আলাউদ্দীন খিলজি: যুগনায়ক-৪
২৮ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০২ এএম | আপডেট: ২৮ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০২ এএম

মঙ্গোলরা যেখানেই জয়ী হয়েছে, নির্বিচারে হত্যা করেছে পুরুষদের, অপহরণ করেছে শিশু ও নারীদের। লুণ্ঠন এবং অগ্নিসংযোগ ছিলো তাদের বিনোদন। তারা একটি দেশের অতীত এবং অস্তিত্বকে ধুলোর সাথে মিশিয়ে দিতো। পুরো দেশকে বানাতো ধ্বংসস্তূপ, বাকি রাখতো না সভ্যতার কোনো চিহ্নই। নিজের মাতৃভূমিকে এই পরিণতি থেকে রক্ষার জন্য আলাউদ্দীন ক্ষমতা ও জীবনের ঝুঁকি নেন বারবার। শপথ করেন, ভারতবর্ষের সীমানা থেকে মঙ্গোলদের পুরোপুরি না তাড়িয়ে বিশ্রাম নেবেন না।
১৩০৫ সালে মঙ্গোলরা আবারো ভারত আক্রমণ করলো। খিলজির সেনাপতিরা একে প্রতিরোধ করলেন।
১৩০৬ সালে প্রায় এক লক্ষ সৈন্য নিয়ে মঙ্গোলরা ষষ্ঠবারের মতো এগিয়ে এলো। ইরাবতী নদীর তীরে কালো মেঘের মতো ছড়িয়ে পড়লো তাদের শিবির। সবাই ধরে নিলো এবার আর ভারতের রক্ষা নাই। আলাউদ্দীন সন্ধির পথ বেছে নিতে পারতেন। সকলেই এই পরামর্শ দিচ্ছিলো। কিন্তু তিনি নিলেন যুদ্ধজয়ের সিদ্ধান্ত। অবিশ্বাস্য, অপ্রতিরোধ্য দৃঢ়তা ও কৌশলে তিনি মোঙ্গলদের হারিয়ে দিলেন।
এ যুদ্ধে মোট এক লক্ষ সৈন্যের মধ্যে মাত্র তিন-চার হাজার মোঙ্গল প্রাণ নিয়ে পালাতে পেরেছিলো। ভারতভীতিকে মোঙ্গলদের অন্তরে বদ্ধমূল করে দেন আলাউদ্দীন। বিভিন্ন যুদ্ধে প্রায় ৩ লাখ মঙ্গোল সেনা তার বাহিনীর হাতে নিহত হয়। ১৩০৮ সালের পর মোঙ্গলরা ভুলেও আর ভারতের দিকে তাকাতে সাহস করেনি। তারিখে ফিরোজশাহির বর্ণনানুযায়ী, সুলতানের সেনাপতি মালিক গাজী প্রতি শীতকালে মোঙ্গল সীমান্তে গিয়ে তাদেরকে যুদ্ধের জন্য আহবান করতেন। কিন্তু মঙ্গোলরা কখনোই ভারত অভিমুখে এগিয়ে আসার সাহস করেনি!
সক্ষম হাতে খিলজি একদিকে যেমন মোঙ্গলদের মোকাবেলা করেন, অন্যদিকে রাষ্ট্রসীমাও সম্প্রসারণ করেন। ইলতুৎমিশের আমল থেকে সুলতানি সাম্রাজ্য সীমানাবৃদ্ধিতে মনোযোগ দেয়নি। আলাউদ্দীন শুরুতেই জানান দেন, এ ধারার সমাপ্তি আসন্ন। তিনি সাম্রাজ্যকে বিস্তৃত করেন দুটি ধাপে। প্রথমে ভারতের উত্তরাঞ্চল, পরে দক্ষিণাঞ্চল।
উত্তর ভারত জয়ের পথে প্রথম অভিযানটি পরিচালিত হয় গুজরাটে। নেতৃত্ব দেন নসরত খান ও উলুঘ খান। ১২৯৮ সালের ঘটনা এটি। তখন গুজরাট শাসন করছেন রাজা কর্ণদেব বা রায়করণ। তিনি ছিলেন বাঘেলা রাজপুত বংশীয় শাসক। যুদ্ধ হয় আহমেদাবাদে। রাজা কর্ণ পরাজিত হন। রানী কমলাদেবী হন বন্দি। পরাজিত রাজা কন্যা দেবল রাণীকে নিয়ে পালিয়ে যান দেবগীরিতে। রাণী কমলাদেবীকে বিয়ে করেন আলাউদ্দীন। তার প্রথম স্ত্রী ছিলেন সুলতান জালালুদ্দীনের কন্যা। তখনকার নিয়মে যুদ্ধবন্দী নারীকে দাসী হিসেবে রাখার প্রথা থাকলেও রাণীর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করেন তিনি, তাকে বানান সাম্রাজ্যের দ্বিতীয় সম্রাজ্ঞী। নসরত খান এই অভিযান থেকে ফেরেন বিপুল গনিমতসহ। সাথে আনেন মালিক কাফুর নামের এক যোদ্ধাকে, যিনি পরে হন সুলতানের প্রধান সেনাপতি।
পরের বছর অভিযান পরিচালিত হয় রণথম্ভোরে। উলুঘ খান ও নসরৎ খানের নেতৃত্বে বিরাট বাহিনী রণথম্ভোর অবরোধ করে। রাজা রাণা হাম্মীর ছিলেন এর শাসক। অবরুদ্ধ শহর থেকে গোলা নিক্ষেপ করছিলো তারা। অবরোধ তদারকিতে নিয়োজিত সেনাপতি নসরৎ খান তাদের নিক্ষিপ্ত গোলার আঘাতে আহত হন, পরে মৃত্যুবরণ করেন। দুই লক্ষ সৈন্য নিয়ে আক্রমণ করেন রাজা রাণা। ভীষণ যুদ্ধে ক্ষয়-ক্ষতি হয় উভয় পক্ষের। দিল্লীর বাহিনীর সংখ্যা কমে এসেছিলো। তারা পিছু হটতে বাধ্য হন। খবর পেয়ে সুলতান অগ্রসর হন রণথম্ভোরের দিকে। রাস্তায় তিনি আক্রান্ত হন আপন ভাতিজা আকাত খানের দ্বারা। কিছু আমিরের ষড়যন্ত্র ছিলো এর পেছনে। তারা আলাউদ্দীনকে হত্যা করে আকাতকে বানাতে চাচ্ছিল সুলতান। আলাউদ্দীন আহত হলেও অভিযান থামেনি। আকাতকে মৃত্যুদ- দেওয়া হয়। কয়েকটি বিদ্রোহাত্মক ঘটনা ঘটলেও সুলতান তা সফলভাবে মোকাবেলা করেন। তারপর সোজা উপনীত হন রণথম্ভোরে। এক বছর ধরে অবরোধ করে রাখা হয় দুর্গকে। রাজা রাণা নতি স্বীকারে অসম্মত হলে দিল্লীর বাহিনী দেওয়াল টপকিয়ে দুর্গে প্রবেশ করে। যারা প্রতিরোধ করেছিলো, তারা নিহত হয়। রাজা রাণাকে দেওয়া হয় মৃত্যুদ-।
এরপর আলাউদ্দীনের সামনে থাকে রাজপুতানার চিতোর দুর্গ। মেবার রাজ্যের রাজধানী ছিলো চিতোর। পাহাড়ের উপরে ছিলো এখানকার দুর্গ। এই দুর্গ ছিলো খুব প্রভাবশালী। তা বিরোধীদের হাতে থাকলে দিল্লীর জন্য বিপদ। যেখানে শিশোদিয়া বংশের রাণা রতন সিংহের শাসন চলছিল। আলাউদ্দীন তাকে বশ্যতা স্বীকারের আহবান জানান। রাণা রতন অগ্রাহ্য করেন তার প্রস্তাব। দিল্লী বাহিনী এগিয়ে যায় চিতোরের দিকে। শহরটি অবরোধ করা হয় ১৩০৩ সালে। রাজপুতরা লড়াই করে বীরবিক্রমে। সুলতান দুর্গ জয়ে ব্যর্থ হন। অবশেষে সুলতানের কৌশলে দুর্গের দেওয়াল ভেঙে ফেলা হয়। সাত মাস পরে আর টিকে থাকার শক্তি অবশিষ্ট থাকে না রতন সিংহের। তিনি আত্মসমর্পণ করেন। কয়েকদিন চিতোর অবস্থান করেন আলাউদ্দীন। তারপর পুত্র খিজির খানকে শাসক মনোনীত করে দিল্লীতে ফেরেন। এ অভিযানে দিল্লী হারায় অসংখ্য সৈনিক। চিতোর হারায় ত্রিশ হাজার রাজপুত যোদ্ধা।
বিভাগ : বিশেষ প্রতিবেদন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন

এক অজু দিয়ে আসর মাগরিব ও এশার নামাজ পড়া প্রসঙ্গে?

আন্তঃধর্মীয় সংলাপের গুরুত্ব

ভেজালের দৌরাত্ম্য

পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন না হলে দেশে স্বৈরাচারী শাসক তৈরি হতেই থাকবে ; অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন

যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপ ও ভারতের ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিলে অস্বস্তি

মেঘনা আলমের আটকাদেশ : সরকারের সঠিক সিদ্ধান্ত

সংক্ষিপ্ত বিশ্বসংবাদ

দিল্লিতে ধূলোঝড়ের তাণ্ডবে ২শ’ ফ্লাইট বিঘ্ন

আল-আকসার ইমামকে ৭ দিনের নিষেধাজ্ঞা ইসরাইলের

পর্যটকদের কাছে টিকিট বিক্রি ইসরাইলের

ইউক্রেনকে রেকর্ড ২১ বিলিয়ন ইউরো সামরিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি মিত্রদের

মার্কিন শুল্ক বিরোধ মোকাবিলায় প্রতিবেশী দেশে নজর চীনের

জনসংখ্যা হ্রাস রোধে হাইস্পিড রেললাইন

১৭ ঘণ্টা পর আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্রের একটি ইউনিট চালু

হাজার সেনা বরখাস্ত করেছে ইসরাইল

যুক্তরাষ্ট্রে ডিমের দামে সংকটে সাধারণ মানুষ

পশ্চিমবঙ্গে বিক্ষোভ চলছেই মোদির কুশপুতুল দাহ

তহবিলের অভাবে শ’ শ’ কর্মী ছাঁটাই করছে ওচা

পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন করলে চরম মূল্য দিতে হবে ইরানকে : ট্রাম্প

ফের বাড়ল স্বর্ণের দাম, নতুন রেকর্ড