ঢাকা   রোববার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪ | ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

পীর-আওলিয়াদের প্রতি ইলতুতমিশের অশেষ ভক্তি ও শ্রদ্ধা-২

Daily Inqilab মুনশী আবদুল মাননান

২০ জুলাই ২০২৩, ১১:৩৯ পিএম | আপডেট: ২০ জুলাই ২০২৩, ১১:৪৯ পিএম

 

সুলতান ইলতুতমিশ আলেম-ওলামা ও পীর-আওলিয়াদের ভক্তি-শ্রদ্ধাই করতেন না, বরং তাদের অনুসরণও করতেন। ব্যক্তিগত জীবনে ইসলামের অনুশাসন-অনুশীলনের ক্ষেত্রে তিনি এতটুকু গাফিলতিও অপছন্দ করতেন। তিনি কোনো কোনো কাজ করার আগে আলেম-ওলামা ও পীর-আওলিয়াদের বিশেষ করে খাজা কুতুবুদ্দিন বখতিয়ার কাকির পরামর্শ নিতেন। এরকম একটি ঘটনার বিবরণ দিয়েছেন খাজা কুতুবুদ্দিন বখতিয়ার কাকির খলিফা শায়েখ ফরিদউদ্দিন গঞ্জেশকর। তিনি তার মুর্শিদের বরাতে বলেছেন, একবার ইলতুতমিশের একটি ‘হাউজে শামসী’ (সূর্য দীঘি) তৈরির আগ্রহ হয়। তিনি এ বিষয়ে পরামর্শ করার জন্য প্রতিদিন খাজা কুতুবুদ্দিন বখতিয়ার কাকির দরবারে হাজির হতে থাকেন এবং হাউজের জায়গা ও পরিসর নিয়ে আলোচনা করতে থাকেন। কোনো স্থান পছন্দ হলে, তা খাজা কুতুবুদ্দিন বখতিয়ার কাকিকে নিয়ে গিয়ে দেখাতে থাকেন। অতঃপর একসময় কোনো এক কারণে তার এ খেয়াল ছুটে যায়। অনেক দিন পর একটি জায়গা দিয়ে তিনি যাচ্ছিলেন, জায়গাটি তার পছন্দ হয়ে যায় হাউজ নির্মাণের জন্য। তিনি সিদ্ধান্ত নেন ওইখানেই হাউজ তৈরি করবেন। এ ঘটনা যে দিনের, সে দিনই তিনি রাসূসুল্লাহ (সা.)-কে স্বপ্নে দেখেন। দেখেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) একটি ঘোড়ায় চড়ে ওই স্থান অতিক্রম করছেন। তিনি ইলতুতমিশ কী চান, জানতে চান। উত্তরে ইলতুতমিশ বলেন, তিনি একটি হাউজ তৈরি করতে করতে চান। হুজুর (সা.) তাঁর বাসনা পছন্দ করেন। তাঁর ঘোড়া জমিনে একটি পদাঘাত করে। এতে মাটি ফুঁড়ে পানি বের হতে থাকে। এই সময়ই তার স্বপ্ন ভেঙে যায়। তখনও রাতের কিছু সময় বাকি। সুলতান খাজা কুতুবুদ্দিন বখতিয়ার কাকির দরবারে ছুটে যান এবং স্বপ্নের বিবরণ তাকে বলেন। অতঃপর তাকে সঙ্গে নিয়ে ওই স্থানটিতে যান। তারা সেখানে গিয়ে দেখতে পান একটি ঝরণাধারা প্রবাহিত হচ্ছে। উল্লেখ করা যেতে পারে, সুলতান ইলতুতমিশ নির্মিত হাউজে শামসী এখনো ২৭৬ বিঘা পারিধি নিয়ে বিরজমান। পুরো দীঘিটি লাল পাথরে বাঁধানো, যার দৈর্ঘ্য দুই মাইল আর প্রস্ত এক মাইলের মতো।

ইবাদত-বন্দেগি বা আমলের দিক দিয়ে সুলতান ইলতুতমিশ ছিলেন অন্তরিক ও নিষ্ঠ। এ ব্যাপারে তার অবস্থান ছিল অতি উচ্চে। তার আধ্যাত্মিক উচ্চতার কথা অনেকেই জানতে পারেনি। তিনি কত বড় আমলদার ও ইবাদতগুজার ছিলেন, একটি ঘটানায় তার প্রমাণ মেলে। ঘটনাটি এই, খাজা কুতুবুদ্দিন বখতিয়ার কাকি ইন্তেকাল করেছেন। পুরো কাহারাম এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। একটি বড় প্রান্তরে তার জানাজার নামাজের ব্যবস্থা হয়েছে। দলে দলে লোক সেখানে সমাবেত হয়েছে। লোকারণ্য পুরো এলাকা। এমন সময় এক ব্যক্তি সেখানে উপস্থিত হয়ে বলেন, তিনি মৃত হযরতের ‘অসি’। হযরত আমার কাছে একটি অসিয়ত করে গেছেন। তার কথায় পুরো গণসমাবেশ নীরব হয়ে যায়। লোকটি বলেন, খাজা কুতুবুদ্দিন বখতিয়ার কাকি তাকে অসিয়ত করেছেন, তার জানাজা যেন এমন ব্যক্তি পড়ান, যার মধ্যে এই চারটি গুণ আছে। যথা: ১. জীবনে যার তাকবিরে উলা ছোটেনি। ২. যার কখনো তাহাজ্জুতের নামাজ কাজা হয়নি। ৩. যে কখনো গায়েরে মাহরীমের দিকে বদ নজরে তাকায়নি। ৪. যে কখনো আসরের সুন্নাত বাদ দেয়নি।

লোকটির এ কথা শোনার পর গণসমাবেশ সম্পূর্ণ স্তব্ধ হয়ে যায়। সমাবেশিত লোকদের মধ্যে এমন কেউ কি নেই, যিনি ওইসব শর্ত মেনে জানাজা পড়াতে এগিয়ে আসবেন? অবশেষে এক ব্যক্তি কাঁদতে কাঁদতে জানাজার কাছে উপস্থিত হন। ধীরে ধীরে লাশের ওপর থেকে চাদর সরিয়ে বলেন, ‘হে কুতুবুদ্দিন বখতিয়ার কাকি (রহ.) ্আপনি তো চলে গেলেন। আমাকে লজ্জায় ফেলে গেলেন।’ এরপর সমাবেশকে সামনে রেখে আল্লাহর কসম করে বলেন, ‘আমার মধ্যে এই চারটি গুণ বিদ্যমান আছে’। মানুষ বিস্ময়ে হতবাক হয়ে দেখে ব্যক্তিটি আর কেউ নন, তাদের সুলতান শামসুদ্দিন ইলতুতমিশ। (ভারতবর্ষে মুসলিম শাসন/হাজার বছরের ইতিহাস: মুফতি মহাম্মদ পালনপুরী)। (সমাপ্ত)

 

 

 


বিভাগ : বিশেষ প্রতিবেদন


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

সম্রাট জাহাঙ্গীর : রূপান্তরের বাদশাহী-৪
সম্রাট জাহাঙ্গীর : রূপান্তরের বাদশাহী-৩
সম্রাট জাহাঙ্গীর : রূপান্তরের বাদশাহী-২
সম্রাট জাহাঙ্গীর : রূপান্তরের বাদশাহী-১
ব্রিটিশ সরকারের তত্বাবধানে বাহদুর শাহ জাফর ও তাঁর বংশধরদের অবস্থা !
আরও

আরও পড়ুন

কুরস্কে ৪০ শতাংশ এলাকার দখল হারিয়েছে ইউক্রেন

কুরস্কে ৪০ শতাংশ এলাকার দখল হারিয়েছে ইউক্রেন

আমরা জমিদার নই,মানুষের পাহারাদার : মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

আমরা জমিদার নই,মানুষের পাহারাদার : মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

জর্ডানে ইসরাইলি দূতাবাসের কাছে গুলি, বন্দুকধারী নিহত

জর্ডানে ইসরাইলি দূতাবাসের কাছে গুলি, বন্দুকধারী নিহত

ট্রাম্পের জয়ের পর ইলন মাস্কের সম্পদ বাড়ছে রকেট গতিতে

ট্রাম্পের জয়ের পর ইলন মাস্কের সম্পদ বাড়ছে রকেট গতিতে

ভয়াবহ তুষারঝড়ে বিপর্যস্ত যুক্তরাজ্য, বহু ফ্লাইট বাতিল

ভয়াবহ তুষারঝড়ে বিপর্যস্ত যুক্তরাজ্য, বহু ফ্লাইট বাতিল

ইসরায়েলি হামলায় গাজায় নিহত আরও ১২০ ফিলিস্তিনি

ইসরায়েলি হামলায় গাজায় নিহত আরও ১২০ ফিলিস্তিনি

ইভেন্টের  সেরা লড়াইটি উপহার দিলেন আফরা-সানজিদা

ইভেন্টের সেরা লড়াইটি উপহার দিলেন আফরা-সানজিদা

ওয়েস্ট ইন্ডিজের রান পাহাড়ের পর জয়-জাকিরকে হারিয়ে চাপে বাংলাদেশ

ওয়েস্ট ইন্ডিজের রান পাহাড়ের পর জয়-জাকিরকে হারিয়ে চাপে বাংলাদেশ

নাটকীয় শেষ দশ মিনিটে দুই গোল শোধ করে বার্সাকে রুখে দিল সেল্তা

নাটকীয় শেষ দশ মিনিটে দুই গোল শোধ করে বার্সাকে রুখে দিল সেল্তা

বিবর্ণ সিটিকে ইতিহাদেই বিধ্বস্ত করলো টটেনহ্যাম

বিবর্ণ সিটিকে ইতিহাদেই বিধ্বস্ত করলো টটেনহ্যাম

নটিংহ্যামকে হারিয়ে চার ম্যাচের জয়খরা কাটালো আর্সেনাল

নটিংহ্যামকে হারিয়ে চার ম্যাচের জয়খরা কাটালো আর্সেনাল

স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসা জাতীয়করণের দাবী অত্যন্ত যৌক্তিক

স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসা জাতীয়করণের দাবী অত্যন্ত যৌক্তিক

পাঠ্যবই ছাপায় অনিয়মে আনন্দ প্রিন্টার্সকে সতর্কতা

পাঠ্যবই ছাপায় অনিয়মে আনন্দ প্রিন্টার্সকে সতর্কতা

দক্ষিণ লেবাননে ৬ চিকিৎসাকর্মী নিহত

দক্ষিণ লেবাননে ৬ চিকিৎসাকর্মী নিহত

জনগণের সাথে জনসংযোগ বাড়াতে হবে

জনগণের সাথে জনসংযোগ বাড়াতে হবে

আমরা যুদ্ধে বিশ্বাসী না কেউ গায়ে পড়লে জবাবের প্রস্তুতি রাখতে হবে: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

আমরা যুদ্ধে বিশ্বাসী না কেউ গায়ে পড়লে জবাবের প্রস্তুতি রাখতে হবে: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

বাফুফের নতুন সভাপতি তাবিথের কাছে ২৭ রেফারির চিঠি

বাফুফের নতুন সভাপতি তাবিথের কাছে ২৭ রেফারির চিঠি

ফের বাড়লো সোনার দাম, ভরি ১ লাখ ৪২ হাজার টাকা

ফের বাড়লো সোনার দাম, ভরি ১ লাখ ৪২ হাজার টাকা

বাংলাদেশে খেলা নিয়ে অনিশ্চিয়তায় হামজা!

বাংলাদেশে খেলা নিয়ে অনিশ্চিয়তায় হামজা!

বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামেই হবে অনূর্ধ্ব-২০ নারী সাফের খেলা

বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামেই হবে অনূর্ধ্ব-২০ নারী সাফের খেলা