লোদি বংশ : বেলা শেষের আলো-৩

Daily Inqilab মুসা আল হাফিজ

১৯ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০৮ এএম | আপডেট: ১৯ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০৯ এএম

বাহলুল লোদি নিজের উত্তরাধিকারী হিসেবে ঘোষণা করেন তার দ্বিতীয় পুত্র সিকান্দার লোদির নাম। সিকান্দারের আসল নাম ছিলো নিজাম খান। হিন্দু মায়ের সন্তান বলে তার গায়ে বিশুদ্ধ আফগান রক্ত নেই, এই অভিযোগ তুললো পাঠান অভিজাতরা। কেউ চায় বাহলুলের অপর পুত্র বরবক শাহ ক্ষমতায় বসুন। কেউ চায় খাজা বায়াজিদের পুত্র আজম হুমায়ুন দিল্লীর সুলতান হোন। সিকান্দার শাহ প্রভাবশালী পাঠান সর্দারদের মোকাবেলা করেন। স্বয়ং বরবক শাহ এবং আজম হুমায়ুনকে সিকান্দার নিয়ে আসেন নিজের পক্ষে। নিজের চাচা আলম খানকেও পাশে দাঁড় করান। উদারতা এবং সহনশীলতা ছিলো তার প্রধান অবলম্বন। আত্মীয়দের আনুগত্যের বিনিময়ে সিকান্দার তাঁদের সম্মান, সুবিধা ও বিশেষ অধিকার প্রতিষ্ঠা করেন। কিন্তু প্রভাবশালী সামন্ত ও জায়গিরদারদের বিরোধিতা থামছিলো না। তাদের দমানোর জন্য সিকান্দার দুই ধরনের কর্মনীতি অবলম্বন করেন। প্রথমত, সকল সামন্ত ও জায়গিরদারের অর্থনৈতিক হিসাব গ্রহণ করেন কঠোরভাবে। এই ব্যবস্থার ফলে বেশির ভাগই সুলতানী আইনের সম্মুখিন হবার ভয়ে আনুগত্য কবুল করে নেন এবং নিজেদের দুর্নীতির জন্য ক্ষমা চেয়ে নেন। দ্বিতীয়ত, চতুর্দিকে দক্ষ গোয়েন্দাজাল বিস্তার করা হয়। দূরবর্তী অঞ্চলেও প্রভাবশালীদের ওপর তীক্ষ্ণ নজর রাখা হয়। অনিয়ম, আনুগত্যহীনতা, স্বেচ্ছাচারিতা লক্ষ করা গেলেই দ্রæত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। এতে প্রভাবশালীরা যেমন অসন্তুষ্ট হয়ে বিদ্রোহ করেন, তেমনি অনেকেই ভীত হয়ে বিদ্রোহের ইচ্ছা পরিহার করেন। যারা বিদ্রোহের পতাকা উড়ায়, সিকান্দার কঠোর হাতে তাদের দমন করেন।

বিহার ও ত্রিহুতের সামরিক অভিযানে তিনি প্রেরণ করেন সামন্ত ও জায়গিরদারদের। বিদ্রোহী বিহার দিল্লীর সালতানাতের অধীনে আসে, দরিয়া খাঁ হন এর শাসক। ত্রিহুত বিহারের পরিণতি পছন্দ করেনি। বিনাযুদ্ধে সেখানকার শাসকরা দিল্লীর বশ্যতা কবুল করে নেয়। রাজপুত রাজ্যগুলিকেও শৃঙ্খলায় নিয়ে আসেন সিকান্দার। ধোলপুর, নারওয়ার, মাদ্রাইল, নাগাউর প্রভৃতি অঞ্চল তিনি জয় করেন। গোয়ালিয়রের শাসককেও সিকান্দার পরাজিত করেন, তবে বার্ষিক করদানের শর্ত কবুল করে ওই রাজ্য নিজের স্বায়ত্বশাসন জারি রাখতে সক্ষম হয়। সিকান্দার লোদি উত্তর-পশ্চিমে পাঞ্জাব থেকে পূর্বে সারান এবং চম্পারন (উত্তর বিহারে) এবং দিল্লীর দক্ষিণে চান্দেরি পর্যন্ত সমগ্র উত্তর ভারতে শাসন প্রতিষ্ঠা করেন।

১৫০৪ সালে আগ্রা প্রতিষ্ঠা করেন সিকান্দার। রাজধানী দিল্লি থেকে আগ্রায় স্থানান্তরিত করেন। সেখানে সুপরিসর রাস্তা, সরাইখানা, উন্নত যোগাযোগ অবকাঠামো, মসজিদ, বিদ্যালয় ইত্যাদি প্রতিষ্ঠা করেন। শিক্ষার বিস্তারে তার উদ্যম ছিলো অসাধারণ। নিজে কাব্য চর্চা করতেন। তিনি আপন সময়ে ফারসি ভাষার খ্যাতিমান কবি ছিলেন। গুলরুখি ছদ্মনামে ৯০০০ পঙক্তির অসাধারণ দিওয়ান রচনা করেন তিনি। নন্দনতত্ত¡ ও সংগীতের সমজদার ছিলেন। ফার্সি ছাড়াও আরবি, সংস্কৃত, পশতু ইত্যাদি ভাষায় ছিলো তার পারদর্শিতা। গণিত ও এনাটমির প্রতি বিশেষ আগ্রহ ছিলো তার। তার নির্দেশে, আয়ুর্বেদের গুরুত্বপূর্ণ রচনাগুলি ফারহাঙ্গে-ই-সিকান্দারি নামে ফার্সি ভাষায় অনুবাদ করা হয়। শাস্ত্রীয় সংগীতের পৃষ্ঠপোষকতায় তিনি বিশেষ ভ‚মিকা রাখেন। নাজিম আহমাদ রচিত লাহজাত ই-সিকান্দার শাহী তারই সহায়তায় রচিত শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের বিশেষ বই। তার রাজত্বকালে, অস্থায়ী গভর্নরদের কার্যকারিতা নিশ্চিত করার জন্য ব্যাপক গবেষণা পরিচালিত হয়েছিল।


বিভাগ : বিশেষ প্রতিবেদন


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

নাব্যতা হারিয়ে দখলদারদের কবলে পড়ে মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাচ্ছে একের পর এক নদী
সম্রাট জাহাঙ্গীর : রূপান্তরের বাদশাহী-১২
সম্রাট জাহাঙ্গীর : রূপান্তরের বাদশাহী-১১
সম্রাট জাহাঙ্গীর : রূপান্তরের বাদশাহী-১০
সম্রাট জাহাঙ্গীর : রূপান্তরের বাদশাহী-৯
আরও
X

আরও পড়ুন

এক অজু দিয়ে আসর মাগরিব ও এশার নামাজ পড়া প্রসঙ্গে?

এক অজু দিয়ে আসর মাগরিব ও এশার নামাজ পড়া প্রসঙ্গে?

আন্তঃধর্মীয় সংলাপের গুরুত্ব

আন্তঃধর্মীয় সংলাপের গুরুত্ব

ভেজালের দৌরাত্ম্য

ভেজালের দৌরাত্ম্য

পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন না হলে দেশে স্বৈরাচারী শাসক তৈরি হতেই থাকবে ; অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন

পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন না হলে দেশে স্বৈরাচারী শাসক তৈরি হতেই থাকবে ; অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন

যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপ ও ভারতের ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিলে অস্বস্তি

যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপ ও ভারতের ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিলে অস্বস্তি

মেঘনা আলমের আটকাদেশ : সরকারের সঠিক সিদ্ধান্ত

মেঘনা আলমের আটকাদেশ : সরকারের সঠিক সিদ্ধান্ত

সংক্ষিপ্ত বিশ্বসংবাদ

সংক্ষিপ্ত বিশ্বসংবাদ

দিল্লিতে ধূলোঝড়ের তাণ্ডবে ২শ’ ফ্লাইট বিঘ্ন

দিল্লিতে ধূলোঝড়ের তাণ্ডবে ২শ’ ফ্লাইট বিঘ্ন

আল-আকসার ইমামকে ৭ দিনের নিষেধাজ্ঞা ইসরাইলের

আল-আকসার ইমামকে ৭ দিনের নিষেধাজ্ঞা ইসরাইলের

পর্যটকদের কাছে টিকিট বিক্রি ইসরাইলের

পর্যটকদের কাছে টিকিট বিক্রি ইসরাইলের

ইউক্রেনকে রেকর্ড ২১ বিলিয়ন ইউরো সামরিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি মিত্রদের

ইউক্রেনকে রেকর্ড ২১ বিলিয়ন ইউরো সামরিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি মিত্রদের

মার্কিন শুল্ক বিরোধ মোকাবিলায় প্রতিবেশী দেশে নজর চীনের

মার্কিন শুল্ক বিরোধ মোকাবিলায় প্রতিবেশী দেশে নজর চীনের

জনসংখ্যা হ্রাস রোধে হাইস্পিড রেললাইন

জনসংখ্যা হ্রাস রোধে হাইস্পিড রেললাইন

১৭ ঘণ্টা পর আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্রের একটি ইউনিট চালু

১৭ ঘণ্টা পর আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্রের একটি ইউনিট চালু

হাজার সেনা বরখাস্ত করেছে ইসরাইল

হাজার সেনা বরখাস্ত করেছে ইসরাইল

যুক্তরাষ্ট্রে ডিমের দামে সংকটে সাধারণ মানুষ

যুক্তরাষ্ট্রে ডিমের দামে সংকটে সাধারণ মানুষ

পশ্চিমবঙ্গে বিক্ষোভ চলছেই মোদির কুশপুতুল দাহ

পশ্চিমবঙ্গে বিক্ষোভ চলছেই মোদির কুশপুতুল দাহ

তহবিলের অভাবে শ’ শ’ কর্মী ছাঁটাই করছে ওচা

তহবিলের অভাবে শ’ শ’ কর্মী ছাঁটাই করছে ওচা

পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন করলে চরম মূল্য দিতে হবে ইরানকে : ট্রাম্প

পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন করলে চরম মূল্য দিতে হবে ইরানকে : ট্রাম্প

ফের বাড়ল স্বর্ণের দাম, নতুন রেকর্ড

ফের বাড়ল স্বর্ণের দাম, নতুন রেকর্ড