নাসিরুদ্দীন মাহমুদ : কুটনীতি ও দরবেশির সালতানাত-৩

Daily Inqilab মুসা আল হাফিজ

০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০৪ এএম | আপডেট: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০৪ এএম

১২৪৯ এর ১৬ অক্টোবর গুরুত্বপূর্ণ কিছু কার্যকর হয়। সরকারের সেনাবাহিনী ও প্রশাসনের উপর পূর্ণ ক্ষমতা দিয়ে বাহাউদ্দীন বলবনকে ভারপ্রাপ্ত গভর্নর বা ভাইসরয়ের পদ দেওয়া হয়। তার নতুন পদের পরিপ্রেক্ষিতে তাকে দেশের ‘খান’ পদে উন্নীত করা হয়। ‘উলুঘ খান’ বা ‘খান-ই-মোয়াজ্জম’ উপাধিটি তার জন্য অধিকতর উপযোগী বলে বিবেচিত হয়েছিল। উলুঘ খানের ছোট ভাই সাইফুদ্দীন আইবেক, যিনি পূর্বে আমিরে খোর ছিলেন, তাঁকে আমিরে হাজিবের পদে উন্নীত করা হয়। তাকে কিসলু খান উপাধিও দেওয়া হয় এবং খানদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। মালিক তাজউদ্দীন খান নায়েবে আমিরে হাজিব নিযুক্ত হন এবং আলাউদ্দীন আয়াজ রেহানি (ঐতিহাসিক মিনহাজের ছেলে) নায়েব ওয়াকিলদার হিসেবে নিযুক্ত হন। দারাজ নায়েব আমিরে খোর পদ থেকে পদোন্নতি পান। এই সমস্ত নিয়োগ অবশ্যই কেন্দ্রে উলুগ খানকে বিশিষ্ট করে তুলেছিল। তার বিরোধীদেরও এ নিয়ে কথা বলার সুযোগ তৈরি হয়েছিল। মিনহাজের মতে, তার প্রথম দিকের সাফল্য অন্যদের হৃদয়ে ঈর্ষা জাগিয়েছিল এবং তাদের হৃদয়ে ঈর্ষা ও আক্রোশ বেড়ে উঠছিল। উলুঘ খান ও কিসলু খানের দ্ব›দ্ব তীব্র আকার লাভ করে। তাদের হাতে ছিলো বিভিন্ন অঞ্চলের শাসন ও ক্ষমতা।

শাসনকালের পঞ্চম ও ষষ্ঠ বছর; ৬৪৮-৬৪৯ হিজরি/ ১৫ এপ্রিল, ১২৫০-৫২। বিচারপতি জালালুদ্দীন কাশানি ১২৫১ সালের ফেব্রæয়ারি মাসে মারা যান এবং ৩১ জুলাই ১২৫১ তারিখে মিনহাজ দ্বিতীয়বারের জন্য প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিযুক্ত হন। ২৫ শাবান ৬৪৯ হিজরিতে (১২ নভেম্বর ১২৫১ খ্রিস্টাব্দ), রাজকীয় পতাকাগুলি গোয়ালিয়র, চান্দেরি, নরনুল এবং মালওয়ার দিকে চলে যায়। এই অভিযানে রাজকীয় বাহিনী মালওয়ার কাছাকাছি পৌঁছে যায়। পাঁচ হাজার ঘোড়া এবং দুই লাখ পদাতিক সেনাসহ এ অঞ্চলের শাসক জহরদেব পরাজিত হন এবং তার নির্মিত দুর্গটি দখল করে ধ্বংস করা হয়। এতে জহর দেবের ক্ষমতার অবসান ঘটেনি। তিনি নতুন করে বিদ্রোহের প্রস্তুতি নিতে থাকেন। অপরদিকে তুর্কি রাজবংশ ও বিভিন্ন অঞ্চলের শাসক-অভিজাতদের মধ্যে প্রতিযোগিতা ও ক্ষমতার দ্ব›দ্ব তীব্র হতে থাকে।

রাজত্বের সপ্তম বছর; ৬৫০ হিজরি/ ১৪ মার্চ ১২৫২-৫৩ খ্রিস্টাব্দ। মিনহাজের বর্ণনা অনুযায়ী নাসিরুদ্দীনের বাকি নয় বছর ছিলো তুর্কি রাজবংশ এবং দেশের বাকি অভিজাতদের মধ্যে ক্ষমতার লড়াইয়ে কম্পমান। কুতলুগ ছিলেন একদিকে। তার সবচেয়ে বড় শিকার ছিলেন তার জামাতা ইজ্জুদ্দীন বলবন কিসলু, যাকে শের খান তার সীমান্ত প্রদেশ থেকে বঞ্চিত করেছিলেন। বাকিরা ছিলেন অন্যান্য সম্ভ্রান্ত বংশীয়। শেষ অবধি তারা নিজেদের ভাগ্যকে উলুগ খানের সাথে যুক্ত করেছিলেন। এই দ্ব›দ্ব সকল পক্ষকেই ক্ষতিগ্রস্ত করে। শেষ অবধি দেখা যায়, উত্তর ভারতে তুর্কি দাস অফিসারদের অবস্থান এতটাই অনিশ্চিত যে তারা গৃহযুদ্ধেরও সামর্থ্য রাখে না। মিনহাজ লেখেন, সুলতান অন্যদের তুলনায় উলুঘ খানের প্রতি অত্যন্ত সদয় ছিলেন। তাই স্বাভাবিকভাবেই তিনি অন্যদের থেকে উলুঘ খানের বেশি প্রশংসা করেন। কিন্তু তিনি অন্য তুর্কিদের বঞ্চিত করেননি। প্রায় সকল তুর্কিকে সহায়তা করেছেন এবং তাদের অপরাধ যথাসম্ভব ঢেকে রেখেছেন। এর পাশাপাশি তুর্কিদের রাজনৈতিক ক্ষমতার অপ্রত্যাশিত পরিবর্তন থেকে নিজেকে রক্ষা করতে হচ্ছিলো এবং তার পরিবারের স্বার্থ রক্ষা করতে হয়েছিল। কিন্তু রাষ্ট্রের ভাগ্য ঝুলে গিয়েছিলো আভ্যন্তরীণ দ্ব›েদ্বর সাথে। সুলতান একে দমনের সিদ্ধান্ত নিলেন।

রাজত্বের অষ্টম বছর; ৬৫১ হিজরি/ ৩ মার্চ ১২৫৩-১২৫৪ খ্রি.। সুলতানের আদেশে ৬৫১ এর ২২ শাওয়াল (২৭ ডিসেম্বর ১২৫২ খ্রিস্টাব্দ) খেশ ও মুলতানের রাজকীয় বাহিনী গজনি ও লাহোরের দিকে এগুতে থাকে। এই অভিযানে প্রদেশের সব খান ও মালিক অংশ গ্রহণ করেন। অভিযানের উদ্দেশ্য ছিল কোনো শত্রæর সাথে যুদ্ধ করা নয়, বরং ঘরের সাথে যুদ্ধ করা। কিন্তু যুদ্ধ করতে হয়নি। বরং সমঝোতা নিশ্চিত করে অভিযান সমাপ্ত হয়।

 

 


বিভাগ : বিশেষ প্রতিবেদন


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

নাব্যতা হারিয়ে দখলদারদের কবলে পড়ে মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাচ্ছে একের পর এক নদী
সম্রাট জাহাঙ্গীর : রূপান্তরের বাদশাহী-১২
সম্রাট জাহাঙ্গীর : রূপান্তরের বাদশাহী-১১
সম্রাট জাহাঙ্গীর : রূপান্তরের বাদশাহী-১০
সম্রাট জাহাঙ্গীর : রূপান্তরের বাদশাহী-৯
আরও
X

আরও পড়ুন

এক অজু দিয়ে আসর মাগরিব ও এশার নামাজ পড়া প্রসঙ্গে?

এক অজু দিয়ে আসর মাগরিব ও এশার নামাজ পড়া প্রসঙ্গে?

আন্তঃধর্মীয় সংলাপের গুরুত্ব

আন্তঃধর্মীয় সংলাপের গুরুত্ব

ভেজালের দৌরাত্ম্য

ভেজালের দৌরাত্ম্য

পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন না হলে দেশে স্বৈরাচারী শাসক তৈরি হতেই থাকবে ; অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন

পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন না হলে দেশে স্বৈরাচারী শাসক তৈরি হতেই থাকবে ; অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন

যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপ ও ভারতের ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিলে অস্বস্তি

যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপ ও ভারতের ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিলে অস্বস্তি

মেঘনা আলমের আটকাদেশ : সরকারের সঠিক সিদ্ধান্ত

মেঘনা আলমের আটকাদেশ : সরকারের সঠিক সিদ্ধান্ত

সংক্ষিপ্ত বিশ্বসংবাদ

সংক্ষিপ্ত বিশ্বসংবাদ

দিল্লিতে ধূলোঝড়ের তাণ্ডবে ২শ’ ফ্লাইট বিঘ্ন

দিল্লিতে ধূলোঝড়ের তাণ্ডবে ২শ’ ফ্লাইট বিঘ্ন

আল-আকসার ইমামকে ৭ দিনের নিষেধাজ্ঞা ইসরাইলের

আল-আকসার ইমামকে ৭ দিনের নিষেধাজ্ঞা ইসরাইলের

পর্যটকদের কাছে টিকিট বিক্রি ইসরাইলের

পর্যটকদের কাছে টিকিট বিক্রি ইসরাইলের

ইউক্রেনকে রেকর্ড ২১ বিলিয়ন ইউরো সামরিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি মিত্রদের

ইউক্রেনকে রেকর্ড ২১ বিলিয়ন ইউরো সামরিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি মিত্রদের

মার্কিন শুল্ক বিরোধ মোকাবিলায় প্রতিবেশী দেশে নজর চীনের

মার্কিন শুল্ক বিরোধ মোকাবিলায় প্রতিবেশী দেশে নজর চীনের

জনসংখ্যা হ্রাস রোধে হাইস্পিড রেললাইন

জনসংখ্যা হ্রাস রোধে হাইস্পিড রেললাইন

১৭ ঘণ্টা পর আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্রের একটি ইউনিট চালু

১৭ ঘণ্টা পর আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্রের একটি ইউনিট চালু

হাজার সেনা বরখাস্ত করেছে ইসরাইল

হাজার সেনা বরখাস্ত করেছে ইসরাইল

যুক্তরাষ্ট্রে ডিমের দামে সংকটে সাধারণ মানুষ

যুক্তরাষ্ট্রে ডিমের দামে সংকটে সাধারণ মানুষ

পশ্চিমবঙ্গে বিক্ষোভ চলছেই মোদির কুশপুতুল দাহ

পশ্চিমবঙ্গে বিক্ষোভ চলছেই মোদির কুশপুতুল দাহ

তহবিলের অভাবে শ’ শ’ কর্মী ছাঁটাই করছে ওচা

তহবিলের অভাবে শ’ শ’ কর্মী ছাঁটাই করছে ওচা

পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন করলে চরম মূল্য দিতে হবে ইরানকে : ট্রাম্প

পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন করলে চরম মূল্য দিতে হবে ইরানকে : ট্রাম্প

ফের বাড়ল স্বর্ণের দাম, নতুন রেকর্ড

ফের বাড়ল স্বর্ণের দাম, নতুন রেকর্ড