয়েছেন। অবাধ্য জাকাত অস্বীকারকারী কারুনকে মাটির নিছে দাবিয়ে দিয়েছেন। খোদাদ্রোহী নমরুদ ষাট লাখ সৈন্য সমাবেশ করে ইব্রাহিম (আ.)কে খোদার সৈন্য প্রেরণের আহ্বান জানায়। আল্লাহ পাক সামান্য মশা দিয়ে সমগ্র নমরুদ বাহিনীকে নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছেন। বর্তমানে যে ডেঙ্গু এটা কারও হলে মৃত্যুর আশঙ্কা বেড়ে যায়। আল্লাহ সামান্য মশার মধ্যে এমন জীবাণু দিতে পারেন যা তাৎক্ষণিক মৃত্যুর কারণ হতে পারে। যেমন- নমরুদের বাহিনীর হয়েছিল। নবী (সা.) বলেছেন- যখন কোনো জাতির মধ্যে ব্যভিচার বৃদ্ধি পাবে তখন দুর্ভিক্ষ তাদের ঘিরে ধরবে। যখন সুদ, ঘুষ বৃদ্ধি পাবে তখন ভয়ভীতি সন্ত্রাস তাদের মধ্যে বৃদ্ধি পাবে । নবী (সা.) আরও বলেছেন- যখন সরকারি সম্পদকে দায়িত্বশীল ব্যক্তি নিজের সম্পদের মতো আত্মসাৎ করবে, আমানতের খেয়ানত করবে, জাকাতকে জরিমানা মনে করবে, দ্বীনি স্বার্থ ছাড়া (শুধু দুনিয়া অর্জনের জন্য) জ্ঞান অর্জন করবে, স্ত্রীর বশীভূত হবে, পিতামাতার অবাধ্য হবে, বন্ধুদের কাছে টানবে, পিতাকে দূরে সরাবে, মসজিদে বেশি শোরগোল হবে, খারাপ লোকেরা নেতৃত্ব পাবে, খারাপ নেতাদেরকে মানুষ ক্ষতির ভয়ে সম্মান করবে, গান বাজনা বৃদ্ধি পাবে, পরবর্তী লোকেরা পূববর্তী লোকদের মন্দ বলবে, তখন তারা যেন অপেক্ষা করে উষ্ণ বায়ু, ভূমিকম্প, ভূমিধস, আকৃতি বিকৃতিসহ অন্যান্য বিপদের যা এমনভাবে একের পর এক আসবে যেমনি কোনো মুক্তার মালার সুতা ছিঁড়ে গেলে দানাগুলো একের পর এক ঝরে পড়ে (তিরমিজি)। নবী (সা.) আরও বলেন- যখন অশ্লীলতা বৃদ্ধি পায় তখন প্লেগ মহামারির মতো এমন (নতুন) রোগব্যাধির বিস্তার করা হয় যে রোগের নামও তাদের কেউ শোনেনি। অতীত অনেক জাতি ধ্বংসের ইতিহাস থেকে আমাদের সাবধান হওয়া উচিত। আমরা যতই আধুনিক উপকরণের অধিকারী হই না কেন আল্লাহর অসীম ক্ষমতার কাছে এগুলো কিছুই নয়। যিনি সামান্য মশা দিয়ে মানুষকে অসহায় করে দিতে পারেন, তিনি সব পারেন। তিনি সব ক্ষমতার মালিক, মানুষ তার অসীম ক্ষমতার কাছে অসহায়। দেখুন, করোনা ভাইরাস (যা সমগ্র বিশ্বকে স্তব্ধ করে দিয়েছিল। এখন আমরা মুখোমুখি তাপদাহের। প্রচন্ড গরমে জনজীবন স্থবির হয়ে পড়েছে।
আসুন আমরা সকলে মহান আল্লাহ তায়ালার হুকুমের অনুগত হই। অতীত পাপের জন্য ক্ষমা চাই, তওবা করি এবং মহান রাব্বুল আলামীনের কাছে সাহায্য কামনা করি।
লেখক: ধর্ম ও সমাজ বিশ্লেষক, সাংবাদিক,কলামিস্ট ও চেয়ারম্যান -গাউছিয়া ইসলামিক মিশন, কুমিল্লা।
বিভাগ : ধর্ম দর্শন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ঘণকুয়াশায় আরিচা-কাজিরহাট, পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে ফেরি চলাচল বন্ধ
আওয়ামী লীগ যা করেছে, বিএনপি তার বিপরীত কাজ করে সুন্দর সমাজ গড়বে- কেন্দ্রীয় শ্রমিক দলের নেতা ইয়াকুব চৌধুরী
রোমাঞ্চকর ম্যাচে বার্সাকে হারিয়ে শীর্ষে আতলেটিকো
জেসুসের জোড়া গোলের রাতে আর্সেনালের বড় জয়
বিলুপ্তির পথে মাটির ঘর
চোর সন্দেহে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ
প্রতিবন্ধী স্কুল শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের অভিযোগ
কেরু চিনিকলে আখ মাড়াই মৌসুমের উদ্বোধন
বিহারিরা কেমন আছে
লক্ষ্মীপুরে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি
আসাদ সরকারের পতন : নতুন সিরিয়ায় ইসরাইলি আগ্রাসন
মেটলাইফ বাংলাদেশের গ্রাহকরা ডিসকাউন্ট পাবেন ওশান প্যারাডাইস হোটেলস ও রিসোর্টে
১৫ নারী ও শিশুকে হস্তান্তর
আবাসন ও গার্মেন্ট খাতের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে
মেহেরপুরে বেড়েছে গরম কাপড় বিক্রি
কাশিয়ানীর হাট-বাজার নিষিদ্ধ পলিথিনে সয়লাব
অ্যানুয়াল বিজনেস কন্টিনিউয়িটি প্ল্যান ড্রিল ২০২৪ আয়োজন করলো ব্র্যাক ব্যাংক
সমস্যায় জর্জরিত আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স
সবুজ গালিচায় হলুদের সমারোহ
আখাউড়ায় ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের মেধা বৃত্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত