আল্লাহর বিশেষ দুটো নিয়ামত
১৬ মে ২০২৪, ১২:০৪ এএম | আপডেট: ১৬ মে ২০২৪, ১২:০৪ এএম
আল্লাহর অসংখ্য নিয়ামতে মধ্যে আমরা ডুবে আছি। তাঁর দেয়া প্রতিটি নিয়ামতই যথাস্থানে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এই অসংখ্য নিয়ামতরাজীর মধ্যে দু’টো নিযামত এমন যার কৃতজ্ঞতা আদায় করে শেষ করা যাবে না। নিয়ামত দুটো হচ্ছে: এক, আমাদের হিদায়াতের জন্য আল কুরআন দুই, পথ প্রর্শনের জন্য একজন নবী দিয়েছেন যাঁর নাম মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাল্লাহ সা:। দুটো নিয়ামতকে আল্লাহ তা’আলা ‘আজিম’ অর্থাৎ মহান বলে উল্লেখ করেছেন।
প্রথম নিয়ামত আল কুরআন: আল-কুরআন আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের পক্ষ থেকে সর্বশেষ বিশ্বমানবতার একমাত্র মুক্তির সনদ। এ মহাগ্রন্থ ছাড়া মানুষের মুক্তির চিন্তা করা একটি বাস্তবতাকে উপেক্ষা করা ছাড়া আর কিছুই নহে। বর্তমান এ বিপর্যস্ত পৃথিবীটাই এর প্রধান স্বাক্ষী। সারা পৃথিবী জুড়ে মানব রচিত বা মানুষের মস্তিষ্ক তৈরী আইন ও কানুন দিয়ে শান্তি আনয়নের চেষ্টা সাধনা করা হচ্ছে। কিন্তু শান্তি তো দুরের কথা, বরং মানুষের জীবন দুর্বিসহ হয়ে উঠছে। আমরা অবশ্যই একথা স্বীকার করতে বাধ হব যে, আল্লাহ আমাদের একমাত্র সৃষ্টিকর্তা, তার পাশাপাশি অবশ্যই আমাদেরকে একথাটিও স্বীকার করতে হবে যে, সেই সৃষ্টিকর্তাই একমাত্র জানেন, কিসে মানুষের শান্তি এবং কিসে অশান্তি।
আল্লাহর সিরাতুল মুস্তাকিমের পথে কুরআনই একমাত্র সঠিক ও নির্ভুল গাইড। দৈনন্দিন জীবনে কুরআনই আমাদের শক্তিশালী মিত্র। শয়তানের বিরুদ্ধে এবং কুরআনের পথের সংগ্রামে এ কিতাব আমাদেরকে শক্তি যোগাবে। আল্লাহর অশেষ মেহেরবানী ও আমাদের সূভাগ্য যে, আজো অবিকৃত অবস্থায় আল-কুরআন আমাদের কাছে আছে যা অন্য কোন জাতি বা সমপ্রদায়ের কাছে নাই। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় যে, কুরআন তেলাওয়াত, অধ্যয়নে আমরা আমাদের মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে এর সাথে জড়িত হই না । কুরআন থেকে পুরোপুরি ও সত্যিকার হেদায়াত লাভ সম্ভব নয়, যতক্ষণ পর্যন্ত এর অর্থ অনুধাবন করা না যায় । শুধু মাত্র সওয়াবের উদ্দেশ্যে তেলাওয়াত করা এবং পবিত্র গ্রন্থ, আধ্যাত্থিকতার প্রতীক, পবিত্র মুজেজা ইত্যাদি বলে চিত্তকে শান্ত করার জন্য এ কিতাব অবতীর্ণ হয়নি । বরং কুরআন এসেছে মানব জীবনের আমূল পরিবর্তন করে দিতে এবং নবজীবনের দিকে পরিচালিত করতে।
গোটা পৃথিবীটা মুসলমানদের জন্য সংকীর্ণ হয়ে যাচ্ছে কেন? উত্তর হচ্ছে, একমাত্র আল কুরআন থেকে দুরে সরে যাওয়ার কারনে এবং কুরআনের কিছু অংশ মানা ও কিছু অংশ ছেড়ে দেওয়ার কারনে। সুরা ত্বা-হা তেই আল্লাহ বলেন,”আর যে ব্যক্তি আমার যিকির (কুরআন) হতে বিমুখ হবে তার জন্য দুিনয়ায় হবে সংকীর্ণ জীবন, আর কিয়ামতের দিন আমরা তাকে অন্ধ করে উঠাব। সে বলবে “হে আমার রব ! দুনিয়ায় আমি চক্ষুস্মান ছিলাম। কেন আমাকে অন্ধ করে তুললে ? আল্লাহ বলবেন, হাঁ এমনি ভাবেই তো আমার আয়াতগুলি যখন তোমার নিকট এসেছিল তুমি তখন তা ভূলে গিয়েছিলে। ঠিক সে ভাবেই আজ তোমাকেও ভুলে যাওয়া হচ্ছে। এ ভাবেই আমরা সীমালংঘনকারী এবং যে তার রবের আয়াতের উপড় ঈমান আনে না আর পরকালের আযাবই হচ্ছে খুব কঠিন এবং অধিক স্থায়ী।” (সুরা ত্বা-হা-১২৪-১২৭)
এতবড় নিয়ামত আল্লাহ তা’আলা আমাদের দান করলেন, কিন্তু আমরা তাকে বাস্তুচ্যুত্য করেছি। অর্থাৎ আমাদের জীবনের সর্বস্তর থেকে কুরআনকে উচ্ছেদ করেছি। এজন্য রাসুলুল্লাহ সা: আল্লাহর কাছে অভিযোগ করবেন ঃ-”হে আমার আল্লাহ! আমার জাতির লোকেরা এই কুরআনকে বাস্তুচুত্য করেছে।” (সুরা ফুরকান-৩০) যারা কুরআনের সমাজ ব্যবস্থা কায়েমের দাওযাত দেয়না বরং এর আদেশ-নিষেধকে গোপন করে তাদের শাস্তি সম্পর্কে আল কুুরআনের ঘোষনা হচ্ছে, “যারা আমার নাযিল করা উজ্জল আদর্শ ও জীবন ব্যবস্থা গোপন করে রাখবে অথচ আমরা তা সমগ্র মানুষের পথ-প্রদর্শনের জন্য নিজ কিতাবে সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছি। নিশ্চিত জেনো, আল্লাহ তাদের উপড় লানত করছেন, আর অন্যান্য সকল লানতকারীও তাদের উপড় অভিশাপ নিক্ষেপ করছে।”(সুরা বাকারা: ১৫৯) আল কুরআনে আরো বলা হয়েছে, ”বস্তুত যারা আল্লাহর দেয়া কিতাবের আদেশ-নিষেধ গোপন করে এবং সামান্য বৈষয়িক স্বার্থের জন্য তাকে বিসর্জন দেয়, তারা মূলতঃ নিজেদের পেট আগুনের দ্বারা ভর্তি করে। কিয়ামতের দিন আল্লাহ কখনই তাদের সাথে কথা বলবেন না, তাদেরকে পবিত্র বলেও ঘোষনা করবেন না। তাদের জন্য কঠিন পীড়াদায়ক শাস্তি নির্দিষ্ট রয়েছে।(সুরা বাকারা: ১৭৪) তাছাড়া কুরআনের কিছু অংশ পালন করে কিছু অংশের প্রতি ভ্রুক্ষেপই করে না তাদের সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, ”তবে তোমরা কি কিতাবের একটি অংশ বিশ্বাস কর এবং অন্য অংশ অবিশ্বাস কর ? জেনে রাখ, তোমাদের মধ্যে যাদেরই এ রূপ আচরণ হবে, তাদের এতদ্ব্যতীত আর কি শাস্তি হতে পারে যে, তারা পার্থিব জীবনে অপমানিত এবং লাঞ্ছিত হতে থাকবে এবং পরকালে তাদেরকে কঠোরতম শাস্তির দিকে নিক্ষেপ করা হবে। তোমরা যা কিছু করছো,তা আল্লাহ মোটেই অজ্ঞাত নন।”(সুরা বাকারা: ৮৫)
বর্তমান বিশ্বের মুসলমানদের অবস্থা এ আয়াতের বর্র্ণনার সাথে হুবহু মিলে যায়। প্রকৃতপক্ষেই আমরা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে আল কুরআনের সহজ ও সরল হুকুম গুলো ঘটা করে পালন করে যাচ্ছি, কিন্তু জীবনের অধিকাংশ সমস্যার সমাধানের জন্য ধারস্থ হচ্ছি মানব রচিত মতবাদের কাছে। যার ফলে পার্থিব জীবনে আমরা বিশ্বময় অপমানিত ও লাঞ্জিত হচ্ছি । কুরআনের সাথে কি ধরনের আচরণ করা হচ্ছে সে সম্পর্কে অবশ্যই আল্লাহ জিজ্ঞাস করবেন, “যারা কুরআনকে টুকরো টুকরো করেছে। সুতরাং তোমার মালিকের শফথ, ওদের সবার কাছে আমি অবশ্যই প্রশ্ন করবো। সে সব বিষয়ে, যা কিছু আচরণ তারা কুরআনের সাথে) করতো। (সুরা হিজর-৯১-৯৩) আসলে নিয়ামত যত বড় হবে, বিপরীত দিকে তার প্রতি অকৃতজ্ঞ হলে তার শাস্তিও তত বড় হওয়া বিবেকের দাবী। এত বড় একটি নিয়ামত পাওয়ার পরও মুসলমানগণ তার কৃতজ্ঞতা করার কথা ছিল, তার শিক্ষাকে মানুষের ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের সকল স্তরে পৌঁছে দেয়া । কিন্তু দু:খের বিষয় হলো, আমরা কুরআনের শিক্ষা থেকে ছিটকে পড়েছি। সুতরাং আসুন এই নিয়ামতের কৃতজ্ঞতা আমরা এমনভাবে পালন করবো যে, কুরআনের আলো জে¦লে জে¦লে মৃত্যুমুখে নিপতিত হবো। কেউ পছন্দ করুক আর না-ই করুক।
দ্বিতীয় নিয়ামত মুহাম্মদ সা: আমাদের দ্বিতীয় নিয়ামত পৃথিবী বিখ্যাত পথ প্রদর্শক মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সা:। তিনি আমাদের কালেমার পতাকাবাহী শেষ নবী, বিশ্ব নবী ও বিশ^ নেতা। তিনি জীবনের সকল দিক ও বিভাগে আমূল পরিবর্তন করে সমগ্র সমাজ সভ্যতাকে আল্লাহর রং এ রঞ্জিত করে গেছেন। তিনি নিছক এমন কোন ধর্মীয় নেতা ছিলেন না যে, শুধুমাত্র মসজিদে বসে মানুষদেরকে ধর্মীয় বাণী শুনাতেন অথবা শুধুমাত্র অধিকাংশ সময় ধ্যানে মগ্ন থাকতেন। আর সšু‘ষ্টি চিত্রে বাইরের পৃথিবীর নেতৃত্ব ছেড়ে দিয়েছিলেন অসৎ, আল্লাহ বিমুখ তাগুতী শক্তির হাতে। কুরআন হাদীস স্বাক্ষী তিনি এমনটি করার জন্য প্রেরিত হননি। বরং পৃথিবীর অসংখ্য খোদার নাগপাশ থেকে সমাজ ও সভ্যতাকে মুক্ত করে এক আল্লাহর গোলামে পরিণত করার সকল কর্মসূচী গ্রহণ করেছিলেন। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন: “তিনিই তো তার রাসুলকে হেদায়াত ও সত্য দ্বীন সহকারে পাঠিয়েছেন, যেন এটিকে অন্যান্য সর্বপ্রকার দ্বীনের উপর বিজয়ী করে দেন-তা মুশরিকদের যতই অপছন্দ হউক না কেন।”(সুরা আছ-ছফ-৯) এবং এটিই রাসুলুল্লাহ সা: এর প্রকৃত সুন্নাহ। এই সুন্নাহর অনুসরণ ব্যতিরেখে তাঁকে ভালবাসার আর যত কিছুই প্রকাশ করুন না কেন, তাহবে ম্যকি ভালবাসা।
তিনি আল্লাহর পক্ষ থেকে যে হেদায়াত তথা আল কুরআন ও সত্য দ্বীন তিনি পেয়েছেন তা মানুয়ের গোটা জীবন ব্যবস্থার প্রত্যেকটি বিভাগে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। যেখানে কেবলমাত্র আল্লাহর আনুগত্য ও বিধানই বিজয়ী ছিল। সেখানে আল্লাহর আনুগত্য ও বিধানের বিপরীত সকল প্রকার চিন্তা, চেতনা নাম মাত্রও ছিল না। আর এটিই তাঁর কাজ এবং এ কাজ তাঁকে অবশ্যই করতে হয়েছে। কাফের ও মুশরিকরা মেনে লয় তবুও, না মেনে নেয় তবুও এবং বিরোধীতা ও প্রতিরোধের মুখে সমগ্র শক্তির মোকাবেলা করে রাসুল সাঃ এ ‘মিশন’ অবশ্যই পুর্ণ করতে হয়েছে।পাহাড়সম বাধা আর বিরোধীতা নিয়ে তাবত তাগুতি শক্তির সাথে লড়ে গেছেন। এ জন্য তাঁকে অসংখ্য নির্যাতন, দুঃখ-কষ্ট, কঠিণ ষরযন্ত্রসহ অত্যাধিক সুযোগ-সুবিধা প্রদানের লোভনীয় অফারের সম্মুখীনও হতে হয়েছে। কিন্তু কোন কিছুই তার মিশনকে সম্মুখে এগিয়ে নেয়ার পথ রোধ করতে পারিনি। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় যে, আমরা দৈনন্দিন কুরআনের সাথে যে ধরনের আচরণ করে যাচ্ছি, আল্লাহর রাসুল সাঃ এর জীবন চরিতের সাথে ঠিক সে আচরণই করে যাচ্ছি। প্রত্যেকেই আমরা নিজেদের সুবিধা অনুযায়ী কুরআনকে যেমন শতধা ভাগ করেছি। আল্লাহর রাসুল সাঃ চরিত্রকেও আমরা আমাদের সুবিধা মত ভাগ করে বিশেষ অংশের উপর আমল করে যাচ্ছি। এটি রাসুলুল্লাহ সা: এর চরিতের সাথে সুস্পষ্ট অসদাচরণ।
আমরা এই নিয়ামতের কৃতজ্ঞতা এমনভাবে পালন করবো যে, মৃত্যু অবদি তাঁর সুন্নাহর আলোকে সমাজের সর্বস্তরে আল্লাহর আনুগত্যকে প্রতিষ্ঠা করার সংগ্রাম চালিয়ে যাবো।
লেখক: গবেষক, ইসলামী চিন্তাবিদ।
বিভাগ : ধর্ম দর্শন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
রোমাঞ্চকর ম্যাচে বার্সাকে হারিয়ে শীর্ষে আতলেটিকো
জেসুসের জোড়া গোলের রাতে আর্সেনালের বড় জয়
বিলুপ্তির পথে মাটির ঘর
চোর সন্দেহে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ
প্রতিবন্ধী স্কুল শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের অভিযোগ
কেরু চিনিকলে আখ মাড়াই মৌসুমের উদ্বোধন
বিহারিরা কেমন আছে
লক্ষ্মীপুরে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি
আসাদ সরকারের পতন : নতুন সিরিয়ায় ইসরাইলি আগ্রাসন
মেটলাইফ বাংলাদেশের গ্রাহকরা ডিসকাউন্ট পাবেন ওশান প্যারাডাইস হোটেলস ও রিসোর্টে
১৫ নারী ও শিশুকে হস্তান্তর
আবাসন ও গার্মেন্ট খাতের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে
মেহেরপুরে বেড়েছে গরম কাপড় বিক্রি
কাশিয়ানীর হাট-বাজার নিষিদ্ধ পলিথিনে সয়লাব
অ্যানুয়াল বিজনেস কন্টিনিউয়িটি প্ল্যান ড্রিল ২০২৪ আয়োজন করলো ব্র্যাক ব্যাংক
সমস্যায় জর্জরিত আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স
সবুজ গালিচায় হলুদের সমারোহ
আখাউড়ায় ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের মেধা বৃত্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত
নিউ ইয়র্কের আদালতে অভিযুক্ত লুইজি
কিউবায় সমাবেশ