ঢাকা   শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪ | ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

মুহম্মদ বিন তুঘলক : কালের চেয়ে অগ্রসর-৪

Daily Inqilab মুসা আল হাফিজ

০১ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:২৭ এএম | আপডেট: ০১ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:২৭ এএম

কিছু গ্রন্থে সুলতানের উদ্ভট মানসিকতাকে তুলে ধরার জন্য তিব্বত অভিযানের পরিকল্পনার কথা বলা হয়েছে। তিনি নাকি তিব্বতে অভিযান করতে চেয়েছিলেন বিজয়ী ভাবমূর্তি প্রতিষ্ঠার জন্য। কিন্তু সেখানে অভিযানের কোনো পরিকল্পনা তার ছিলো, এমন তথ্য ইতিহাসে নেই।

১৩৩০ খ্রিস্টাব্দে সুলতান মুদ্রা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাবার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেন। দুশ’ গ্রেনের স্বর্ণ মুদ্রা (দিনার) এবং একশ চল্লিশ গ্রেনের রৌপ্য মুদ্রা (আদলী) লেনদেনের পরিবর্তে স্বল্প ব্যয়ে নির্মিত প্রতীকী তাম্র মুদ্রার প্রচলন করেন তিনি। এ পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয় পরিস্থিতির দাবিতে। দেশে সোনার অনুপাতে রূপার অভাব দেখা দিয়েছিল। দেশ থেকে প্রচুর স্বর্ণমুদ্রা বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছিল। এতে অর্থনৈতিক ক্ষতি হচ্ছিলো নানাভাবে। স্বর্ণ ও রৌপ্য সংরক্ষণের মাধ্যমে অর্থনৈতিক সংকট দূর করার পদক্ষেপ ছিলো তার। ফলে বাজারে তামার মুদ্রা ছাড়েন। এ মুদ্রা ছিলো স্বর্ণ ও রৌপ্য মুদ্রার প্রতীক স্বরূপ। অনেকটা আধুনিক কালের কাগজের টাকার মতো। তামার পাতে টাকার যে অঙ্ক বা পরিমাণ লেখা থাকতো তামার ধাতব মূল্য ছিলো তার ক্ষুদ্র ভগ্নাংশমাত্র। এতে ছিলো অবাধ বিনিয়োগ ও লেনদেনের সুবিধা। এতে স্বর্ণ-রৌপ্য সংরক্ষণের পরিকল্পনা ভালোই এগুচ্ছিলো। কিন্তু কর্মকর্তাদের গাফিলতিতে একটা সমস্যা থেকে যায়। মুদ্রা যাতে জাল না হয়, সেজন্য টাকশালের কর্তারা কোনো ব্যবস্থা রাখেননি। ফলে এই ব্যবস্থা যাদের ক্ষতির কারণ হয়েছিলো, সেই বড়লোকরা নকল মুদ্রা দিয়ে বাজার সয়লাব করে দিলো। ঐতিহাসিক বারানী বলেন, প্রত্যেক হিন্দু গৃহ মুদ্রা তৈরির কেন্দ্রস্থলে পরিণত হয়। হিন্দুরা অজস্র জাল মুদ্রা বানাত এবং এ মুদ্রার সাহায্যে কর প্রদান ও ব্যবসায়-বাণিজ্য চালাত। অপরদিকে এমন মুদ্রা সম্পর্কে জনগণের ধারণা ছিলো অস্পষ্ট। তারা বুঝতে পারেনি এর উপকার কোথায়? ব্যবসায়ীরা এর ব্যবহারে অনীহা প্রকাশ করে। ফলে মুদ্রাটি জনগণের সহায়তা পায়নি। বস্তুত দেশবাসীর অনীহার ফলেই এই ব্যবস্থা ব্যর্থ হয়। কিন্তু সুলতানের এ উদ্যোগ ছিলো আধুনিক মুদ্রাব্যবস্থার পথিকৃত ও পূর্বসূরী। ১৩২৫-৫১ সালে তুল্যমূল্যের ধারণা লোকেরা বুঝতে না পারলেও পরবর্তীকালে সেই তুল্যমূল্যের ধারণা জনপ্রিয় হয় এবং বাণিজ্যিকভাবে বিনিময় ছাড়াও সোনার ভাঙানির হিসাব তৈরি হয়। সুলতান বাজার থেকে তুলে নিলেন প্রতীক মুদ্রা এবং স্বর্ণমুদ্রা চালু করলেন আবারো। তুল্যমূল্যের বিনিময়ে রাজকোষ থেকে স্বর্ণ নিয়ে যেতে বললেন সবাইকে। ফলে হিন্দু ও বিদ্রোহীরা বিপুল স্বর্ণ লাভে সক্ষম হলো। এতে প্রমাণিত হয়, স্বর্ণের অভাব ছিলো না সুলতানের রাজকোষে। অনেকেই দেখাতে চান, সুলতানের খামখেয়ালির কারণে রাজকোষের স্বর্ণ শেষ হয়ে যাওয়ায় তিনি প্রতীক মুদ্রা চালু করেন। ফেরেশতা দেখিয়েছেন, তুঘলকের প্রচলিত মুদ্রা ছিলো ব্রোঞ্জের, তামার নয়। স্বর্ণের অভাব তখন মুখ্য কারণ ছিলো না। তবে গার্ডনার ব্রাউন দেখিয়েছেন, চতুর্দশ শতকে গোটা বিশ্বে রৌপ্যের সঙ্কট ছিলো। ভারতেও ছিলো স্বাভাবিকভাবে।

মুদ্রাবদল ব্যর্থ হওয়ায় সুলতানের রাজকোষ প্রচ- চাপে পড়লো। রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক অবস্থা বিপদগ্রস্ত হলো। কর বৃদ্ধি ছাড়া সুলতানের সামনে আর পথ রইলো না। ফলে দোয়াবে সুলতান দশ গুণ কর বৃদ্ধি করলেন। বারানির মতে, তা ছিলো দশ থেকে বিশ গুণ। দাক্ষিণাত্যের এই অঞ্চলে আলাউদ্দীন খলজি ইতোপূর্বেই মোট উৎপাদনের শতকরা ৫০ ভাগ রাজস্ব ধার্য করেছিলেন। সুতরাং মুহম্মদ বিন তুঘলকের বিশ ভাগ কর অতিরিক্ত ছিলো না কোনোভাবে। কারণ, দোয়াব ছিলো উর্বর ভূখ- এবং সেখানকার অধিবাসীরা ছিলো ধনী ও সমৃদ্ধশালী।

 

 

 


বিভাগ : বিশেষ প্রতিবেদন


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

সম্রাট জাহাঙ্গীর : রূপান্তরের বাদশাহী-৪
সম্রাট জাহাঙ্গীর : রূপান্তরের বাদশাহী-৩
সম্রাট জাহাঙ্গীর : রূপান্তরের বাদশাহী-২
সম্রাট জাহাঙ্গীর : রূপান্তরের বাদশাহী-১
ব্রিটিশ সরকারের তত্বাবধানে বাহদুর শাহ জাফর ও তাঁর বংশধরদের অবস্থা !
আরও

আরও পড়ুন

জ্বালানি খাতে সাশ্রয় হয়েছে ৩৭০ কোটি টাকা: জ্বালানি উপদেষ্টা

জ্বালানি খাতে সাশ্রয় হয়েছে ৩৭০ কোটি টাকা: জ্বালানি উপদেষ্টা

গৌরনদীতে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দোকান ঘরে বাস নিহত-১ আহত-৬

গৌরনদীতে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দোকান ঘরে বাস নিহত-১ আহত-৬

কুড়িগ্রামের উলিপু‌রে ২ আ'লীগ নেতা গ্রেপ্তার

কুড়িগ্রামের উলিপু‌রে ২ আ'লীগ নেতা গ্রেপ্তার

লাওসে ভেজাল মদপানে ৬ বিদেশির মৃত্যু

লাওসে ভেজাল মদপানে ৬ বিদেশির মৃত্যু

না.গঞ্জে ডেঙ্গু পরীক্ষার টেস্ট কিট সংকট কে কেন্দ্র করে টেস্ট বাণিজ্যের অভিযোগ

না.গঞ্জে ডেঙ্গু পরীক্ষার টেস্ট কিট সংকট কে কেন্দ্র করে টেস্ট বাণিজ্যের অভিযোগ

ইমরান খানের মুক্তির দাবিতে বড় ধরনের বিক্ষোভের প্রস্তুতি

ইমরান খানের মুক্তির দাবিতে বড় ধরনের বিক্ষোভের প্রস্তুতি

‘পতনের’ মুখে ইউক্রেনের ফ্রন্টলাইন

‘পতনের’ মুখে ইউক্রেনের ফ্রন্টলাইন

বিশ্বব্যাংক আয়োজিত জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের গ্রাফিতির প্রদর্শনী

বিশ্বব্যাংক আয়োজিত জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের গ্রাফিতির প্রদর্শনী

আগামীকাল রোববার নারায়ণগঞ্জের যেসব এলাকায় ১০ ঘণ্টা গ্যাস থাকবে না

আগামীকাল রোববার নারায়ণগঞ্জের যেসব এলাকায় ১০ ঘণ্টা গ্যাস থাকবে না

সিলেট সীমান্তে দেড় কোটি টাকার ভারতীয় পণ্য জব্দ

সিলেট সীমান্তে দেড় কোটি টাকার ভারতীয় পণ্য জব্দ

২ মার্চকে জাতীয় পতাকা দিবস হিসেবে স্বীকৃতির আহ্বান জানালেন মঈন খান

২ মার্চকে জাতীয় পতাকা দিবস হিসেবে স্বীকৃতির আহ্বান জানালেন মঈন খান

সরাসরি রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের প্রস্তাব নিয়ে যা বললেন বদিউল আলম

সরাসরি রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের প্রস্তাব নিয়ে যা বললেন বদিউল আলম

সিংগাইরে সাংবাদিক মামুনের বাবার ইন্তেকাল

সিংগাইরে সাংবাদিক মামুনের বাবার ইন্তেকাল

বিরামপুরে ধান-ক্ষেত থেকে হাত বাধা আদিবাসী দিনমজুর মহিলার লাশ উদ্ধার!

বিরামপুরে ধান-ক্ষেত থেকে হাত বাধা আদিবাসী দিনমজুর মহিলার লাশ উদ্ধার!

আওয়ামী শুধু ফ্যাসিস্ট নয়, তাদের আরেকটা নাম দিয়েছি স্যাডিস্ট: মিয়া গোলাম পরওয়ার

আওয়ামী শুধু ফ্যাসিস্ট নয়, তাদের আরেকটা নাম দিয়েছি স্যাডিস্ট: মিয়া গোলাম পরওয়ার

খুবিকে ইমপ্যাক্টফুল বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গড়ে তুলতে সকলের সহযোগিতা কামনা

খুবিকে ইমপ্যাক্টফুল বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গড়ে তুলতে সকলের সহযোগিতা কামনা

লাল পাহাড়ের দেশকে বিদায় জানিয়ে না ফেরার দেশে চলে গেলেন অরুণ চক্রবর্তী

লাল পাহাড়ের দেশকে বিদায় জানিয়ে না ফেরার দেশে চলে গেলেন অরুণ চক্রবর্তী

বিদেশি প্রভুদের নিয়ে বিতাড়িত স্বৈরাচার ষড়যন্ত্র করেই যাচ্ছে: তারেক রহমান

বিদেশি প্রভুদের নিয়ে বিতাড়িত স্বৈরাচার ষড়যন্ত্র করেই যাচ্ছে: তারেক রহমান

আগামী রোববার-সোমবারও বন্ধ থাকবে ঢাকা সিটি কলেজ

আগামী রোববার-সোমবারও বন্ধ থাকবে ঢাকা সিটি কলেজ

অত্যাধুনিক সব ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালাব ইউক্রেনে: পুতিন

অত্যাধুনিক সব ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালাব ইউক্রেনে: পুতিন