আল কুরআনে ‘নূর’ প্রসঙ্গ-১
২৩ মে ২০২৪, ১২:০৪ এএম | আপডেট: ২৩ মে ২০২৪, ১২:০৪ এএম
আরবী ‘নূর’ শব্দটি বিশ্ব মুসলিম মিল্লাতের মাঝে এমনভাবে জড়িয়ে আছে যে, তাদের দৈহিক ও পারলৌকিক উভয় জীবন ধারার সাথেই নূরের আলোকচ্ছটা নিবিঢ় সম্পর্ক স্থাপন করে আছে এবং আলমে বরযখেও এর বেশ অবিচ্ছিন্ন রয়েছে। “আল্লাহই জ্যোতি এবং তিনি স্বীয় জ্যোতিতে নিখিল বিশ্বে ও মানুষের নিকট প্রকাশিত হয়ে থাকেন।” এই মতবাদ বহু প্রাচীন এবং প্রাচ্যের ধর্ম সমূহে এবং পাশ্চাত্যের গ্রীক জ্ঞান-বিজ্ঞান ও দর্শন শাস্ত্রের সর্বত্রই এই মতবাদ পরিব্যাপ্ত। এ স্থলে এর প্রাথমিক ইতিহাস পর্যালোচনা করা সম্ভব নয়। বর্তমানে প্রচলিত বাইবেলে [যদিও তা’ মূল বাইবেল নয়। কারণ মার্ক, মথি, জন ও ইউহান্নার বাইবেলে অসংখ্য অসঙ্গতি ও দ্বিরুক্তি পরিলক্ষিত হয়] উক্ত রূপ মতবাদের প্রতি ইঙ্গিত পাওয়া যায়।
মনে রাখা দরকার যে হযরত আদম (আ:) হতে শুরু করে নূর নবী হযরত মোহাম্মদ মোস্তাফা আহমাদ মুজতাবাক (সা:) পর্যন্ত বহু নবী ও রাসূলের নিকট আল্লাহ পাক একশত চারখানা আসমানী-কিতাব নাযিল করেছেন। তন্মধ্যে চারখানা হলো বড় বা বৃহৎ কিতাব। এবং একশত খানা হলো ছোট কিতাব বা সহীফা। বৃহৎ কিতাবের মধ্যে তৌরিত হযরত মূসা (আ:) এর উপর নাযিল হয়েছে। যাবুর হযরত দাউদ (আ:) এর উপর নাযিল হয়েছে। ইঞ্জিল বা বাইবেল হযরত ঈসা (আ:)-এর উপর নাযিল হয়েছে। সর্বশেষ আসমানী কিতাব আল কুরআন যা পূর্ববর্তী সমস্ত আসমানী কিতাব রহিতকারী তা’ নাযিল হয়েছে আখেরী নবী ও রাসূল মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা:) এর উপর। সহীফা বা ছোট কিতাবগুলো আল কুরআন নাযিল হওয়ার পূর্বে নাযিল হয়েছে। তবে, একমাত্র আল কুরআন ছাড়া অন্যান্য আসমানী কিতাব সমূহে পরিপূর্ণ ইসলামের দিক নির্দেশনাও নূরের বিশ্লেষণ নেই পূর্ণাঙ্গ ইসলামের বিধান জারী হয়েছে আল কুরআনের মাধ্যমে। পূর্ববর্তী আসমানী গ্রন্থগুলোতে উপরোক্ত প্রবাদ বাক্যের প্রতি ইঙ্গিত দ্বারা আর কোন নির্ভূল বাক্য এই ‘জ্যোতি’বা ‘নূর’ সম্পর্কে নেই। কিন্তু আল কুরআনে এই জ্যোতি বা নূর সম্পর্কে উনপঞ্চাশটি আয়াত রয়েছে। যেমন (১) ‘আন্নুরু’ এবং আন্নুরী রূপে এসেছে চব্বিশ বার। আল কুরআনের ২নং সূরা আল বাকারাহ-এর ২৫৭ নং আয়াতে এসেছে দু’বার। ৫নং সূরা আল মায়েদাহ-এর ১৫, ১৬, ৪৪, ৪৬ নং আয়াতে এসেছে চার বার। ৬নং সূরা আলআন আমের এক নং আয়াতে এসেছে একবার। ৭নং সূরা আল আ’রাফের ১৫৭ নং আয়াতে এসেছে একবার। ৯নং সূরা আত্ তাওবাহ-এর ৩২ নং আয়াতে এসেছে একবার। ১২ নং সূরা আররায়াদ-এর ১৬ নং আয়াতে এসেছে একবার। ১৪ নং সূরা ইব্রাহীম-এর ১নং আয়াতে ও ৫নং আয়াতে এসেছে দু’বার। ২৪ নং সূরা আন্ নূর-এর ২৫ নং আয়াত ও ৪০ নং আয়াতে এসেছে চার বার। ৩৩ নং সূরা আল আহযাবের ৪৩ নং আয়াতে এসেছে একবার। ৩৫ নং সূরা আল ফাতির-এর ২০নং আয়াতে এসেছে একবার। ৩৯ নং সূরা আয যুমার-এর ২২ নং আয়াত ও ৬৯ নং আয়াতে এসেছে দু’বার। ৫৭ নং সূরা আলহাদীদ-এর ৯নং আয়াতে এসেছে একবার। ৬১ নং সূরা আসসফ-এর ৮নং আয়াতে এসেছে একবার। ৬৪ নং সূরা আত্ তাগাবুল-এর ৮নং আয়াতে এসেছে একবার। ৬৫ নং সূরা আত্ তালাক-এর ১১ নং আয়াতে এসেছে একবার। একুনে মোট চব্বিশ বার।
আর (২) ‘নূরান’ রূপে আল কুরআনে শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে নয় বার। যেমন ৪নং সূরা আন্নিসা-এর ১৭৪ নং আয়াতে একবার ৬নং সূরা আল আনয়ামের ৯১ নং আয়াতে ও ১২২নং আয়াতে দু’বার। ১০নং সূরা ইউনুসের ৫নং আয়াতে একবার। ২৪ নং সূরা আন্ নূর-এর ৪০ নং আয়াতে একবার। ৪২ নং সূরা আশ্ শুরা এর ৫২ নং আয়াতে একবার। ৫৭ নং সূরা আল হাদীদ-এর ১৩নং আয়াতে ও ২৮ নং আয়াতে দু’বার। ৭১ নং সূরা নূহের ১৬নং আয়াতে একবার। মোটকথা, ‘নূরান রূপে শব্দটি আল কুরআনে নয় বার এসেছে।
আর (৩) সম্বন্ধপদ ‘নূরাহু’ এবং ‘নূরিহি’ রূপে শব্দটি আল কুরআনে ৪ বার এসেছে। যেমন ৯নং সূরা আত্ তাওবাহ এর ৩২নং আয়াতে একবার। ২৪ নং সূরা নূরের ৩৫ নং আয়াতে দু’বার। ৬১ নং সূরা আসসফ-এর ৮নং আয়াতে একবার। আর (৪) সম্বন্ধপদ ‘নূরুহুম’ রূপে শব্দটি আল কুরআনে এসেছে চারবার। যেমন নং ২ সূরা আল বাক্বারা এর ১৭ নং
আয়াতে একবার। ৫৭নং সূরা আল ্ হাদীদ এর ১২ ও ১৯ নং আয়াতে দুইবার। ৬৬ নং সূরা আত্তাহরীম-এর ৮নং আয়াতে একবার এসেছে।
আর (৫) সম্বন্ধপদ ‘নুরানা’ রূপে শব্দটি আল কুরআনে এসেছে একবার। যেমন ৬৬নং সূরা আত্ তাহরীম এর ৮নং আয়াতে এসেছে একবার।
আর (৬) সম্বন্ধপদ নুরীকুম রূপে শব্দটি আল কুরআনে এসেছে এক বার। যেমন ৫৭ নং সূরা আল্ হাদীদ এর ১৩ নং আয়াতে একবার এসেছে।
আর (৭) কর্তৃবাচ্য ‘আল্ মুনিরু’ রূপে শব্দটি আল কুরআনে এসেছে ৪ বার। যেমন ৩নং সূরা আলে ইমরান এর ১৭৪ নং আয়াতে একবার এসেছে। ২২ নং সূরা আল্ হাজ্জ-এর ৮নং আয়াতে একবার। ৩১ নং সূরা লুকমানের ২০নং আয়াতে একবার। ৩৫ নং সূরা আল ফাতির এর ২৫ নং আয়াতে একবার।
আর (৮) ‘মুনিরান্’ রূপে শব্দটি আল কুরআনে এসেছে দু’বার। যেমন ২৫ নং সূরা আল ফুরকানের ৬১ নং আয়াতে একবার। ৩৩ নং সূরা আহযাব-এর ৪৬নং আয়াতে একবার। উপরস্থ বর্ণনার সামষ্টিক যোগফল দাঁড়ায় (২৪+৯+১+১+৪+৪+৪+২) =৪৯ বার।
এখন দেখা যায় যে, ৪৯ সংখ্যাটি দু’টি সংখ্যার সংবন্ধতা। সংখ্যা দুটি হলো ৪ এবং ৯। ৪ সংখ্যাটি আরবী ‘আল্লাহ’নাম মোবারকের প্রতি ইঙ্গিত বহ। কেননা, আল্লাহ নামের বর্ণ সংখ্যা ৪। আর ৯ সংখ্যাটি আল্লাহ তায়ালার শ্রেষ্ঠত্ব ও অবিনশ্বরত্ত্ব এর সাক্ষ্য বহন করছে। “এবং নিশ্চয় আল্লাহতায়ালা সব কিছুর উপর ক্ষমতাবান” এ ঘোষণা জারী করছে। কেননা এ আয়াতে কারীমার অক্ষর সংখ্যা ১৮। উহার একক (১+৮)= ৯। অর্থাৎ পরিপূর্ণ শক্তির মালিক আল্লাহ। আর এই আয়াতটি আল কুরআনে ছয়বার এসেছে। যথা: ২নং সূরা বাক্বারাহ-এর ২০, ১০৬, ১০৯, ১৪৮, ২৫৯ নং আয়াতে ৫ বার এসেছে। এবং ৩৫ নং সূরা আল ফাতির-এর ১নং আয়াতে একবার এসেছে। মোট ৬ বার। অতএব (৯+৬)= ৫৪। উহার একক (৫+৪)= ৯। সুবহানাল্লাহ! আল্লাহ তায়ালা সকল অবস্থায়ই সব কিছুর উপর ক্ষমতাবান। তিনিই সকল নূরের মালিক ও অধীশ্বর।
মোটকথা, আল কুরআনে এই নূর বা জ্যোতি সম্পর্কে যে ৪৯টি আয়াত রয়েছে, তন্মধ্যে ২৪ নং সূরা নূর-এর ৩৫ নং আয়াতটি খুবই প্রসিদ্ধ এই আয়াতটিকে আয়াতে নূর বলা হয়। আয়াতে নূর-এর সরল বঙ্গানুবাদ হচ্ছে এই : “ আল্লাহতায়ালা আকাশ ও ভূম-লের জ্যোতি, তাঁর জ্যোতির উপমা যেমন একটি কুলঙ্গী বা দীপাধার। এর মধ্যে রয়েছে একটি প্রদীপ, প্রদীপটি কাঁচের মধ্যে স্থাপিত। সে কাঁচ যেন অত্যুজ্জল তারকা, সে প্রদীপ মঙ্গলময় যয়তুন বৃক্ষের তৈল দ্বারা প্রজ্জালিত করা হয়। সে যয়তুন না পূর্বদেশীয় আরনা পশ্চিম দেশীয়। এর তৈল এমন স্বচ্ছ ও উজ্জল যে তা’ নিজেই প্রায় প্রজ্জলিত হয়ে উঠে, যদিও একে অগ্নি স্পর্শ না করে; জ্যোতির উপর জ্যোতি। আল্লাহতায়ালা যাকে ইচ্ছা করেন তাকে স্বীয় জ্যোতির দিকে পথ প্রদর্শন করে থাকেন; আল্লাহ তায়ালা মানুষের জন্য রূপক বা উদাহরণ ব্যবহার করেন এবং তিনি সমস্ত বিষয়ে অবগত আছেন। ” তাছাড়া আল কুরআনের ৩৩ নং সূরা আল আহযাবের ৪৬ নং আয়াতে ঘোষণা করা হয়েছে যে, বিশ্ব নবী হযরত মোহাম্মাদ মোস্তাফা আহমাদ মুজতাবা (সা:) প্রদীপ রূপে প্রেরীত হয়েছেন। আবার ৬১ নং সূরা আসসফ-এর ৮নং আয়াতে বলা হয়েছে যে, ইসলাম আল্লাহর নূর। শুধু তা-ই নয় ৬৪ নং সূরা আত্ তাগাবুনের ৮নং আয়াতে বলা হয়েছে যে, আল কুরআন অবতীর্ণ নূর। সুতরাং উপরোক্ত বর্ণনা হতে এটা পরিস্ফুট হয়ে উঠে যে, ধর্ম জ্ঞানের জ্যোতি সম্পর্কে এবং যে সত্য আল্লাহতায়ালা স্বীয় রাসূলের মাধ্যমে তাঁর সৃষ্ট মানবকে বিশেষত মুমিনদেরকে জ্ঞাপন করেছেন, সে সত্য সম্পর্কে আমাদের চিন্তা করে দেখা উচিত। আল কুরআনের ২৪ নং সূরা নূরের ৪০ নং আয়াতে এই দিক নির্দেশনাই প্রদান করা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে : “অথবা তাদের (কাফেরদের) কাজ গভীর সাগরতলের অন্ধকারের মত, যাকে তরঙ্গের উপর তরঙ্গ আচ্ছন্ন করে, যার ঊর্ধ্বে মেঘপুঞ্জ, অন্ধকার পুঞ্জ স্তরের উপর স্তর, এমনকি সে হাত বের করলে তা’ আদৌ দেখতে পাবেনা। আর আল্লাহ তায়ালা যার জন্য নূর রাখেননি। তার জন্য কোন নূরই নেই।” সুতরাং এই ‘নূরকে’ নিছক আলোক আলোকের উপর আলোক, ‘নার’ বা অগ্নির সাথে এর কোন সংশ্রব নেই। যয়তুনের তৈলে তা প্রজ্জলিত হয়, সম্ভবত: ইহা পার্থিব বস্তু নয়। পরিশেষে বলা হয়েছে যে, আল্লাহ তায়ালাই সর্বজ্ঞরূপে মানুষকে উপদেশ প্রদান করেন এবং তিনিই-তাদেরকে তাঁর প্রত্যাদেশের আলোকের দিকে পরিচালিত করেন। আল কুরআনের ৬৪ নং সূরা তাগাবুনের ৮নং আয়াতে স্পষ্টভাবে বলে দেয়া হয়েছে যে, “অতএব তোমরা আল্লাহ তাঁর রাসূল এবং সে ‘নূর’ আমি নাযিল করেছি, তাতে ঈমান আন। আর তোমাদের কৃতকর্ম সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা সবিশেষ অবহিত।” এখানে ‘নূর’ বলে আল কুরআনকে বুঝানো হয়েছে।
বিভাগ : ধর্ম দর্শন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
আওয়ামী লীগ যা করেছে, বিএনপি তার বিপরীত কাজ করে সুন্দর সমাজ গড়বে- কেন্দ্রীয় শ্রমিক দলের নেতা ইয়াকুব চৌধুরী
রোমাঞ্চকর ম্যাচে বার্সাকে হারিয়ে শীর্ষে আতলেটিকো
জেসুসের জোড়া গোলের রাতে আর্সেনালের বড় জয়
বিলুপ্তির পথে মাটির ঘর
চোর সন্দেহে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ
প্রতিবন্ধী স্কুল শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের অভিযোগ
কেরু চিনিকলে আখ মাড়াই মৌসুমের উদ্বোধন
বিহারিরা কেমন আছে
লক্ষ্মীপুরে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি
আসাদ সরকারের পতন : নতুন সিরিয়ায় ইসরাইলি আগ্রাসন
মেটলাইফ বাংলাদেশের গ্রাহকরা ডিসকাউন্ট পাবেন ওশান প্যারাডাইস হোটেলস ও রিসোর্টে
১৫ নারী ও শিশুকে হস্তান্তর
আবাসন ও গার্মেন্ট খাতের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে
মেহেরপুরে বেড়েছে গরম কাপড় বিক্রি
কাশিয়ানীর হাট-বাজার নিষিদ্ধ পলিথিনে সয়লাব
অ্যানুয়াল বিজনেস কন্টিনিউয়িটি প্ল্যান ড্রিল ২০২৪ আয়োজন করলো ব্র্যাক ব্যাংক
সমস্যায় জর্জরিত আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স
সবুজ গালিচায় হলুদের সমারোহ
আখাউড়ায় ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের মেধা বৃত্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত
নিউ ইয়র্কের আদালতে অভিযুক্ত লুইজি