ঢাকা   বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪ | ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

নাসিরুদ্দীন মাহমুদ : কূটনীতি ও দরবেশীর সালতানাত-১

Daily Inqilab মুসা আল হাফিজ

৩১ আগস্ট ২০২৩, ১০:৫৫ পিএম | আপডেট: ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০১ এএম

প্রায়ই ভুল করে বলা হয়, সুলতান নাসিরুদ্দীন মাহমুদ ছিলেন শামসুদ্দীন ইলতুতমিশের পুত্র। প্রকৃতপক্ষে ইলতুতমিশের নাতি ছিলেন তিনি। ইলতুতমিশের পুত্র যুবরাজ নাসিরুদ্দীন বাংলায় মারা যান, লাখনৌতিতে। তিনি একটি ছেলে রেখে যান, ছেলেটি তার মৃত্যুর পরে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। আবুল কাশেম ফেরেশতা এটাই লিখেছেন। সুলতানের বড় ছেলের নাম ছিল নাসিরুদ্দীন। লাখনৌতিতে তার মৃত্যুর পর এই ছেলে (সুলতান নাসিরুদ্দীন) জন্মগ্রহণ করেন, যিনি ছিলেন যুবরাজ নাসিরুদ্দীনের কনিষ্ঠ পুত্র। ইলতুতমিশ তার মরহুম ছেলের প্রতি ভালোবাসার কারণে নাতিরও একই নাম রেখেছিলেন এবং তার শিক্ষাদীক্ষার ব্যবস্থা করেছিলেন। পারিবারিক কারণে, ইলতুতমিশ শিশুটিকে তার নাতি নয় বরং তার পুত্র হিসেবে বিবেচনা করতে চেয়েছিলেন। সারাজীবন তাকে ইলতুতমিশের পুত্র হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছিল। তবে সমসাময়িক ঐতিহাসিকদের অবস্থান আলাদা। মিনহাজুস সিরাজ লিখেছেন, ‘সুলতান নাসিরুদ্দীন মাহমুদ ছিলেন সুলতান আমির-উল-মুমিনীন নাসিরুদ্দীনের পুত্র। পিতার মৃত্যুর পর তিনি দিল্লিতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন।’

ইলতুতমিশ তাকে তার বড় ছেলের ‘নাম’ ও ‘উপাধি’ দেন এবং তাঁর মায়ের জন্য লোনি গ্রামের একটি প্রাসাদ বরাদ্দ করেন, যাতে তিনি সন্তানকে সেখানে লালন-পালন করতে পারেন।
১২২৯ হিজরীতে জন্ম হয় নাসিরুদ্দীনের। বাল্যকালেই তাকে লোনি প্রাসাদ থেকে এনে দৌলতখানায় রাখা হয়। তখন তিনি একটি জেলাও শাসন করতে পারতেন না। পরে তুর্কি নেতারা তাকে দিল্লিতে আসার আমন্ত্রণ জানান। তখন তার বয়স ১৩ কী ১৪ বছর।

তার মা দৌলতখানা থেকে তাকে নিয়ে এলেন। তিনি ঘোষণা করেন যে, নাসিরুদ্দীন অসুস্থ এবং তাকে চিকিৎসার জন্য রাজধানীতে না নিয়ে উপায় নেই। দিনের বেলা তিনি তাকে নিজের পালকিতে নিয়ে যেতেন, কিন্তু রাতে ঘোড়ায় চড়াতেন। এভাবে কিছু ঘোড়সওয়ার এবং কয়েকজন পদাতিক সৈন্য নিয়ে তিনি সম্ভাব্য দ্রুত গতিতে দিল্লিতে পৌঁছে যান। তার আগমনের খবর তারাই জানত, যারা নাসিরুদ্দীনকে ক্ষমতায় বসানোর গোপন চেষ্টায় লিপ্ত ছিল।

২৩ মহররম ৬৪৪ হি., ২৭ মে ১২৪৬ খ্রিস্টাব্দে তিনি সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হন। দু’দিন পর তিনি ফিরোজা প্রাসাদের দরবার হলে সভা ডাকেন এবং লোকজনের কাছ থেকে আনুগত্যের শপথ নেন। সুলতান নাসিরুদ্দীন মাহমুদকে সাধারণত একজন দরবেশ ব্যক্তিত্ব হিসেবে চিত্রিত করা হয়, যিনি তার পুরোটা সময় ইবাদত-বন্দেগি করে কাটাতেন। রাজনৈতিক এবং প্রশাসনিক বিষয়ে তার তেমন আগ্রহ ছিল না। এই মতামত তার জীবনের মৌলিক বাস্তবতাকে উপেক্ষা করে। এসব বিষয় গভীরভাবে বিশ্লেষণ করে আমরা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হই যে, তিনি যদি কেবলই ইবাদত-বন্দেগি নিয়ে থাকতেন, তাহলে তিনি রাজনৈতিক জীবনের উত্তাপ হতে রক্ষা পেতেন। তিনি মূলত তার আদর্শে একজন রাজনৈতিক মানুষ ছিলেন এবং প্রতিকূল উত্তাপের মধ্যেও তিনি বছরের পর বছর মাথা উঁচু করে রেখেছিলেন। এটা তার রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও অন্তর্দৃষ্টির ছোটখাটো কোন প্রমাণ নয়।

ইলতুতমিশের মৃত্যুর পর (১২৩৬-৩৭), চারজন যুবরাজকে সিংহাসনে বসানো হয় এবং তাদের পদচ্যুত করে মৃত্যুদ- দেয়া হয়। এটি ছিল ষোল/সতেরো বছর বয়সী তরুণের জন্য একটি সতর্কতা। প্রভাবশালী শামসি মালিকরা ছিলেন তার সমর্থক এবং তার জন্য বিপদের উৎস। তিনি তাদের পরামর্শ মেনে নিতে বাধ্য ছিলেন, কারণ তার আর কোনো উপায় ছিল না। আবদুল মালিক ইসামী জানান, তিনি সামরিক নেতাদের অনুগ্রহ লাভ করেন এবং তাদের প্রত্যেককে আন্তরিকভাবে শুভেচ্ছা জানান। তিনি তাদের অনুমতি ব্যতীত তার কোনো মতামত প্রকাশ করতেন না এবং তাদের অনুমতি ব্যতীত এক পা-ও নড়াচড়া করতেন না, পানি পান করতেন না বা তাদের না বলে ঘুমাতেন না। এটি খুব সম্ভবত ক্ষমতাগ্রহণের প্রথম বছরগুলোর অবস্থা। এর অন্তত একটি ভালো দিক ছিল। তাকে পূর্ববর্তী যুবরাজদের মতো বিপদে পড়তে হয়নি, বরং একজন নিরাপদ মানুষ হিসেবে শাসন শুরু করেছেন। প্রকৃতপক্ষে শামসি আমির-ওলামাদের দ্বন্দ্ব তৈরি হওয়ার আগে নাসিরুদ্দীন কোনো অসুবিধার সম্মুখীন হননি। তিনি সিংহাসনে বসতেন এবং জনগণের সুপারিশকৃত আদেশ কার্যকর করতেন। তবে শাসনামলের প্রায় দুই বছরের মধ্যে একটি সমস্যার সম্মুখীন হন।


বিভাগ : বিশেষ প্রতিবেদন


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

সম্রাট জাহাঙ্গীর : রূপান্তরের বাদশাহী-২
সম্রাট জাহাঙ্গীর : রূপান্তরের বাদশাহী-১
ব্রিটিশ সরকারের তত্বাবধানে বাহদুর শাহ জাফর ও তাঁর বংশধরদের অবস্থা !
তারেক রহমানের রাষ্ট্র চিন্তা
মুজাদ্দিদে আলফেসানী (রহ.) দ্বীন ও মিল্লাতের নবায়ন-৬
আরও

আরও পড়ুন

ডিসেম্বরে বাংলাদেশ ও ভারতের পররাষ্ট্র বৈঠক, হাসিনাকে ফেরানো নিয়ে আলোচনা থাকবে

ডিসেম্বরে বাংলাদেশ ও ভারতের পররাষ্ট্র বৈঠক, হাসিনাকে ফেরানো নিয়ে আলোচনা থাকবে

রামু সেনানিবাসে সশস্ত্র বাহিনী দিবস পালিত

রামু সেনানিবাসে সশস্ত্র বাহিনী দিবস পালিত

এক সপ্তাহে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ল ৬ কোটি ১০ লাখ ডলার

এক সপ্তাহে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ল ৬ কোটি ১০ লাখ ডলার

প্রবাসীদের যে জন্য সুখবর দিলো মালয়েশিয়া

প্রবাসীদের যে জন্য সুখবর দিলো মালয়েশিয়া

জাবি শিক্ষার্থী মৃত্যুর ঘটনায় মামলা, তদন্ত কমিটি গঠন, ফটকে তালা, মশাল মিছিল

জাবি শিক্ষার্থী মৃত্যুর ঘটনায় মামলা, তদন্ত কমিটি গঠন, ফটকে তালা, মশাল মিছিল

মাদকের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থানে থাকবে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল

মাদকের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থানে থাকবে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল

"নতুন সিনেমা নিয়ে ফিরছেন গ্লোবাল তারকা অ্যাঞ্জেলিনা জোলি"

"নতুন সিনেমা নিয়ে ফিরছেন গ্লোবাল তারকা অ্যাঞ্জেলিনা জোলি"

ড. ইউনূসকে নিয়ে খালেদা জিয়ার পুরোনো যে বক্তব্য ভাইরাল

ড. ইউনূসকে নিয়ে খালেদা জিয়ার পুরোনো যে বক্তব্য ভাইরাল

নতুন নির্বাচন কমিশনের প্রতি ইসলামী আন্দোলনের শুভ কামনা

নতুন নির্বাচন কমিশনের প্রতি ইসলামী আন্দোলনের শুভ কামনা

আলোচনায় ফ্যাসিস্ট হাসিনার ‘টুস করে ফেলে দেয়ার’ হুমকি

আলোচনায় ফ্যাসিস্ট হাসিনার ‘টুস করে ফেলে দেয়ার’ হুমকি

দীর্ঘ ১৫ বছর সাংবাদিকরা বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন করতে পারেনি: খোকন

দীর্ঘ ১৫ বছর সাংবাদিকরা বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন করতে পারেনি: খোকন

'ইউটিউব ট্রেন্ডিংয়ে রয়েছে অভিনেতা তারিক আনাম খানের নাটক'

'ইউটিউব ট্রেন্ডিংয়ে রয়েছে অভিনেতা তারিক আনাম খানের নাটক'

বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে আঞ্চলিক সহযোগিতার আহ্বান

বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে আঞ্চলিক সহযোগিতার আহ্বান

ইসলামিক ফাউন্ডেশন এর বোর্ড অব গভর্নর সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সম্বর্ধনা

ইসলামিক ফাউন্ডেশন এর বোর্ড অব গভর্নর সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সম্বর্ধনা

সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সংবর্ধনা

সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সংবর্ধনা

লালমোহনে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত যুবদল নেতা চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু

লালমোহনে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত যুবদল নেতা চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু

চকরিয়ার বিএনপি নেতা আবু তাহের চৌধুরীর মৃত্যুতে সালাহউদ্দিন আহমদ ও হাসিনা আহমদের শোক

চকরিয়ার বিএনপি নেতা আবু তাহের চৌধুরীর মৃত্যুতে সালাহউদ্দিন আহমদ ও হাসিনা আহমদের শোক

উইন্ডিজের বিপক্ষে মাঠে নামছে বাংলাদেশ

উইন্ডিজের বিপক্ষে মাঠে নামছে বাংলাদেশ

বেইজিং সংস্কৃতি ও পর্যটন ব্যুরো ও আটাবের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত

বেইজিং সংস্কৃতি ও পর্যটন ব্যুরো ও আটাবের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত

প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানের সাক্ষাৎ

প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানের সাক্ষাৎ