মুহম্মদ ঘুরী : ভারতে মুসলিম রাজত্বের প্রতিষ্ঠাতা-২

Daily Inqilab কায়কোবাদ মিলন

০৫ মে ২০২৩, ১১:০৫ পিএম | আপডেট: ২৫ জুন ২০২৩, ০৮:১৫ পিএম

১১৭২ খ্রিস্টাব্দে মুহম্মদ ঘুরী প্রথমবারের মতো মুলতানে অভিযান চালান। মুলতান তখন কারামতিয়া (শিয়া) সম্প্রদায়ের অধিকারে। মুলতানের শাসককে হারিয়ে তিনি উচের দিকে অগ্রসর হন। উচের রাজা দুর্গে অবস্থান গ্রহণ করেন এবং দুর্গ অধিকার অসম্ভব বিবেচিত হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে তিনি ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করেন। শেষ পর্যন্ত রাণীর বিশ্বাসঘাতকতার ফলে মুহম্মদ ঘুরী উচ অধিকার করতে পারেন। এরপর মুলতান ও উচের দায়িত্ব আলী কিরমানীর হস্তে ন্যস্ত করে তিনি গজনীতে ফিরে আসেন। ১১৭৮ খ্রিস্টাব্দে মুহম্মদ ঘুরী ফের মুলতান ও উচে আসেন এবং সেখান থেকে গুজরাটে অভিযান চালান। গুজরাটের রাজা ভীমদেব তার মোকাবিলা করেন এবং বিজয় অর্জন করেন। যুদ্ধে মুহম্মদ ঘুরীর ব্যাপক সৈন্যক্ষয় হয় এবং তিনিও গুরুতর আহত হন। কোনো রকমে প্রাণ বাঁচিয়ে তিনি গজনীতে ফিরে আসেন। এর এক বছর পরে ১১৭৯ খ্রিস্টাব্দে তিনি পেশোয়ারে অভিযান চালান ও অধিকার করেন। এর পরের বছর অর্থাৎ ১১৮০ খ্রিস্টাব্দে লাহোরে অভিযান চালান এবং শেষ গজনবী সুলতান খসরু মালিককে সন্ধি চুক্তিতে আবদ্ধ করে গজনীতে ফেরেন। পরের বছর সমুদ্র উপকূলীয় এলাকাসহ সিন্ধু অধিকার করেন। ১১৮৪ খ্রিস্টাব্দে তিনি ফের লাহোরে অভিযান চালান। এই অভিযানে শিয়ালকোট দুর্গ, রাবি ও চেনাব এলাকা তার অধিকারে আসে। তিনি তার আধিপত্য বজায় রাখতে হোসেন ফরমুনিকে তার প্রতিনিধি নিযুক্ত করেন। ১১৮৬ খ্রিস্টাব্দে মুহম্মদ ঘুরী তৃতীয়বারের মতো লাহোর আক্রমণ করেন এবং কৌশলে দুর্গ দখল করেন। খসরু মালিক ও তার পরিবারকে বন্দি করে ফিরোজকোহে পাঠান। তিনি ১১৯১ খ্রিস্টাব্দে আজমীর অভিযানে রওনা হয়ে বিতুন্ডা শহর অধিকার করেন। সেখানকার দায়িত্ব জিয়াউদ্দিনকে দিয়ে দেশে ফিরে আসেন। এমন সময় তিনি জানতে পারেন, আজমীরের রাজা পৃথ্বিরাজ ও তার ভাই দিল্লির রাজা চৌয়ান্দ রায় অন্যান্য ভারতীয় রাজপুত রাজার সঙ্গে মিলিত হয়ে ২ লাখ অশ্বারোহী ও ৩ হাজার হস্তি নিয়ে বিতুন্ডার দিকে অগ্রসর হন। মুহম্মদ ঘুরী তাৎক্ষণাৎ তার সৈন্য বাহিনীর সহায়তায় যাত্রা করেন। থানেশ্বর থেকে ১৪ মাইল এবং দিল্লি থেকে ৮০ মাইল দূরবর্তী স্বরসতী তীরে তরাইন প্রান্তরে দু’বাহিনীর মোকাবিলা হয়। যুদ্ধে সম্মিলিত রাজপুত বাহিনীর ব্যাপক বিজয় অর্জিত হয়। শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয় মুহম্মদ ঘুরীর বাহিনী। বহু সৈন্য হতাহত হয়। স্বয়ং মুহম্মদ ঘুরীও মারাত্মকভাবে আহত হন। কোনো রকমে তার প্রাণ রক্ষা পায়। এই যুদ্ধকে ইতিহাসে তরাইনের প্রথম যুদ্ধ বলে অভিহিত করা হয়। এ যুদ্ধের প্রতিশোধ নিতে মুহম্মদ ঘুরী ১১৯২ খ্রিস্টাব্দে ফের অভিযান পরিচালনা করেন। ১ লাখ ২০ হাজার সৈন্য ও ১২ হাজার অশ্বারোহী নিয়ে তিনি অগ্রসর হন এবং তরাইন প্রান্তরেই সম্মিলিত রাজপুত বাহিনীর সঙ্গে তার বাহিনীর মোকাবিলা হয়। পৃথ্বিরাজের নেতৃত্বে সম্মিলিত রাজপুত বাহিনীর সৈন্য সংখ্যা ছিল ৩ লাখ। বর্ণিত আছে, এ যুদ্ধে ৫০ জনের মতো রাজপুত রাজা ও ১৫০ জনের মতো রাজপুত সমরনায়ক অংশগ্রহণ করেন। তরাইনের অভূতপূর্ব দ্বিতীয় মহাসমরে মুহম্মদ ঘুরীর বাহিনী বিপুল বিক্রমে যুদ্ধ করে বিজয় অর্জন করে। প্রতিপক্ষের ব্যাপক সৈন্যক্ষয় হয়। দিল্লির রাজা চৌয়ান্দ রায়সহ অনেক রাজা ও সমরনায়ক যুদ্ধক্ষেত্রেই নিহত হন। পৃথ্বিরাজ বন্দি হয়ে পরে নিহত হন। বহু যুদ্ধসরঞ্জাম ও দুর্গ মুহম্মদ ঘুরীর অধিকারে আসে। পৃথ্বিরাজের পুত্র গোলা রায়কে আজমীর ও দিল্লির রাজা চৌয়ান্দ রায়ের পুত্রকে দিল্লির কর্তৃত্ব দিয়ে এবং তার অতি বিশ্বস্ত দাস ও সেনানায়ক কুতুবউদ্দিন আইবেককে সৈন্যসহ ফোরাম শহরে রেখে তিনি গজনী ফিরে আসেন। (চলবে)


বিভাগ : বিশেষ প্রতিবেদন


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

নাব্যতা হারিয়ে দখলদারদের কবলে পড়ে মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাচ্ছে একের পর এক নদী
সম্রাট জাহাঙ্গীর : রূপান্তরের বাদশাহী-১২
সম্রাট জাহাঙ্গীর : রূপান্তরের বাদশাহী-১১
সম্রাট জাহাঙ্গীর : রূপান্তরের বাদশাহী-১০
সম্রাট জাহাঙ্গীর : রূপান্তরের বাদশাহী-৯
আরও
X

আরও পড়ুন

এক অজু দিয়ে আসর মাগরিব ও এশার নামাজ পড়া প্রসঙ্গে?

এক অজু দিয়ে আসর মাগরিব ও এশার নামাজ পড়া প্রসঙ্গে?

আন্তঃধর্মীয় সংলাপের গুরুত্ব

আন্তঃধর্মীয় সংলাপের গুরুত্ব

ভেজালের দৌরাত্ম্য

ভেজালের দৌরাত্ম্য

পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন না হলে দেশে স্বৈরাচারী শাসক তৈরি হতেই থাকবে ; অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন

পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন না হলে দেশে স্বৈরাচারী শাসক তৈরি হতেই থাকবে ; অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন

যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপ ও ভারতের ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিলে অস্বস্তি

যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপ ও ভারতের ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিলে অস্বস্তি

মেঘনা আলমের আটকাদেশ : সরকারের সঠিক সিদ্ধান্ত

মেঘনা আলমের আটকাদেশ : সরকারের সঠিক সিদ্ধান্ত

সংক্ষিপ্ত বিশ্বসংবাদ

সংক্ষিপ্ত বিশ্বসংবাদ

দিল্লিতে ধূলোঝড়ের তাণ্ডবে ২শ’ ফ্লাইট বিঘ্ন

দিল্লিতে ধূলোঝড়ের তাণ্ডবে ২শ’ ফ্লাইট বিঘ্ন

আল-আকসার ইমামকে ৭ দিনের নিষেধাজ্ঞা ইসরাইলের

আল-আকসার ইমামকে ৭ দিনের নিষেধাজ্ঞা ইসরাইলের

পর্যটকদের কাছে টিকিট বিক্রি ইসরাইলের

পর্যটকদের কাছে টিকিট বিক্রি ইসরাইলের

ইউক্রেনকে রেকর্ড ২১ বিলিয়ন ইউরো সামরিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি মিত্রদের

ইউক্রেনকে রেকর্ড ২১ বিলিয়ন ইউরো সামরিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি মিত্রদের

মার্কিন শুল্ক বিরোধ মোকাবিলায় প্রতিবেশী দেশে নজর চীনের

মার্কিন শুল্ক বিরোধ মোকাবিলায় প্রতিবেশী দেশে নজর চীনের

জনসংখ্যা হ্রাস রোধে হাইস্পিড রেললাইন

জনসংখ্যা হ্রাস রোধে হাইস্পিড রেললাইন

১৭ ঘণ্টা পর আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্রের একটি ইউনিট চালু

১৭ ঘণ্টা পর আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্রের একটি ইউনিট চালু

হাজার সেনা বরখাস্ত করেছে ইসরাইল

হাজার সেনা বরখাস্ত করেছে ইসরাইল

যুক্তরাষ্ট্রে ডিমের দামে সংকটে সাধারণ মানুষ

যুক্তরাষ্ট্রে ডিমের দামে সংকটে সাধারণ মানুষ

পশ্চিমবঙ্গে বিক্ষোভ চলছেই মোদির কুশপুতুল দাহ

পশ্চিমবঙ্গে বিক্ষোভ চলছেই মোদির কুশপুতুল দাহ

তহবিলের অভাবে শ’ শ’ কর্মী ছাঁটাই করছে ওচা

তহবিলের অভাবে শ’ শ’ কর্মী ছাঁটাই করছে ওচা

পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন করলে চরম মূল্য দিতে হবে ইরানকে : ট্রাম্প

পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন করলে চরম মূল্য দিতে হবে ইরানকে : ট্রাম্প

ফের বাড়ল স্বর্ণের দাম, নতুন রেকর্ড

ফের বাড়ল স্বর্ণের দাম, নতুন রেকর্ড