দারিদ্র্য বিমোচন : ইসলামী দৃষ্টিকোণ
১৬ মে ২০২৪, ১২:০৪ এএম | আপডেট: ১৬ মে ২০২৪, ১২:০৪ এএম
দরিদ্র ও দারিদ্র্য বর্তমান বিশ্বে একটি অন্যতম আলোচিত বিষয়। এ বিষয়ে পাশ্চাত্যের বস্তুগত ধারণার সাথে ইসলামী ধারণার কোন মিল নেই। ইসলাম ইহকাল এবং পরকালের কল্যাণে ধন-সম্পদ অর্জন ও ব্যয় করতে নির্দেশ দিয়েছে। কিন্তু পাশ্চাত্যে অর্থনৈতিক উন্নয়ন দর্শনে পারলৌকিক বিষয়াদি তেমন প্রাসঙ্গিক বলে ধরা হয় না। যুগে যুগে মুসলমানদের মধ্যে এমনও দেখা গেছে এবং এখনো হয়তো বা তেমন মুসলমান খুঁজে পাওয়া যাবে যারা পারলৌকিক কল্যাণ কামনায় বা কেবল আল্লাহ্ তাআলার সন্তুষ্টির জন্য ইহলোকে বিত্তশালী হওয়া প্রয়োজন মনে করেন না। এরা প্রচুর বিত্ত-বৈভবের অধিকারী হওয়ও জৌলুস-হীন জীবন যাপনে অভ্যস্ত। আল্লাহ্ তাআলার ইবাদতে বিঘœ ঘটতে পারে বিবেচনা করে ইহলৌকিক ভোগ-বিলাস তাঁরা এড়িয়ে চলেন। যেটুকু বৈষয়িক সম্পদ হাতে না রাখলে আল্লাহ্ তা’আলার ইবাদতে মনের একাগ্রতা নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, সে সামান্যটুকু হাতে রেখেই তাঁরা তুষ্ট। বৈষয়িকভাবে তাঁরা নিতান্তই দরিদ্র জীবন যাপন করলেও আত্মার পরিপুষ্টি ও সমৃদ্ধিতে তাঁরা অনেক মহান এবং উন্নত। এই উন্নত ও মহান আত্মা তাঁরা মহান আল্লাহ্র প্রতি নিবেদন করেন। কিন্তু তাই বলে ইসলাম দারিদ্র্যকে আদর্শায়িত করে না, যেমন হালাল পথে অর্জিত ধনও প্রয়োজনাতিরিক্ত নিজ অধিকারে রাখাকে প্রশ্রয় দেয় না। শরীয়তের বিধান অনুসারে উত্তরাধিকার বিধি ও যাকাত প্রদানের মাধ্যমে হালাল সম্পদের সুসমবণ্টনে ইসলাম বিশ্বাসী। ইসলাম দারিদ্র্যকে ভালবাসে, তবে দারিদ্র্যকে কামনা করেনা। এ নিবন্ধে দরিদ্র ও দারিদ্র্যকে প্রথমত পশ্চিমা বৈষয়িক দৃষ্টিকোন এবং দ্বিতীয়ত ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা করে এটাই দেখাতে চেষ্টা করা হয়েছে যে, ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনে দরিদ্র ও দারিদ্র্যের প্রতি ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গিই উত্তম।
আমরা সচরাচর দরিদ্র ও দারিদ্র্য শব্দ দুটি পশ্চিমা অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা করে থাকি। এই বিবেচনায় বস্তুগত দারিদ্র্যই প্রাধান্য পেয়ে থাকে যা মূলত বস্তুগত সম্পদের মালিকানা ও ভোগ বিলাসের উপর নির্ভরশীল। কিন্তু ইসলাম দরিদ্র ও দারিদ্র্যকে কেবল সে দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা করে না। ইসলামের দৃষ্টিতে দরিদ্রকে বৈষয়িক বা বস্তুগত দরিদ্র এবং আধ্যাত্মিক দারিদ্র্য। দরিদ্র যা ধর্মীয় মূল্যবোধ ও নৈতিকতার সাথে সম্পৃক্ত তা পশ্চিমা অর্থনৈতিক আলোচনায় তেমন একটা প্রাধান্য পায় না। এমন কি বস্তুগত দরিদ্র নিরসনের উপায় অবলম্বনের ক্ষেত্রেও যে ধর্মীয় মূল্যবোধ ও নৈতিক বিধিবিধান মেনে চলতে হয়, তার উপরও পশ্চিমা অর্থনীতি তেমন গুরুত্ব আরোপ করে না। আল্লাহ বলেন: “তোমরা একে অপরের সম্পত্তি অন্যায়ভাবে গ্রাস করো না”। ইসলাম এ ক্ষেত্রে মানবজাতিকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেয়, কারণ ইহকালই শেষ কথা নয়। ইহকালের কর্মকা-ের জন্য প্রত্যেককে পরকালে জবাবদিহি করতে হবে। তাই ইহকাল ও পরকালে কল্যাণকর এমন আর্থিক জীবন যাপনের প্রতি সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়ে আল্লাহ বলেন: “মানুষের মধ্যে যাহারা বলে, হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদিগকে ইহকালেই দাও বস্তুত পরকালে তাহাদের জন্য কোন অংশ নাই। আর তাহাদের মধ্যে যাহারা বলে, হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের দুনিয়াতে কল্যাণ দাও এবং আখিরাতে কল্যাণ দাও এবং আমাদিগকে অগ্নির শান্তি হইতে রক্ষা কর-তাহারা যা অর্জন করিয়াছে তাহার প্রাপ্য অংশ তাহাদেরই। বস্তুতঃ আল্লাহ হিসাব গ্রহণে অত্যন্ত তৎপর।” অধিকন্তু আল্লাহ আরো বলেন: “পার্থিব জীবন তো ক্রীড়া-কৌতুক ব্যতীত আর কিছুই নয় এবং যাহারা তাকওয়া অবলম্বন করে তাহাদের জন্য আখিরাতের আবাসই শ্রেয়; তোমরা কি অনুধাবন কর না?” কেননা “জীবমাত্রই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করিবে”। “এবং তোমাদের মৃত্যু হইলে অথবা তোমরা নিহত হইলে আল্লাহরই নিকট তোমাদিগকে একত্র করা হইবে।” আল্লাহ বলেন: “শুধু আমাকে ভয় কর”। সুতরাং এ আল্লাহভীতিই পার্থিব জীবনে ও পারলৌকিক জীবনে কল্যাণ ও সাফল্য অর্জনের প্রধান নিয়ামক। এ দৃষ্টিকোণ থেকেই আমাদেরকে দরিদ্র ও দারিদ্র্যের সংজ্ঞা নিরূপণ করতে হবে, পশ্চিমা নীতি-আদর্শহীন বস্তুগত অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে নয়।
দারিদ্র্য বিমোচন বলতে অর্থনৈতিক উন্নয়নকে বুঝানো হয়। দরিদ্র জনগোষ্ঠী যাতে দারিদ্র্য লাঘব এবং টেকসই (ঝঁংঃধরহধনষব) উন্নয়ন হয় সে জন্য তাদের কর্মসংস্থান বৃদ্ধির সাথে সাথে মাথাপিছু আয় এবং সঞ্চয়ও বৃদ্ধি পেতে হবে। যার ফলে তাদের নিজস্ব অর্থনৈতিক কর্মকান্ড সৃষ্টি এবং বিভিন্ন সামাজিক খাত-শিক্ষা, পুষ্টি, স্বাস্থ্য, বাসস্থান ইত্যাদি উন্নয়নের মাধ্যমে জীবনযাত্রার মান উন্নীত হয়। ধর্মসমূহেও দারিদ্র্য বিমোচন এবং নিঃস্বদের কল্যাণের জন্য উদাত্ত আহান রয়েছে। দারিদ্র্য বিমোচনে বিভিন্ন মানবীয় দর্শনের তুলনায় সেসবের অবদান ছিল অনবদ্য। আল-কুরআনুল কারীমে বিভিন্ন নবীর দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচী হিসেবে ‘যাকাত’ ব্যবস্থার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে ইব্রাহীম, ইসহাক ও ইয়াকুব আ. সম্পর্কে কুরআন ঘোষণা করেছে, আমি তাঁদেরকে ইমাম বানিয়েছি। তাঁরা আমার নির্দেশ অনুসারে পথ প্রদর্শন করতেন। আমি তাঁদের প্রতি ওহী নাযিল করলাম সৎকর্ম করার, সালাত প্রতিষ্ঠা করার এবং যাকাত দান করার জন্য। তাঁরা আমার ইবাদতে ব্যাপৃত ছিল।
তাওরাত ও ইনজীলের নতুন এবং পুরাতন নিয়মে দেখা যায়, বহুস্থানেই দুর্বল ও দরিদ্র লোকদের ্রতি সহৃদয়তা ও সহানুভূতিপূর্ণ আচরণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। নির্দেশ দেয়া হয়েছে বিধবা, ইয়াতীম, দুর্বল ও অক্ষম লোকদের অধিকার আদায়ের জন্য। আদি পুস্তকে বলা হয়েছে, ‘যে দরিদ্রকে দান করে, সে পরমুখাপেক্ষী হয় না। আর যে তার চক্ষুদ্বয় আড়াল করে, তার উপর অশেষ অভিসম্পাত।’ মথিতে বলা হয়েছে, যখন তুমি দান কর তখন তোমার দক্ষিণ হস্ত কি করছে তা বাম হস্তকে জানতে দিও না। এরূপে তোমার দান যেন গোপনে হয়, তাতে তোমার পিতা, যিনি গোপনে দেখেন, তিনি তোমাকে ফল দেবেন।’ (চলবে)
লেখক: পাঠানপাড়া, (খান বাড়ী), কদমতলী সদর, সিলেট-৩১১১।
বিভাগ : ধর্ম দর্শন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
রোমাঞ্চকর ম্যাচে বার্সাকে হারিয়ে শীর্ষে আতলেটিকো
জেসুসের জোড়া গোলের রাতে আর্সেনালের বড় জয়
বিলুপ্তির পথে মাটির ঘর
চোর সন্দেহে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ
প্রতিবন্ধী স্কুল শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের অভিযোগ
কেরু চিনিকলে আখ মাড়াই মৌসুমের উদ্বোধন
বিহারিরা কেমন আছে
লক্ষ্মীপুরে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি
আসাদ সরকারের পতন : নতুন সিরিয়ায় ইসরাইলি আগ্রাসন
মেটলাইফ বাংলাদেশের গ্রাহকরা ডিসকাউন্ট পাবেন ওশান প্যারাডাইস হোটেলস ও রিসোর্টে
১৫ নারী ও শিশুকে হস্তান্তর
আবাসন ও গার্মেন্ট খাতের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে
মেহেরপুরে বেড়েছে গরম কাপড় বিক্রি
কাশিয়ানীর হাট-বাজার নিষিদ্ধ পলিথিনে সয়লাব
অ্যানুয়াল বিজনেস কন্টিনিউয়িটি প্ল্যান ড্রিল ২০২৪ আয়োজন করলো ব্র্যাক ব্যাংক
সমস্যায় জর্জরিত আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স
সবুজ গালিচায় হলুদের সমারোহ
আখাউড়ায় ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের মেধা বৃত্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত
নিউ ইয়র্কের আদালতে অভিযুক্ত লুইজি
কিউবায় সমাবেশ