ঢাকা   বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪ | ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

মুহম্মদ ঘুরী : ভারতে মুসলিম রাজত্বের প্রতিষ্ঠাতা-২

Daily Inqilab কায়কোবাদ মিলন

০৫ মে ২০২৩, ১১:০৫ পিএম | আপডেট: ২৫ জুন ২০২৩, ০৮:১৫ পিএম

১১৭২ খ্রিস্টাব্দে মুহম্মদ ঘুরী প্রথমবারের মতো মুলতানে অভিযান চালান। মুলতান তখন কারামতিয়া (শিয়া) সম্প্রদায়ের অধিকারে। মুলতানের শাসককে হারিয়ে তিনি উচের দিকে অগ্রসর হন। উচের রাজা দুর্গে অবস্থান গ্রহণ করেন এবং দুর্গ অধিকার অসম্ভব বিবেচিত হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে তিনি ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করেন। শেষ পর্যন্ত রাণীর বিশ্বাসঘাতকতার ফলে মুহম্মদ ঘুরী উচ অধিকার করতে পারেন। এরপর মুলতান ও উচের দায়িত্ব আলী কিরমানীর হস্তে ন্যস্ত করে তিনি গজনীতে ফিরে আসেন। ১১৭৮ খ্রিস্টাব্দে মুহম্মদ ঘুরী ফের মুলতান ও উচে আসেন এবং সেখান থেকে গুজরাটে অভিযান চালান। গুজরাটের রাজা ভীমদেব তার মোকাবিলা করেন এবং বিজয় অর্জন করেন। যুদ্ধে মুহম্মদ ঘুরীর ব্যাপক সৈন্যক্ষয় হয় এবং তিনিও গুরুতর আহত হন। কোনো রকমে প্রাণ বাঁচিয়ে তিনি গজনীতে ফিরে আসেন। এর এক বছর পরে ১১৭৯ খ্রিস্টাব্দে তিনি পেশোয়ারে অভিযান চালান ও অধিকার করেন। এর পরের বছর অর্থাৎ ১১৮০ খ্রিস্টাব্দে লাহোরে অভিযান চালান এবং শেষ গজনবী সুলতান খসরু মালিককে সন্ধি চুক্তিতে আবদ্ধ করে গজনীতে ফেরেন। পরের বছর সমুদ্র উপকূলীয় এলাকাসহ সিন্ধু অধিকার করেন। ১১৮৪ খ্রিস্টাব্দে তিনি ফের লাহোরে অভিযান চালান। এই অভিযানে শিয়ালকোট দুর্গ, রাবি ও চেনাব এলাকা তার অধিকারে আসে। তিনি তার আধিপত্য বজায় রাখতে হোসেন ফরমুনিকে তার প্রতিনিধি নিযুক্ত করেন। ১১৮৬ খ্রিস্টাব্দে মুহম্মদ ঘুরী তৃতীয়বারের মতো লাহোর আক্রমণ করেন এবং কৌশলে দুর্গ দখল করেন। খসরু মালিক ও তার পরিবারকে বন্দি করে ফিরোজকোহে পাঠান। তিনি ১১৯১ খ্রিস্টাব্দে আজমীর অভিযানে রওনা হয়ে বিতুন্ডা শহর অধিকার করেন। সেখানকার দায়িত্ব জিয়াউদ্দিনকে দিয়ে দেশে ফিরে আসেন। এমন সময় তিনি জানতে পারেন, আজমীরের রাজা পৃথ্বিরাজ ও তার ভাই দিল্লির রাজা চৌয়ান্দ রায় অন্যান্য ভারতীয় রাজপুত রাজার সঙ্গে মিলিত হয়ে ২ লাখ অশ্বারোহী ও ৩ হাজার হস্তি নিয়ে বিতুন্ডার দিকে অগ্রসর হন। মুহম্মদ ঘুরী তাৎক্ষণাৎ তার সৈন্য বাহিনীর সহায়তায় যাত্রা করেন। থানেশ্বর থেকে ১৪ মাইল এবং দিল্লি থেকে ৮০ মাইল দূরবর্তী স্বরসতী তীরে তরাইন প্রান্তরে দু’বাহিনীর মোকাবিলা হয়। যুদ্ধে সম্মিলিত রাজপুত বাহিনীর ব্যাপক বিজয় অর্জিত হয়। শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয় মুহম্মদ ঘুরীর বাহিনী। বহু সৈন্য হতাহত হয়। স্বয়ং মুহম্মদ ঘুরীও মারাত্মকভাবে আহত হন। কোনো রকমে তার প্রাণ রক্ষা পায়। এই যুদ্ধকে ইতিহাসে তরাইনের প্রথম যুদ্ধ বলে অভিহিত করা হয়। এ যুদ্ধের প্রতিশোধ নিতে মুহম্মদ ঘুরী ১১৯২ খ্রিস্টাব্দে ফের অভিযান পরিচালনা করেন। ১ লাখ ২০ হাজার সৈন্য ও ১২ হাজার অশ্বারোহী নিয়ে তিনি অগ্রসর হন এবং তরাইন প্রান্তরেই সম্মিলিত রাজপুত বাহিনীর সঙ্গে তার বাহিনীর মোকাবিলা হয়। পৃথ্বিরাজের নেতৃত্বে সম্মিলিত রাজপুত বাহিনীর সৈন্য সংখ্যা ছিল ৩ লাখ। বর্ণিত আছে, এ যুদ্ধে ৫০ জনের মতো রাজপুত রাজা ও ১৫০ জনের মতো রাজপুত সমরনায়ক অংশগ্রহণ করেন। তরাইনের অভূতপূর্ব দ্বিতীয় মহাসমরে মুহম্মদ ঘুরীর বাহিনী বিপুল বিক্রমে যুদ্ধ করে বিজয় অর্জন করে। প্রতিপক্ষের ব্যাপক সৈন্যক্ষয় হয়। দিল্লির রাজা চৌয়ান্দ রায়সহ অনেক রাজা ও সমরনায়ক যুদ্ধক্ষেত্রেই নিহত হন। পৃথ্বিরাজ বন্দি হয়ে পরে নিহত হন। বহু যুদ্ধসরঞ্জাম ও দুর্গ মুহম্মদ ঘুরীর অধিকারে আসে। পৃথ্বিরাজের পুত্র গোলা রায়কে আজমীর ও দিল্লির রাজা চৌয়ান্দ রায়ের পুত্রকে দিল্লির কর্তৃত্ব দিয়ে এবং তার অতি বিশ্বস্ত দাস ও সেনানায়ক কুতুবউদ্দিন আইবেককে সৈন্যসহ ফোরাম শহরে রেখে তিনি গজনী ফিরে আসেন। (চলবে)


বিভাগ : বিশেষ প্রতিবেদন


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

সম্রাট জাহাঙ্গীর : রূপান্তরের বাদশাহী-২
সম্রাট জাহাঙ্গীর : রূপান্তরের বাদশাহী-১
ব্রিটিশ সরকারের তত্বাবধানে বাহদুর শাহ জাফর ও তাঁর বংশধরদের অবস্থা !
তারেক রহমানের রাষ্ট্র চিন্তা
মুজাদ্দিদে আলফেসানী (রহ.) দ্বীন ও মিল্লাতের নবায়ন-৬
আরও

আরও পড়ুন

প্রবাসীদের যে জন্য সুখবর দিলো মালয়েশিয়া

প্রবাসীদের যে জন্য সুখবর দিলো মালয়েশিয়া

জাবি শিক্ষার্থী মৃত্যুর ঘটনায় মামলা, তদন্ত কমিটি গঠন, ফটকে তালা, মশাল মিছিল

জাবি শিক্ষার্থী মৃত্যুর ঘটনায় মামলা, তদন্ত কমিটি গঠন, ফটকে তালা, মশাল মিছিল

মাদকের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থানে থাকবে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল

মাদকের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থানে থাকবে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল

"নতুন সিনেমা নিয়ে ফিরছেন গ্লোবাল তারকা অ্যাঞ্জেলিনা জোলি"

"নতুন সিনেমা নিয়ে ফিরছেন গ্লোবাল তারকা অ্যাঞ্জেলিনা জোলি"

ড. ইউনূসকে নিয়ে খালেদা জিয়ার পুরোনো যে বক্তব্য ভাইরাল

ড. ইউনূসকে নিয়ে খালেদা জিয়ার পুরোনো যে বক্তব্য ভাইরাল

নতুন নির্বাচন কমিশনের প্রতি ইসলামী আন্দোলনের শুভ কামনা

নতুন নির্বাচন কমিশনের প্রতি ইসলামী আন্দোলনের শুভ কামনা

আলোচনায় ফ্যাসিস্ট হাসিনার ‘টুস করে ফেলে দেয়ার’ হুমকি

আলোচনায় ফ্যাসিস্ট হাসিনার ‘টুস করে ফেলে দেয়ার’ হুমকি

দীর্ঘ ১৫ বছর সাংবাদিকরা বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন করতে পারেনি: খোকন

দীর্ঘ ১৫ বছর সাংবাদিকরা বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন করতে পারেনি: খোকন

'ইউটিউব ট্রেন্ডিংয়ে রয়েছে অভিনেতা তারিক আনাম খানের নাটক'

'ইউটিউব ট্রেন্ডিংয়ে রয়েছে অভিনেতা তারিক আনাম খানের নাটক'

বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে আঞ্চলিক সহযোগিতার আহ্বান

বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে আঞ্চলিক সহযোগিতার আহ্বান

ইসলামিক ফাউন্ডেশন এর বোর্ড অব গভর্নর সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সম্বর্ধনা

ইসলামিক ফাউন্ডেশন এর বোর্ড অব গভর্নর সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সম্বর্ধনা

সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সংবর্ধনা

সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সংবর্ধনা

লালমোহনে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত যুবদল নেতা চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু

লালমোহনে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত যুবদল নেতা চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু

চকরিয়ার বিএনপি নেতা আবু তাহের চৌধুরীর মৃত্যুতে সালাহউদ্দিন আহমদ ও হাসিনা আহমদের শোক

চকরিয়ার বিএনপি নেতা আবু তাহের চৌধুরীর মৃত্যুতে সালাহউদ্দিন আহমদ ও হাসিনা আহমদের শোক

উইন্ডিজের বিপক্ষে মাঠে নামছে বাংলাদেশ

উইন্ডিজের বিপক্ষে মাঠে নামছে বাংলাদেশ

বেইজিং সংস্কৃতি ও পর্যটন ব্যুরো ও আটাবের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত

বেইজিং সংস্কৃতি ও পর্যটন ব্যুরো ও আটাবের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত

প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানের সাক্ষাৎ

প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানের সাক্ষাৎ

দেশের বাজারে ফের বাড়ল সোনার দাম

দেশের বাজারে ফের বাড়ল সোনার দাম

সবচেয়ে কম মূল্যে বাংলাদেশকে বিদ্যুৎ দিচ্ছে নেপাল: নেপাল রাষ্ট্রদূত

সবচেয়ে কম মূল্যে বাংলাদেশকে বিদ্যুৎ দিচ্ছে নেপাল: নেপাল রাষ্ট্রদূত

আগামী নির্বাচন নিয়ে দিল্লি ভয়ংকর পরিকল্পনা করছে: যুক্তরাষ্ট্র জাগপা

আগামী নির্বাচন নিয়ে দিল্লি ভয়ংকর পরিকল্পনা করছে: যুক্তরাষ্ট্র জাগপা