মুহম্মদ বিন বখতিয়ার খিলজির বঙ্গজয়-২
০২ জুন ২০২৩, ১০:৫৯ পিএম | আপডেট: ২৫ জুন ২০২৩, ০৮:১৫ পিএম
নদীয়া জয় করে অল্প সময়ই সেখানে অবস্থান করেন তিনি। দ্রæতই অগ্রসর হন গৌড়ের দিকে। গৌড় অধিকার করেন বিনা বাধায়। ল²ণাবতী ছিলো গৌড়ের প্রাণকেন্দ্র। একে রাজধানী হিসেবে স্থির করেন, শহরটি পরিচিত হতে থাকে লাখনৌতি নামে। বাংলায় বিন বখতিয়ার শাসিত রাষ্ট্রসীমানার দক্ষিণে প্রবাহিত হচ্ছিলো পদ্মা, পূর্বে তিস্তা-করতোয়া আর পশ্চিমে তা বিস্তৃত ছিলো বিহার অবধি। এ সীমানা উত্তরে পুর্নিয়া শহর থেকে দেবকোট বা দিনাজপুর হয়ে উত্তর-পূর্ব দিকে রংপুর শহর অবধি স¤প্রসারিত হয়।
গৌড় জয়ের পরে বিন বখতিয়ার মনোযোগ দেন তিব্বতের প্রতি। তিব্বত জয় করে চীন অবধি বাংলার সীমানাকে স¤প্রসারিত করতে চেয়েছিলেন তিনি। লোক মারফত তিব্বতের যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করেন তিনি। উপজাতি নেতা আলী মেচ হন তার পথ প্রদর্শক। প্রশাসন পরিচালনা ও রাজ্য শাসনের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করে তিনি তিব্বত অভিযান শুরু করেন। তিনটি সীমান্ত প্রশাসক পদ সৃষ্টি করেন। সেনাবাহিনীর মেজর শিরান খিলজি হন লাখনৌতির প্রশাসক, আলী মর্দান হন ঘোড়াঘাটের প্রশাসক এবং ইউজ খিলজি হন তাÐার প্রশাসক।
দশ হাজার অশ্বারোহী নিয়ে বখতিয়ার এগিয়ে যান তিব্বতের দিকে। বেকোট থেকে যাত্রা করেন বেগবান নদী বরাবর। পুরনো এক সেতু দিয়ে নদী পার হয়ে গহীন পার্বত্য এলাকায় অগ্রসর হন তিনি। পাহাড়ী অচেনা পথে তিনি ফাঁদে পড়ে যান। পার্বত্য বিভিন্ন গোষ্ঠীর আক্রমণে ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় তার বাহিনী। যুদ্ধে পর্যুদস্ত হতে হয় অচেনা ভ‚মিতে। মাত্র ১০০ সৈন্য নিয়ে তিনি আহত অবস্থায় দেবকোটে প্রত্যাবর্তন করতে সক্ষম হন। ফিরেই অসুস্থ হয়ে পড়েন। সেই অসুখেই ১২০৬ খ্রিস্টাব্দে তাঁর মৃত্যু হয়।
সংক্ষিপ্ত একটি জীবন ছিলো খিলজির। সাহস, প্রতিক‚লতার সাথে লড়াই, সততা, সাংগঠনিক সক্ষমতা, দিগি¦জয় ও উচ্চাকাঙ্খা দিয়ে তিনি সাজিয়েছিলেন জীবনের পৃষ্ঠাগুলো। শাসক হিসেবে তিনি ছিলেন ন্যায়ের প্রতি নিষ্ঠাবান। রাজ্যকে তিনি বিভক্ত করেন কয়েকটি জেলায়। সেগুলোর শাসন ব্যবস্থা ও নীতিমালাকে বাস্তবায়ন করেন। তার প্রশাসনিক বিভাগকে বলা হতো ইকতা, শাসকদের বলা হতো মুকতা। তিনি মুদ্রা প্রবর্তন করেন ঘুরির নামে। শাসনভার অর্পণ করেন এমন নেতাদের হাতে, যারা স্থানীয়দের সহযোগিতায় সুশাসন নিশ্চিত করেন। বহু মসজিদ ও শিক্ষালয় তিনি গড়ে তোলেন। দিনাজপুর ও রংপুরে নির্মাণ করেন দুটি ছাউনি শহর। তার শাসনের অগ্রাধিকার ছিলো জনগণের পার্থিব ও নৈতিক উন্নয়ন, শিক্ষা ও সংস্কৃতির পৃষ্ঠাপোষকতা, শান্তি ও শৃঙ্খলা রক্ষা এবং মজলুমের প্রতি পক্ষপাত।
এক শ্রেণির ইতিহাস লেখক বিহার ও বঙ্গবিজেতা ইখতিয়ার উদ্দিন মুহম্মদ বিন বখতিয়ার খিলজিকে বৌদ্ধ বিহার ধ্বংসকারী, শিক্ষার্থী হত্যাকারী ও গ্রন্থাগার বিনাশকারী বলে চিহ্নিত করার চেষ্টা করেছেন। নজির হিসেবে তারা ওদন্তপুরী বৌদ্ধবিহার আক্রমণের বিষয় সামনে এনেছেন। প্রকৃত পক্ষে এ আক্রমণ ছিল একটি ভুল। তিনি জেনেশুনে এবং ইচ্ছাকৃতভাবে এ বিহার আক্রমণ করেননি। তাছাড়া আক্রমণের পেছনে যৌক্তিক কারণও ছিল।
বিহার জয়ের পথে ঘটে ওদন্তপুরী বিহার আক্রমণের ঘটনা। ১২৬০ সালে (৬৫৮ হি.) রচিত তাবাকাতে নাসিরিতে রয়েছে এর বিবরণ। এতে ঐতিহাসিক মিনহাজুস সিরাজ লেখেন, ‘বিশ্বস্ত ব্যক্তিগণ বর্ণনা করেছেন যে, দুই শত সশস্ত্র অশ্বারোহী সৈন্যসহ তিনি কিল্লায়ে বিহার (বিহার দুর্গ) এর দিকে যাত্রা করেন এবং সহসা আক্রমণ করেন। তনুরায়ে দরওয়াজা বা দুর্গের প্রধান ফটকে উপস্থিত হয়ে তিনি প্রবল আক্রমণ করেন। স্বীয় শক্তি ও সাহসের বলে বিন বখতিয়ার প্রধান ফটক ভেদ করে ভেতরে প্রবেশ করলে তার সৈন্যরা দুর্গ অধিকার করে এবং অনেক মালে গণিমত (যুদ্ধলব্ধ সম্পদ) হস্তগত করে। এখানকার বেশির ভাগ বাসিন্দা ছিলেন বারহ¤œান বা ব্রাহ্মণ। তাদের মস্তক ছিল মুÐিত। তাদের সবাইকেই হত্যা করা হয়েছিল। সেখানে ছিল অনেক গ্রন্থ। বহুসংখ্যক গ্রন্থ যখন মুসলমানদের চোখে পড়ল, তখন উপস্থিত ব্যক্তিবর্গকে গ্রন্থের মর্মোদ্ধারের জন্য আহŸান করা হলো। পুস্তকের মর্মোদ্ধার করে জানা গেল, সমগ্র নগর ও দুর্গ নিয়ে এটি ছিল একটি মাদরাসা; বিদ্যালয়।’
মিনহাজুস সিরাজের বিবরণ। এখানেই শেষ। গ্রন্থের পাঠোদ্ধার অবধি। তার পরের কোনো বিবরণ নেই। বইগুলো যখন তাদের চোখে পড়ল, তারা থেমে গেলেন। বুঝতে চাইলেন বইগুলোর রহস্য কী? যুদ্ধপরিস্থিতিতেও এর পাঠোদ্ধার করালেন। এর মানে কী? এর মানে বইয়ের গুরুত্ব তাদের কাছে ছিল, ছিল সম্মান। নতুবা বর্বরদের মতো বইকে পাত্তা না দিয়ে ধ্বংস করতেন। বইয়ের পাঠোদ্ধার শেষে তারা আবিষ্কার করলেন যাকে দুর্গ ভেবেছেন, তা আসলে বিহার, বিদ্যালয়। এর পরে অভিযান শেষ। বর্ণনাও শেষ। বিহার ধ্বংস করা হয়েছে, এরও উল্লেখ এখানে নেই, একটি বইয়ের একটি পাতাও ছেঁড়া হয়েছে, এমন প্রমাণও নেই এখানে। কেবল ন্যাড়ামাথার যেসব লোক (প্রতিরোধকারী) দুর্গে ছিল, তাদেরকে হত্যার বিবরণ আছে। (চলবে)
বিভাগ : বিশেষ প্রতিবেদন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
প্রবাসীদের যে জন্য সুখবর দিলো মালয়েশিয়া
জাবি শিক্ষার্থী মৃত্যুর ঘটনায় মামলা, তদন্ত কমিটি গঠন, ফটকে তালা, মশাল মিছিল
মাদকের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থানে থাকবে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল
"নতুন সিনেমা নিয়ে ফিরছেন গ্লোবাল তারকা অ্যাঞ্জেলিনা জোলি"
ড. ইউনূসকে নিয়ে খালেদা জিয়ার পুরোনো যে বক্তব্য ভাইরাল
নতুন নির্বাচন কমিশনের প্রতি ইসলামী আন্দোলনের শুভ কামনা
আলোচনায় ফ্যাসিস্ট হাসিনার ‘টুস করে ফেলে দেয়ার’ হুমকি
দীর্ঘ ১৫ বছর সাংবাদিকরা বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন করতে পারেনি: খোকন
'ইউটিউব ট্রেন্ডিংয়ে রয়েছে অভিনেতা তারিক আনাম খানের নাটক'
বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে আঞ্চলিক সহযোগিতার আহ্বান
ইসলামিক ফাউন্ডেশন এর বোর্ড অব গভর্নর সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সম্বর্ধনা
সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সংবর্ধনা
লালমোহনে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত যুবদল নেতা চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু
চকরিয়ার বিএনপি নেতা আবু তাহের চৌধুরীর মৃত্যুতে সালাহউদ্দিন আহমদ ও হাসিনা আহমদের শোক
উইন্ডিজের বিপক্ষে মাঠে নামছে বাংলাদেশ
বেইজিং সংস্কৃতি ও পর্যটন ব্যুরো ও আটাবের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত
প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানের সাক্ষাৎ
দেশের বাজারে ফের বাড়ল সোনার দাম
সবচেয়ে কম মূল্যে বাংলাদেশকে বিদ্যুৎ দিচ্ছে নেপাল: নেপাল রাষ্ট্রদূত
আগামী নির্বাচন নিয়ে দিল্লি ভয়ংকর পরিকল্পনা করছে: যুক্তরাষ্ট্র জাগপা