মুহম্মদ বিন তুঘলক : কালের চেয়ে অগ্রসর-৫

ভারতের সভ্যতায় মুসলমানদের অবদান

Daily Inqilab মুসা আল হাফিজ

০২ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০৪ এএম | আপডেট: ০২ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০৪ এএম

এ অঞ্চলের বাসিন্দা ছিলেন বারানি। তিনি করের কারণে সুলতানের প্রতি ক্ষুব্ধ ছিলেন হয়তো। করের হার ও জনগণের ক্ষতির অতিরঞ্জিত বিবরণ দিয়েছেন তিনি। তা আদায়ে নিষ্ঠুরতার উল্লেখও করেছেন। ফলে প্রজাগণ বিদ্রোহী হয়ে উঠে। আসলে সুলতান যে সময় করবৃদ্ধি করেন, তারপরই সেখানে দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। খাজনা আদায়কারীগণ সুলতানকে দুর্ভিক্ষের কথা না জানিয়ে উৎপীড়ন করে রাজস্ব আদায় করতে থাকে। অত্যাচারের ভয়ে প্রজারা বনে-জঙ্গলে আশ্রয় নেয়। চাষাবাদ অবহেলিত হয় এবং দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা আরও খারাপ হয়ে পড়ে। আসলে দুর্ভাগ্য ছিলো তুঘলকের। তিনি যখন দুর্ভিক্ষের খবর পেলেন, রাজভাণ্ডার থেকে খাদ্যের জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণ করলেন। প্রজাদের জন্য তাকাবি ঋণের ব্যবস্থা করলেন।

দিল্লী, মালব ও দোয়াব অঞ্চলে দুর্ভিক্ষের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত জনসাধারণের কল্যাণে নানা ভূমিকা নেন তিনি। কূপ খনন, সেচব্যবস্থার উন্নয়ন, চাষের বীজদান ও ঋণদান ছিলো এর অন্যতম। কিন্তু অনাবৃষ্টি দীর্ঘস্থায়ী হলো। দুর্ভিক্ষের ভয়াবহতা দূরীভূত হতে অনেক সময় লাগল। দীর্ঘকাল স্থায়ী দুর্ভিক্ষ জনগণের ধৈর্যচ্যুতি ঘটাল এবং প্রদত্ত ঋণের কোনো সদ্ব্যবহার তারা করতে পারল না। প্রচণ্ড বিদ্রোহ জন্ম নিলো সেখানে। এমতাবস্থায়, তুঘলক উইনস্টোন চার্চিলের মতো বলেননি, ‘আমি ভারতীয়দের ঘেন্না করি। ওদের যেমন জানোয়ারের মতো জীবন, তেমন জানোয়ারের মতো ধর্ম। খরগোশের মতো এত সন্তান উৎপাদন করলে দুর্ভিক্ষ তো হবেই।’ দিল্লীর সরকার যখন পরিস্থিতির গুরুত্ব সংবলিত দুর্দশার বিস্তারিত চিত্র ও মৃত্যুর পরিসংখ্যান টেলিগ্রাম করে তাঁর কাছে পাঠানো হয়। টেলিগ্রাম দেখে চার্চিলের সংক্ষিপ্ত উত্তর, ‘তাহলে গান্ধি এখনও মরেনি কেন?’ পঞ্চাশের মন্বন্তরে (বাংলা ১৩৫০, ইংরেজি ১৯৪৩) মারা গিয়েছিল প্রায় ৩০ লাখ মানুষ। কোথাও সংখ্যাটা ৫০ লাখের বেশি। তবে সরকারি হিসাবে বলা হয়েছিল ১৫ লাখ। তুঘলকের আমলে দোয়াবে কত মানুষের মৃত্যু হয়, এর কোনো তথ্য নেই। তবে এ তথ্য পরিষ্কার যে, তিনি প্রজাদের কষ্ট দূর করতে সম্ভাব্য সকল চেষ্টাই করেছেন এবং করবৃদ্ধির সিদ্ধান্তও পরিহার করেছেন। বাউন প্রমাণ করেছেন, এ বর্ধিত কর নির্যাতনমূলক বা অত্যধিক ছিল না। সুলতানের পরিকল্পনাগুলো ব্যর্থ হয়। কোনো কোনো লেখক একে সুলতানের পাগলামির ফসল বলে আখ্যায়িত করেছেন। বস্তুত আপন সময়ের চেয়ে অগ্রসর একজন শাসক ছিলেন তিনি, যাকে ভুল বুঝেছে তার সমকাল, তেমনি তার উপর সুবিচার করেননি পরবর্তী লেখকরা। তিনি যেমন প্রাজ্ঞ পণ্ডিত ছিলেন, তেমনি পরামর্শ করতেন পণ্ডিতদের সাথে। পাণ্ডিত্য ও বিশেষজ্ঞতা দিয়ে সাজিয়েছিলেন আপন প্রতিবেশ। প্রখ্যাত আইনবিদ মাওলানা আবু হাফস সিরাজুদ্দিন, প্রখ্যাত পলিম্যাথ শিহাবুদ্দিন সৈয়দ আলী হামাদানী, ন্যায়দার্শনিক ইবনে তাজ মুলতানী প্রমুখ মনীষী তার বিদ্যাচর্চার বন্ধু ছিলেন। রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডেও তিনি গড়ে তুলেছিলেন দক্ষ প্রশাসন। তার আমলে দিল্লীর সুলতানি সাম্রাজ্যের সর্বাধিক বিস্তৃতি ঘটে। পূর্বে বাংলা থেকে পশ্চিমে সিন্ধু এবং হিমালয়ের পাদদেশ থেকে দক্ষিণে পাণ্ড্য রাজ্য পর্যন্ত তাঁর সাম্রাজ্য বিস্তৃত ছিল। দিল্লী সালতানাতের সুশাসক হিসেবে তুঘলক ব্যাপক খ্যাতি অর্জন করেন। প্রশাসনিক কাঠামোর সুষ্ঠু বিন্যাস দ্বারা সুলতান কেন্দ্রীয় শাসনব্যবস্থা সুদৃঢ় করেন। শাসনের সুবিধার জন্য তিনি সাম্রাজ্যকে ২৩টি প্রদেশে ভাগ করেন।


বিভাগ : বিশেষ প্রতিবেদন


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

নাব্যতা হারিয়ে দখলদারদের কবলে পড়ে মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাচ্ছে একের পর এক নদী
সম্রাট জাহাঙ্গীর : রূপান্তরের বাদশাহী-১২
সম্রাট জাহাঙ্গীর : রূপান্তরের বাদশাহী-১১
সম্রাট জাহাঙ্গীর : রূপান্তরের বাদশাহী-১০
সম্রাট জাহাঙ্গীর : রূপান্তরের বাদশাহী-৯
আরও
X

আরও পড়ুন

এক অজু দিয়ে আসর মাগরিব ও এশার নামাজ পড়া প্রসঙ্গে?

এক অজু দিয়ে আসর মাগরিব ও এশার নামাজ পড়া প্রসঙ্গে?

আন্তঃধর্মীয় সংলাপের গুরুত্ব

আন্তঃধর্মীয় সংলাপের গুরুত্ব

ভেজালের দৌরাত্ম্য

ভেজালের দৌরাত্ম্য

পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন না হলে দেশে স্বৈরাচারী শাসক তৈরি হতেই থাকবে ; অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন

পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন না হলে দেশে স্বৈরাচারী শাসক তৈরি হতেই থাকবে ; অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন

যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপ ও ভারতের ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিলে অস্বস্তি

যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপ ও ভারতের ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিলে অস্বস্তি

মেঘনা আলমের আটকাদেশ : সরকারের সঠিক সিদ্ধান্ত

মেঘনা আলমের আটকাদেশ : সরকারের সঠিক সিদ্ধান্ত

সংক্ষিপ্ত বিশ্বসংবাদ

সংক্ষিপ্ত বিশ্বসংবাদ

দিল্লিতে ধূলোঝড়ের তাণ্ডবে ২শ’ ফ্লাইট বিঘ্ন

দিল্লিতে ধূলোঝড়ের তাণ্ডবে ২শ’ ফ্লাইট বিঘ্ন

আল-আকসার ইমামকে ৭ দিনের নিষেধাজ্ঞা ইসরাইলের

আল-আকসার ইমামকে ৭ দিনের নিষেধাজ্ঞা ইসরাইলের

পর্যটকদের কাছে টিকিট বিক্রি ইসরাইলের

পর্যটকদের কাছে টিকিট বিক্রি ইসরাইলের

ইউক্রেনকে রেকর্ড ২১ বিলিয়ন ইউরো সামরিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি মিত্রদের

ইউক্রেনকে রেকর্ড ২১ বিলিয়ন ইউরো সামরিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি মিত্রদের

মার্কিন শুল্ক বিরোধ মোকাবিলায় প্রতিবেশী দেশে নজর চীনের

মার্কিন শুল্ক বিরোধ মোকাবিলায় প্রতিবেশী দেশে নজর চীনের

জনসংখ্যা হ্রাস রোধে হাইস্পিড রেললাইন

জনসংখ্যা হ্রাস রোধে হাইস্পিড রেললাইন

১৭ ঘণ্টা পর আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্রের একটি ইউনিট চালু

১৭ ঘণ্টা পর আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্রের একটি ইউনিট চালু

হাজার সেনা বরখাস্ত করেছে ইসরাইল

হাজার সেনা বরখাস্ত করেছে ইসরাইল

যুক্তরাষ্ট্রে ডিমের দামে সংকটে সাধারণ মানুষ

যুক্তরাষ্ট্রে ডিমের দামে সংকটে সাধারণ মানুষ

পশ্চিমবঙ্গে বিক্ষোভ চলছেই মোদির কুশপুতুল দাহ

পশ্চিমবঙ্গে বিক্ষোভ চলছেই মোদির কুশপুতুল দাহ

তহবিলের অভাবে শ’ শ’ কর্মী ছাঁটাই করছে ওচা

তহবিলের অভাবে শ’ শ’ কর্মী ছাঁটাই করছে ওচা

পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন করলে চরম মূল্য দিতে হবে ইরানকে : ট্রাম্প

পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন করলে চরম মূল্য দিতে হবে ইরানকে : ট্রাম্প

ফের বাড়ল স্বর্ণের দাম, নতুন রেকর্ড

ফের বাড়ল স্বর্ণের দাম, নতুন রেকর্ড