লোদি বংশ : বেলাশেষের আলো-৫

Daily Inqilab মুসা আল হাফিজ

২৬ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:১৮ এএম | আপডেট: ২৬ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:১৮ এএম

সিকান্দার লোদির মৃত্যুতে তৈরি হলো সিংহাসন নিয়ে জটিলতা। ক্ষমতায় বসলেন তার বড় ছেলে ইবরাহীম লোদি। কিন্তু অভিজাতদের অনেকেই জৈনপুরের স্বাধীন সুলতান হিসেবে বায়আত করলেন জালাল খার কাছে, যিনি ছিলেন ইবরাহীম লোদির ছোট ভাই। তারা চাইলেন সাম্রাজ্যকে দুই ভাগে বিভাজিত করতে। এর পরিণতি ছিলো সাম্রাজ্যের অবসান। ইবরাহীম এই ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে প্রবলভাবে রুখে দাঁড়ালেন। জালাল খাকে দিল্লীতে ডাকলেন। কিন্তু জালাল খা সাড়া না দিয়ে বিদ্রোহের আগুন জ্বালিয়ে দিলেন। ইবরাহীম তার পিছু ধাওয়া করলেন। জৈনপুর থেকে পালাতে হলো তাকে। তারপর কালপি, আগ্রা, গোয়ালিয়র, মালব কোথাও জালাল খাকে দাঁড়াতে দেননি ইবরাহীম লোদি। শেষ অবধি তিনি ধরা পড়েন এবং প্রাণ হারান।
এরপর ইবরাহীম লোদি দৃষ্টি দেন সেই আমাত্যদের দিকে, যারা বিদ্রোহকে সংগঠিত করেছিলো। গোয়ালিয়রের রাজা বিক্রমজিৎ জালালকে আশ্রয় দেন। ইবরাহীম তাকে পরাজিত করেন। বিক্রম বশ্যতা স্বীকার করেন এবং রাজ্য ফিরে পান। রানা সংগ্রাম সিংহের সাথে ইবরাহীম লোদির যুদ্ধের গল্প লিখেছেন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কর্মকর্তা কর্নেল জেমস টড। তার মতে, মেবার রাজ্যে ইবরাহীম লোদি যখন আক্রমণ করেন, সংগ্রাম সিংহের সাথে যুদ্ধ হয় ভীষণ। এতে সংগ্রামের একটি পা ও বাম হাত নষ্ট হলেও তিনি লড়াই থেকে পরাভ‚ত হননি এবং স্বাধীনতা রক্ষা করেন। এই গল্প মজাদার বটে। কিন্তু ফেরেস্তা, বাদাউনিসহ প্রাচীন ঐতিহাসিকদের রচনায় তার কোনো উল্লেখ মেলে না।
সামরিক দক্ষতায় ইবরাহীম লোদি যতোটা সবল, ক‚টনৈতিক দক্ষতায় ছিলেন ততটাই দুর্বল। আফগান সরদারদের তিনি দ্রæতই নিজের শত্রæ বানিয়ে ফেলেন। তাদের থেকে অতিরিক্ত আনুগত্য আশা করতে গিয়ে ভুলে যান তাদের স্বভাব। দরবারে তাদের জন্যও চালু করেন কঠোর বিধি-নিষেধ। ফলে সর্দাররা একজোট হন তার বিরুদ্ধে। আজম হুমায়ুন শেরওয়ানীকে তারা সামনে আনার চেষ্টা করে। হুমায়ুন তাতে উল্লেখযোগ্য সম্মতি না দিলেও ইবরাহীম লোদি তাকে কারাগারে নিক্ষেপ করেন। এতে ভীষণ ক্ষুব্ধ হন হুমায়ুনের পুত্র ইসলাম খাঁ। তিনি বিক্ষুব্ধ আফগানদের একত্র করে সুলতানকে চ্যালেঞ্জ করেন। ইবরাহীম লোদি এই বিদ্রোহ দমন করেন এবং ইসলাম খাঁকে হত্যা করেন। হুমায়ুন শেরওয়ানীর প্রত্যক্ষ কোনো ভ‚মিকা না থাকলেও হত্যার শিকার হন তিনিও। প্রবীণ আমীর হুসেন ফরমুলীকেও হত্যা করা হয়। ইবরাহীম লোদি চেয়েছিলেন এর মাধ্যমে আমীরদের ভীত করতে। কিন্তু এতে তারা প্রচÐ ক্ষুব্ধ হন। লোদি বংশের আমীররা যেমন তার বিরুদ্ধে একতাবদ্ধ হন, তেমনি হন ফরমুলী বংশের নেতারা। সাম্রাজ্যের পূর্বাঞ্চল বিদ্রোহে জ্বলতে থাকে। বিহারকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করেন দরিয়া খাঁর পুত্র বাহার খাঁ লোহানী। সম্রাট শের শাহ তখন ছিলেন সেনাপতি শের খাঁ। তিনি বাহার খাঁর পাশে দাঁড়ান। পাঞ্জাবের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন গভর্নর দৌলত খান লোদি। বস্তুত সুলতানের পাশে তখন গভর্নর কিংবা আমীরদের কোনো শক্তিমান সমর্থন ছিলো না।
এ সময় দিল্লী সালতানাতের দিকে পাখির চোখ রাখছিলেন জহির উদ্দীন মুহাম্মদ বাবর। তৈমুরের এ বংশধর রাজ্যচ্যুত হয়ে অবস্থান করছিলেন কাবুলে। তার লক্ষ্য ছিলো ভারতবিজয়। দৌলত খাঁর সাথে ছিলো বাবরের যোগাযোগ। দিল্লীর সিংহাসনের আরেক দাবিদার ছিলেন আলম খাঁ। তিনিও বাবরের সহায়তায় সক্রিয় হন। বাবরকে তারা আমন্ত্রণ করেন দিল্লী অভিমুখে অভিযানের জন্য। বাবর তো এরই অপক্ষো করছিলেন। তিনি দ্রæতই অভিযান পরিচালনা করলেন। ১৫২৬ খ্রিস্টাব্দের ২১ এপ্রিল হরিয়ানা রাজ্যের পানিপথ গ্রামের নিকটে গুরুতর যুদ্ধ সংঘটিত হয়, যাকে বলা হয় পানিপথের প্রথম যুদ্ধ। বাবরের বাহিনীতে ১৫,০০০ সৈনিক এবং ২০ থেকে ২৪টি ফিল্ড আর্টিলারি ছিল। ইবরাহীম লোদির বাহিনীতে সর্বমোট লোকসংখ্যা ছিল প্রায় ১,০০,০০০। এ যুদ্ধে ভারতে প্রথম কামানের ব্যবহার করেন বাবর। তিনি ব্যবহার করেছিলেন গানপাউডার এবং আগ্নেয়াস্ত্রও। (চলবে)


বিভাগ : বিশেষ প্রতিবেদন


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

নাব্যতা হারিয়ে দখলদারদের কবলে পড়ে মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাচ্ছে একের পর এক নদী
সম্রাট জাহাঙ্গীর : রূপান্তরের বাদশাহী-১২
সম্রাট জাহাঙ্গীর : রূপান্তরের বাদশাহী-১১
সম্রাট জাহাঙ্গীর : রূপান্তরের বাদশাহী-১০
সম্রাট জাহাঙ্গীর : রূপান্তরের বাদশাহী-৯
আরও
X

আরও পড়ুন

এক অজু দিয়ে আসর মাগরিব ও এশার নামাজ পড়া প্রসঙ্গে?

এক অজু দিয়ে আসর মাগরিব ও এশার নামাজ পড়া প্রসঙ্গে?

আন্তঃধর্মীয় সংলাপের গুরুত্ব

আন্তঃধর্মীয় সংলাপের গুরুত্ব

ভেজালের দৌরাত্ম্য

ভেজালের দৌরাত্ম্য

পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন না হলে দেশে স্বৈরাচারী শাসক তৈরি হতেই থাকবে ; অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন

পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন না হলে দেশে স্বৈরাচারী শাসক তৈরি হতেই থাকবে ; অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন

যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপ ও ভারতের ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিলে অস্বস্তি

যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপ ও ভারতের ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিলে অস্বস্তি

মেঘনা আলমের আটকাদেশ : সরকারের সঠিক সিদ্ধান্ত

মেঘনা আলমের আটকাদেশ : সরকারের সঠিক সিদ্ধান্ত

সংক্ষিপ্ত বিশ্বসংবাদ

সংক্ষিপ্ত বিশ্বসংবাদ

দিল্লিতে ধূলোঝড়ের তাণ্ডবে ২শ’ ফ্লাইট বিঘ্ন

দিল্লিতে ধূলোঝড়ের তাণ্ডবে ২শ’ ফ্লাইট বিঘ্ন

আল-আকসার ইমামকে ৭ দিনের নিষেধাজ্ঞা ইসরাইলের

আল-আকসার ইমামকে ৭ দিনের নিষেধাজ্ঞা ইসরাইলের

পর্যটকদের কাছে টিকিট বিক্রি ইসরাইলের

পর্যটকদের কাছে টিকিট বিক্রি ইসরাইলের

ইউক্রেনকে রেকর্ড ২১ বিলিয়ন ইউরো সামরিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি মিত্রদের

ইউক্রেনকে রেকর্ড ২১ বিলিয়ন ইউরো সামরিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি মিত্রদের

মার্কিন শুল্ক বিরোধ মোকাবিলায় প্রতিবেশী দেশে নজর চীনের

মার্কিন শুল্ক বিরোধ মোকাবিলায় প্রতিবেশী দেশে নজর চীনের

জনসংখ্যা হ্রাস রোধে হাইস্পিড রেললাইন

জনসংখ্যা হ্রাস রোধে হাইস্পিড রেললাইন

১৭ ঘণ্টা পর আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্রের একটি ইউনিট চালু

১৭ ঘণ্টা পর আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্রের একটি ইউনিট চালু

হাজার সেনা বরখাস্ত করেছে ইসরাইল

হাজার সেনা বরখাস্ত করেছে ইসরাইল

যুক্তরাষ্ট্রে ডিমের দামে সংকটে সাধারণ মানুষ

যুক্তরাষ্ট্রে ডিমের দামে সংকটে সাধারণ মানুষ

পশ্চিমবঙ্গে বিক্ষোভ চলছেই মোদির কুশপুতুল দাহ

পশ্চিমবঙ্গে বিক্ষোভ চলছেই মোদির কুশপুতুল দাহ

তহবিলের অভাবে শ’ শ’ কর্মী ছাঁটাই করছে ওচা

তহবিলের অভাবে শ’ শ’ কর্মী ছাঁটাই করছে ওচা

পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন করলে চরম মূল্য দিতে হবে ইরানকে : ট্রাম্প

পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন করলে চরম মূল্য দিতে হবে ইরানকে : ট্রাম্প

ফের বাড়ল স্বর্ণের দাম, নতুন রেকর্ড

ফের বাড়ল স্বর্ণের দাম, নতুন রেকর্ড