ভারতের সভ্যতায় মুসলমানদের অবদান

লোদি বংশ : বেলাশেষের আলো-২

Daily Inqilab মুসা আল হাফিজ

১৩ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০২ এএম | আপডেট: ১৩ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০২ এএম

মালবের শাসক মাহমুদ শাহ শর্কির ক্ষমতানেশা ছিলো নিয়ন্ত্রণের বাইরে। কারণ, তিনি ছিলেন সৈয়দবংশীয় শেষ সুলতান আলম শাহের জামাতা। নিজেকে দিল্লীর সুলতান হিসেবে ভাবতেন তিনি। শক্তিপ্রয়োগ করে দিল্লী দখলের সিদ্ধান্ত নেন শর্কি। ১৪৫১ সালে বাহলুল যখন সেরহিন্দে অভিযানে ব্যস্ত, তখন শর্কি জৈনপুর থেকে দিল্লী আক্রমণ করে রাজধানী দখল করলেন। খবর পেয়ে বাহলুল দ্রুতই ফিরে এলেন। দিল্লীর নিকটে নারেলা এলাকায় দুই বাহিনী মুখোমুখি হলো। বাহলুল যুদ্ধ না করেই জয়ী হতে চাইছিলেন। তিনি কৌশলে জৈনপুরের সেনাপতি দরিয়া খানকে পক্ষে নিয়ে এলেন। শর্কির বাহিনী বিভক্ত হয়ে গেলো। ফলে শর্কি যুদ্ধ না করেই ফিরে গেলেন জৈনপুরে। মাহমুদ শর্কি জীবনভর দিল্লীর সাথে দ্বন্দ্ব জারি রাখেন। তার ছেলে ও নাতির আমলেও জৈনপুর বনাম দিল্লীর সংঘাত অব্যাহত ছিলো। ১৪৮৪ সালে বাহলুলের আক্রমণে জৈনপুরের শাসক বিতাড়িত হন এবং বাহলুলের পুত্র বরবক শাহ লোদি হন মালবের শাসক। জৈনপুর জয়ের পরে দিল্লীর ক্ষমতা অপ্রতিহত হয়ে উঠে। ধীরে ধীরে কালপি, ঢোলপুর, গোয়ালিয়র ইত্যাদি অঞ্চল দিল্লীর অধীনতা মেনে নেয়।

বিচ্ছিন্নতাবাদী সর্দারদের সাথে বাহলুলের আচরণ ছিলো নম্র। বিশেষত আফগানদের সাথে তিনি ছিলেন বন্ধুত্বপূর্ণ। বহু জাতি ও সংস্কৃতিতে বিভক্ত ভারতে তিনি প্রত্যেকের জাতিগত বা ব্যক্তিগত স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ না করার নীতি অবলম্বন করেন। অভিজাতদের তিনি বশে আনতেন আখলাকী কূটনীতির মাধ্যমে। তাদের ঘরে হাজির হতেন। একই আসনে খাবার গ্রহণ করতেন। নিজের আচরণের জন্য বিনীত ভাষায় জবাবদিহি করতেন। এটা ছিলো তার কূটনৈতিক কৌশলের অংশ। এর ফলাফল সকল বিচারে ভালো না হলেও এর উপকার নানাভাবে দৃশ্যমান হয়।

বস্তুত তার ব্যক্তিগত চরিত্র ছিলো উদারতার হাত দিয়ে নির্মিত। জীবন যাপনে ধর্মপ্রাণ, প্রতিপক্ষ দমনে কৌশল প্রয়োগে দক্ষ আবার প্রত্যক্ষ সমরে রণনিপুণ, রাষ্ট্রশাসনে বিচক্ষণ বাহলুল হিন্দুসহ অন্যান্য ধর্মাবলম্বী প্রজাদের প্রতি যথেষ্ট উদারতা দেখান। রাজা করণ, রাজা প্রতাপ, রাজা ভির সিং, রাজা ত্রিলোকচাঁদসহ বহু হিন্দু সামন্ত সুলতানের সেবায় আন্তরিকভাবে নিয়োজিত ছিলেন।
তার মানবিক গুণের স্বীকৃতি দিয়েছে সমসাময়িক ইতিহাস। দরিদ্রদের প্রতি দরদে বিগলিত একটা হৃদয় ছিলো তার। প্রজাদের সমস্যা-সঙ্কটে তিনি ছিলেন সহানুভূতিশীল, দায়িত্বশীল। ফকির দরবেশদের খুব শ্রদ্ধা করতেন। শিক্ষাগারসমূহে তার অনুদান ছিলো বিপুল। মসজিদ ও খানকার ব্যয় নির্বাহে তার দানের হাত ছিলো প্রশস্ত। তার চারপাশে থাকতেন প্রধানত জ্ঞানী, গুণী ও প্রাজ্ঞজন। আপন সময়ে উল্লেখযোগ্য পণ্ডিতদের মধ্যে তিনি ছিলেন অগ্রগণ্য। যুদ্ধ তিনি অনেক করেছেন। কিন্তু সেখানেও রক্তপাত এড়াবার চেষ্টায় ত্রুটি করতেন না। পতনোন্মুখ দিল্লী সালতানাতকে নতুন করে প্রাণশক্তি ফিরিয়ে দেয় বাহলুলের তরবারি ও রাজনীতি। গোয়ালিয়র অভিযানের পরে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। ১৪৮৯ খ্রিস্টাব্দের ১২ জুলাই ইন্তেকাল হয় তাঁর।


বিভাগ : বিশেষ প্রতিবেদন


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

নাব্যতা হারিয়ে দখলদারদের কবলে পড়ে মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাচ্ছে একের পর এক নদী
সম্রাট জাহাঙ্গীর : রূপান্তরের বাদশাহী-১২
সম্রাট জাহাঙ্গীর : রূপান্তরের বাদশাহী-১১
সম্রাট জাহাঙ্গীর : রূপান্তরের বাদশাহী-১০
সম্রাট জাহাঙ্গীর : রূপান্তরের বাদশাহী-৯
আরও
X

আরও পড়ুন

এক অজু দিয়ে আসর মাগরিব ও এশার নামাজ পড়া প্রসঙ্গে?

এক অজু দিয়ে আসর মাগরিব ও এশার নামাজ পড়া প্রসঙ্গে?

আন্তঃধর্মীয় সংলাপের গুরুত্ব

আন্তঃধর্মীয় সংলাপের গুরুত্ব

ভেজালের দৌরাত্ম্য

ভেজালের দৌরাত্ম্য

পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন না হলে দেশে স্বৈরাচারী শাসক তৈরি হতেই থাকবে ; অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন

পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন না হলে দেশে স্বৈরাচারী শাসক তৈরি হতেই থাকবে ; অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন

যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপ ও ভারতের ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিলে অস্বস্তি

যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপ ও ভারতের ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিলে অস্বস্তি

মেঘনা আলমের আটকাদেশ : সরকারের সঠিক সিদ্ধান্ত

মেঘনা আলমের আটকাদেশ : সরকারের সঠিক সিদ্ধান্ত

সংক্ষিপ্ত বিশ্বসংবাদ

সংক্ষিপ্ত বিশ্বসংবাদ

দিল্লিতে ধূলোঝড়ের তাণ্ডবে ২শ’ ফ্লাইট বিঘ্ন

দিল্লিতে ধূলোঝড়ের তাণ্ডবে ২শ’ ফ্লাইট বিঘ্ন

আল-আকসার ইমামকে ৭ দিনের নিষেধাজ্ঞা ইসরাইলের

আল-আকসার ইমামকে ৭ দিনের নিষেধাজ্ঞা ইসরাইলের

পর্যটকদের কাছে টিকিট বিক্রি ইসরাইলের

পর্যটকদের কাছে টিকিট বিক্রি ইসরাইলের

ইউক্রেনকে রেকর্ড ২১ বিলিয়ন ইউরো সামরিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি মিত্রদের

ইউক্রেনকে রেকর্ড ২১ বিলিয়ন ইউরো সামরিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি মিত্রদের

মার্কিন শুল্ক বিরোধ মোকাবিলায় প্রতিবেশী দেশে নজর চীনের

মার্কিন শুল্ক বিরোধ মোকাবিলায় প্রতিবেশী দেশে নজর চীনের

জনসংখ্যা হ্রাস রোধে হাইস্পিড রেললাইন

জনসংখ্যা হ্রাস রোধে হাইস্পিড রেললাইন

১৭ ঘণ্টা পর আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্রের একটি ইউনিট চালু

১৭ ঘণ্টা পর আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্রের একটি ইউনিট চালু

হাজার সেনা বরখাস্ত করেছে ইসরাইল

হাজার সেনা বরখাস্ত করেছে ইসরাইল

যুক্তরাষ্ট্রে ডিমের দামে সংকটে সাধারণ মানুষ

যুক্তরাষ্ট্রে ডিমের দামে সংকটে সাধারণ মানুষ

পশ্চিমবঙ্গে বিক্ষোভ চলছেই মোদির কুশপুতুল দাহ

পশ্চিমবঙ্গে বিক্ষোভ চলছেই মোদির কুশপুতুল দাহ

তহবিলের অভাবে শ’ শ’ কর্মী ছাঁটাই করছে ওচা

তহবিলের অভাবে শ’ শ’ কর্মী ছাঁটাই করছে ওচা

পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন করলে চরম মূল্য দিতে হবে ইরানকে : ট্রাম্প

পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন করলে চরম মূল্য দিতে হবে ইরানকে : ট্রাম্প

ফের বাড়ল স্বর্ণের দাম, নতুন রেকর্ড

ফের বাড়ল স্বর্ণের দাম, নতুন রেকর্ড