ভারতের সভ্যতায় মুসলমানদের অবদান

লোদি বংশ : বেলাশেষের আলো-৪

Daily Inqilab মুসা আল হাফিজ

২০ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:১৬ এএম | আপডেট: ২০ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:১৬ এএম

সিকান্দার লোদি ভুট্টার সাময়িক ঘাটতির কারণে শস্যের উপর যাকাত (কর) বাতিল করেন এবং পরবর্তী কোনো সুলতান তা নবায়ন করেননি। ব্যবসা-বাণিজ্যের পৃষ্ঠপোষকতা করেন। তিনি হিসাবরক্ষণে আলাদা পদ্ধতির সূচনা করেন। বিচার ও কৃষিকাজে তিনি বিশেষ যতœ নেন এবং আবাদি জমি পরিমাপের ক্ষেত্রে গাজিয়ে সিকান্দারি নামক পদ্ধতির প্রবর্তন করেন। হিসাবরক্ষণের ক্ষেত্রে তিনি ফারসি ভাষাকে সরকারি ভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন। অভিজাত পশতুভাষীরা নিজেদের পছন্দকে আইনের সমান মনে করতেন। সিকান্দার তাদের এই প্রবণতা মোকাবেলা করেন। তাদের অন্যায়কে আইনের দ্বারা শায়েস্তা করে আইনের প্রতি ভীতি তৈরি করেন। রাষ্ট্রীয় কাজ-কর্মে তাদেরকে জবাবদিহির আওতায় নিয়ে আসন, হিসাব জমা দিতে বাধ্য করেন। ফলে সংহত হয় প্রশাসন, সাম্রাজ্যের আভ্যন্তরীণ ব্যবস্থায় তিনি শৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে সক্ষম হন। অভিজাতদের করুণা থেকে রাষ্ট্রকে তিনি উদ্ধার করেন। ক্ষমতালোভী ও স্বার্থান্ধ আফগানদের কর্তৃত্বের আকাক্সক্ষাকে মোকাবেলা করেন নানামুখী দক্ষতায়। রাষ্ট্রের ব্যাপারে সুলতানই শেষ কথা, এটা তাদের বিশ্বাস করানো জরুরি ছিলো। দৃঢ়তা ও কঠোরতার মধ্য দিয়ে তিনি কাজটি করলেও কূটনৈতিক দক্ষতা ছিলো এর মর্মমূলে। যেখানে নরম হবার, সেখানে নরম হতেন তিনি। যেখানে যতটুকু কঠোর হওয়া উচিত, সেখানে কমতি হতো না।

বিহার জয় করার পরে বাংলার সাথে সংঘাতের আশঙ্কা হয় প্রবল। বাংলার স্বাধীন সুলতান আলাউদ্দিন হুসেন শাহের সাথে বিবাদে সুবিধা হবে না, সিকান্দার তা জানতেন। ফলে তিনি বাংলার সাথে মৈত্রী চুক্তি সম্পন্ন করেন। শান্তিকে নিশ্চিত করেন।

মানবিক গুণাবলি ছিলো তার চরিত্রের প্রধান প্রবণতা। অসহায় ও জ্ঞানীগুণীদের প্রতি তাঁর করুণা ও শ্রদ্ধাবোধ ছিল যথেষ্ট। ড. এস. লাল দেখিয়েছেন, তার মানবিক গুণাবলির আধিক্য তাঁর রাজনৈতিক দৃঢ়তাকে কোনো কোনো ক্ষেত্রে আচ্ছন্ন করেছে। যেমন বরবক শাহের অপদার্থতা ও উচ্চাকাক্সক্ষা সম্পর্কে অবহিত হয়েও তিনি ভ্রাতার বিরুদ্ধে কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি।

তার কালের ঐতিহাসিকরা যেমন, তেমনি পরবর্তী কালের ঐতিহাসিকরা তাকে মহিমান্বিত করেছেন। লোদি বংশীয় সুলতানদের মধ্যে সিকন্দর শাহকে দিয়েছেন শ্রেষ্ঠত্বের শিরোপা। ভালো শাসক হবার জন্য প্রয়োজনীয় গুণাবলির অধিকাংশই বিকশিত হয়েছিলো তার চরিত্রে।

দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নকে তিনি দেন বিশেষ গুরুত্ব। ব্যবসা-বাণিজ্যকে সহজ করার নীতি গ্রহণ করেন, এজন্য কর পরিহার করেন। ব্যবসায়ীদের উৎসাহিত করেন নানাভাবে। মূল্যস্ফীতি দমনে সজাগ ছিলো তার আর্থিক নীতি। বেকার, গরিব ও অসহায়দের প্রতি ছিলো সহায়তার বিশেষ ব্যবস্থা। সাম্রাজ্যজুড়ে দরিদ্র মানুষের তালিকা তৈরি করা হতো প্রতি বছর। তাদেরকে অন্তত ছয় মাসের রেশন দেবার ব্যবস্থা করা হতো।

প্রজাকল্যাণ, প্রশাসন সংস্কার, সাম্রাজ্যের সীমানাবৃদ্ধি, প্রশাসনের সংহতি নিশ্চিত করা, নগরায়ন, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, শিল্প-সাহিত্যের পৃষ্ঠপোষকতাসহ নানা খাতে তার কৃতিত্ব প্রসারিত। সমৃদ্ধ সালতানাতের নিশ্চিত পটভূমির উপর দিল্লীকে দাঁড় করিয়ে ১৫১৭ সালে ইন্তেকাল করেন সিকান্দার লোদি।

****************


বিভাগ : বিশেষ প্রতিবেদন


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

নাব্যতা হারিয়ে দখলদারদের কবলে পড়ে মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাচ্ছে একের পর এক নদী
সম্রাট জাহাঙ্গীর : রূপান্তরের বাদশাহী-১২
সম্রাট জাহাঙ্গীর : রূপান্তরের বাদশাহী-১১
সম্রাট জাহাঙ্গীর : রূপান্তরের বাদশাহী-১০
সম্রাট জাহাঙ্গীর : রূপান্তরের বাদশাহী-৯
আরও
X

আরও পড়ুন

এক অজু দিয়ে আসর মাগরিব ও এশার নামাজ পড়া প্রসঙ্গে?

এক অজু দিয়ে আসর মাগরিব ও এশার নামাজ পড়া প্রসঙ্গে?

আন্তঃধর্মীয় সংলাপের গুরুত্ব

আন্তঃধর্মীয় সংলাপের গুরুত্ব

ভেজালের দৌরাত্ম্য

ভেজালের দৌরাত্ম্য

পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন না হলে দেশে স্বৈরাচারী শাসক তৈরি হতেই থাকবে ; অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন

পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন না হলে দেশে স্বৈরাচারী শাসক তৈরি হতেই থাকবে ; অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন

যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপ ও ভারতের ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিলে অস্বস্তি

যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপ ও ভারতের ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিলে অস্বস্তি

মেঘনা আলমের আটকাদেশ : সরকারের সঠিক সিদ্ধান্ত

মেঘনা আলমের আটকাদেশ : সরকারের সঠিক সিদ্ধান্ত

সংক্ষিপ্ত বিশ্বসংবাদ

সংক্ষিপ্ত বিশ্বসংবাদ

দিল্লিতে ধূলোঝড়ের তাণ্ডবে ২শ’ ফ্লাইট বিঘ্ন

দিল্লিতে ধূলোঝড়ের তাণ্ডবে ২শ’ ফ্লাইট বিঘ্ন

আল-আকসার ইমামকে ৭ দিনের নিষেধাজ্ঞা ইসরাইলের

আল-আকসার ইমামকে ৭ দিনের নিষেধাজ্ঞা ইসরাইলের

পর্যটকদের কাছে টিকিট বিক্রি ইসরাইলের

পর্যটকদের কাছে টিকিট বিক্রি ইসরাইলের

ইউক্রেনকে রেকর্ড ২১ বিলিয়ন ইউরো সামরিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি মিত্রদের

ইউক্রেনকে রেকর্ড ২১ বিলিয়ন ইউরো সামরিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি মিত্রদের

মার্কিন শুল্ক বিরোধ মোকাবিলায় প্রতিবেশী দেশে নজর চীনের

মার্কিন শুল্ক বিরোধ মোকাবিলায় প্রতিবেশী দেশে নজর চীনের

জনসংখ্যা হ্রাস রোধে হাইস্পিড রেললাইন

জনসংখ্যা হ্রাস রোধে হাইস্পিড রেললাইন

১৭ ঘণ্টা পর আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্রের একটি ইউনিট চালু

১৭ ঘণ্টা পর আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্রের একটি ইউনিট চালু

হাজার সেনা বরখাস্ত করেছে ইসরাইল

হাজার সেনা বরখাস্ত করেছে ইসরাইল

যুক্তরাষ্ট্রে ডিমের দামে সংকটে সাধারণ মানুষ

যুক্তরাষ্ট্রে ডিমের দামে সংকটে সাধারণ মানুষ

পশ্চিমবঙ্গে বিক্ষোভ চলছেই মোদির কুশপুতুল দাহ

পশ্চিমবঙ্গে বিক্ষোভ চলছেই মোদির কুশপুতুল দাহ

তহবিলের অভাবে শ’ শ’ কর্মী ছাঁটাই করছে ওচা

তহবিলের অভাবে শ’ শ’ কর্মী ছাঁটাই করছে ওচা

পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন করলে চরম মূল্য দিতে হবে ইরানকে : ট্রাম্প

পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন করলে চরম মূল্য দিতে হবে ইরানকে : ট্রাম্প

ফের বাড়ল স্বর্ণের দাম, নতুন রেকর্ড

ফের বাড়ল স্বর্ণের দাম, নতুন রেকর্ড