ফিরোজ শাহ তুঘলক : সুলতানী যুগের দ্য গ্রেট-১

Daily Inqilab মুসা আল হাফিজ

২২ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০৬ এএম | আপডেট: ২২ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০৬ এএম

মুহম্মদ বিন তুঘলকের আকস্মিক মৃত্যু গুরুতর শূন্যতা তৈরি করলো। সুলতানের কোনো পুত্রসন্তান ছিলো না। ফিরোজ শাহ ছিলেন সুলতানের চাচাতো ভাই। অভিজাত ও আমিরগণ সিংহাসনের জন্য ফিরোজ শাহ তুঘলকের বিকল্প দেখছিলেন না। কিন্তু সিংহাসনের প্রতি তো ফিরোজের আগ্রহ নেই। অগত্যা আলেম, সুফি ও অভিজাতবৃন্দ বিশেষভাবে অনুরোধ করলেন তাকে। ফিরোজ প্রথমে রাজী হননি। কিন্তু মুহম্মদ বিন তুঘলকের এক অনুচর খাজা ই জাহান এক শিশুকে বসান দিল্লীর সিংহাসনে। খাজার দাবি, এই শিশু সুলতানের পুত্র ও উত্তরাধিকারী। পরিস্থিতি খারাপ হতে চলছিলো। শেষ অবধি দিল্লীর শাসক হতে ফিরোজ শাহকে রাজি হতে হয়। সুলতান হিসেবে তিনি ক্ষমতাগ্রহণ করেন ১৩৫১ সালের ২৪ মার্চ। সেনাবাহিনী তার আনুগত্য ঘোষণা করে। থাট্টা বা সিন্ধু থেকে তিনি এগিয়ে এলেন দিল্লীর দিকে। খাজা ই জাহান আত্মসমর্পণ করেন এবং ফিরোজ শাহ তাকে ক্ষমা করে দেন।

দিল্লীর ক্ষমতায় তখন জটিলতার নানা রং। প্রজাদের বিদ্রোহ বহু অঞ্চলে। বাংলা হাতছাড়া হয়ে গেছে মুহম্মদ বিন তুঘলকের আমলে। ইতোমধ্যে শামস উদ্দীন ইলিয়াস শাহ গোটা বাংলা জয় করে ফেলেছেন। ফিরোজ শাহ যুদ্ধকে কখনো প্রকৃত সমাধান মনে করেননি। তবুও তিনি দুবার বাংলা আক্রমণ করেন। তাঁর প্রথম অভিযান ছিল বাংলার সুলতান শামস উদ্দীন ইলিয়াস শাহের বিরুদ্ধে। তিনি ১৩৩৮ খ্রিস্টাব্দে সাতগাঁওয়ের অধীশ্বর হন। সেখানে তাঁর কর্তৃত্ব মজবুত করে সুলতান শামস উদ্দীন ইলিয়াস শাহ উপাধি নিয়ে ১৩৪২ খ্রিস্টাব্দে তিনি লখনৌতির সিংহাসনে আরোহণ করেন। ১৩৪৪ খ্রিস্টাব্দে তিনি ত্রিহুত দখল করেন, ১৩৫০ খ্রিস্টাব্দে নেপালের তরাই অঞ্চলে এক দুঃসাহসিক অভিযান পরিচালনা করেন। রাজধানী কাঠমুন্ডু পর্যন্ত অগ্রসর হন। ১৩৫২ খ্রিস্টাব্দে সোনারগাঁও অধিকার করে তিনি সমগ্র বাংলার অধিপতি হন। তারপর জাজনগর (উড়িষ্যা) আক্রমণ করেন এবং জয়পুর ও কটকের মধ্য দিয়ে অগ্রসর হয়ে চিল্কা হ্রদ পর্যন্ত পৌঁছেন। ১৩৫৩ খ্রিস্টাব্দে তিনি বিহার আক্রমণ করেন। তারপর ক্রমে ক্রমে তাঁর কর্তৃত্ব চম্পারণ, গোরখপুর এবং বেনারস পর্যন্ত বিস্তৃত করেন।

গোটা ব্যাপারটি ফিরোজ শাহকে বিক্ষুব্ধ করে। ১৩৫৩-৫৪ খ্রিস্টাব্দে ফিরোজ শাহ বাংলার দিকে অগ্রসর হন। ইলিয়াস শাহ একডালা দুর্গে আশ্রয় গ্রহণ করেন। ফিরোজ শাহ দুর্গটি দখল করতে ব্যর্থ হন। বাংলার সুলতানের সঙ্গে সন্ধি স্থাপন করে দিল্লি ফিরে যান দিল্লীর সুলতান। স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বাংলা শাসন করতে থাকেন ইলিয়াস শাহ। বাংলা ও দিল্লী সম্পন্ন দুই সালতানাত হিসেবে পরস্পরের প্রতিবেশী হিসেবে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করে। উপহার ও দূত বিনিময়ের মাধ্যমে এ সম্পর্ক আরও দৃঢ় হয়। উভয় রাষ্ট্রের মধ্যে ১৩৫৫, ১৩৫৬, ১৩৫৭ ও ১৩৫৮ খ্রিস্টাব্দে দূত ও উপহার বিনিময় হয়েছিল।

ইলিয়াস শাহের মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র সিকান্দর শাহ সিংহাসনে আরোহণ করেন। জাফর খানকে সহায়তা করে চুক্তিভঙ্গের অজুহাতে দ্বিতীয়বার বাংলায় অভিযান করেন ফিরোজ শাহ। সময়টা ১৩৫৯-৬০ খ্রিস্টাব্দ। সিকান্দর শাহ পিতার অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগালেন। আশ্রয় নিলেন একডালা দুর্গে। ফিরোজ শাহের বাহিনী কিছুকাল দুর্গটি অবরোধ করে রাখে। দুর্গ অধিকারে ব্যর্থ হয়ে দিল্লীর সুলতান শেষ অবধি বাংলার সাথে সন্ধিচুক্তিতে আবদ্ধ হন আরেকবার। তবে এই অভিযান থেকে ফেরার পথে ফিরোজ শাহ জাজনগর (উড়িষ্যা) দখল করেন এবং জাজনগরের রাজার কাছ থেকে আনুগত্য ও উপঢৌকন লাভ করেন।


বিভাগ : বিশেষ প্রতিবেদন


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

নাব্যতা হারিয়ে দখলদারদের কবলে পড়ে মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাচ্ছে একের পর এক নদী
সম্রাট জাহাঙ্গীর : রূপান্তরের বাদশাহী-১২
সম্রাট জাহাঙ্গীর : রূপান্তরের বাদশাহী-১১
সম্রাট জাহাঙ্গীর : রূপান্তরের বাদশাহী-১০
সম্রাট জাহাঙ্গীর : রূপান্তরের বাদশাহী-৯
আরও
X

আরও পড়ুন

এক অজু দিয়ে আসর মাগরিব ও এশার নামাজ পড়া প্রসঙ্গে?

এক অজু দিয়ে আসর মাগরিব ও এশার নামাজ পড়া প্রসঙ্গে?

আন্তঃধর্মীয় সংলাপের গুরুত্ব

আন্তঃধর্মীয় সংলাপের গুরুত্ব

ভেজালের দৌরাত্ম্য

ভেজালের দৌরাত্ম্য

পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন না হলে দেশে স্বৈরাচারী শাসক তৈরি হতেই থাকবে ; অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন

পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন না হলে দেশে স্বৈরাচারী শাসক তৈরি হতেই থাকবে ; অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন

যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপ ও ভারতের ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিলে অস্বস্তি

যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপ ও ভারতের ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিলে অস্বস্তি

মেঘনা আলমের আটকাদেশ : সরকারের সঠিক সিদ্ধান্ত

মেঘনা আলমের আটকাদেশ : সরকারের সঠিক সিদ্ধান্ত

সংক্ষিপ্ত বিশ্বসংবাদ

সংক্ষিপ্ত বিশ্বসংবাদ

দিল্লিতে ধূলোঝড়ের তাণ্ডবে ২শ’ ফ্লাইট বিঘ্ন

দিল্লিতে ধূলোঝড়ের তাণ্ডবে ২শ’ ফ্লাইট বিঘ্ন

আল-আকসার ইমামকে ৭ দিনের নিষেধাজ্ঞা ইসরাইলের

আল-আকসার ইমামকে ৭ দিনের নিষেধাজ্ঞা ইসরাইলের

পর্যটকদের কাছে টিকিট বিক্রি ইসরাইলের

পর্যটকদের কাছে টিকিট বিক্রি ইসরাইলের

ইউক্রেনকে রেকর্ড ২১ বিলিয়ন ইউরো সামরিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি মিত্রদের

ইউক্রেনকে রেকর্ড ২১ বিলিয়ন ইউরো সামরিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি মিত্রদের

মার্কিন শুল্ক বিরোধ মোকাবিলায় প্রতিবেশী দেশে নজর চীনের

মার্কিন শুল্ক বিরোধ মোকাবিলায় প্রতিবেশী দেশে নজর চীনের

জনসংখ্যা হ্রাস রোধে হাইস্পিড রেললাইন

জনসংখ্যা হ্রাস রোধে হাইস্পিড রেললাইন

১৭ ঘণ্টা পর আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্রের একটি ইউনিট চালু

১৭ ঘণ্টা পর আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্রের একটি ইউনিট চালু

হাজার সেনা বরখাস্ত করেছে ইসরাইল

হাজার সেনা বরখাস্ত করেছে ইসরাইল

যুক্তরাষ্ট্রে ডিমের দামে সংকটে সাধারণ মানুষ

যুক্তরাষ্ট্রে ডিমের দামে সংকটে সাধারণ মানুষ

পশ্চিমবঙ্গে বিক্ষোভ চলছেই মোদির কুশপুতুল দাহ

পশ্চিমবঙ্গে বিক্ষোভ চলছেই মোদির কুশপুতুল দাহ

তহবিলের অভাবে শ’ শ’ কর্মী ছাঁটাই করছে ওচা

তহবিলের অভাবে শ’ শ’ কর্মী ছাঁটাই করছে ওচা

পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন করলে চরম মূল্য দিতে হবে ইরানকে : ট্রাম্প

পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন করলে চরম মূল্য দিতে হবে ইরানকে : ট্রাম্প

ফের বাড়ল স্বর্ণের দাম, নতুন রেকর্ড

ফের বাড়ল স্বর্ণের দাম, নতুন রেকর্ড