সুলতানুল হিন্দ খাজা মঈনুদ্দীন চিশতী আজমিরী (রহ.)-২
১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১১:১৭ পিএম | আপডেট: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০৬ এএম
হযরত খাজা মঈনুদ্দীন চিশতীর (রহ.) আজমীর আগমনকে চৌহান রাজা পৃথ্বিরাজ ভালো চোখে দেখেননি। তিনি খাজা সাহেবকে আজমীর থেকে বহিষ্কারের প্রয়াস চালান। কিন্তু খাজা সাহেবের প্রতি ধর্ম, বর্ণ ও গোত্র নির্বিশেষে জনগণের ভালোবাসা ও আল্লাহ প্রদত্ত তাঁর অলৌকিক ক্ষমতার কারণে পৃথ্বিরাজের এ দুরভিসন্ধি ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। খাজা সাহেবের অক্লান্ত পরিশ্রম ও নিরন্তর সাধনার ফলে শিরক ও বিদআতের পঙ্কে তাওহিদ ও সুন্নাতের পুষ্পগুচ্ছ প্রস্ফুঠিত হয়। ইতিহাসবিদ শায়খ সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নদভী (রহ.) হযরত খাজা সাহেব (রহ.)কে ‘শায়খুল ইসলাম’ অভিধায় আখ্যায়িত করেন (তারিখে দাওয়াত ওয়া আজিমাত, ৩ খ-, করাচি, ১৯৮৩, পৃষ্ঠা-২২)। ১১৯২ সালে তরাইনের যুদ্ধে মুহাম্মদ ঘোরি পৃথ্বীরাজ চৌহানকে পরাজিত করেন। ঘোরি তখন আজমীরে খাজা মঈনুদ্দীন চিশতীর সাথে দেখা করতে আসেন। তিনি শিগগির দূর-দুরান্ত থেকে আগত স্থানীয় জনগণ, দরিদ্র কৃষক ও সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হন।
ভারতবর্ষে ইসলাম প্রচারে খাজা সাহেবের অবদান মূল্যায়ন করে ‘সিয়ারুল আউলিয়া’ গ্রন্থের লেখক অভিমত প্রকাশ করেন যে, ‘ভারতে যারা ইসলাম গ্রহণ করে ধন্য হন এবং আগামীতে কিয়ামত পর্যন্ত হবেন এবং ইসলামের পরিধি যত বিস্তৃত হবে তার সওয়াব খাজা মঈনুদ্দীন চিশতী (রহ.)-এর রূহ মুবারকের ওপর পৌঁছবে’ (সিয়ারুল আউলিয়া, পৃ.৪৭)। বিভিন্ন ইতিহাস সূত্রে জানা যায় যে, হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে স্থানীয় জনগণের প্রতি খাজা সাহেব (রহ.)-এর সহনশীল এবং সহানুভূতিশীল আচরণ তাঁর হাতে ইসলাম গ্রহণের পেছনে একটি প্রধান কারণ বলে মনে করা হয়। তিনি শায়খ বখতিয়ার কাকি (মৃত্যু ১২৩৫)-কে তাঁর আধ্যাত্মিক উত্তরসূরি হিসেবে নিযুক্ত করেছিলেন, যিনি দিল্লিতে চিশতিয়া তরিকা প্রচারে আমৃত্যু নিয়োজিত ছিলেন।
হযরত খাজা সাহেবের কর্মময় জীবনের বৈশিষ্ট্যপূর্ণ দিক হচ্ছে তিনি সুলতান ইলতুতমিশের আমলে দু’বার (১২১০-১২৩৫) দিল্লি সফর করেন। কিন্তু ক্ষমতার কেন্দ্র হতে নিজকে সযতেœ দূরে রাখেন। এমনকি হযরত খাজা সাহেবের শিষ্য এবং চিশতীয়া তরিকার বুযুর্গবৃন্দ সুলতান ও রাজ দরবারের সাথে কোনো প্রকার সম্পর্ক রাখা অপছন্দ করতেন। উপঢৌকন রূপে সরকারি জমি-জায়গীর তাঁরা কখনো গ্রহণ করেননি। চিশতীয়া তরিকার প্রসিদ্ধ সাধক হযরত খাজা নিজামুদ্দীন আওলিয়া (রহ.)-এর সাক্ষাতের অনুমতি পাননি তৎকালীন দিল্লির সুলতান আলাউদ্দীন খিলজী বারবার আবেদন করা সত্ত্বেও।
হযরত খাজা মঈনুদ্দীন চিশতী ছিলেন উদার, সহানুভূতিপ্রবণ, গভীর মানবতাবাদী, বিশ্বজনীন দৃষ্টিভঙ্গিসম্পন্ন এবং মহানবী (সা.)-এর আদর্শের বাস্তব রূপকার। তিনি ধর্মকে মানবসেবার প্রেক্ষিতে বিশ্লেষণ করেছেন এবং তাঁর অনুসারীদের নদীর মতো বদান্য, সূর্যের ন্যায় স্নেহবৎসল ও পৃথিবীর ন্যায় অতিথিপরায়ণ হওয়ার জন্য শিক্ষা দান করে গেছেন। তাঁর মতে, ইবাদতের চূড়ান্ত রূপ হচ্ছে দুঃখী মানুষের দুঃখ দূর করা, অসহায়ের অভাব মোচন করা এবং ক্ষুধার্তকে আহার যোগানোর মধ্যে নিহিত (ইসলামী বিশ্বকোষ, ১০ খ-, ঢাকা, ১৯৯১, পৃষ্ঠা-৭২৯)। দরিদ্র ও অসহায়দের জন্য দাতব্যসেবা, সমবেদনা, আল্লাহর নির্দেশের অনুবর্তী হয়ে ভক্তিপূর্ণ ও বিশুদ্ধ জীবনযাপন করা ছিল তার জীবনদর্শন।
ইসলাম ধর্মের এই মহান সাধক ১২৩৬ খ্রিস্টাব্দে আজমীরে ইন্তেকাল করেন। বড় ছেলে খাজা ফখরুদ্দীন চিশতী তাঁর নামাজে জানাজায় ইমামতি করেন। সুলতান ইলতুতমিশ, স¤্রাট আকবর, রাজিয়া সুলতানা, স¤্রাট জাহাঙ্গীর, স¤্রাট শাহজাহান, বাদশাহ আওরঙ্গজেব প্রমুখ শাসকগণ নিয়মিত তার মাজার জিয়ারত করতে আসতেন। তার মাজারের স্থাপত্যশৈলী ইন্দো-ইসলামিক ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ। ভারতীয় উপমহাদেশে ইসলাম প্রচার, আধ্যাত্মসাধনা ও সুফি তরিকার বিকাশে তাঁর অবদান ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে রয়েছে এবং থাকবে। মোঘল সম্রাট আকবর পদব্রজে আজমীরে আসতেন হযরত খাজা সাহেবের মাজার জিয়ারতের উদ্দেশ্যে। ইসলামের মহান সাধক হযরত খাজা মঈনুদ্দীন চিশতী আজমিরীর অমূল্য জীবন ও কর্ম অনুসরণ করে মানুষ জীবনকে আলোকিত করতে পারে, শিরক ও বিদআতের পথ পরিহার করে তাওহিদ ও সুন্নাতে রাসুলের আদর্শকে মনে-প্রাণে গ্রহণ করে জীবনে সফলতায় অভিষিক্ত করতে পারে। (সমাপ্ত)।
বিভাগ : বিশেষ প্রতিবেদন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
নাটকীয় শেষ দশ মিনিটে দুই গোল শোধ করে বার্সাকে রুখে দিল সেল্তা
বিবর্ণ সিটিকে ইতিহাদেই বিধ্বস্ত করলো টটেনহ্যাম
নটিংহ্যামকে হারিয়ে চার ম্যাচের জয়খরা কাটালো আর্সেনাল
স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসা জাতীয়করণের দাবী অত্যন্ত যৌক্তিক
পাঠ্যবই ছাপায় অনিয়মে আনন্দ প্রিন্টার্সকে সতর্কতা
দক্ষিণ লেবাননে ৬ চিকিৎসাকর্মী নিহত
জনগণের সাথে জনসংযোগ বাড়াতে হবে
আমরা যুদ্ধে বিশ্বাসী না কেউ গায়ে পড়লে জবাবের প্রস্তুতি রাখতে হবে: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
বাফুফের নতুন সভাপতি তাবিথের কাছে ২৭ রেফারির চিঠি
ফের বাড়লো সোনার দাম, ভরি ১ লাখ ৪২ হাজার টাকা
বাংলাদেশে খেলা নিয়ে অনিশ্চিয়তায় হামজা!
বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামেই হবে অনূর্ধ্ব-২০ নারী সাফের খেলা
সিলেটে মাজিদের ফিফটি
অ্যাম্বাসেডর কাপ উশুতে সেনাবাহিনী চ্যাম্পিয়ন
মাদক শুধু ব্যক্তিকে নয় পরিবারকেও ধ্বংস করে
সাধারণ মানুষের পেটে লাথি মেরে আ.লীগ নিজেদের ভাগ্য গড়েছে : এমরান সালেহ প্রিন্স
ধর্মদ্রোহী সরকারের সময় কোনো ধর্মই নিরাপদ ছিল না
দৌলতখানে শীতকালীন সবজি পরিচর্যায় ব্যস্ত কৃষক
সুন্দরগঞ্জে ছয় পা বিশিষ্ট বাছুরের জন্ম
বৈষম্যের শিকার কুমিল্লার ১৫ হাজার এতিম শিশু