ইসলামে অমুসলিমদের ধর্মীয় স্বাধীনতা
০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:১৬ এএম | আপডেট: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:১৬ এএম
ধর্মীয় স্বাধীনতা বলতে আমরা বুঝি, মানুষ স্বীয় ইচ্ছানুযায়ী যে কোনো ধর্ম গ্রহণ করতে পারবে অথবা যে কোনো আকিদাভুক্ত হতে পারবে। অনুরূপভাবে সে কোনো ধর্ম বা আকিদা গ্রহণ না করেও থাকতে পারবে। অর্থাৎ যে কোনো ধর্ম বা আকিদা অবলম্বন করার বা না করার তার পূর্ণ স্বাধীনতা রয়েছে। এতে তাকে কেউ জোর-জবরদস্তি করতে পারবে না। তবে তাকে জান্নাতের আশা ও জাহান্নামের ভয় দেখিয়ে এবং যুক্তি-তর্ক দ্বারা ইসলামের সুমহান আদর্শের দিকে আহবান করা যাবে।
ইসলাম একদিকে যেমন মানুষকে কোনো ধর্ম গ্রহণ করা বা না করার স্বাধীনতা প্রদান করেছে, অন্যদিকে যে কোনো মানুষকে ইসলামের দিকে আহবান করারও অধিকার দিয়েছে। কিন্তু জোর-জবরদস্তি করে কাউকে ধর্মে প্রবেশ করানো অবৈধ ঘোষণা করেছে। মদিনার আনসারগণের মধ্যে এক ব্যক্তির দুই পুত্র রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আবির্ভাবের পূর্বে খ্রিস্ট ধর্ম গ্রহণ করে। অতঃপর পুত্রদ্বয় যখন মদিনায় আগমন করে তখন তাদের পিতা তাদেরকে বল প্রয়োগ করে ইসলামে প্রবেশ করাতে চাইলে তারা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট অভিযোগ করে। তখন আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে আয়াত নাজিল হয়, ্রদীনের ব্যাপারে কোনো জোর-জবরদস্তি নেই। কেননা ভ্রান্ত মত ও পথ থেকে সঠিক মত ও পথ দিবালোকের ন্যায় উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে।গ্ধ (সুরা আল-বাকারাহ, আয়াত নং-২৫৬)। কেউ কেউ বলেন, উক্ত আয়াতে কারিমার বিধান পরবর্তীতে নাজিলকৃত কিতালের নিম্নোক্ত আয়াতে কারিমা দ্বারা মানসুখ বা রহিত হয়ে গিয়েছে, ্রহে নবি! আপনি কাফির ও মুনাফিকদের বিরুদ্ধে জিহাদ করুন এবং তাদের প্রতি কঠোর নীতি গ্রহণ করুন। তাদের চূড়ান্ত পরিণতি জাহান্নামে এবং পরিণতি হিসেবে তা অত্যন্ত দুঃখময় স্থান।গ্ধ (সুরা আত-তাহরিম, আয়াত নং-৯)। অনুরূপভাবে আল্লাহ তাআলার বাণী, ্রহে নবি! আপনি কাফির ও মুনাফিকদের যেখানেই পান হত্যা করুন।গ্ধ (সূরা আত-তাওবাহ, আয়াত নং-৫)।
মূলত কিতাল সংক্রান্ত আয়াতে কারিমা ঐ সকল লোকের জন্য প্রযোজ্য যারা ইসলামের ক্ষতি সাধন করে। মূল কথা হলো, ইসলামে দীক্ষিত হওয়ার জন্য কোনো প্রকার বাধ্যবাধকতা নেই। তবে ইসলামে দীক্ষিত হওয়ার পর ধর্মকে নিয়ে তাল-বাহানা করারও কোনো সুযোগ নেই।
আরব পৌত্তলিকদের মহানবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি চরম নির্যাতন সত্ত্বেও তিনি তাদের সাথে শক্তি প্রদর্শনের কোনো পন্থাই অবলম্বন করেননি। কেননা তিনি নিজের ও অন্যদের জন্য ধর্মীয় স্বাধীনতাই চেয়েছিলেন। যেমন আল্লাহ রাব্বুল আলামিন নবি কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নির্দেশ দিয়ে বলেন, হে নবি! আপনি মুশরিকদের বলে দিন, তোমাদের জন্য তোমাদের ধর্ম এবং আমাদের জন্য আমাদের ধর্ম।” (সুরা আল-কাফিরুন, আয়াত নং-৭)। অন্য আয়াতে কারিমায় বলা হয়েছে, ্রহে নবি! আপনি পরিষ্কার বলে দিন, এ হচ্ছে সত্য তোমাদের রবের পক্ষ থেকে, এখন যে চায় সে তা গ্রহণ করুক এবং যে চায় অস্বীকার করুক। আমি (অস্বীকারকারী) জালিমদের জন্য জাহান্নাম অবধারিত রেখেছি।গ্ধ (সুরা আল-কাহফ, আয়াত নং-২৯)।
এ সকল আয়াতে কারিমা থেকে পরিস্কার বুঝা যায় যে, ইমান গ্রহণ বা কুফরি করা মানুষের ইচ্ছার উপর ছেড়ে দেয়া হয়েছে। অবশ্য মানুষের এ ইচ্ছা মহান আল্লাহর রহমতের উপর নির্ভরশীল। কেননা আল্লাহ তাআলা সকল বিষয় ও বস্তুর সৃষ্টিকর্তা। মানুষ তার কৃতকর্মের কারণেই পাপ-পুণ্যের অধিকারী হবে। এক্ষেত্রে বল প্রয়োগ করে ইসলাম গ্রহণে বাধ্য করার কোনো সুযোগ নেই। কারণ যে ধর্ম সত্য, তাতে দলভুক্ত করতে জোর-জবরদস্তি করতে হয় না। ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশের মাধ্যমেই অন্যান্য ধর্মালম্বীদের মন জয় করতে পারে। কেননা হক বাতিল হতে সম্পূর্ণরূপে পৃথকভাবে বিরাজমান। সুতরাং শক্তি প্রয়োগের প্রয়োজনই বা কী?
মুসলমানদের ধর্ম ও জীবন ব্যবস্থার সঙ্গে অন্যদের জীবন ব্যবস্থার কোনোই সামঞ্জস্যতা নেই। যেহেতু এতদুভয়ের মধ্যে বিস্তর প্রভেদ রয়েছে, তাই এদের সমঝোতা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। তাই ধর্মের প্রচার ও প্রসারতার জন্য জবরদস্তির কোনো প্রয়োজন নেই। ধর্ম গ্রহণ ও বর্জনের ব্যাপারে ইসলামে পূর্ণ স্বাধীনতা দেয়া হয়েছে। এ মর্মে রাসুলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে উদ্দেশ্য করে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ইরশাদ করেন, ্রহে নবি! আপনি উপদেশ দিন, আপনিতো কেবল একজন উপদেশদাতা, আপনি তাদের শাসক নন।গ্ধ (সুরা আল-গাশিয়াহ, আয়াত নং-২১-২২)।
বাক স্বাধীনতা এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতা যেমন মানুষের মর্যাদার জন্য অপরিহার্য, তেমনি তা কোনো আদর্শ প্রচারের জন্যও অপরিহার্য। ইসলামের ন্যায় একটি জীবনাদর্শের পক্ষে বাক স্বাধীনতা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে অস্বীকার করা সম্ভব নয়। বস্তুত ইসলাম এই নীতিকে এমন দৃঢ়ভাবে সমর্থন করে, যা পৃথিবীতে অন্য কোনো মতাদর্শে বা ধর্মে দেখা যায় না। ইসলাম ধর্মের প্রচার ও প্রসারের জন্য শক্তি প্রয়োগের কোনো অনুমতি দেয়া হয়নি। ইসলাম এ ধরনের কার্যক্রমকে আদৌ সমর্থন করে না। বরং পবিত্র কুরআনুল কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ্রআপনি পালনকর্তার পথের প্রতি আহবান করুন জ্ঞানের কথা বুঝিয়ে ও উত্তম উপদেশ শুনিয়ে এবং তাদের সাথে বিতর্ক করুন পছন্দনীয় পন্থায়।গ্ধ (সুরা আন-নাহল, আয়াত নং-১২৫)। আবার অন্য আয়াতে বলা হয়েছে, ্রমন্দের জবাবে তাই বলুন, যা উত্তম।গ্ধ (সুরা আল-মুমিনুন, আয়াত নং-৯৬)।
ইসলাম অমুসলিমদের ধর্মীয় উৎসব ও পর্বসমূহ পালনের সম্পূর্ণ স্বাধীনতা প্রদান করেছে। অবশ্য এটা রাষ্ট্রীয় আইন কানুনের সীমার মধ্যে হতে হবে। এছাড়া মুসলিম রাষ্ট্রে বসবাসরত অমুসলিমদের সকল প্রকার লেনদেন ও কাজ-কারবারের স্বাধীনতা দেয়া হয়েছে। সুতরাং অমুসলিমদের কোনো ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানে বাধা দেয়া যাবে না।
অমুসলিমদের উপর ইসলামের বদান্যতার উদাহরণের মাধ্যমে সহজেই বুঝা যায় যে, যদি কোনো মুসলমানের স্ত্রী খ্রিস্টান বা ইয়াহুদি হয়, তবে মুসলমান স্বামী ঐ স্ত্রীকে তাদের গির্জায় যেতে নিষেধ করতে পারবে না। বরং বিনা দ্বিধায় তাকে তার ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদি পালনে স্বাধীনতা দিতে হবে।
এছাড়া মুসলমানদের খ্রিস্টান ও ইয়াহুদিদের শূকর বধ নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং তাদের মদের পাত্রও ভেঙে ফেলতে নিষেধ করা হয়েছে। কেননা তারা শূকরের মাংস ভক্ষণ ও মদ্যপানে অভ্যস্ত। অনুরূপভাবে ইসলাম অমুসলিমদেরকে তাদের ব্যক্তিগত ক্রিয়া-কর্ম পালনে সম্পূর্ণ স্বাধীনতা প্রদান করেছে। যেমন তাদের বৈবাহিক বন্ধন, তালাক, উত্তরাধিকার আইন ইত্যাদি।
ইসলামে অমুসলিমদের ধর্মীয় স্বাধীনতার ব্যাপারে নিম্নোক্ত ঘটনাটি অতি চমকপ্রদ- একদা নজরান গোত্রীয় খ্রিস্টানদের একদল দূত রাসুলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট আগমন করে। তারা আসরের নামাজের পর মসজিদে নববিতে প্রবেশ করে। তখন তাদের উপাসনার সময় উপস্থিত হয়। তারা উপাসনার জন্য দন্ডায়মান হলে কতিপয় মুসলমান তাদেরকে বাধা প্রদানের চেষ্টা করলে রাসুলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদেরকে নিষেধ করলেন এবং বললেন, তাদেরকে তাদের উপাসনা করতে দাও। এরপর তারা পূর্বমুখী হয়ে তাদের উপাসনা সম্পন্ন করলো। (চলবে)
লেখক: আলেম, প্রাবন্ধিক ও কলেজ শিক্ষক।
বিভাগ : ধর্ম দর্শন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
রোমাঞ্চকর ম্যাচে বার্সাকে হারিয়ে শীর্ষে আতলেটিকো
জেসুসের জোড়া গোলের রাতে আর্সেনালের বড় জয়
বিলুপ্তির পথে মাটির ঘর
চোর সন্দেহে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ
প্রতিবন্ধী স্কুল শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের অভিযোগ
কেরু চিনিকলে আখ মাড়াই মৌসুমের উদ্বোধন
বিহারিরা কেমন আছে
লক্ষ্মীপুরে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি
আসাদ সরকারের পতন : নতুন সিরিয়ায় ইসরাইলি আগ্রাসন
মেটলাইফ বাংলাদেশের গ্রাহকরা ডিসকাউন্ট পাবেন ওশান প্যারাডাইস হোটেলস ও রিসোর্টে
১৫ নারী ও শিশুকে হস্তান্তর
আবাসন ও গার্মেন্ট খাতের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে
মেহেরপুরে বেড়েছে গরম কাপড় বিক্রি
কাশিয়ানীর হাট-বাজার নিষিদ্ধ পলিথিনে সয়লাব
অ্যানুয়াল বিজনেস কন্টিনিউয়িটি প্ল্যান ড্রিল ২০২৪ আয়োজন করলো ব্র্যাক ব্যাংক
সমস্যায় জর্জরিত আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স
সবুজ গালিচায় হলুদের সমারোহ
আখাউড়ায় ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের মেধা বৃত্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত
নিউ ইয়র্কের আদালতে অভিযুক্ত লুইজি
কিউবায় সমাবেশ